ঘূর্ণিঝড় রিমাল: চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভেড়েনি জাহাজ

  ঘূর্ণিঝড় রিমাল


স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সোমবার (২৭ মে) দিনভর একটি জাহাজও চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ানো যায়নি। জেটিতে কোনো জাহাজ না থাকায় পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে বন্দর চত্বর থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। মূলত বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদীতে প্রচণ্ড ঢেউয়ের কারণে জাহাজ ভেড়ানো যায়নি।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে রোববার (২৬ মে) সকালের জোয়ারে বন্দরের জেটি থেকে ১৯টি জাহাজকে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই কারণে বন্দর জেটি ফাঁকা হয়ে যায়। বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার পর রিমাল দুর্বল হয়ে পড়লেও এখনো উত্তাল রয়েছে সাগর ও কর্ণফুলী নদী। ফলে সেই জাহাজগুলোকে এখনো বন্দরের জেটিতে ভেড়ানো যায়নি।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতও প্রত্যাহার করে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলার পর সোমবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম বন্দরের সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রত্যাহার করা হয়। এর আগে সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ৩টার জোয়ারে সাগর থেকে ১৯টি জাহাজ জেটিতে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু প্রচণ্ড ঢেউ থাকায় বন্দরের পাইলটরা সাগরে নোঙর করে রাখা জাহাজে যাওয়ার সুযোগ পাননি। ফলে একটি জাহাজও জেটিতে আনা যায়নি। এই কারণে বন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে সচল হয়নি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর থেকে কোনো জাহাজ জেটিতে আনা যায়নি। তবে পচনশীল নয়, এমন পণ্য বন্দর চত্বর থেকে খালাস হচ্ছে।’

   

ঈদের দিন সড়কে প্রাণ ঝরল চাচা-ভাতিজার



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, (গৌরীপুর) ময়মনসিংহ
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে মোটরসাইকেল আরোহী চাচা-ভাতিজা নিহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন- ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার ধামদী গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে রনি মিয়া (১৭) ও আবুল হাসেমের ছেলে আশিক (১৬)। নিহতরা সম্পর্কে প্রতিবেশী চাচা-ভাতিজা।

সোমবার (১৭ জুন) দুপুরে ঈশ্বরগঞ্জ -নেত্রকোনা আঞ্চলিক সড়কের উপজেলার পাইভাকুরি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে রনি ও আশিক মোটরসাইকেল যোগে পার্শ্ববর্তী গৌরীপুর উপজেলার তেলিহাটি গ্রামে যাচ্ছিলেন বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য। পথিমধ্যে পাইভাকুরি এলাকায় আসতেই মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে একটি রাইস মিলের দেয়ালে ধাক্কা খায়। এসময় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে দুজনে গুরুতর আহত হয়।

স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত রনিকে ঘোষণা করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আশিককে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, পরিবারের অভিযোগ না থাকায় দুজনের মরদেহ দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে।

  ঘূর্ণিঝড় রিমাল

;

বন্যা বিপর্যস্ত সিলেট, পরিত্রাণ কোথায়?



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত মহানগরীর তালিকায় নাম যুক্ত হয়েছে সিলেটের। এই তিনটি শহরই বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলোর অন্যতম। তিনটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরও এই তিন শহরে অবস্থিত। বৃষ্টিতে শহর তিনটির লবেজান পরিস্থিতি দেশের আর্বান গভার্নেন্সের করুণ চিত্র তুলে ধরে।

নগর ব্যবস্থাপনা বা আর্বান গভার্নেন্সের ক্ষেত্রে আমরা কত পিছনে রয়েছি, তা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের দিকে তাকালেই টের পাওয়া যায়। বায়ু দুষণে, অপরিকল্পিত নির্মাণে, যানজট ও জলাবদ্ধতায় প্রতিনিয়ত বিপর্যস্ত শহরগুলো। অল্প বৃষ্টি বা ঢলে তলিয়ে যায় শহর। পথঘাটে কোমর পানি জমে। বাড়িঘরও সয়লাব হয়ে যায় পানিতে। ড্রেন আর রাস্তা একাকার হয়ে যাওয়ায় বহু মানুষের মৃত্যুও ঘটে। আহত হয় বহুজন।


