দেশে বড় সমস্যা এখন কিশোর গ্যাং: আইজিপি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ

আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, আমাদের দেশে বড় সমস্যা এখন কিশোর গ্যাং। এটাকে মোকাবিলা করতে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ এই কিশোর-কিশোরীরাই ২০৪১ সালের ধনী দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। সেই শিশুরা ড্রাগ নিয়ে কিংবা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য হয়ে ধ্বংস হয়ে যাক সেটা আমাদের কোন মতেই বরদাশত করা যাবে না। সেজন্য আমাদের সমাজ-পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে।

সোমবার (১১ জানুয়ারি) র‍্যাব সদর দফতরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘র‍্যাব সেবা সপ্তাহ’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বেনজীর আহমেদ বলেন, পরিবারকে জানতে হবে তার ছেলে-মেয়ে কোথায় যায়, কার সাথে মিশে, কি করে, কখন যায়, এটা প্যারেন্টাল কন্ট্রোল। এটি অবশ্যই সন্তানের পিতামাতাকে নিতে হবে। সন্তান জন্ম দিলে দায়-দায়িত্ব পিতামাতাকে নিতে হবে। দায়িত্ব নেবেন না তবে জন্ম দিয়েছেন কেন? এটি পিতা-মাতার সামাজিক, নৈতিক দায়িত্ব, ধর্মীয় দায়িত্বও বটে।

আইজিপি আরও বলেন, সন্তানের ভেতর নৈতিকতা, মূল্যবোধের বিষয়গুলো শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পিতা-মাতার। নতুন প্রজন্ম সামাজিকভাবে বিলুপ্ত বা বিনাশ হবে তা হতে দেওয়া যাবে না। এটা সুস্থ জাতি সত্ত্বার কাজ হতে পারে না।

পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু। মানবাধিকার কর্মীরা, এনজিওকর্মীরা অনেক হইচই করে অনেক আইন কিন্তু পরিবর্তন ও সংশোধন করেছেন। কিন্তু কলাবাগানে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা কিন্তু সুস্পষ্ট ক্রাইম। এখানে ধর্ষণের পাশাপাশি মৃত্যু ঘটানো হয়েছে। অথচ আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী উভয় কিন্তু শিশু। অথচ আমরা এই আইনগুলো করেছি। অবশ্যই আমাদের আধুনিকায়ন দরকার আইজিপি হিসেবে আমি দ্বিমত পোষণ করি না। তবে অত্যাধুনিক আইন করতে গিয়ে আমরা দেশের মধ্যে কোনো সমস্যা তৈরি করতেছি কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা শুধু করোনা মোকাবিলায় এগিয়ে আছি, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও আমরা এগিয়ে গিয়েছি। যে কারণে জিডিপির দিক দিয়ে সাম্প্রতিক আমরা ভারতে টপকে গেছি। এই অগ্রযাত্রাকে সবাই মিলে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা একটি নবীন জাতি। আমাদের দেশের মানুষের অনন্য বৈশিষ্ট হচ্ছে, আমাদের ভাষা এক, আমরা দেখতে এক, গায়ের রঙ এক, সংস্কৃতি এক, মূল্যবোধ এক। যার কারণে আমরা জাতিগত শক্তিতে পরিণত হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, র‍্যাবের সেবা সপ্তাহ শুধু সপ্তাহে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমাদের প্রতিটি সপ্তাহই হবে সেবার সপ্তাহ, আমাদের প্রতিটি মাসই হবে সেবার মাস, প্রতিটি বছর হবে সেবার বছর। বাংলাদেশে দুস্থ দরিদ্র শব্দগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির যে গতি আছে এটা যদি আমরা ধরে রাখতে পারি ও বেগবান করতে পারি তাহলে দরিদ্র দুস্থ শব্দ বাংলাদেশে থাকবে না।

র‌্যাব সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে এদিন র‍্যাব সদর দফতরের শহীদ লে. কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে ‘দরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা সহায়তা, বই বিতরণ এবং সনদপত্র প্রদান’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

