আলোচনায় সুপ্রিম কোর্ট: জাহালমের মুক্তিতে শুরু, হট্টগোলে শেষ



নাজমুল আহসান রাজু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট বছরজুড়েই ছিল আলোচনায়। বছরের শেষদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন। খোদ আপিল বিভাগে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের হট্টগোলের নজিরবিহীন ঘটনায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

অন্যদিকে বছরজুড়ে সর্বোচ্চ আদালতের দুই বিভাগ থেকে সড়কসহ নানা দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দিতে রায় ও রুল জারির আদেশ এসেছে। বার্তা২৪.কমের হিসেব অনুযায়ী ২০১৯ সালে অন্তত ২৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির মধ্যে আপিলে একজনের রায় বহাল ও অপরজনের  রায় অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। এ বছর মানুষের নিত্যপণ্য সেবা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে একাধিক আদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। ভুল মামলায় কারাভোগ করা পাটকল শ্রমিক জাহালমের কারামুক্তি হয়েছে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে।

আজহারের মৃত্যুদণ্ড বহাল

মক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিল খারিজ করে গত ৩১ অক্টোবর তার মৃত্যদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আজহারের করা আপিল খারিজ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আাপিল বিভাগ এই রায় দেন। তবে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনো প্রকাশ হয়নি। পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হলে রিভিউর সুযোগ থাকবে।

২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন আজহার। চলতি বছর ১০ জুলাই তার আপিলে শুনানি শুরু হয়। তার আগে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজহারের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিলেন।

কায়সারের রায় ১৪ জানুয়ারি

মানবতাবিরোধী অপরাধে অপর আপিলে আগামী ১৪ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জাতীয় পার্টির নেতা ও সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মামলায় রায় দেবেন আপিল বিভাগ। দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ৩ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের বেঞ্চ রায়ের এ দিন ধার্য করেন। 

খালেদার জামিন আবেদন খারিজ ও হট্টগোল

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন গত ১২ ডিসেম্বর খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। আদালত ওইদিন তার সম্মতি সাপেক্ষে উন্নত চিকিৎসার নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন চেয়ে আপিল বিভাগে তিনি আবেদন করেন।

এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর খালেদার জামিন শুনানি পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হলে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা হট্টগোল করেন আপিল বিভাগে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের উপস্থিতিতে শুনানিতে নজিরবিহীনভাবে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘উই ওয়ান্ট বেইল ফর খালেদা’ স্লোগান দেন।

প্রধান বিচারপতি বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘বাড়াবাড়ির সীমা থাকা উচিত। আপনারা এজলাস কক্ষে যে আচরণ করেছেন, তা নজিরবিহীন।’

এ ঘটনার জেরে আপিল বিভাগে গত ১০ ডিসেম্বর ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

৫২ ভেজাল পণ্য প্রত্যাহারের নির্দেশ

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় নিম্নমান প্রমাণিত হওয়ায় ৫২টি খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার করতে গত ১২ মে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এসব খাদ্যপণ্য বিক্রি ও সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতি এই নির্দেশ দেন আদালত।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশে যতক্ষণ পর্যন্ত ওই ৫২ পণ্য বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় পুনরায় উত্তীর্ণ না হচ্ছে, ততক্ষণ এসব পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ রাখতে বলেন।

পাস্তুরিত তরল দুধ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা

বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সধারী ১৪ কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ও ধাতব উপাদানের (সিসা) উপস্থিতি থাকায় আদালত দুধ উৎপাদন ও বিপণনে পাঁচ সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা দেন। একইসঙ্গে এসব দুধ ক্রয় ও মজুদ করা থেকেও বিরত থাকার নির্দেশ দেন।

গত ২৮ জুলাই বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে মিল্ক ভিটা, ডেইরি ফ্রেশ, ইগলু, ফার্ম ফ্রেশ, আফতাব মিল্ক, আলট্রা মিল্ক, আড়ং ডেইরি, প্রাণ মিল্ক, আইরান, পিউর, সেইফ মিল্ক।

পরদিন ২৯ জুলাই আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের এ আদেশ আট সপ্তাহ স্থগিত করেন। এই স্থগিতাদেশ নিয়ে আবারো দুধ উৎপাদন করে যাচ্ছে কোম্পানিগুলো।