ঢাকা ও চট্টগ্রামের চেয়ে সিলেটের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। সিলেট মহানগরী পরিবেষ্টিত হাওয়াঞ্চল দ্বারা। তদুপরি সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ার কারণে পাহাড়ি ঢল ও উজানের পানির তোড় বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম আঘাত হানে সিলেটে। অসংখ্য হাওর ও নদী থাকায় পানির প্রবাহ অচিরেই আরো নিচে নেমে সাগরের দিকে চলে যাওয়ার কথা। অতীতে সিলেটের বন্যার পানি খুব তাড়াতাড়িই নেমে গিয়েছে। এখন তা হচ্ছে না। পানি ফুঁসে তলিয়ে দিচ্ছে সিলেট নগর। নদীগুলো ভরাট ও দখল হওয়ায় এবং হাওরের নানা স্থানে, বিশেষত কিশোরগঞ্জ প্রান্তে নানা স্থাপনার কারণে পানি নেমে যেতে পারছে না। আক্রান্ত ও বিপর্যস্ত হচ্ছে মহানগরসহ বৃহত্তর সিলেট।

বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট দুর্যোগের ঘনঘটা সিলেটে নিয়মিত বিপদের কারণে পরিণত হয়েছে। একের পর এক দুর্যোগে কাবু হচ্ছে সিলেট মহানগরী ও আশেপাশের বিশাল জনপদের লক্ষ লক্ষ মানুষ। এক মাসের মধ্যে ফের দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে নগরটিতে। এমন অবস্থায় শহরের লাখো মানুষ হয়ে পড়েছেন পানিবন্দি। বন্যার কারণে অনেকেই প্রথম দিনে কোরবানি দিতে পারেননি। দ্বিতীয় দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশায় রয়েছেন তারা।

সংবাদ মাধ্যমের খবরে প্রকাশ, বন্যার কারণে তলিয়ে গেছে সিলেট নগরের নিম্নাঞ্চলও। খোদ নগরেই হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। নগরের উপশহর, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়াসহ অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে রয়েছে।


বিপদজনক পরিস্থিতির এখানেই শেষ নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি এবার স্থায়ী রূপ নিতে পারে। সংস্থাটি বলছে, ঈদের দিন সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটে ৩টি নদীর পানি ৩টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ও সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া সিলেটের সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে সিলেটের সদর, দক্ষিণ সুরমা, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় ১ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ জন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। এসব উপজেলার ৫১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সিলেটের সব উপজেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রে শনিবার থেকে মানুষজন উঠতে শুরু করেছেন।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার (১৭ জুন) সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ২৪ ঘন্টায় ১৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পরে সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত হয়েছে আরো ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টি। বেলা ১টার পর নগরে বৃষ্টিপাত কমলেও জেলার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। সিলেটের কানাইঘাটে সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপরে উঠে এসেছে। উজান থেকে নামছে ঢলও। এরই সাথে বজ্র-বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সিলেটের ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহ এলাকায় কয়েক হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। অথচ প্রতি ঈদের জামায়াতে ঈদগাহে লক্ষাধিক মুসল্লি একসঙ্গে জামায়াত আদায় করতে দেখা যায়। এই ঈদে নিজ এলাকার মসজিদে মুসল্লিরা জামায়াত আদায় করেন।

জলাবদ্ধতায় ঈদের আনন্দ কষ্টে পরিণত হওয়া ছাড়াও সিলেট তথা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অপেক্ষা করছে বন্যার বিপদ। বৃহত্তর সিলেট ও সন্নিহিত নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে জনজীবনের দুর্ভোগ ছাড়াও ফসল এবং মৎস্য সম্পদের বিরাট ক্ষতি হতে পারে। উল্লেখ্য, দেশের খাদ্য-শস্য ও মিঠা পানির মাছের সবচেয়ে বড় সরবরাহস্থল হলো হাওর। ফলে সিলেটের বন্যার প্রভাব আশেপাশে ছড়িয়ে গেলে দেশের কৃষি অর্থনীতি বড় ধরনের চাপের সম্মুখীন হবে। এ কারণেই সিলেট বন্যা কেবল সিলেটই নয়, সারা দেশের জন্যেই চিন্তার কারণ।

