বিছানায় শুয়ে ৩৮ বছর

  • উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে একটানা বিছানায় শুয়ে অমানবিক জীবন-যাপন করছেন রহম আলী (৫০) নামের এক ব্যক্তি। তার জীবনের ৩৮টি বসন্ত চলে গেছে ৩ ফুট লম্বা একটি পিঁড়ি ও একটি হুইল ভ্যানে শুয়ে।

অনেকটা নিথর, নিস্তেজ দেহ তার, হাত সামান্য নড়াচারা করতে পারলেও পা দুটি অচল। পা দু’টো সংকোচিত হয়ে মনে হয় কোমরের সাথে একাকার হয়ে যাচ্ছে। কেউ প্রথমে দেখলে তার মনে প্রশ্ন জাগবে লোকটা কি জীবিত! শারীরিক অক্ষমতা থাকলেও রহম আলী স্পষ্ট করেই কথা বলতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

রাজীবপুর রৌমারী ডিসি সড়কের চাকতাবাড়ি নামক স্থানে সড়কের একপাশে হুইল ভ্যানে ছোট কাঠি হাতে শুয়ে থাকা রহম আলীকে প্রায় প্রতিদিন দেখা যায়। এ পথে যারা নিয়মিত চলাচল করে তাদের অনেকেই চেনেন প্রতিবন্ধী এই মানুষটিকে।

ছবি: বার্তা২৪.কম

হাতের ছোট কাঠি দিয়ে তিনি মূলত শরীরে মাছি বা পতঙ্গ জাতীয় কিছু বসলে তাড়িয়ে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করেন। অন্যের সাহায্য ছাড়া কোনো কিছুই করতে পারেন না রহম আলী।

বিজ্ঞাপন

রহম আলীর মা বাবা গত হয়েছেন। সোনাবানু বেগম ও রওশনারা বেগম নামে দরিদ্র দুই বোনের সাহায্যে জীবনযাপন করছেন রহম আলী।

সোনাবানু বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার ভাইয়ের বয়স যখন ১২ বছর তখন জ্বর হয়েছিল। গ্রামের মানুষ বলতো ‘বাতাস’ লাগছে। দরিদ্র হওয়ায় উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেনি স্থানীয়ভাবে কবিরাজি চিকিৎসা এবং ঝাঁড় ফুক করা হয়েছিল কিন্তু সুস্থ হতে পারেনি। আস্তে আস্তে শরীরের নিচের অংশ অবশ হয়ে যায়।

রহম আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, তার দুই বোনের স্বামীর সংসারে ঠাঁই হয়নি। সড়কে মাটি কেটে জীবিকা নির্বাহ করে তারা। সামান্য কিছু আয় দিয়ে কোনো রকমে দিন যাপন করছি আমরা। নিজস্ব জমি না থাকায় সড়কের পাশেই ঘর তুলে বসবাস করি।

ছবি: বার্তা২৪.কম

প্রতিদিন সকালে রহম আলীকে বহনকারী হুইল ভ্যানটি সড়কের পাশে রাখা হয়। স্থানীয় ও সড়কে চলাচলকারী পথচারীরা আর্থিক ভাবে সাহায্য করে। দুই বোনের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে পাওয়া মজুরি ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পাওয়া আর্থিক সাহায্য এবং প্রতিবন্ধী হিসেবে তিনমাস পর পর পাওয়া ২১০০ টাকা দিয়েই বোনদের সঙ্গে জীবনযাপন করছে তিনি।

সরকারি কোনো সহয়তা পান কিনা জানতে চাইলে রহম আলী বলেন, শুধু প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর তেমন কোনো সাহায্য পাই না। জীবনের কোনো ইচ্ছে আছে কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারও সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারি না যদি নিজে নিজে চলাফেরা করতে পারতাম তাহলে খুব শান্তি পাইতাম।