ভোক্তা অধিকারের হটলাইন

ভোক্তাদের অভিযোগ শুনতে গত ১৬ জুন হাইকোর্ট দুই মাসের মধ্যে ২৪ ঘণ্টার হটলাইন সেবা চালু করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন। এরপর ২৭ আগস্ট আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে হটলাইন চালু করতে বলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে কারামুক্ত জাহালম

‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক গত ৩০ জানুয়ারি একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে পাটকল শ্রমিক মো. জাহালম হাইকোর্টের নির্দেশে কারামুক্ত হন।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ সোনালী ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের করা সব মামলা থেকে নিরীহ জাহালমকে অব্যাহতি দিয়ে ওইদিনই মুক্তির নির্দেশ দেন। আদালত বলেন, ‘এক নির্দোষ লোককে এক মিনিটও কারাগারে রাখার পক্ষে আমরা না।’

সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু দুদকের ভুলে সালেকের বদলে আটক হয়ে সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করেন টাঙ্গাইলের জাহালম।

ক্ষতিপূরণ: রাজীবের দুই ভাই, রাসেল সরকার, রেনু, ভুল চিকিৎসা

বার্তা২৪.কমের হিসেবে ২০১৯ সালে হাইকোর্ট মোট ২৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের রায় ও রুল জারি করেছেন। এরমধ্যে তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের হাত হারানোর পর মৃত্যুর ঘটনায় জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে তার দুই ভাইকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের রায় দেন হাইকোর্ট।

গ্রিনলাইনের বাস চাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের অন্তবর্তী আদেশ দেওয়া হলে দুই দফায় পাঁচ লাখ টাকা করে ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন তিনি। বাকি ৪০ লাখ টাকা কিস্তিতে পরিশোধের আদেশ স্থগিত হয়েছে আপিল বিভাগের নির্দেশে।

রাজধানীতে বাসের চাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা দিতে গত ১২ মার্চ আদেশ দেন হাইকোর্ট। পরে এ আদেশ আপিল বিভাগে বহাল থাকে ৩১ মার্চ। শুরুতে পাঁচ লাখ টাকা গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করলেও বাকি টাকা দিতে গড়িমসি শুরু করে। পরে আদালত পাঁচ লাখ টাকার কিস্তিতে নির্ধারণ করে দিলেও আরো পাঁচ লাখ টাকাসহ মোট দশ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয় রাসেলকে।

এরমধ্যে গত ১৪ অক্টোবর বাকি ৪০ লাখ টাকা কিস্তিতে পরিশোধের হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে জারি করা রুল শুনানির নির্দেশ দেওয়া হয় হাইকোর্টকে।

২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল রাজধানীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা-কাটাকাটির জেরে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেট কারচালক রাসেল সরকারের (২৩) ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার বাঁ পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া রাজীব হোসেনের দুই ভাইকে এক মাসের মধ্যে ১০ লাখ টাকা দিতে গত ১৩ অক্টোবর স্বজন পরিবহনকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। এর আগে গত ২০ জুন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এক রায়ে রাজীবের দুই ভাইকে ২৫ লাখ টাকা করে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে স্বজন পরিবহন ও বিআরটিসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল স্বজন পরিবহণ ও বিআরটিসি বাসের রেষারেষিতে রাজধানীর তিতুমীর কলেজের স্নাতকের (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেনের (২১) বাম হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব।

রাজধানীর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত তাসলিমা বেগম রেনুর পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

নিহত রেনুর পরিবারের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২৭ আগস্ট বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টেও দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

২০ জুলাই রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় মেয়েকে ভর্তি করানোর তথ্য জানতে স্থানীয় একটি স্কুলে যান তাসলিমা বেগম রেনু (৪০)। এ সময় তাকে ছেলেধরা সন্দেহে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে টেনে এনে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়।

রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় পঙ্গু হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান শামীমকে কেন ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

ক্ষতিপূরণ চেয়ে শামীমের পক্ষে করা এক রিটের শুনানি নিয়ে ২২ আগস্ট বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

একজন যুগ্ম সচিবের অপেক্ষায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ঘাটে ফেরি আটকে রাখার ঘটনায় স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুতে তার পরিবারকে তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ২৯ জুলাই বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

