ত্যাগের শিক্ষার সঙ্গে থাকুক বিসর্জন



কবির য়াহমদ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ত্যাগ ও সাম্যের শিক্ষা নিয়ে আরেক ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ এসেছে। সৌদি আরবে ঈদুল আজহার মূল আচার পালিত হয়েছে রোববার। দেশটির সঙ্গে মিল রেখে আরও কিছু দেশে উদযাপিত হয়েছে। বাংলাদেশসহ কিছু দেশে ঈদুল আজহা সোমবার।

ঈদুল আজহার প্রধান আচার, পশু কোরবানি। গরু-ছাগলসহ গবাদি পশু কোরবানি করে থাকেন সামর্থ্যবানরা। এই কোরবানি কেবল ভোগের জন্যে নয়, ত্যাগের জন্যে মূলত। এটা এসেছে ত্যাগ থেকে। ধর্মীয় মতে, হযরত ইব্রাহিম প্রিয় বস্তুকে কোরবানির নির্দেশনা পেয়েছিলেন সৃষ্টিকর্তা থেকে, সেখান থেকে প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে ত্যাগের সিদ্ধান্ত, এবং এটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঐশীশক্তিতে পরিবর্তন। এখানে প্রিয় বস্তুকে ত্যাগের যে শিক্ষা সেটা থেকেই এই কোরবানি উৎসারিত, এবং হাজার বছর ধরে চলমান।

ধর্মীয় বিধানের সেই ত্যাগ এখনো শাশ্বত। এই ত্যাগ আবার কিছু ক্ষেত্রে আত্মম্ভরিতায়ও পরিণত, প্রদর্শনবাদিতায় রূপান্তরিত অনেক ক্ষেত্রে। কে কত দামের, কত বড় পশু কোরবানি করলেন—এসব প্রকাশে-দেখাতে অনেকের আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। এতে করে ত্যাগের শাশ্বত যে শিক্ষা সেটা এখানে অনুপস্থিত হয়ে পড়ে। পশু কোরবানি যখন ধর্মীয় বিধান থেকে উদ্ভূত তখন প্রদর্শনবাদিতায় আদতে আড়ালে পড়ে যায় ত্যাগ। ফলে সামাজিকতার বিষয়টি ক্রমে দূরে সরে যায়। এখানে মানুষে-মানুষের চিন্তার যে পার্থক্য, অপরকে অনুভব করার সহজাত যে মানবিকতা তারচেয়ে মুখ্য হয়ে পড়ে অহংবোধ। এটা যদিও সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য নয়, তবে অনেকেই এখানে অভিনিবিষ্ট।

কোরবানি ধর্মীয় বিধানের বাইরে এটা বিশাল এখন এক অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞও। পশু ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে, দেশে আর্থিক লেনদেন সম্পাদিত হয়। সারা বছর ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক খামারিরা কেবল ঈদকে কেন্দ্র করে পশু লালন পালন করে থাকেন, অপেক্ষায় থাকেন; হাটবাজারের ইজারাদাররা এই সময়ের জন্যেই অপেক্ষা করে থাকেন। কেবল গবাদি পশুকেন্দ্রিক এই আর্থিক লেনদেনই এ সময় সম্পাদিত হয় না, ঈদে পোশাক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পরিবহন ব্যবসায়ী-শ্রমিক, চামড়া ব্যবসায়ীসহ ছোটখাটো স্থানীয় ব্যবসা এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, লাভবান হন। ঈদ তাই কেবলই ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এর রয়েছে আর্থসামাজিক প্রভাবও।

এরবাইরে আছে এর সামাজিক গুরুত্ব। ক্ষয়িঞ্চু হতে যাওয়া সামাজিক বন্ধন এই সময় দৃঢ় হয় অনেকটাই। সারা বছর সামর্থ্যবানেরা অনেকের খোঁজ না নিলেও কোরবানির মাংসের ভাগ স্বজনপরিজনদের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনকে ফের স্মরণ করিয়ে দেয়, কিছুদিনের জন্যে নবায়ন করে। সামাজিকতার এই শিক্ষা কোরবানির ধর্মীয় বিধানের মধ্যেই রয়েছে, যেখানে কোরবানির মাংসের তিন ভাগের অন্তত দুই ভাগ আত্মীয়স্বজন ও গরিবদের মধ্যে বিলিবণ্টনের নিয়ম।