সিলেটকে বন্যার কবল থেকে বাঁচাতে নগর পরিকল্পনাবিদগণ কেমন পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। যদি স্পষ্ট হতো, তাহলে প্রতি বছর বৃষ্টি ও ঢলে সিলেট শহর তলিয়ে যেতো না। সিলেটে জলাবদ্ধতা ও পানিবন্দিত্বের দুঃসহ জীবন দিনে দিনে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হচ্ছে বলেই মনে হয়। যেমনভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা প্রতিকারহীন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দেশের তিনিটি শীর্ষতম প্রধান শহরের যদি প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা এতো ভঙ্গুর ও নাজুক হয়, তাহলে টেকসই উন্নয়নের বিষয়গুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং নাগরিক জীবনের সুরক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলোও চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। ফলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে।


পরিত্রাণের উদ্যোগ হিসাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম বা সিলেটের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান তথা সিটি করপোরেশনের প্রতি তাকিয়ে থাকলেই চলবে না। এসব প্রতিষ্ঠানের শক্তি ও সামর্থ্য বাড়ানোর দিকেও মনোযোগী হতে হবে। প্রয়োজনে প্রধান শহরগুলোর জন্য জাতীয় ভিত্তিক পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। এতে বাংলাদেশের নগর ব্যবস্থাপনা বা আর্বান গভার্নেন্সের মান বৃদ্ধি পাবে এবং প্রাকৃতিক বিপদে টিকে থাকার সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে নাগরিক নিরাপত্তা প্রসারিত হবে।

সিলেটের বিপর্যস্ত পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে নগর সুরক্ষার পাশাপাশি জলাবদ্ধতার কারণগুলোকে চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী ও হাওরগুলোকে ভরাট ও দখল হওয়া থেকে বাঁচাতে হবে। প্রয়োজনে সেগুলো খনন করে জল প্রবাহের ব্যবস্থা বাড়িয়ে জলাবদ্ধতা ঠেকাতে হবে। বিশেষ করে, সিলেট ও দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওরগুলোর ব্যাপারে সরকারের কঠোর ভূমিকা নিতেই হবে। হাওরগুলো ভরাট হলে, আবর্জনা ও বর্জ্য দিয়ে ভরিয়ে ফেললে এবং অপরিকল্পিত নির্মাণের কারণে পানি প্রবাহ ব্যাহত হলে উজানের সিলেট ও আশোপাশে বন্যার পানি জমে জলাবদ্ধতা হবেই। তাই সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত ও দূরীভূত করতে হবে।

বাংলাদেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর রয়েছে যে তিনটি শহরে, সেখানে জলাবদ্ধতায় স্বাভাবিক জীবন স্তব্ধ হলে জাতীয় উন্নয়নের গতিও থেমে থাকবে। ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন সফল করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য তৈরি হওয়াও কষ্টকর হবে প্রধান শহরগুলোর বিপর্যস্ত পরিস্থিতির কারণে। এই সত্য যত তাড়াতাড়ি নীতি নির্ধারকগণ উপলব্ধি করতে পারবেন, তত তাড়াতাড়িই সমস্যার সমাধান হবে এবং জনদুর্ভোগের অবসান ঘটবে।

ড. মাহফুজ পারভেজ: অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম; চেয়ারম্যান ও প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।

  ঘূর্ণিঝড় রিমাল

;

চামড়া পাচার রোধে যশোর সীমান্তে বিজিবির ১০ দিনের সতর্কতা জারি



সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর)
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

যশোর সীমান্ত পথে ভারতে কোরবানির পশুর চামড়া পাচার রোধে সোমবার (১৭ জুন) থেকে ১০ দিন বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ৪৯ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আহম্মেদ হাসান জামিল।

ইতিমধ্যে সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে বিজিবির টহল। পাচার ঠেকাতে সীমান্ত সড়কে প্রবেশকালে সন্দেহভাজন যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে। কোরবানির দিন থেকে আগামী ১০ দিন পর্যন্ত থাকবে এ সতর্কতা। এদিকে বিজিবির পাশাপাশি পুলিশেরও নজরদারি রয়েছে সীমান্তে। তবে চামড়ার নায্য মুল্য না মেলায় এবার পাচারের শঙ্কা রয়েছে জানালেন চামড়া বিক্রেতারা।