দেশের ফুটবলে উত্থান-পতনের ছোঁয়া



নজরুল ইসলাম, স্পোর্টস রিপোর্টার, বার্তা২৪.কম
ভালো-মন্দ মিলিয়ে একটি বছর পার করল বাংলাদেশের ফুটবল

ভালো-মন্দ মিলিয়ে একটি বছর পার করল বাংলাদেশের ফুটবল

  • Font increase
  • Font Decrease

মাঠের পারফরম্যান্সে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে ২০১৯ সালকে বিদায় জানিয়েছে বাংলাদেশের ফুটবল। শুধু স্বপ্নভঙ্গের গল্প লেখেনি দেশের ফুটবলাররা। উৎসব করার মতো সাফল্যও ধরা দেয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের হাতে। সদ্য বিদায় নেওয়া বছরে দেশের ফুটবলের সেই হাসি আর কষ্টমাখা স্মৃতিগুলো একবার রোমন্থন করা যাক-

কাতার বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে বাংলাদেশ

২০১৯ সালে মাঠের লড়াইয়ে বেশ উজ্জ্বল ছিল বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দল। উতড়ে যায় বিশ্বকাপ প্রাক বাছাই পর্বের বাধা। দুরন্ত পারফরম্যান্সে লাওসকে হারিয়ে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে পা রাখে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে দাপুটে প্রতিরোধ গড়ে ড্র ছিনিয়ে নেয় দেশের দামাল ছেলেরা। যে পারফরম্যান্স বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালি অতীতে ফিরে যাওয়ার আভাস দেয়।

অন্য দিকে প্রীতি ম্যাচে কম্বোডিয়ার বিপক্ষেও জেতে বাংলাদেশ। আর ঢাকায় ভুটানকে দুই ম্যাচে ধরাশায়ী করে কোচ জেমি ডে-র শিষ্যরা।

ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে ট্রফি জয়

সদ্য অতীত হওয়া বছরে অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছে দেশের ছেলেরা। মালদ্বীপকে হারিয়ে চার দলের উয়েফা অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে সেরা হয় বাংলাদেশ।

এএফসি কাপের সেমিতে আবাহনী

ক্লাব ফুটবলে গেল বছর নতুন কীর্তি গড়ে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। এএফসি কাপের আঞ্চলিক সেমি-ফাইনালের টিকিট কাটে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দলটি। তা আবার প্রথমবারের মতো। শেষ চারের প্রথম লেগে জয়ও ছিনিয়ে নেয় আবাহনী। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রতিপক্ষ উত্তর কোরিয়ান ক্লাব এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভকে ধরাশায়ী করে তারা। কিন্তু পিয়ংইংয়ের ফিরতি লেগে হারের তেতো স্বাদ নিয়ে ঘরে ফেরে আবাহনী।

এসএ গেমসে স্বপ্নভঙ্গ

নেপাল এসএ গেমসে আর্চারির দশটি স্বর্ণপদকই জিতেন রোমান সানারা। সুবাদে নিজেদের পুরনো রেকর্ড ভেঙে ১৯টি স্বর্ণপদক জেতার নতুন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু ফুটবলে লেখা হয় ব্যর্থতার গল্প।

খেলার কথা অনূর্ধ্ব ২৩ দলের। সেখানে বাংলাদেশ লড়াই করেছে জাতীয় দল নিয়ে। তার চেয়ে বড় কথা। নেপাল এসএ গেমসে ফুটবল দল পাঠায়নি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভারত। তাই বাংলাদেশের ফাইনালে উঠার সম্ভাবনা জোরালো ছিল। কিন্তু গেমসে প্রথমবারের মতো ভুটানের কাছে হেরে ফাইনালে উঠার স্বপ্ন ভেঙে যায় বাংলাদেশের ছেলেদের। আর গেমসে মেয়েদের দলই পাঠায়নি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।

এএফসির সেরা গোল

মামুনুল ইসলাম ও সোহেল রানার গোল দর্শকদের ভোটে এএফসি-র সপ্তাহ সেরা গোলের মর্যাদা পায়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে উত্তর কোরিয়ার ক্লাব এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভের বিপক্ষে করা আবাহনীর মিডফিল্ডার সোহেল রানার গোলটি জায়গা করে নেয় এএফসি-র সেরা গোলের তালিকায়। তার আগে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে নেপালের মানাং মার্সিয়াংদি ক্লাবের বিপক্ষে আবাহনীর মাঝ-মাঠের তারকা ও বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলামের গোল সপ্তাহ সেরা নির্বাচিত হয়।

