মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভার: ‘আঁধারে’ আলো জ্বলবে কবে?
রাজধানীর মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারে ৪০০ লাইট থাকলেও আলো নেই ৩০০ এর বেশি লাইটে। ফলে রাতের বেলা অন্ধকারেই থাকে ফ্লাইওভারটি। বাতিগুলো অকেজো হয়ে থাকলেও এখনো নেই কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ। ফলে একদিকে বাড়ছে দুর্ঘটনা অন্যদিকে ছিনতাই আর মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য। অন্যদিকে রাতে আলো না থাকায় সিসি-ক্যামেরাও এক রকম অকেজো।
রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, শুরুর দিকে বাতিগুলো সচল ছিল। তবে বর্তমানে অচলাবস্থা নিয়ে অবগত আছেন। বাতিগুলো আবারো সচল করার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আলো জ্বলবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া থেকে রেলগেইট পর্যন্ত কিছু লাইট জ্বললেও বেশিরভাগ অংশ অর্থাৎ রেলগেইট থেকে রাজারবাগ এবং শান্তিনগর এলাকা পর্যন্ত বাতিগুলো অচল। অন্যদিকে মৌচাক থেকে বাংলামটর পর্যন্তও একই অবস্থা। ইস্কাটন থেকে মগবাজার ওয়্যারলেস গেট নামার মুখেও বেশ অন্ধকার। একই অবস্থা রমনা থানা থেকে তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তা পর্যন্ত।
২০১৯ সালের আগস্টে অন্ধকার ফ্লাইওভারে মিলন নামে এক পাঠাও চালককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে তার মোটরসাইকেল ছিনতাই করা হয়। আবুল হোটেলের ফ্লাইওভারের ঢাল দিয়ে উঠে মালিবাগ পদ্মা ডায়গনস্টিক সেন্টারে উঠার সময় তিনি ছিনতাইকারী হাতে পড়েন। ওখানে তার গলা কাটা হয়। যদিও পর্যাপ্ত আলোর অভাবে সেই ফুটেজ ক্লিয়ার ছিল না। এরপর ফ্লাইওভারে লাইটের আলো থাকা নিয়ে বেশ আলোচনাও হয়। কিন্তু সেই আলোচনা সময়ের সাথে সাথে আবারও মিলেও যায়।
এর আগে ২০১৮ সালে মে-তে ফ্লাইওভারের মালিবাগের অংশ থেকে বস্তাবন্দি এক নারীর দুই হাত ও দুই পা উদ্ধার করে রমনা থানা পুলিশ। একটি গাড়ি থেকে ওই ব্যাগটি ফেলে দেয়া হয়। তার আগের বছরে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় একজন মারা যান। ফ্লাইওভারে আলো না থাকার কারণেই সেই বাসটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
ফ্লাইওভারে দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন ওয়ালিউল্যাহ। তিনি বার্তা২৪.কম’কে বলেন, 'বাংলামোটর থেকে প্রতিদিন অফিস শেষ করে রাতে বাইক দিয়ে মৌচাক বাসায় ফিরতে হয়। ফ্লাইওভার থাকার পরও নিচ দিয়েই বেশিরভাগ সময় যাতায়াত করতে হচ্ছে। কারণ ফ্লাইওভারের লাইটগুলাতে আলো না থাকায় রাতের বেলা ছিনতাইকারী, মাদকসেবিদের আড্ডা জমে। তারা বাইক নিয়ে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে।'
ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের চালক রাজু বলেন, রাতের বেলা ফ্লাইওভার দিয়ে গাড়ি চালাতে ভয় করে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অন্যান্য চালকদেরও একই অভিযোগ।
'রাতের বেলা ফ্লাইওভারের পরিবেশ হয়ে যায় ভূতুরে। ছুরি, ছিনতাইতো নিত্যদিনের ঘটনা।’
আলো না থাকাতে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির আলো চোখে এসে পড়ে। সামনের দিকে কিছু দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটনার সম্ভাবনা বেশি। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাতিগুলো ঠিক করলে আমাদের সবার জন্য ভালো হয়- বলছিলেন সিএনজি চালক আসাদ মিয়া।
পাঠাও চালক রাহুল মিয়া 'বার্তা২৪.কম’কে বলেন, নিচে যানযট থাকায় ফ্লাইওভার দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু রাতে অন্ধকার থাকায় অনেকটা ভয় হয়, কিছু লোকজন বাইক নিয়ে উপরে দাঁড়িয়ে থাকে। আমাকে একদিন হাতে ইশারাও দিয়েছে, আমি বাইক জোরে চালিয়ে চলে যাই।'
শান্তিবানগর মোড়ে চায়ের দোকানকার হানিফ মিয়া বলেন, শুরুতে সবগুলো লাইট সচল ছিল। কিন্ত এগুলা খুলে নিয়ে গেছে। নেশাখোর, মাদকসেবীদের হাতে যখন টাকা না থাকে তখন তারা ল্যাম্পপোস্ট এর লাইট চুরি করে বিক্রি করে নেশা করে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল বাশার জানিয়েছেন, 'মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারটা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৫ নং ওয়ার্ডে পরছে।' তবে ৩৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোক্তার সরদার পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, 'ওনি কিভাবে বলেন এটা উত্তর সিটি করপোরেশনের। ওনি ভুল বলেছেন। আমার ওয়ার্ড এর সর্বশেষ সীমানা মালিবাগ ডাক্তার গলি পর্যন্ত। তবে ফ্লাইওভার এর কিছু অংশ আমাদের ওয়ার্ডের মধ্যে। দীর্ঘদিন যাবত ফ্লাইওভার অন্ধকারে এই বিষয়ে আমরা জানিয়েছি এবং এটা আগামী কিছুদিনের মধ্যে সমাধান হবে।
বাতিগুলো আবার কবে সচল হবে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফরিদ আহাম্মদ 'বার্তা২৪.কম’কে জানান, মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারের দীর্ঘদিনের আলোর সমস্যা মেয়র সাহেবও অবগত আছেন এবং কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারির মধ্যে সবগুলো লাইট সচল হবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রমনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম 'বার্তা২৪' কে বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ আছে সন্ধ্যার পর বাতি না জ্বলায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ও ছিনতাই ঘটছে। কিন্ত বাতিগুলো ঠিক করা তো আর আমাদের কাজ না। এই বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে আমরা চিঠি দিয়েছি। লাইটগুলো ঠিক করে দেওয়ার জন্য এবং ফ্লাইওভার গুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসার জন্য। আমরাও মনে করি ফ্লাইওভারের লাইটগুলো ঠিক করা হলে এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলে দুর্ঘটনা এবং ছিনতাই অনেকাংশে কমে যাবে।'