আমাদের যে কাঠামোবদ্ধ সমাজ তাতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে সামাজিকতা, অন্যকে অনুভব করার তাগিদ। কোরবানির সময়ে পশুর মাংসের ভাগের মাধ্যমে এর নবায়ন হয় অনেকটাই। বাড়তি বাজারমূল্যের এই সময়ে দেশের অধিকাংশেরই নেই কিনে মাংস খাওয়ার সামর্থ্য। কোরবানির সময় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ঘরে অন্তত মাংসের ভাগ পৌঁছে। এটা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে। অনেককে দেখেছি, বছরের এই একটা সময়েই কেবল নিজেদের ঘরে মাংস খেতে পারে। তাদের জন্যে অপেক্ষার তাই এই ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ।

একটা সময়ে দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংকট ছিল। কিন্তু গত ক'বছরে দেশে কোরবানির পশুর সংকট নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে কোরবানিযোগ্য পশু আছে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান বলেছেন, ‘এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ১ কোটি ৭ লাখ। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত আছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। ২২ লাখের বেশি পশু বাড়তি আছে।’ তবু গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বাজারে-বাজারে কোরবানির পশুর দাম চড়া। এখানে-সেখানে জোরজবরদস্তির খবরও এসেছে। যদিও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে যেকোনো ধরনের অন্যায্য কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটবাজারের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যেখানে-সেখানে পশুর হাট বসানোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও এটা কার্যকর হয়নি। ঈদের আগে সারাদেশ পরিণত হয়েছে অস্থায়ী পশুর হাটে। এখানে হুঁশিয়ারিদাতারা দেখেও না দেখার ভান করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইজারাদাররা, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা হয়েছে উপেক্ষিত।

কোরবানি পরবর্তী আলোচনার বিষয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। দেশের সিটি করপোরেশন, পৌরসভার আওতাধীন এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়। ঈদ পরবর্তীতে কে কত দ্রুততার সঙ্গে শহর পরিস্কার করতে পারল, কোথায় কীভাবে বর্জ্য ছড়াল—এ নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকে আলোচনা। অথচ দেশব্যাপী হয় পশু কোরবানি, বর্জ্য ছড়ায় সারাদেশে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা ছাড়া দেশের কোথায় আর বর্জ্য নিয়ে আলোচনা হয় না, উদ্যোগ থাকে না; জনপরিসরেও তাই রয়েছে সচেতনতার ব্যাপক অভাব। ফলে কোরবানির ঈদের পর পরই দুর্গন্ধ ছড়ায় সব জায়গায়। এখানে তাই সাধারণের মাঝে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের প্রান্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড সদস্য, এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদে-মসজিদে সচেতনতার বার্তা পৌঁছাতে হবে। কেবল পরিবেশ সুরক্ষাই নয়, নিজেদের সুস্থভাবে বাঁচতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বুঝাতে হবে সবাইকে।

ঈদ অথবা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দিবসে জননিরাপত্তা প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসে। প্রতিবারই ঈদের সময়, জাতীয় বিভিন্ন দিবসে আগে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পক্ষ থেক জনসাধারণকে অভয় দিয়ে বলতে হয়—‘ঈদে নাশকতার তথ্য নাই’। এটা বিভিন্ন বাহিনীর রুটিন দায়িত্ব যদিও, তবু এখানে একজন সাধারণ হিসেবে আমাদের ভাবিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কী জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি দেশকে আমরা, যেখানে উৎসব-অনুষ্ঠানের সময়ে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হচ্ছে আমাদের। বাহিনীগুলো বলছে, কারণ আগে নানা নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এসব থেকে রক্ষা পেতে আমাদের পারিবারিক পর্যায়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে নিজেদের সন্তানেরা কোন পথে যাচ্ছে। তাদের আমরা কি সঠিক শিক্ষার পথ দেখাচ্ছি, নাকি শেখাচ্ছি সংকীর্ণতা। বলছি না, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এনিয়ে কথা বলবে না; তারা তাদের কাজ করুক, পাশাপাশি আমরাও যেন তেমন সমাজ গড়ার একেক একক হই, যাতে উৎসবে দিনে মানুষ কেবল উৎসব নিয়েই ভাববে, সমাজ নিয়ে ভাববে, সবাইকে নিয়ে ভাবতে।

ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ঈদুল আজহার দিনে পশু কোরবানি দেন। ধর্মীয় রীতির এই পশু কোরবানি প্রতীকী। ত্যাগ; প্রিয় বস্তুকে ত্যাগের শিক্ষা। ত্যাগ, সামাজিকতা ও সাম্যের যে শিক্ষা নিয়ে এসেছে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ, সে ত্যাগ সফল হোক, সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হোক। এ দিনে তাই পশু কোরবানির প্রতীকী ত্যাগের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে থাকা আত্মম্ভরিতা ও প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য পশুপ্রবৃত্তির বিসর্জন হোক।

সবাইকে ঈদ মুবারক!

   

রংপুরে ট্রাক্টরের ধাক্কায় নিহত ২



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,রংপুর
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

রংপুরের পীরগঞ্জে ট্রাক্টরের ধাক্কায় এক যাত্রীসহ ব্যাটারিচালিত অটো ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন।

বুধবার (২৬ জুন) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম।

নিহতরা হলেন- পীরগঞ্জের উপজেলার ছাতুয়া গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে ভ্যানচালক আব্দুর রহমান (৫৫) ও একই উপজেলার বিছনা গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী ফাতেমা বেওয়া (৭৫)।

এর আগে মঙ্গলবার (২৫ জুন) সন্ধ্যায় পীরগঞ্জ উপজেলার নবাবগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে ব্যাটারিচালিত অটো চার্জারভ্যানে যাত্রী নিয়ে খালাশপীর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ভ্যানচালক আব্দুর রহমান। উপজেলার গোপীনাথপুর নামক স্থানে পৌঁছালে চার্জারভ্যানকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় একটি ট্রাক্টর। এতে ঘটনাস্থলেই ভ্যানচালক আব্দুর রহমানের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় গুরুতর আহত ভ্যানের যাত্রী ফাতেমা বেওয়াকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে রাত ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এদিকে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে মাহিন্দ্র ট্রাক্টরটি জব্দ করেছে পুলিশ। ট্রাক্টরচালক ও তার সহকারী পলাতক রয়েছে।

পীরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম জানান, নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ২০১৮ আইনে চালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

;

লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার লোহাকুচি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।

বুধবার (২৬ জুন) ভোরে উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের লোহাকুচি গ্রামের ৯১৯ নম্বর সীমান্ত পিলার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বিজিবি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বুধবার গভীর রাতে ৪-৫ জনের একদল বাংলাদেশী গরু পারাপারকারী জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার লোহাকুচি সীমান্তের ৯১৯নং সীমানা পিলার দিয়ে ভারতের ভিতরে প্রবেশ করে। এ সময় ভারতের কোচবিহার জেলার সিতাই থানার ৭৮বিএসএফের ওয়েষ্ট চামটা ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নুরুল ইসলাম (৬০)। পরে অন্যরা তার মরদেহ নিয়ে আসে। খবর পেয়ে উপজেলার গোড়ল তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহত ব্যক্তির নাম নুরুল ইসলাম (৬০)। তিনি ওই ইউনিয়নের লোহাকুচি গ্রামের মৃত্যু মইনুদ্দিনের ছেলে।

লালমনিরহাট ১৫বিজিবি অধিনায়ক লে.কর্ণেল মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,এ বিষয়ে পতাকা বৈঠকের আহবান জানানো হয়েছে।

;

সারা দেশে বৃষ্টির আভাস, কমতে পারে তাপমাত্রা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বুধবার সারা দেশে বজ্রসহ বৃষ্টি এবং কোথাও কোথাও ভারি বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। সেইসঙ্গে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে বলে আভাস দেয়া হয়েছে।  

মঙ্গলবার (২৫ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়, বুধবার (২৬ জুন) রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, রাজশাহী, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা বিভাগের দু-এক জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণেরও আশঙ্কা রয়েছে।

সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজ করতে পারে।

লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।

রাজশাহী, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে।

আগামী পাঁচ দিনে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

;