শেখ কামাল ক্লাব কাপ

শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে শিরোপা জিতে নেয় মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু এফসি। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনীকে ২-১ গোলে হারায় তেরেঙ্গানু। রানার্স-আপ ট্রফি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় কোচ মারুফুল হকের বন্দরনগরীর ক্লাবটিকে।

বসুন্ধরার লিগ ট্রফি

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) প্রথমবার পা রেখেই সবাইকে চমকে দেয় বসুন্ধরা কিংস। নিজেদের অভিষেক মৌসুমেই ঘরে তুলে দেশের লিগ ট্রফি। লিগের ২২তম ম্যাচে মোহামেডানের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেই শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলে টুর্নামেন্টের নবাগত দলটি।

গোল্ডকাপ সেরা মেয়েরা

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা অনূর্ধ্ব-১৯ গোল্ডকাপে ছোবল দিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ফণী। বাজে আবহাওয়ার কারণে ফাইনাল ম্যাচটিই মাঠে গড়ায়নি। অন্য ফাইনালিস্ট লাওসের সঙ্গে যুগ্মভাবে শিরোপা ভাগাভাগি করে দেশের মেয়েরা।

এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে আঁখিরা

গেল বছর ফের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের মূল পর্বে খেলে দেশের মেয়েরা। টুর্নামেন্টের মূল পর্বে টানা দ্বিতীয়বারের মতো অংশ নেয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তবে নেপালের সাফ ফুটবলের শেষ চারে উঠেও ভারতের কাছে হেরে বিদায় নেয় বাংলাদেশের মেয়েরা।

ক্লাব পাড়ায় শুদ্ধি অভিযান

ক্যাসিনোর মূল উৎপাটন করতে মতিঝিলের ক্লাব পাড়ায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চালায় শুদ্ধি অভিযান। এতে স্তব্ধ হয়ে পড়ে মোহামেডান, আরামবাগ ও ফকিরেরপুলসহ ঢাকার অন্য ফুটবল ক্লাবগুলো। জুয়া আর ক্যাসিনোর অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে নতুনভাবে এগিয়ে চলার চেষ্টা করছে এখন অভিযুক্ত ক্লাবগুলো।

;

আলোচনায় ছিল জঙ্গিদের নতুন কৌশলে হামলা



শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

২০১৬ সালে পুরো বাংলাদেশকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা। এ ঘটনার পরে জঙ্গিরা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। একের পর এক অভিযানে মেরুদণ্ড ভেঙে যায় জঙ্গি চক্রের।

তবে ২০১৯ সালে এসে হঠাৎ জঙ্গিরা তাদের কৌশল পরিবর্তন করে নতুনভাবে হামলার পরিকল্পনা করে। রাজধানীসহ একাধিক জায়গায় আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা।

এ ঘটনা আমলে নেন স্বয়ং পুলিশ প্রধান ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি বলেন, জঙ্গিরা হামলার ধরন বদলে (লোন উলফ) ‘একাকী’ হামলার কৌশল আঁটায় তা উদ্বেগের নতুন কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গিরা এবার টার্গেট করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।

অতীতের একাধিক হামলার ঘটনা পর্যালোচনা করে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের সব ইউনিটে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশও দেন পুলিশ প্রধান। সে অনুযায়ী সারা দেশের পুলিশ সতর্ক হয়ে ওঠে।

সর্বশেষ খুলনার খানজাহান আলী থানার আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় এ হামলা হয়। কেউ হতাহত না হলেও আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, উদ্ধার করা হয় ককটেল।

গত তিন বছরে কোণঠাসা হয়ে থাকা জঙ্গিরা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে ২০১৯ সালে। এরই ধারাবাহিকতায় বছরের শুরুতে অর্থাৎ মার্চ ও এপ্রিল মাসে গুলিস্তান এবং মালিবাগে পুলিশ বক্স ও পুলিশ ভ্যানে বোমার বিস্ফোরণ ঘটনায় তারা। আর ২৩ জুলাই প্রায় একই সময়ে পল্টন ও খামারবাড়িতে দুই পুলিশ বক্সের পাশে তারা বোমা রেখে যায়। যদিও বোমা দুটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা তাদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে ২০১৯ সালে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের নজরে আসতে চায় এ দেশের জঙ্গিরা। আইএস জঙ্গিগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে প্রত্যেকটি ঘটনার দায়ও স্বীকার করেছে।

