বাবা-মার কোলে নয়, নিঃসন্তান দম্পত্তির কোলে ঠাঁই পেল শিশুটি
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জন্মের একদিন পর রাতের আধারে বাবা-মার ফেলে যাওয়া সেই শিশুটিকে দত্তক দেওয়া হয়েছে। একদিনের বেশি শিশুটির ঠাঁই হয়নি নিজের বাবা-মার কোলে। জন্মের পর কয়েক হাত ঘুরে এখন ঠাঁই হয়েছে বদরগঞ্জ পৌরশহরের শাহ্পুর এলাকার নিতাই চন্দ্র-সুচিত্রা রানী দম্পত্তির কোলে।
রোববার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে নিতাই রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটি নতুন মা সুচিত্রার কোলে। আদর-যত্ন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন নতুন বাবা-মা। শিশুটির বাড়তি সেবা যত্নের জন্য সুচিত্রার মা কল্পনা রানী রায়কে ডেকে আনা হয়েছে ।
নিতাই চন্দ্র বলেন, বিয়ের অনেক দিন হয়েছে কিন্তু আমাদের কোন সন্তান নেই। খুব ইচ্ছা ছিল একটি সন্তানের। ভগবানের কৃপায় এমন একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান পেয়ে আমরা খুশি।’
বৃহস্পতিবার(২৮ জানুয়ারি) বার্তা২৪.কম এ বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনাটি নিয়ে দেশব্যাপি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। পরে রাতেই শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে যায় বাবা-মা। কিন্তু পরের দিনই নিতাই চন্দ্র-সুচিত্রা রানী দম্পত্তির কাছে গোপনে শিশুটিকে দত্তক দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বুধবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর বানিয়াপাড়ার অন্তঃসত্ত্বা পল্লবীকে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। রাতে স্বাভাবিকভাবে তার একটি ফুটফুটে সন্তান জন্ম হয়। যখন তারা জানতে পারেন সন্তানটি মেয়ে হয়েছে। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন বাবা প্রদীপ বিশ্বাস। তাদের আরো দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। এ কারণে আশা ছিল সদ্য জন্মানো সন্তানটি যেন ছেলে হয়। ওই রাতের কোন এক সময় ছাড়পত্র না নিয়ে শিশুটি হাসপাতালের বিছানায় ফেলে পল্লবী ও তার স্বামী প্রদীপ বিশ্বাস পালিয়ে যায়। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী জোবেদা বেগম।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে ইউএইচও ডা. আরশাদ হোসেন ও আরএমও ডা. নাজমুল হোসাইনের উপস্থিতিতে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শিশুটির বাবা প্রদীপ বিশ্বাস ফেরত নিয়ে যান। এর আগে শিশুটিকে নিজের করে নিতে চেয়েছিল হাসপাতালের পরিচ্ছন্নকর্মী জোবেদা বেগম। শেষ পর্যন্ত কয়েকবার হাত বদল হয়ে শিশুটির ঠিকানা মিলল ওই হাসপাতালের পাশের নিঃসন্তান দম্পত্তির ঘরে।
শিশুটির বাবা প্রদীপ বিশ্বাসের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগায়োগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।