সাড়ে ৩ লাখ চামড়া সংগ্রহ করতে চায় চট্টগ্রামের আড়তদাররা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
চামড়া সংরক্ষণের জন্য আড়তগুলোতে এনে রাখা হয়েছে লবণ

চামড়া সংরক্ষণের জন্য আড়তগুলোতে এনে রাখা হয়েছে লবণ

  • Font increase
  • Font Decrease

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গেল বছরের মতো এবারও সাড়ে ৩ লাখ কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন কাঁচা চামড়া আড়তদাররা। কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের প্রথম এবং প্রধান উপকরণ হলো লবণ।

এখন লবণ কেনা, চামড়াজাত করার জন্য গুদাম ভাড়া এবং শ্রমিক ঠিক করে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতি।

কোরবানির সময়ে পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার অন্য কোনও উপায় নেই। অতি প্রয়োজনীয় এই লবণ নিয়ে এবার বেশ স্বস্তিতে কাঁচা চামড়া আড়তদাররা। দামও গত বছরের চেয়ে বস্তাপ্রতি (৭৪ কেজি বস্তা) কমেছে প্রায় ১০০ টাকা।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর সাড়ে তিন থেকে চার লাখ চামড়া সংগ্রহ করলেও এক লাখ চামড়া নেয় চট্টগ্রামের রিফ লেদার ট্যানারি। বাকি চামড়া বিক্রি করতে ঢাকার ট্যানারির ওপর নির্ভর করতে হয়। এবারও রিফ লেদার গত বছরের মত চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছ থেকে এক লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশে পশুর চামড়ার যে চাহিদা, তার ৮০-৯০ শতাংশই পূরণ হয় কোরবানির ঈদে। ফলে এটাই চামড়া সংগ্রহের মৌসুম।

রেওয়াজ অনুযায়ী পরের দুই দিনও কিছু পশু কোরবানি চলবে। ওই সময় পাড়া-মহল্লা থেকে কাঁচা চামড়া কিনে বা সংগ্রহ করে মৌসুমী ক্রেতারা তা বিক্রি করবেন আড়তে। আড়ত সেই চামড়া কিছুটা প্রক্রিয়াজাত করে ট্যানারিগুলোর কাছে বিক্রি করবে।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন বলেন, গতবছর চট্টগ্রামে কোরবানির ঈদে প্রায় তিন লাখ ৪৫ হাজার কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছিলাম আমরা (আড়তদাররা)। এর মধ্যে আড়াই লাখের বেশি ছিল গরুর চামড়া। এবার গরু, ছাগল, মহিষ মিলে সাড়ে ৩ লাখ চামড়া সংগ্রহের টার্গেট আছে আমাদের। এখন আমাদের লবণ ক্রয়, লোকবল ঠিক করা-গুদাম ঠিক করাসহ সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।

তিনি বলেন, লোকসান গুণতে গুণতে আমাদের এই ব্যবসা (কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী) থেকে অনেকেই দেউলিয়া হয়ে গেছে। অনেকেই এই ব্যবসা গুটিয়ে অন্য ব্যবসায় চলে গেছে। আগে চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য ছিল ১১২জন। আমাদের সমিতির বাইরে ছিল আরো ১০-১২জনের মতো। এখন আমাদের সমিতির সদস্য সংখ্যা ১১২ জন থাকলেও গত দুই বছরে ৩০-৪০ জনের বেশি কেউ চামড়া ক্রয় করে না। প্রতি বছর লোকসান দিতে দিতে ঋণের বোঝা বইতে বইতে অনেকেই এই ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় চলে গেছে। তাছাড়া আমাদের চট্টগ্রামে আগে মদিনা ট্যানারি ও রিফ লেদার ট্যানারি নামে দুটি ট্যানারি ছিল। বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) না থাকায় ছয় বছর আগে মদিনা ট্যানারি বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।

আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবছর গরমের তীব্রতা আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি, যেটা চামড়া সংগ্রহের জন্য অনূকূলে নয়। চামড়া রেখে দিলে খুব তাড়াতাড়ি সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তাই মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছে অনুরোধ থাকবে চামড়া সংগ্রহ করার পর যাতে দ্রুত আড়তে নিয়ে আসে অথবা লবণ দিয়ে স্থানীয় ভাবে মজুদ করে রাখা হয়।