পুলিশ বলছে, হামলায় ব্যবহৃত হতো ককটেল কিন্তু ইমপ্রোভাইজড। যা সাধারণ ককটেলের চেয়ে শক্তিশালী। প্রত্যেকটা ঘটনা ‘লোন উলফ’ (একাকী) বা উলফ প্যাকের (৪/৫ জন মিলে) পরিকল্পনা ফলো করে হামলা করে জঙ্গিরা। 

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে জঙ্গি প্রতিরোধে বিশেষায়িত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, ‘লোন উলফ (একাকী) বা উলফ প্যাক (৪/৫ মিলে)’ হামলার কৌশলে জঙ্গিদের সংগঠিত হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশে নতুন ছিল। এর সদস্যরা নিজেরা নিজেরা র‌্যাডিক্যালাইজড হয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করছে। এরকম একাধিক ‘উলফ প্যাক’ রয়েছে বলেও ধারণা করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

গোয়েন্দারা বলছেন, সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি ‘সেল্ফ র‌্যাডিক্যালাইজড’ হয়ে ‘লোন উলফ’ বা ‘উলফ প্যাক’-এর মাধ্যমে হামলার পরিকল্পনা করলে তা ঠেকানো অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোও এভাবে হামলা চালানোর জন্য নিয়মিত আহ্বান চালিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে সিটিটিসির প্রধান ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক আমরা ভেঙে দিতে পেরেছি। কিন্তু এরা যেহেতু বিচ্ছিন্ন ও মতাদর্শিকভাবে এক্সিস্ট করে, সে হিসেবেই তারা বিচ্ছিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই চেষ্টা বা কার্যক্রম চালানোর প্রক্রিয়া হিসেবেই এরকম আরও কিছু ছোট ছোট ‘স্লিপার সেল’ বা ‘উলফ প্যাক’ তৈরি হয়েছে। অভিযান চালিয়ে তাদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

;

লিভারপুল-ব্রাজিলের শিরোপা উৎসব, ব্যালন ডি'অরে মেসির রেকর্ড



নজরুল ইসলাম, স্পোর্টস রিপোর্টার, বার্তা২৪.কম
কেটেছে লিভারপুল-ব্রাজিলের শিরোপা খরা, ব্যালন ডি'অর রাজ্যে মেসির ফেরা

কেটেছে লিভারপুল-ব্রাজিলের শিরোপা খরা, ব্যালন ডি'অর রাজ্যে মেসির ফেরা

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্ণিল একটি বছর পার করল আন্তর্জাতিক ফুটবল। বিতর্ক, সাফল্য, শিরোপা জয় আর চমকে ভরা বছরটা সন্দেহ নেই স্মরণীয় থাকবে বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসের পাতায়। ঘটনাবহুল বিদায়ী বছরের স্মৃতিচারণায় নিশ্চিত আগামী দিনগুলোতে মুখরিত থাকবেন ফুটবল অনুরাগীরা। লিভারপুলের চ্যাম্পিয়নস লিগ, পর্তুগালের ন্যাশন্স কাপ আর ব্রাজিলের কোপা আমেরিকা জয়, উয়েফা অ্যাওয়ার্ডে ভার্জিল ফন ডাইকের চমক, মেসির নিষেধাজ্ঞা আর ষষ্ঠ ব্যালন ডি'অর জয়ের কীর্তি গড়ার মতো গেল বছরের আলোচিত ঘটনায় একবার চোখ ফেরানো যাক তাহলে-

ব্রাজিলের কোপা আমেরিকা জয়

কোপা আমেরিকায় দীর্ঘদিন ধরে চলছিল শিরোপা খরা। তা প্রায় এক যুগ। সেই খারাপ সময়টা পেরিয়ে ২০০৭ সালের পর ব্রাজিলের ঘরে বিদায়ী বছরে প্রথম এসেছে কোপা আমেরিকার ট্রফি। ফাইনালে পেরুকে হারিয়ে আসরের নবম শিরোপা জিতে অনেক দিনের হতাশা দূর করেছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হারের ক্ষত কিছুটা হলেও শুকিয়ে দিয়েছে ঘরের মাঠের এ শিরোপা জয়।

