ঘূর্ণিঝড়ে বিদুৎহীন সোনাগাজী, ঘর-বাড়ি ভেঙে দুর্ভোগে ক্ষতিগ্রস্তরা

  ঘূর্ণিঝড় রিমাল
  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ফেনীতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রাতে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বাতাসের তীব্রতায় উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীতে বেশকিছু ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্নস্থানে লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে সোনাগাজী উপজেলাসহ জেলার প্রায় সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক। বিদুৎ নেই জেলা শহরের অধিকাংশ এলাকায়। সকাল থেকে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে অব্যাহত রয়েছে বৃষ্টি। এদিকে সোনাগাজীতে দুপুরে ভারী বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে পানি।

খবর নিয়ে জানা গেছে, জেলা শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক থাকলেও বেশির ভাগ এলাকার সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ঝড়ো হাওয়ায় বিদ্যুতের লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ায় জেলার প্রায় সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অন্যান্য উপজেলায় কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ স্বাভাবিক থাকলেও সম্পূর্ণ বিদ্যুৎহীন রয়েছে সোনাগাজী উপজেলা। বাতাসের তীব্রতায় উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীতে বেশকিছু ঘর-বাড়ির টিন উপড়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

বিজ্ঞাপন

সোনাগাজী উপজেলার বাসিন্দা সাহেদ সাব্বির বলেন, রোববার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। বাতাসে কিছু গাছ উপড়ে পড়ে বেশকিছু ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় চলে গেলেও এখনও ঝড়ো হাওয়া বইছে। বৃষ্টিতে বের হওয়ার উপায় নেই।

সোনাগাজী দক্ষিণ চরচান্দিয়া এলাকার আব্দুর রউফ বলেন, বাতাসে আমাদের ঘরের টিন উপড়ে গেছে। থাকার মতো একমাত্র সম্বল ভেঙে পড়েছে। এখনো অনেক বাতাস হচ্ছে। রাতে পরিবারের ৫ সদস্য কোথায় থাকবো সেটিও জানি না।

বিজ্ঞাপন

সোনাগাজীর জেলেপাড়া এলাকার জেলেরা জানান, সে জোয়ার ২টায় আসার কথা সে জোয়ার সকাল ১১টায় চলে আসে। তারা বলছেন, পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি জায়গায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে এবং কয়েকটি নৌকা ভাসিয়ে নিয়ে যায়।


শহরের পাঠানবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, সকাল থেকে বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যা করছে। সারাদিনে দুই একবার এসেছে বিদ্যুৎ। তীব্র বাতাস ও বৃষ্টিতে ঘরে বসেই সময় কাটাচ্ছি। সন্তানদের পরীক্ষা চলছে, আইপিএসের ও চার্জ শেষ। পরিবার নিয়ে অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে।

শহরের পুরাতন পুলিশ কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা তৃষা রহমান বলেন, দুপুর থেকেই বিদ্যুৎ নেই। ঘূর্ণিঝড়ের তেমন প্রভাব দেখেনি, তবুও শহরে বিদুৎ নেই। পরীক্ষা চলছে, বিদ্যুৎ না থাকাতে প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটছে।

সোনাগাজী দক্ষিণ চরচান্দিয়া এলাকার ইউপি সদস্য মো. এসকান্দার বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে তীব্র বাতাসে দক্ষিণ চরচান্দিয়া এলাকায় অন্তত ১০টি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছপালা উপড়ে পড়ে কিছু ঘর ভেঙে গেছে। এখনও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ক্ষতির চূড়ান্ত তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না। আবহাওয়া অনুকূলে এলে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হবে।

সোনাগাজী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম বলাই মিত্র বলেন, রোববার রাতে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে বেশ কিছু এলাকায় গাছপালা পড়ে তার ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মেরামতের পর বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হবে। তবে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে একটু সময় লাগবে।

ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার মো. ফজলুর রহমান বলেন, রাত থেকেই ঝোড়ো হাওয়ায় বিভিন্নস্থানে বিদ্যুতের সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে পুরোপুরি সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে এলে ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামত করে সংযোগ দেওয়া হবে। বর্তমানে জেলায় পল্লী বিদ্যুতের ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী আ.স.ম. রেজাউন নবী বলেন, তীব্র ঝড়ো হাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভোর ৫টা থেকে ৩০ হাজারের অধিক গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। লাইন মেরামতে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত উপজেলায় বড় ধরনের ক্ষতি কিংবা আহতের তথ্য নেই। বাতাসে কারও কারও ঘরের টিন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।

ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল রাত থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বাঁধের পরিস্থিতি ও নদীর পানি বৃদ্ধির গতিবিধি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীতে শুকনা খাবারের জন্য ২ লাখ টাকা, ২ মেট্রিক টন চাল, এক লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও এক লাখ টাকার গো-খাদ্য ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলার কিছু স্থানে ও সোনাগাজীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে, যা স্বাভাবিক করতে কাজ করছে বিদুৎ বিভাগ।