   

‘আমরা বিক্রি না হলে বউ-বাচ্চার পেটে ভাত জোটে না’

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে সবে। এর মধ্যেই চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের আধুনিক চক সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাত ভরে উঠেছে মানুষের আনাগোণায়। সংখ্যায় ওরা ২০০-২৫০ জন। তাঁদের পরিচয় শ্রমিক, আরও স্পষ্ট করে বললে দিনমজুর। কেউ নির্মাণ-শ্রমিক, কেউ আসবাবের কাজ করেন, কেউবা করেন বাসা-বাড়ির মালামাল উঠানামা।

কেউ এলেই বসা থেকে এক দৌড়ে ঘিরে ধরে শ্রমিকের দল, আর অক্লান্ত গলায় হাঁক ছাড়তে থাকেন, ‘ভাই/স্যার আমাকে কিনেন…!’ মে দিবসের দুদিন আগে গত সোমবার ভোরের চিত্র এটি। তবে শুধু এইদিন নয়, মানুষ বিক্রির এই হাট বসে প্রতিদিনই। এভাবেই চলে আসছে অন্তত ৫০ বছর ধরে।

‘ঘরে ছয় ছেলে মেয়ে আর আমি ও আমার স্ত্রী। এই সময়ে আটজনের সংসারের ঘানি টানা কত কষ্টের বুঝতেই তো পারছেন। ভোর হওয়ার আগেই তাই এখানে আসি বিক্রি হওয়ার আশায়।’-এক টানে বলতে বলতে হঠাৎ থেমে গেলেন আবদুর রহিম। ‘তারপর’ বলে প্রশ্ন ছুঁড়লেও কথা বের হচ্ছিল না এই মধ্যবয়সীর মুখ থেকে। গলায় কি যেন দলা পাকিয়ে আছে। একটু পর স্যাঁতস্যাঁতে চোখে বলতে শুরু করলেন, ‘আমি বিক্রি না হলে বউ-বাচ্চাদের পেটে ভাত জোটে না। তাই শরীর যতই খারাপ হোক প্রতিদিন চলে আসি। কোনো সময় নিয়মিত কাজ পাই, কখনো পাই না।’

ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

কথা বলতে বলতেই এক ব্যক্তি এসে নির্মাণকাজের জন্য আবদুর রহিমকে নিতে চান। দরদাম শেষে ‘বিক্রি’ হতেই মুখে এবার খুশির হাসি। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের ভাত নিয়ে আজ আর কোনো টেনশন নেই।’

৩৫ বছর ধরে এখানে ‘বিক্রি’ হওয়ার আশায় আসেন সত্তরোর্ধ আবুল কাশেম। বয়স যথই ছোবল বসাক, সবসময় নিজেকে সবল দেখানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছেন এই প্রবীণ। বয়স লুকানোর রহস্য জানতে চাইলে কাশেমের মুখে অট্টহাসি। বলতে শুরু করেন,‘বয়স বেশি বললে কে কাজে নেবে? বলবে এই বুড়ো বয়সে কোনো কাজ পারবে না। তাই চেষ্টা করি নিজেকে সুস্থ দেখাতে।’ কি কাজ করেন এমন প্রশ্নে ভোলার আঞ্চলিক ভাষায় কাশেম জানালেন, তিনিও নির্মাণশ্রমিক।

ভোলার বোরহানউদ্দিনের বাসিন্দা কাশেম বহুবছর ধরে চট্টগ্রাম নগরীতে থাকছেন পরিবার নিয়ে। এতবছর বেশ ভালোভাবে কাজ করে গেলেও এখন বয়স ভাড়ায় প্রায় সময় থাকছেন অসুস্থ। কিন্তু তবুও তাঁকে প্রতিদিন ভোরে কাজের উদ্দেশে বের হতে হয় বাসা থেকে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কাজ করার জন্য কোনোদিন পান ৭০০ টাকা, কোনোদিন পান ৮০০টাকা।

বয়সে অনেকটাই তরুণ কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মোহাম্মদ ইসমাইলও এখানে ৫-৬ বছর ধরে এসে কাজ খুঁজে নিচ্ছেন। মে দিবস সম্পর্কে জানেন নাকি-এমন প্রশ্নে বললেন, ‘জানি, কিন্তু জেনে কি হবে? ওইদিনও তো কাজ করতে হবে। কাজ না করলে খাব কি?’


ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

ইসমাইলের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে সাইফুল ইসলাম নামের আরেক শ্রমিক বলতে শুরু করেন, ‘পেটে যদি ভাত না থাকে দিবস পালন করে কি হবে? সবকিছুর দাম যে এত বেশি। আমরা কি খাই, কীভাবে খাচ্ছি-কেউ তো খবর নেয় না। আবার দেখা যায় ১ হাজার টাকায় ভাড়া করে দিন শেষে হুট করে ছুতা বের করে ধরিয়ে দিচ্ছেন ৭০০-৮০০টাকা। যে যেভাবে পারে সেভাবেই আমাদের ঠকান। সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে।’-শ্রোতা পেয়ে যেন দুঃখের গল্পের জানালা খুলে দিলেন ইট-বালি বহন করার এই শ্রমিক।

সময়ের বয়স যতই বাড়তে থাকে ততই কমতে শুরু করে ভিড়। কারণ বিক্রি হওয়া শ্রমিকেরা যেতে শুরু করেন কাজে। কিন্তু অন্তত ৫০ জন শ্রমিকের অপেক্ষা যেন ফুরাচ্ছে না। একটু আগেই ঘড়ির কাটারা মিলেমিশে জানান দিয়েছে সময় এখন ৯টা। সেটি দেখে চল্লিশোর্ধ হাফিজের কপালে ঘামের পারদ যেন বেড়েই চলেছে। তিনিও অন্যদের মতো দাঁড়িয়েছিলেন ‘বিক্রি’ হতে। অপেক্ষা করতে করতে সকাল ১০টা বেজে গেলেও আরও অনেকের মতো থেকে যান অবিক্রিত। ঘড়ির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে হাফিজ বুঝে যান কপাল-লিখন। কি আর করা। ইট-বালি ভরার ঝুঁড়িটা পিঠে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন হাফিজ। তবে ফেরার সময় শেষবারের মতো একটা চেষ্টা করলেন হাফিজ। ফোন দিলেন ‘নব্যবন্ধু’ আবদুল খালেককে। খালেক বিক্রি হয়েছেন তাঁরই সামনে। প্রতিদিন একই সঙ্গে ‘মানুষ বিক্রি’র এই অঘোষিত হাটে দাঁড়াতে দাঁড়াতে তার সঙ্গে পরিচয় হাফিজের। ‘তুমি যেখানে কাজ করছো সেখানে কি আর লোক লাগবে? লাগলে কথা বলে দেখো তাদের সঙ্গে। মজুরি কম হলেও আমি কাজ করতে রাজি।’–খালেককে দুঃখ নিয়ে বলে গেলেন হাফিজ। খালেক ওদিকে কথা বলে উত্তর দিলেন হাফিজকে।

কি উত্তর দিয়েছেন সেটি জানতে আর হাফিজের সঙ্গে কথা না বললেও চলে। তার মলিন চেহেরাতেই যেন লেখা আছে সব!!

;

মহান মে দিবস: শ্রমে ঘামে মাঠে ঘাটে যে জীবন

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



মানসুরা চামেলী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: নূর এ আলম

ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

মাথার উপর তপ্ত সূর্য। ঘামে ভিজে সপসপে শরীর। জীর্ন মুখে মুক্তার মতো চক চক করছে ঘামের ফোঁটা। বিরতি দিয়ে টপটপ করে গাল-থুতনি বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা সেই ঘাম পড়ছে মাটিতে। রোদের এমন প্রখরতা; চোখ খুলে তাকানোটা দায়! আবহাওয়ার এমন বৈরিতায় দৃষ্টি কাড়ে মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে দাঁড়ানো এক সরল চাহনী! তাকে দেখলে মনে হবে বলছেন ‘আজন্ম কাঁধে শোষণের চাকা বইবো না/ এবার লড়াই, এবার লড়াইয়ে অস্ত্র শানিয়ে দাঁড়া।’