মেসির নিষেধাজ্ঞা

মেজর ফুটবল আসরে আর্জেন্টিনার দুঃস্বপ্নটা কিছুতেই যেন কাটছে না। ২০১৯ কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনার সেই দুঃস্বপ্নটা আরো একটু স্থায়ী হলো বৈকি! দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের সর্বোচ্চ এ টুর্নামেন্টের শেষ চারে চির শত্রু ব্রাজিলের মাঠে তাদের কাছেই হেরে ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি ফের পুড়লেন শিরোপা না জেতার আক্ষেপের আগুনে। সেই হতাশা হজম করতে না পেরে দিয়ে ফেলেন বিতর্কের জন্ম। যেটা নিপাট ভদ্র মেসির সঙ্গে কোনোভাবেই যায় না।

প্রতিবেশী ব্রাজিলের কাছে হেরে রেকর্ড ষষ্ঠবারের ব্যালন ডি'অর জয়ী এ সুপারস্টার আয়োজকদের দাঁড় করান নিজের কাঠগড়ায়। অভিযোগ তোলেন পাতানো' কোপা আমেরিকা আয়োজনের। চিলিকে হারিয়ে কোপার তৃতীয় সেরা দলের মর্যাদা ছিনিয়ে নেওয়ার ম্যাচে মেসি দেখেন লাল কার্ড। ফের মাথা গরম করে ফেললেন। বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কের রসদ যোগান দেন আর্জেন্টাইন এ ফুটবল মহাতারকা। এবার অভিযোগ করেন- স্বাগতিক ব্রাজিলকে জেতাতেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল। ঠিক এ অপরাধেই আন্তর্জাতিক ফুটবলে তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ হন মেসি।

ন্যাশন্স কাপ পর্তুগালের

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর হাত ধরে ২০১৬ সালে ইউরো জয়ের পর ইউরোপিয়ান ফুটবলে গেল বছর আরো একটি বড় সাফল্য পায় পর্তুগাল। জিতে নেয় তারা উয়েফা ন্যাশন্স কাপের প্রথম আসরের ট্রফি। এ সাফল্যেও অসামান্য অবদান রাখেন পর্তুগিজ মেগাস্টার রোনালদো। পাঁচবারের ব্যালন ডি'অর জয়ী সিআর সেভেনের হ্যাটট্রিকে সুইজারল্যান্ডকে ধসিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে পর্তুগাল। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ধরাশায়ী করে নিজেদের দ্বিতীয় মেজর ট্রফি ঘরে তুলে কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের শিষ্যরা।

ব্যালন ডি'অরে মেসির রেকর্ড

প্রিয় জন্মভূমি আর্জেন্টিনার হয়ে এবছরও বড় কোনো শিরোপা জিততে পারেননি লিওনেল মেসি। ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে জিতেন শুধু লা লিগা ট্রফি। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে বল পায়ে তার ফুটবল জাদু মুগ্ধ করে রাখে পুরো দুনিয়াকে। সুবাদে ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার বনে যান মেসি। তার ধারাবাহিকতায় ব্যালন ডি'অরে নিজের রাজ্যত্ব ফিরে পান আর্জেন্টাইন এ ফুটবল জাদুকর। ২০১৯ সালের ব্যালন ডি'অর জিতে লিখে ফেলেন নতুন ইতিহাস। পুরনো রেকর্ড ভেঙে গড়েন ষষ্ঠ ব্যালন ডি'অর জয়ের রেকর্ড।

ভার্জিল ফন ডাইকের চমক

লিভারপুলের হয়ে দুরন্ত পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে সবার নজর কাড়েন ভার্জিল ফন ডাইক। দ্য রেড শিবিরকে উপহার দেন চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি। সুবাদে সবাইকে চমকে লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে পিছনে ফেলে এ ডাচ ডিফেন্ডার জিতে নেন উয়েফার বর্ষসেরা ফুটবলার অ্যাওয়ার্ড।‌