আবাসিকে বাড়ছে গ্যাসের দাম! কমিশনে প্রস্তাব তুলছে বিইআরসি



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: গ্যাসের চুলা

ছবি: গ্যাসের চুলা

  • Font increase
  • Font Decrease

মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকের জন্য গ্যাসের বরাদ্দ বাড়ানোর আবেদন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সভায় তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১ বছর আগে করা ওই আবেদনের বিষয়ে কমিশন দ্বিধাবিভক্ত রয়েছে এমন তথ্য দিচ্ছেন জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা। এদিকে যাচাই-বাছাই কমিটি তাদের রিপোর্টে বলেছে, এ দফা গ্যাসের বরাদ্দ কিংবা পরিমাণ বাড়লে বেড়ে যাবে গ্যাসের দামও। তারা বলছে, গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে দাম পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। তবে বিকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গ্যাসের দর কমিয়ে দিয়ে ভলিয়ম বাড়াতে হবে।

বর্তমানে মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকদের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যবহার ধরে গ্যাসের বিল আদায় করা হয়। গ্রাহক ব্যবহার করুক, কিংবা না করুক অথবা বেশি ব্যবহার করুক কিংবা কম, একটি নির্ধারিত অংকের বিলই তাদের দিতে হয়। কিন্তু তিতাস গ্যাস বিদ্যমান এক চুলাবিশিষ্ট ইউনিটে ৫৫ ঘনমিটার (৯৯০ টাকা) বরাদ্দ থেকে বাড়িয়ে ৭৬.৬৫ ঘনমিটার এবং দুই চুলাবিশিষ্ট ইউনিটে ৬০ ঘনমিটার (১০৮০ টাকা) থেকে বাড়িয়ে ৮৮.৪৪ ঘনমিটার বরাদ্দ করার আবেদন দিয়েছে। বলা হচ্ছে, বরাদ্দের পরিমাণ বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই দামও বেড়ে যাবে।

বিইআরসি সর্বশেষ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশ দেয় ২০২২ সালের ৫ জুন। ওই আদেশ দেওয়ার আগে মার্চে গণশুনানি গ্রহণ করে। তখন বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারি গ্রাহকদের পরিসংখ্যানে দেখা যায় গড়ে এক চুলা ৪০ এবং দুই চুলা সর্বোচ্চ ৫০ ঘনমিটার ব্যবহার করছে। প্রিপেইড গ্রাহকের ব্যবহারের পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এক চুলা ৭৩.৪১ ঘনমিটার ও দুই চুলা ৭৭.৪১ ঘনমিটার থেকে কমিয়ে যথাক্রমে ৫৫ ও ৬০ ঘনমিটার করা হয়।

বিইআরসির সেই আদেশের ১০ মাস পর আপত্তি জানায় তিতাস। আর তিতাসের আবেদনের প্রায় ১ বছর পর কমিশনের সভায় তোলা হচ্ছে বিষয়টি।

তিতাস তার আবেদনে বলেছে, মিটারবিহীন কমবেশি ২৫ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে কোনো সমীক্ষা বা তথ্য বিশ্লেষণ না করেই ঘনমিটারের পরিমাণ নির্ধারণ করেছে বিইআরসি। এতে কারিগরি ঝামেলা বেড়েছে এবং সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠান তিতাস আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

তবে তিতাসের এমন অভিযোগ অস্বিকার করে আসছে বিইআরসি।

কমিশনের তৎকালীন সদস্য (২০২২) মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী বার্তা২৪কমকে বলেন, তিতাস গ্যাসের অভিযোগ সত্য নয়। তাদের যে সাড়ে ৩ লাখ প্রিপেইড মিটার ছিল সেখানে দেখা গেছে গড়ে ৪৫ ঘনমিটারের কম ব্যবহৃত হয়েছে। প্রিপেইড মিটারের বিলের তথ্য দেখলেই বুঝতে পারা যায়। বিষয়টির জন্য রকেট সায়েন্স জানা দরকার হয় না।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, কার্যক্রম চলছে, বিভিন্ন মিটারের তথ্য নেওয়া হয়েছে. সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করতে সময় লেগেছে।

বিষয়টি কমিশনের মিটিংয়ের এজেন্ডায় আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না।