তিনি মৌসুমী ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামটি সংরক্ষণের পরের দাম, যা অনেক কোরবানিদাতা কিংবা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বোঝেন না। তারা মনে করেন সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আড়তদাররা চামড়া কিনবেন মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তাই তাদেরকে বেশি দামে চামড়া ক্রয় না করার অনুরোধ জানান তিনি।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির চামড়া স্থানীয়ভাবে ৭ থেকে ১০ দিন সংরক্ষণ করতে হবে। চামড়া যেন বর্ডার ক্রস না করে সে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। সংরক্ষণ করতে গিয়ে চামড়া যেন নষ্ট না হয় সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। চামড়া আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে কাজে লাগাতে হবে।

৬৩ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদন হয়েছে জানান বিসিক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-মহাপরিদর্শক নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, এবার ৭ সাড়ে হাজার মেট্রিক টন লবণ প্রয়োজন। সাড়ে ২১ হাজার লবণ মজুদ রয়েছে আমাদের। লবণের কোন সংকট নেই। চামড়া সংরক্ষণের জন্য আমরা গত বছর ২০ টন লবণ বিনামূল্যে সরবরাহ দিয়েছি। এ বছর ২৫ টন লবণ বিনামূল্যে দেব।

এর আগে, ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে ৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩ টাকা বেড়েছে। ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়; গত বছর এই দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

চট্টগ্রামে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, গতবছর যা ৪৭ থেকে ৫২ টাকা ছিল।

   

চট্টগ্রামে অস্ত্রসহ গ্রেফতার ২



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা এলাকা থেকে দেশি অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী জসিম ও তার এক সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) কর্ণফুলী থানাধীন মহলখান এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- কর্ণফুলী থানাধীন উত্তর বন্দর এলাকার মৃত নসু মিয়া ওরফে নজু মিয়ার ছেলে মো. জসিম উদ্দিন ওরফে টুয়েন্টি জসিম (৩৮) এবং বাঁশখালীর সাধনপুর গ্রামের দিল মোহাম্মদের ছেলে মো. সেলিম (২৮)।

র‌্যাব-৭ জানায়, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মাদক কেনাবেচার উদ্দেশে মহলখান এলাকায় অস্ত্রধারী মাদক কারবারিরা অবস্থান করছে, এমন খবর পেয়ে মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে অভিযান চালিয়ে জসিম ও সেলিম নামে দুই অস্ত্রধারীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি দেশীয় তৈরি রিভলবার এবং তিন রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতাররা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় প্রভাব বিস্তারসহ বিভিন্ন মাদক কারবারিদের মাদকদ্রব্য কেনাবেচা ও বহনে নিরাপত্তা দিতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে আসছিল।

বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে র‌্যাব-৭ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) মো. শরীফ-উল আলম বলেন, গ্রেফতার জসিমের বিরুদ্ধে কর্ণফুলী ও আনোয়ারা থানায় মাদক, অস্ত্র, ডাকাতি ও চুরির ৫টি এবং সেলিমের বিরুদ্ধে নগরীর পতেঙ্গা থানায় ২টি মামলা রয়েছে। দুজনকে পরবর্তী আইগত ব্যবস্থা নিতে কর্ণফুলী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

;

থানচিতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কেএনএফ সদস্য নিহত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বান্দরবান
পাহাড়ি এলাকা/ছবি: সংগৃহীত

পাহাড়ি এলাকা/ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বান্দরবানের থানচি উপজেলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কেএনএফের এক সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার (২৬ জুন) সকালে উপজেলার বাকলাই এলাকার সিম্পলাম্পি পাড়া থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ সকালে বাকলাই এলাকা থেকে আমরা একজনের লাশ উদ্ধার করেছি। তবে নিহতের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানের থানচি উপজেলার সিম্পলাম্পি পাড়া ও তাজিংডং পাহাড়ে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান চলাকালে কেএনএফের পোশাক পরা এক যুবকের মরদেহ পাওয়া যায়।

পোশাক দেখে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্য।

;

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি নারী এমপিদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ বিনির্মাণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীর দ্রুত পাসের দাবি জানিয়েছেন তামাক বিরোধী সংসদীয় নারী ফোরামের সদস্যরা।