লিভারপুলের ঘরে চ্যাম্পিয়নস লিগ

লিভারপুল সর্বশেষ ইউরোপ সেরার তকমা জিতে ছিল ২০০৫ সালে। দীর্ঘ ১৫ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়ে কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের অধীনে সদ্য অতীত হওয়া বছরে চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি জিতেছে দ্য রেড শিবির। টটেনহ্যাম হটস্পারকে হারিয়ে ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি ছিনিয়ে নেয় অ্যা‌নফিল্ড শিবির। তবে লিভারপুলের লিগ ট্রফির খরাটা এখনো কাটেনি। ১৯৯০ সালে সর্বশেষ লিগ ট্রফি জেতে তারা। তবে মাঠের লড়াই আর ফর্ম দেখে এটা বলাই যায়, কোনো অঘটন না ঘটলে দীর্ঘ ৩০ বছর পর চলতি মৌসুমের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি উঠতে যাচ্ছে লিভারপুলের শোকেজেই।

;

নানা বিতর্কে বিতর্কিত ডাকসু!



ইমরান হোসাইন, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ আটাশ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। নির্বাচন প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল নানা বিতর্ক দিয়ে। এখনও সে বিতর্ক চলমান। নির্বাচনের আগে প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ, সহাবস্থান নিশ্চিত করতে না পারা, ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনের বাইরে থাকা, ছাত্রত্ব না থেকেও ভোটে অংশগ্রহণ ইত্যাদি ছিল বিতর্কের বিষয়। সে বিতর্ক থামেনি নির্বাচনের পরও। কখনও সমন্বয়হীনতা, একে অপরকে দোষারপ করা, পদধারী নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজির অভিযোগ, বিভিন্ন জায়গায় ডাকসু ভিপির ওপর হামলা, ডাকসু ভবনে হামলা-বছর জুড়ে এসব বিতর্ক চলছেই।

তবে এত সব বিতর্কের মধ্যে ভালো কাজের জন্যও আলোচনায় ছিল ডাকসু। মোটাদাগে ক্যাম্পাসে জো বাইক সেবা চালু, হলগুলোতে গেস্টরুমের নির্যাতন অনেকাংশে বন্ধ, পরিবহন ট্রিপ বাড়ানো, লাইব্রেরির সময় বৃদ্ধি, ভেন্ডিং মেশিনে ন্যাপকিন ছিল ডাকসুর উল্লেখযোগ্য কাজ।

আদালতের বাধ্যবাধকতায় ২৩ জানুয়ারি ডাকসুর তফসিল ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে ভোটগ্রহণের তারিখ হিসাবে ১১ মার্চ দিনকে ধার্য করা হয়। তফসিল ঘোষণার পরপরই ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের দাবিতে সরব হতে থাকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলো।

১১ মার্চ সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ। মোট ১৮টি আবাসিক হলে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন রাতেই ব্যালট ভর্তি বাক্স পাওয়ার অভিযোগে স্থগিত করা হয় কুয়েত মৈত্রী হলের ভোট গ্রহণ। হট্টগোল বাধে রোকেয়া হলেও। এছাড়া নির্বাচনে ছাত্রলীগ কর্তৃক ভোট প্রদানে বাধা, অনিয়ম, কৃত্রিম লাইন তৈরি, রাতে ব্যালট বাক্স ভরা এসব অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন ছাত্রলীগ ছাড়া বাকী সব প্যানেল। ছাত্রলীগ ছাড়াও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল কোটা সংস্কার আন্দেলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, স্বতন্ত্র জোট ও একক প্রার্থীরা।

নির্বাচন বর্জন করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে তারা। ১১ মার্চ রাত সোয়া তিনটার দিকে ফলাফল ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। ঘোষিত ফলাফলে ডাকসুর পঁচিশটি পদে ২৩টিতেই জয় পায় ছাত্রলীগ। এছাড়া ভিপি পদে জয়ী হন কোটা সংস্কার আন্দোলন কারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক নুরুল হক নুর এবং সমাজসেবা সম্পাদক পদে তার সংগঠনের আখতার হোসেন। ছাত্রলীগ সভাপতি (দুর্নীতির দায়ে অব্যাহতিপ্রাপ্ত) রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে হারান নুরুল। শোভনের সমর্থকরা হট্টগোল বাধিয়ে দেয়।

