টাঙ্গাইলে কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প
টাঙ্গাইলের মৃৎশিল্প যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পেরে হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই সাথে মানবেতর জীবনযাপন করছে প্রতিভাবান মৃৎশিল্পের কারিগররা। কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প।
এক সময় মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা ছিল অনেক। এখন মাটির তৈরি জিনসপত্র স্থান দখল করে নিয়েছে এ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক ও মেলামাইনের তৈরি জিনিসপত্র। বর্তমানে গ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব-মেলা ছাড়া অন্য কোথাও মাটির জিনিসপত্র চোখে পড়ে না।
টাঙ্গাইল বিসিক সূত্রে জানা যায়-সদর উপজেলার ১৫৮টি কুমার পরিবার,বাসাইল উপজেলায় ১১৫টি পরিবার, নাগরপুর উপজেলায় ১০৭টি, মির্জাপুর উপজেলায় ৯৯টি, দেলদুয়ার উপজেলায় ৬৫টি, ঘাটাইল উপজেলায় ৬০টি, ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা কুমার পাড়ায় ২২০টি, কালিহাতী উপজেলায় ২৮০টি, গোপালপুর উপজেলায় ১১২টি, ধনবাড়ী উপজেলায় ১০টি এবং মধুপুর উপজেলায় ৯টি কুমার পরিবার বসবাস করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মৃৎশিল্পীরা মাটি দিয়ে তৈরি করছেন পুতুল, ফুলের টব, কুয়ার পাত, হাঁড়ি-পাতিল সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। পরে এই সব পণ্য তারা শহরের দোকান এবং বাসা বাড়িতে বিক্রয় করে থাকেন। বর্তমানে মৃৎ শিল্পের ব্যবহার তেমন চোখেই পড়ে না, এখন সৌখিন জিনিসপত্র তৈরিই তাদের জীবিকার একমাত্র ভরসা।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বৈল্লাগ্রামের নিরন্জ বলেন, মৃৎশিল্পীরা তাদের বাপ-দাদার পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। মৃৎশিল্পের ভবিষ্যৎ প্লাস্টিক, মেলামাইন ও এ্যালুমিনিয়াম পণ্য ফিকে করে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই পেশা আর টিকে থাকবে না।
গমজানি গ্রামের হাসিপাল ,চৈতি রানী নিমাই জানান সারা বছর কাজ করতে পারি না বছরে ছয় মাস কাজ করা যায়। বৃষ্টির সময় চুলার মখে আগুন দিতে পারি না । সেই ছয় মাস আমাদের যে কষ্টের সীমা থাকে না। তখন মানুষের দোয়ারে দুয়ারে যেতে মন চায় না। তারপর আর কি করা তখন মনে হয় আর এ পেশায় থাকবো না। পেশা পরির্বতন পরিবর্তন করতে গিয়ে কাজের সাথে খাপ খাওয়াতে পারি না।
চৈতি রানী জানান আমার ছেলে মেয়ে নিয়ে একাজ করি ।অন্য পেশায় আমার ছেলেদেরকে ধাপিত করতে চাই। আমার কোন উপায় নাই। সরকার যদি সহযোগিতার হাত বাড়ায় তাহলে সম্ভব।
টাঙ্গাইল বিসিক শিল্প নগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক-শাহনাজ বেগম বলেন, বিসিক থেকে সরকারী পৃষ্টপোষকতায় মৃৎশিল্পীদের বিভিন্ন ধরনের কারিগরী ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যেসব মৃৎশিল্পীরা মাটির তৈরি শো-পিস তৈরি করে,তাদের প্রশিক্ষণ সহ আর্থিক সহযোগিতা করে থাকে বিসিক।