শীতের সন্ধ্যায় দেশের বিভিন্ন এলাকার হাঁট-বাজার, ফুটপাতগুলোতে গড়ে ওঠা ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো থেকে ধোঁয়া উড়ার দৃশ্য এ আর নতুন কী। এই দৃশ্য দেখে যে কেউই বলে দিতে পারবে এখানে তৈরি হচ্ছে শীতকালীন বাহারি পিঠা। এসব পিঠার দামও যে বেশি তাও কিন্তু নয়, প্রতি পিস বিক্রি হয় মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকার মধ্যে।
অনেক ধরণের পিঠা তৈরি হলেও মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে ভাপা ও চিতই পিঠার দিকে। এসব পিঠা ছাড়াও তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের নারিকেল পিঠা, নুন হাঁস পিঠা, তেল পিঠা, দুধ পিঠা, পাটিসাপ্টা, কুলি, চিতই, খিজানো পিঠা, তেলের পিঠা, খেজুর গুড়ের পিঠা, ভাবা পিঠা, তেলের পিঠা ও নারকেলের পিঠা। শীত এলেই যেনো কদর বেড়ে যায় এই মৌসুমের বাহারি পিঠার।
এমন দৃশ্য থেকে বাদ যায়নি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলা। রোববার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সরেজমিনে জেলার রাজার বাগান সরকারি কলেজ মোড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোয় পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় বিক্রেতাদের। জ্বলন্ত চুলার অল্প আঁচে তৈরি এসব পিঠা নিতে অপেক্ষা করছেন নানা বয়সী মানুষ।
দোকানিরা জানান, শীত আসলেই আমাদের এই ব্যবসাটা ভালো চলে। তাই এই সময় এটা করি অন্য সময়ে অন্য ব্যবসা করি। এই ব্যবসায় বেশি পুঁজি লাগে না বলে সহজে এ ব্যবসা শুরু করা যায়। জ্বালানি হিসেবে খড়ি, অকেজো কাঠের টুকরা, কিংবা গাছের শুকনা ডাল ব্যবহার করি। প্রতিদিন এখানে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে। মাঝেমধ্যে ক্রেতাদের চাপে হিমশিম খেতে হয়। ফলে দেখা যায় খুব তাড়াতাড়িই পিঠা শেষ হয়ে যায়। এ দিয়েই আমাদের সংসার চলে।
রাজার বাগান এলাকার আরেফিন বাপ্পী নামে এক ক্রেতা জানান, এসব দোকানগুলোয় শীত ছাড়া এমন পিঠা পাওয়া যায় না। সন্ধ্যায় শীতের আমেজে গরম গরম এসব পিঠা খেতে ভালোই লাগে। এতে তারাও যেমন লাভবান হচ্ছে আবার আমরাও পিঠার স্বাদ নিতে পারছি।
এসব পিঠার দোকানে অনেকেই আসেন পরিবার নিয়ে আবার কেউ আসে বন্ধুদের নিয়ে। অনেকেই আবার নিয়ে যান পরিবারের জন্য।
মামুন নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী এসেছেন তার তিন বন্ধুকে নিয়ে। পিঠার স্বাদ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানকার পিঠার দামও কম মানও ভালো। এই দোকানের সকল কর্মচারী খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। সন্ধ্যা হলেই দোকানগুলোয় ভিড় লেগে যায়। বেশি দেরি করলে আবার অনেক সময় পাওয়া যায় না। তাই বন্ধুদের নিয়ে গরম গরম পিঠা খেতে চলে এসেছি।
এ বিষয়ে কথা হয় পিঠা বিক্রেতা ইউসুফ আলীর সঙ্গে। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার দোকানে বিশেষ করে সবজি পিঠার চাহিদাটা বেশি। তাছাড়া দেশে যে রকম পিঠা তৈরি হয় সব আমার দোকানে বিক্রি হয়। শীতের তিন মাস আমাদের পিঠা হাউজে পিঠা বিক্রি করি। আমরা এই সময়টা শুধু পিঠার দোকানটা দেই। শীতে পিঠার চাহিদা অনেক বেশি। দোকানে ১০ থেকে ১২ জন কাজ করছি তাও দিয়ে পারছি না। জিনিসপত্রের দামের তুলনায় পিঠার দাম অনেকটা কম। এতো ভিড় হয় যে আমরা বানাতে বানাতে হিমশিম খেয়ে যাই।