একদিকে নির্বাচন বর্জন কারীদের আন্দোলন অন্যদিকে ভিপি পদে জয়ী হতে না পেরে ছাত্রলীগের বিবাদমান অবস্থান। পরে বিকেলে টিএসসিতে নুরকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করে শোভন। নুরকে সহযোগিতা করার অঙ্গীকার করেন তিনি। এদিকে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনকারীদের আন্দোলন চলমান ছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু সেটা আর আলোর মুখ দেখেনি।

নানা বিতর্কের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণে গণভবনে যান ডাকসু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। ২৪ এপ্রিল ডাকসু ভবনে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম কার্যনির্বাহী সভা। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য হিসেবে মনোনীত করে ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিতরা। কিন্তু দ্বিমত পোষণ করে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। শুরু হয় আবারও বিতর্ক।

এরপর দেখা যায় ডাকসুর সমন্বয়হীনতা। পৃথক মন্ত্রণালয়ের মতোই চলতে থাকে ডাকসু। প্রত্যেকে সম্পাদক, সদস্য সবাই সবার মতো কাজ করতে থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাকসু ভিপিকে দাওয়াত দেওয়া হয় না, ডাকসুর কর্মচারী নিয়োগে ভিপির নাম না থাকা, প্রেস রিলিজে স্বাক্ষর না থাকা সবকিছু সৃষ্টি করে নতুন আরেক বিতর্ক।

এরপর সিনেটে ৫ জন ছাত্রপ্রতিনিধি নির্বাচনকালে ডাকসুর বাহির থেকে মনোনীত করা হয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে। যেটাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যৌক্তিকভাবে মেনে নিতে পারেনি।

এরপরই কয়েকদফা আক্রমণের শিকার হন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। নির্যাতিত শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াতে গিয়ে সলিমুল্লাহ হলে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হন।এরআগে বগুড়ায় ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে গিয়েও হামলার শিকার হন। নিজ এলাকা পটুয়াখালীর গলাচিপায়ও ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে তিনি হামলার শিকার হন।এরই মধ্যে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে ওঠে ১৩ কোটি টাকার টেন্ডার বাণিজ্যের অভিযোগ। যেটাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে থাকে তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামক একটি সংগঠন। সর্বশেষ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলার শিকার হন নুর ও তার সহযোগীরা। দিনে দুপুরে ডাকসু ভবনের বাতি বন্ধ করে তাদের ওপর রড, স্ট্যাম্প, কাঠ, বাঁশ নিয়ে চড়াও হয় ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এতে নুর ও তার সহযোগীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়। যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক রয়েছে এখনও চারজন।

ডাকসুর বিতর্ক এখানেই শেষ নয়। ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত জিএস রাব্বানী নৈতিক স্খলনের দায়ে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কৃত হন। তার বিরুদ্ধে এমফিলে ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগও আছে। তবুও তিনি কিভাবে ডাকসুতে স্বপদে বহাল থাকেন সেটা নিয়েও বিতর্ক এখনও চলছে।

ডাকসুর এজিএস সাদ্দামের একটি ব্যক্তিগত একাডেমিক সংবাদ গণমাধ্যমে আসে। যেখানে দেখা যায় সাত বছরেও তিনি অনার্সের গন্ডি পেরুতে পারেনি। এমন একজন অনিয়মিত শিক্ষার্থী কিভাবে ডাকসুর এজিএস হন সেটা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।

এছাড়া ডাকসুতে প্রতিনিধিত্ব করা অনেকের বিরুদ্ধে ভর্তি না হয়ে ডাকসু নেতা এমন একটি শিরোনামে একটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যাতে দেখা যায় চিরকুটের মাধ্যমে ভর্তি হয়ে তারা ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছে। সে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। জালিয়াতি করেছেন যারা তাদের পদ বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবিসহ উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন তারা।

অথচও ডাকসু ঘিরে স্বপ্ন দেখেছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তাদের সে আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি ডাকসুতে। বরং ডাকসু ছিল বিভিন্নভাগে বিভক্ত। ডাকসু নেতারা পদকে ব্যবহার করেছে নিজেদের স্বার্থে। টকশো আর দলীয় লেজুড়বৃত্তি থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি তারা। বরং বিভিন্ন সময় জন্ম দিয়েছে বিভিন্ন বিতর্কের। ডাকসু ঘিরে বিতর্কই অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। সে বিতর্ক আদৌ থামবে কিনা সেটাও বলতে পারছেন না কেউ।

;