জানা যায়, গেল কয়েক বছর ধরে দেশের বাজারে চামড়ার নায্য মুল্য না পাওয়ায় পাচারের শঙ্কা বেড়ে চলেছে। তবে দেশের এ সম্পদ পাচার ঢেকাতে প্রতিবছর বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবির পক্ষ থেকে কোরবানির পরে সীমান্ত জুড়ে নেওয়া হয় বাড়তি সতর্কতা।


এবছরও পাচার রোধে সর্তকতার নির্দেশ এসেছে বিজিবি সদর দপ্তর থেকে। এতে ৪৯ ব্যাটালিয়ন বিজিবি কোরবানির দিন থেকে পরবর্তী ১০ দিন সীমান্তের বিশেষ বিশেষ পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। সীমান্ত ঘেষা ২১ ব্যাটালিয়নের বিজিবির মধ্যেও এ সতর্কতা দেখ গেছে। ইতিমধ্যে এসব পয়েন্টে বিশেষ টহলের ব্যবস্থা নিয়েছে এবং পাচার প্রতিরোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতা কামনা করেছে। শহর থেকে যেন চামড়া সহজেই সীমান্তে পৌঁছাতে না পারে, তার জন্য বিজিবি চেক পয়েন্টগুলোতে নজরদারি জোরদার রয়েছে। সীমান্ত অভিমুখে প্রতিটি ট্রাক, পিকআপসহ সব যানবাহন বিজিবির তল্লাশির আওতায় থাকবে। পাচারের সম্ভাবনা দেখা দিলে নির্ধারিত সময় শেষেও এই নিরাপত্তা থাকতে পারে।

এদিকে চামড়া বিক্রেতারা জানান, গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না আর ছাগলের চামড়া বিক্রি করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বিক্রেতারা নানান অজুহাত দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত দাম দিচ্ছেনা। এ অবস্থা থাকলে পাচার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বাংলাদেশের পশুর চামড়ার গুণগত মান উন্নত হলেও দেশে গেল কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম খুবই কম যাচ্ছে। এ কারণে বেশি লাভের আশায় সীমান্ত পথে চামড়া পাচারের প্রবণতা আছে অনেক ব্যবসায়ীর মধ্যে। আগে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে কোরবানির পশুর চামড়া আটকের ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার। এ কারণে এই এলাকা দিয়ে চামড়া পাচারের ঝুঁকি থাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে বিজিবি।

চামড়া ক্রেতা রহমান জানান, ৭০০ টাকার চামড়া ৩০০ টাকা বলছে। ছাগলের চামড়ার দাম ৫ টাকা। এরকম দাম থাকলে চামড়া পাচার হতে পারে এবার।


চামড়া বাজারে বিক্রেতা কাজল বার্তা২৪.কমকে জানান, সরকার যে দাম নির্ধারন করেছে সে দাম ক্রেতারা নাননন অযুহাত দেখিয়ে দিচ্ছেনা। এবার লোকশান গুনতে হবে। চামড়ার মান খারাপের কারনে দাম কম।

বেনাপোলে চামড়া কিনতে আসা ঢাকার চামড়া ব্যবসায়ী আবু বক্কর ছিদ্দিক বার্তা২৪.কমকে জানান, এবার কোরবানি পশুর চামড়ার সরবরাহ কম। চামড়ার মানও ভাল না। তাই দাম বেশি দিতে পারছেন না।

৪৯ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক(সিও). কর্নেল আহম্মেদ হাসান জামিল বার্তা২৪.কমকে সোমবার দুপুর ২ টায় জানান, কোরবানি পশুর চামড়া যাতে কোনোভাবে পাচার না হয় সীমান্তে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে। আগামী ১০ দিন এ সতর্কতা থাকবে জানান তিনি।

বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্ত বার্তা২৪.কমকে জানান, কোরবানির পশুর চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার পাশাপাশি তাঁরাও কাজ করছেন। সীমান্ত অভিমুখে কোনো যানবাহন প্রবেশের সময় জিজ্ঞাসাবাদ ও সন্দেহভাজন যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে।