সূর্যের উগ্রতা তোয়াক্কা করে তুরাগের তীরে দাঁড়িয়ে থাকা সরল চাহনীর এই নারী একজন দিনমজুর। ঢাকার আমিন বাজার ল্যান্ডিং স্টেশনের কাছে তুরাগ নদীর তীরে বালু লোড-আনলোডের কাজ করেন তিনি। দিনভর উত্তপ্ত গরমে শ্রম দেন, তার বিনিময়ে যৎসামান্য মজুরির জুটে তার কপালে। তাদের বলা হয় শ্রমজীবী মানুষ। যাদের সংসারে অভাব লেগেই থাকে। দুবেলা ভালো খাবার জুটত না। সংসারের অভাব দূর করতে করেন অমানসিক পরিশ্রম।

ছবি: নূর এ আলম

এমন শ্রমজীবী মানুষের জন্য অধিকার রক্ষায় ১ মে পালিত হয় আন্তজার্তিক শ্রমিক দিবস। দিনটি মে দিবস বলেও পরিচিত। আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রম অধিকার আদায়ের এ দিনটি বছরের পর বছর ধরে বিশ্বব্যাপী যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। শ্রমিকদের সম্মানে মে দিবস ও জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালন করে বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশ।

উনিশ শতাব্দীর আগে কারখানার শ্রমিকদের দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চাইতেও বেশি। কিন্তু কাজ অনুপাতে পারিশ্রমিক ছিল স্বল্প। যা তাঁদের জীবনধারণের জন্য যথাযথ ছিল না। একটা পর্যায়ে শ্রমিকপক্ষ ক্ষুব্ধ হতে থাকে। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে একদল শ্রমিক মালিকপক্ষকে দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মসময় নির্ধারণের দাবি জানায়। এ দাবি পূরণের সময় হিসেবে ১৮৮৬ সালের ১ মে নির্ধারণ করেন শ্রমিকেরা। কিন্তু কারখানার মালিকেরা শ্রমিকদের এ দাবি কানে তোলেননি। ফলাফলে ১৮৮৬ সালের ৪ মে শিকাগোর হে মার্কেট নামক স্থানে ফের আন্দোলন গড়ে তোলেন শ্রমিকেরা। সেখানে পুলিশ আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি বর্ষণ করলে নিহত হন ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক।


এ ঘটনার দুই বছর পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে ফরাসি বিপ্লবের ১০০ বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেসে শিকাগো শ্রমিক আন্দোলনের দিনটিকে ১৮৯০ সাল থেকে পালনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। পরের বছর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কংগ্রেসে প্রস্তাবনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। পরে ১৯০৪ সালে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বব্যাপী মে মাসের প্রথম দিন মিছিল ও শোভাযাত্রার আয়োজন করতে সব সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল ও শ্রমিক সংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ আহ্বানের সাড়া হিসেবে বিশ্বের প্রায় সব শ্রমিক সংগঠন ১ মে বাধ্যতামূলক কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক দেশের শ্রমিকেরা মে মাসের ১ তারিখ সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানান। বিভিন্ন দেশে মে দিবস সরকারিভাবে ছুটির দিন হিসেবে পালিত হতে থাকে। ধীরে ধীরে রাশিয়া, চীন, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এ দিনটির তাৎপর্য ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার দাবি।


শ্রমিকদের অধিকার ও দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মে দিবস পালিত হয়। স্বাধীনতার পর মে দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে মহান মে দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মে দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় মে দিবস।