গণশুনানির বিষয়ে ভাবা হচ্ছে কি-না, এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিষয়টি কমিশনে উঠলে তারপর বলা যাবে। আগেই কিছু বলা যাচ্ছে না। আর আগেই কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

তিতাস দাবি করে আসছে মিটারবিহীন গ্রাহকরা বেশি গ্যাস পুড়ছে। তবে মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের তথ্যচিত্র তা বলে না।

এখানে তিতাসের বক্তব্য হচ্ছে, মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহক সাশ্রয়ী হচ্ছেন। গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা গেলে এই সংকট থাকে না। প্রথম দিকে গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে বেশ তোড়জোড় ছিল। এখন যতটা পারা যায় বিলম্বিত করার কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।

প্রথম দিকে তারা বলেছিলেন আবাসিকে অনেক বেশি গ্যাস পুড়ছে, মিটার স্থাপন করলে তাদের রাজস্ব বেড়ে যাবে। কিন্তু লালমাটিয়া (২০১৬ সালে) এলাকায় প্রথম যখন মিটার বসানো হলো তার রেজাল্ট এলো উল্টো। দেখা গেলো প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারিদের বিল আসছে দেড়’শ থেকে আড়াই’শ টাকা। যাদের মিটার নেই তাদের কাছ থেকে তখন বিল আদায় করা হচ্ছিল দুই চুলা সাড়ে ৪’শ টাকা।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ২০১৬ সালে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেছিলেন, প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পাইলট প্রকল্পের রেজাল্ট ভালো। দুই চুলায় মাসে ৩৩ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে।

বিইআরসি ২০১৮ সালে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের দ্রুত করার আদেশ দেয়। গ্রাহক যাতে নিজেরা মার্কেট থেকে মিটার কিনে স্থাপন করতে পারে সেই সুবিধা উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর প্রণীত নীতিমালায় বলা হয়েছে গ্রাহক নিজের পছন্দমতো দোকান থেকে মিটার কিনে বিতরণ কোম্পানিতে জমা দেবেন। বিতরণ কোম্পানিগুলো পরীক্ষা করে গ্রাহকের আঙ্গিনায় স্থাপন করবে। তবে নানা মারপ্যাচ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। কোম্পানিগুলো বাজারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে মিটার কিনেই নিজেরাই স্থাপন করছে, তাও চলছে ঢিমেতালে। তারা দুই দিকে ব্যবসা করতে চায়। এক গ্রাহকের পকেট কাটা, অন্যদিকে প্রকল্পের নামে বেশিদামে মিটার কিনে ব্যক্তি বিশেষে অনৈতিক সুবিধা নেওয়া।

বিইআরসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, তিতাস এখন শুধু ভলিয়ম বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছে। যদিও টেকনিক্যালি এটা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, দেশে বর্তমানে ৪৪ লাখের মতো আবাসিক গ্রাহক রয়েছে। তারমধ্যে ৫ লাখের মতো প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করেন। ৩৯ লাখ গ্রাহকের কমবেশি ২৮ ঘনমিটার হিসাবে পরিমাণ বেড়ে গেলে মাসে হয় ১০ কোটি ৯২ লাখ ঘনমিটার। এই পরিমাণ গ্যাস তারা বিক্রি দেখাতে চায়। গ্যাস কোম্পানিগুলো চুরি ঠেকাতে পারছে না। সেই চুরির গ্যাস আবাসিকের উপর দিয়ে চালিয়ে দিতে চায়। যে কারণে শুধু পরিমাণ বাড়াতে আব্দার করেছে।

অন্যদিকে ২০২২ সালের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপনে বিইআরসি আরেকটি ঐতিহাসিক আদেশ দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে বিশ্বের কোথাও গ্যাসের সিস্টেম লস ২ শতাংশের উপরে নেই। সিস্টেম লস ২ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। এখানেই হিমশিম খাচ্ছে কোম্পানিগুলো। কোন কোন এলাকায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর‌্যন্ত সিস্টেম লস রয়েছে। তারা চুরি না ঠেকিয়ে বিকল্প পথে হাটতে চাইছে। গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাবের কোনই যৌক্তিকতা নেই। ওই প্রস্তাব বাছাইয়ে আটকে যাওয়ার কথা।

;