ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ মোকাবিলায় চট্টগ্রামে যত প্রস্তুতি

  ঘূর্ণিঝড় রিমাল
  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ মোকাবিলায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, সিভিল সার্জন ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১ হাজার ৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র। একই সঙ্গে এক হাজার ১৪০টি বিদ্যালয় ও নয়টি মুজিব কেল্লা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জনের উদ্যোগে মোট ২৯৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।

রোববার (২৬ মে) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সমন্বয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে খোলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি

শনিবার (২৫ মে) রাতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় চট্টগ্রামে ৭৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি এক হাজার ১৪০টি বিদ্যালয় ও নয়টি মুজিব কেল্লা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত উচ্চমান সহকারী হাসিবুল হাসান জানান, শনিবার রাতে প্রথমে ৭৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত ছিল। পরে আজ (রোববার) সকালে আরও ২৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানো হয়েছে। এখন মোট ১০৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি ১১৪০টি বিদ্যালয় ও নয়টি মুজিব কেল্লা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সিভিল সার্জনের ২৯৫ মেডিকেল টিম

আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি সিভিল সার্জন চট্টগ্রাম কর্তৃক ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০০টি, প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি, আর্বান ডিসপেন্সারি ৯টি এবং ৫টি জেনারেল হাসপাতালসহ মোট ২৯৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। মজুত রাখা হয়েছে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য প্রায় তিন লাখ ট্যাবলেট ও চার লাখ খাবার স্যালাইন।

পাহাড়ি ও উপকূলীয় এলাকায় নির্দেশনা

শনিবার রাতে জেলা প্রশাসনের জরুরি সভায় সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও কর্ণফুলী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে চট্টগ্রামে ব্যাপক বর্ষণ ও পূর্ণিমার কারণে তীব্র জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা থাকায় উপকূলবর্তী এলাকাসমূহ ও পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকজনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং এসিল্যান্ডদের নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক।

এসময় সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার, মোমবাতি, ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন মজুদ রয়েছে বলে জানানো হয়। এছাড়া বিদ্যমান আশ্রয়কেন্দ্র ও কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নিমিত্তে প্রস্তুত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অনুরোধ জানানো হয়।

সভায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, জেলা পরিষদের সকল জনপ্রতিনিধিদের নিজ এলাকায় অবস্থান করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনে উপজেলাসমূহে অবস্থিত ডাকবাংলো ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এসময় মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু ও অন্যান্য প্রাণীর সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সকলকে নির্দেশনা দেন এ জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান।

প্রস্তুত প্রায় ১৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক

ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় চট্টগ্রামে প্রস্তুত রয়েছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৮ হাজার ৮৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক। আছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। এছাড়াও বিএনসিসি ও স্কাউটের স্বেচ্ছাসেবকগণকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

কন্ট্রোল রুম

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সমন্বয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। যার নম্বর ০২৩৩৩৩৫৭৫৪৫।

কৃষি অধিদফতর

চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে প্রায় ৯০ শতাংশ ফসল কাটা হয়েছে। শনিবার রাতে জরুরি সভায় জেলা প্রশাসক মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু ও অন্যান্য প্রাণীর সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সকলকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রস্তুতি

ঘূর্নিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছাড়তে মাইকিং করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এছাড়া জনগণকে তথ্যসেবা দিতে নগরীর দামপাড়াস্থ চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগে চালু করা হয়েছে জরুরি কন্ট্রোল রুম।

দুর্যোগ না কাটা পর্যন্ত শনিবার দুপুরে চালু হওয়া এ কন্ট্রোল রুম থেকে ২৪ ঘণ্টা দুর্যোগকবলিত জনগণের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা হবে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০১৮১৮৯০৬০৩৮।

চসিকের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে চসিক সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বলেন, রিমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্দেশে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। রিমালের ঝুঁকি না কমা পর্যন্ত কন্ট্রোল রুম থেকে নাগরিকদের তথ্য সেবা দেওয়া হবে। এছাড়া, আমরা রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মাইকিং শুরু করেছি যাতে ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এছাড়াও, জরুরি প্রয়োজনে বিতরণের জন্য শুকনো খাবার প্রস্তুত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের যত প্রস্তুতি

রোববার সকাল ৯টায় আবহাওয়া অধিদফতর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ৯ নম্বর বিপৎসংকেত ঘোষণার পর সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম বন্দরে অ্যালার্ট-৪ জারি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, বন্দরে নিজস্ব অ্যালার্ট-৪ জারি করা হয়েছে। বন্দরের সব অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বহির্নোঙরে অবস্থানকারী জাহাজগুলোকে নিরাপদে থাকা এবং বন্দরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা অনুসরণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় থেকে চট্টগ্রাম বন্দরকে রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। বন্দর জেটি থেকে সব জাহাজ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন সব ইকুইপমেন্ট একস্থানে জড়ো করে নিরাপদে রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জরুরি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৮ ঘণ্টা বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা দুপুর ১২টা থেকে কার্যকর হয়েছে।

রোববার (২৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিষয়টি বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল।

তিনি বলেন, আবহাওয়া সংকেত ৬ থেকে মহাবিপদ সংকেত ৯ এ উন্নিত করার পর ঘূর্ণিঝড় 'রিমাল' মোকাবিলায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এয়ারফিল্ড ঘোষণা করেছে। বিমানবন্দরে আজ দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সব ধরণের বিমান ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ তার সম্পদ রক্ষা এবং এর জনশক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

তিনি আরও বলেন, রাত ৮টার পর আবহাওয়ার পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিন্ধান্তের কথা জানানো হবে।