তবে শ্রমিকদের কাছে মে দিবস যেন আরেকটা দিন। এ বিষয়ে অনেকেই অবগত নন। কারণ এই দিনেও তাদের জীবিকার সন্ধানে বের হতে হবে। না হলে জুটবে না দুমুঠো ভাত। অনাহারে থাকবে পরিবারের সদস্যরা। সুতরাং যাদের জন্য শ্রম দিবস তাদের কাছে এই দিনটির কোন গুরুত্ব নেই। নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীদের কাছে শ্রমেই ধর্ম, শ্রমই কর্ম। তাই তো বালু শ্রমিকসহ শ্রমিকদের মুখে একই বক্তব্য ‘আমাদের সব দিবসই সমান। কাম করলে টাকা না করলে কোন টাকা পায় না। এই জন্য আমাগো কোন ছুটির দিনও নেই। কাম করায় লাগবে। কাম না করলে সংসারই চলবে না।’

শ্রমজীবী মানুষকে সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক চেতনায় জাগিয়ে তুলতে এগিয়ে আসতে হবে সমাজ ও সরকারকে। দেশের অভ্যন্তরে আয় বৈষম্য যে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে, পুঁজিপতি মালিক, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও ধর্মব্যবসায়ীদের যে আঁতাত গড়ে উঠেছে সেটাকে প্রতিহত করে শ্রমিকদের হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। তাহলে প্রতিহত হবে লুটপাটতন্ত্র, অন্যায়, নির্যাতন, সন্ত্রাসবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতার মতো অশুভ শক্তি। এর মাধ্যমে মে দিবসের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটবে। সেদিনের প্রত্যাশায় কাজী নজরুল ইসলামের সাথে সুর মেলাবে সবাই– জাগো অনশন-বন্দী, ওঠ রে যত/ জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যহত!/ যত অত্যাচারে আজি বজ্র হানি'/হাঁকে নিপীড়িত-জন-মন-মথিত বাণী,/নব জনম লভি' অভিনব ধরণী/ওরে ঐ আগত/আদি শৃঙ্খল সনাতন শাস্ত্র-আচার/মূল সর্বনাশের, এরে ভাঙিব এবার!/ভেদি' দৈত-কারা/আয় সর্বহারা!/ কেহ রহিবে না আর পর পদ-আনত।

;

পঞ্চগড়ে বিলুপ্ত প্রজাতির মদনটাক পাখি উদ্ধার



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পঞ্চগড়
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পঞ্চগড়ে চলমান দাবদাহের মাঝে অসুস্থ্য হয়ে একটি বাঁশ ঝাড় থেকে অসুস্থ্য অবস্থায় একটি মদনটাক পাখি উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে পাখিটি ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এসময় বাদাম খেতে কাজ করা এক যুবক পাখিটিকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বোদা পৌরসভার কলাপাড়া এলাকায় একটি বাঁশঝাড় থেকে পাখিটিকে উদ্ধার করে ওই এলাকার যুবক সাকির ইসলাম। উদ্ধারের পর দ্রুত নিজ বাড়িতে নিয়ে পানি ও স্যালাইনসহ বিভিন্ন খাবার খাইয়ে পাখিটিকে কিছুটা সুস্থ্য করে সে। পরে খবর পেয়ে বন বিভাগের সদস্যরা নিজ হেফাযতে নেয় মদনটাক পাখিটিকে।

এদিকে বিলুপ্ত প্রজাতির এই মদনটাক পাখি উদ্ধারের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পাখিটিকে দেখতে ওই বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করে এলাকাবাসী। জানা গেছে, তীব্র গরমের মাঝে খোঁলা আকাশে উড়তে গিয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে বিপন্ন প্রজাতির বড় আকারের এ মদনটাক পাখিটি।

পাখিটিকে উদ্ধার করা যুবক সাকির ইসলাম বলেন, আমি বাদাম খেতে কাজ করছিলাম। এসময় খেতের পাশের জমিতে থাকা বাঁশ ঝাড়ে উপর থেকে একটা কিছু পড়তে ও শব্দ শুনতে পাই। পরে সেখানে গিয়ে পাখিটিকে উদ্ধার করে নিজ বাড়িতে নিয়ে পানি ও স্যালাইন সহ বিভিন্ন খাবার খাওয়াই। এর কিছু সময় পর পাখিটা কিছুটা সুস্থ্য হয়ে ওঠে। এদিকে খবর পেয়ে বন বিভাগের লোকজন এসে পাখিটিকে নিয়ে গেছে। জানতে পেরেছি এটি বিলুপ্ত প্রজাতির মদনটাক পাখি।

উপজেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনজুরুল করিম জানান, ওই যুবকের বাড়িতে গিয়ে পাখিটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। সুস্থ্য হয়ে উঠলে আবাও খোঁলা আকাশে তাকে অবমুক্ত করা হবে।

;

বিয়ের স্বীকৃতি না দেওয়ায় স্ত্রীর অভিযোগ, ফেঁসে গেলেন এএসপি ইমরান



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বৈবাহিক পরিচয় ঘোষণার ক্ষেত্রে নিজেকে অবিবাহিত হিসেবে পরিচয় দিয়ে চাকরিতে প্রবেশ ও স্ত্রীকে স্বীকৃতি না দিয়ে তালাকের নোটিশের অভিযোগে ফেঁসে গেলেন পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আল ইমরান হোসেন।

সরকারি তদন্তে তার প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। স্ত্রীর অভিযোগের পর এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে এক বছরের জন্য একটি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার লঘুদণ্ড শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ইমরান হোসেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পশুরাম জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) হিসেবে কর্মরত আছেন।

প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. আল ইমরান হোসেন চাকরিতে যোগদানের পূর্বে আরিফা আক্তার গোধূলীকে চারলাখ টাকা দেনমোহরে ২০১১ সালের মাঝামাঝি বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঢাকার সাভার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে অবস্থিত গেরুয়া গ্রামে বাসা ভাড়া করে বসবাস করেন। ইমরান হোসেন ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে বিসিএসসহ প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার পদের জন্য একাধিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ফরম পূরণের সময় নিজেকে অবিবাহিত মর্মে তথ্য দেন। তিনি ৩৫তম বিসিএস (পুলিশ)-এ যোগদান করেন এবং বিসিএস পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় নিজেকে অবিবাহিত উল্লেখ করেন। তিনি চূড়ান্তভাবে সুপারিশকৃত হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদানের সময়ও নিজেকে অবিবাহিত তথ্য দেন। পুলিশ একাডেমি সারদায় ট্রেনিং শেষে বিবাহের অনুষ্ঠান করবেন মর্মে অভিযোগকারীকে (স্ত্রী) আশ্বাস দেন। এছাড়া পুলিশের বিভিন্ন ডাটাবেজে নিজেকে অবিবাহিত মর্মে তথ্য দেন। তার শিক্ষানবিসকাল শেষে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে বদলি হলেও সেখানে তথ্য ফরমে নিজেকে অবিবাহিত উল্লেখ করেন।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, ইমরান হোসেন সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষ করে সিলেটে শিক্ষানবিস হিসেবে বদলি হন। কিন্তু স্ত্রীর কাছে তার অবস্থান কখনও সিলেট বা চট্টগ্রাম মর্মে মিথ্যা তথ্য দেন। তার এরূপ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অভিযোগকারী (স্ত্রী) রংপুরের পুলিশ কমিশনারকে অবগত করেন। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিয়ের স্বীকৃতি চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ইমরানের 'অসদাচরণ' এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়। পরবর্তীতে ব্যক্তিগত শুনানীর দিন ধার্য করা হলেও তিনি তাতে উপস্থিত হননি। পরে তদন্ত কর্মকর্তা ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেন। এরপরই সরকারি কর্মচারী আইন অনুযায়ী আদেশ প্রদানের তারিখ থেকে একবছরের জন্য 'একটি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার' লঘুদণ্ড প্রদান করা হলো। তিনি ভবিষ্যতে উক্ত মেয়াদের কোনো বকেয়া প্রাপ্য হবেন না। তাছাড়া এই মেয়াদে বেতন বৃদ্ধির জন্য গণনা করা যাবে না। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

;