এবার কোরবানিতে এক কোটি ৭ লাখ পশুর চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ছিল এক কোটি ২৯ লাখ পশু। এর মধ্যে ৫৫ লাখ গরু-মহিষ এবং বাকিগুলো উট, ছাগল, ভেড়াসহ অন্যান্য প্রাণি। এ বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আর এবার ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছর ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।

  ঘূর্ণিঝড় রিমাল

;

চল্লিশ বছর ধরে ঈদে ডিউটি করে আসছেন তিনি



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

টানা চল্লিশ বছর ধরে ঈদে ডিউটি করে আসছেন ফায়ার ফাইটার ভবেশ চন্দ্র। এটাই তার চাকরি জীবনের ঈদের শেষ ডিউটি, কারণ আর দুই মাস পরেই অবসরে যাবেন তিনি।

সনাতন ধর্মের অনুসারি হওয়ায় স্বভাবতই ঈদে তাকে ডিউটি দেওয়া হতো। তিনিও হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন। ১৯৮৪ সালে যোগদানের পর থেকেই প্রত্যেকটি ঈদে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন তিনি।

গাবতলী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ে বার্তা২৪.কম-এর সঙ্গে আলাপে নানা ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন তিনি। ভবেশ চন্দ্র বলেন, একটা সময় ছিল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হামলার শিকার হতে হতো। আমার মনে হয় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে উৎসুক জনতার হামলার শিকার হতে হতো। এখন সেই অবস্থা বদলে গেছে।

এই বদলে যাওয়ার প্রধান কারণ কি বলে আপনার ধারণা। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমে যদি বলতে হয় ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়ন, এখন লজিস্টিক সাপোর্ট বেড়েছে, আবার মানুষের মধ্যেও অনেক সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। আগে প্রধানত জেলা সদর কেন্দ্রীক ছিল ফায়ার স্টেশন। প্রত্যন্ত এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের স্থলে পৌঁছাতে হলে অনেক সময়সাপেক্ষ ছিল। এখন বেশিরভাগ উপজেলা পর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন রয়েছে। যে কারণে দ্রুত পৌঁছে যেতে পারছে। সে দিক থেকেও অনেকটা উন্নতি হয়েছে।

চাকরির শেষ পর্যায়ে এসে ভবেশ চন্দ্র বলেন, ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকে সাইড দিতে অনেকে গড়িমসি করেন। আমরা যদি সুষ্ঠুভাবে চলতে পথ চলতে পারি, তাহলে আরও জানমালের ক্ষতি কমানো সম্ভব, এখানে জনসচেতনতা প্রয়োজন। অন্যদিকে উৎসুক জনতার ভিড় অনেক সময় কাজকে বাঁধাগ্রস্ত করে, সেদিক থেকেও নাগরিকদের সচেতন হতে হবে।

আর সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে, বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা জরুরি। সামান্য স্বার্থের কারণে আপনার জীবন ও সম্পদকেই ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে। সে কারণে আগে নিজেকে সচেতন হতে হবে।

মানিকগঞ্জ সদরের বাসিন্দা ভবেশ চন্দ্র, চাকরি জীবনে তেমন ঘোরাফেরা করতে পারেননি। অবসর জীবনে দেশটাকে ঘুরে দেখতে চান তিনি। সঙ্গে ধর্মীয় নানা তীর্থ দেখার আগ্রহ রয়েছে। লালন ভক্ত ভবেশ চন্দ্র ধর্ম-বর্ণ ও জাত বৈষম্যের বিরোধী। ছোট বেলায় দেখেছেন সনাতন ধর্মের এক শ্রেণির লোকজন অন্যদের সঙ্গে ছোঁয়া লাগলে গোসল করে পবিত্র হতো। আবার অনেক জাতের লোককে বাড়িতে ঢুকতে দিতো না। এই ধরণের মানসিকতাতে চরমভাবে ঘৃনা করেন তিনি। মানুষের কল্যাণ ও মানুষের উপকারে আসাটাকেই সবচেয়ে বড় মনে করেন তিনি।

  ঘূর্ণিঝড় রিমাল

;