বুধবার (২৬ জুন) নারী মৈত্রী আয়োজিত রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে “তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে করনীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ফোরামভুক্ত নারী সংসদ সদস্যরা এ দাবি জানান।

তামাক বিরোধী সংসদীয় নারী ফোরামের আহ্বায়ক ও সংসদ সদস্য শবনম জাহান শিলা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য মাহফুজা সুলতানা (নারী আসন-৬), জারা জাবিন মাহবুব (নারী আসন-৭), মাসুদা সিদ্দিক রোজী (নারী আসন-৩৪), নাজমা আকতার (নারী আসন-৩৭), অনিমা মুক্তি গোমেজ (নারী আসন ২৯), শেখ আনার কলি পুতুল (নারী আসন-৩০), মাহফুজা সুলতানা (নারী আসন-৬), আশরাফুন্নেছা (নারী আসন-৪৪), কানন আরা বেগম (নারী আসন-৪১), লাইলা পারভীন (নারী আসন-১৩), সানজিদা খানম (নারী আসন-৩২), সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়ছমীন (নারী আসন-৩৫) এবং হাসিনা বারি চৌধুরী (নারী আসন-৩১)।

তামাক বিরোধী সংসদীয় নারী ফোরামের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন ফোরামের আহ্বায়ক শবনম জাহান শিলা।

তিনি বলেন, তামাকের কারণে প্রতিবছর এক লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। এই মৃত্যুর হার হ্রাস করার লক্ষ্যে তামাক বিরোধী সংসদীয় নারী ফোরাম এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা আইন সংশোধনী পাশের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী বরাবর স্বাক্ষরকৃত চিঠি প্রেরণ করেছি। এছাড়াও আমরা পার্লামেন্টে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাশের দাবি জানিয়েছি। পাশাপাশি অধিকতর জনমত সৃষ্টির জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গনমাধ্যমে তামাক বিরোধী বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা অব্যাহত রেখেছি।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাসের দাবি জানান ফোরামের অন্যান্য সদস্যরাও। তারা বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই। তরুনদের ধূমপানের অভ্যাস দেশের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয়। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা তামাকবিরোধী আন্দোলনে অনেকাংশে সহায়ক হতে পারে। তামাকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার ও কথা ব্যক্ত করেন তারা।

এছাড়াও ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের প্রতিনিধি মিসেস অ্যাড্রিয়েন পিজাটেলা, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস এর দক্ষিণ এশীয় কর্মসূচির পরিচালক ড. মাহিন মালিক এবং নারী মৈত্রীর সভাপতি মাসুমা আলম সভায় উপস্থিত ছিলেন। তারা নারী সংসদ সদস্যদের উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী প্রস্তাব সমর্থন করার জন্য ফোরাম সদস্যদের অনুরোধ জানান।

;

ত্রিধাবিভক্ত বরিশাল আওয়ামী লীগ, কমিটি বিলুপ্তিতে নেতৃত্বশূন্য বিএনপি



এস এল টি তুহিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

হতাশা, বঞ্চনা ও ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়নের ফলে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বরিশালের আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে ফলপ্রসূ আন্দোলনের ব্যর্থতা এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় হঠাৎ বিলুপ্ত হওয়া কমিটি নিয়ে নেতৃত্বশূন্য এখন বরিশাল বিএনপি। দল দুটোর মধ্যে ক্ষমতার প্রদর্শনী থাকলেও কেউই বরিশাল তথা দল ও দেশপ্রেমিক নেতা ছিলো না বলে অভিযোগ বরিশালের সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যদিও এসব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন দুটি রাজনৈতিক দলের জেলা ও মহানগর নেতারা।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের খুব একটা প্রভাব মহানগরে না থাকলেও জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের মধ্যে বিগত জাতীয় নির্বাচন থেকেই বিভক্তি চোখে পড়ে। তবে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে গত ষষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে। প্রথমদিকে আনারস প্রতীকের পক্ষে বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে দেখা গেলেও পরবর্তীতে জাহিদ ফারুকের সমর্থন চলে যায় মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে। তার সামনেই মোটরসাইকেল ও আনারস প্রতীকের প্রার্থীরা অসৌজন্যমূলক আচরণ করলেও তিনি নীরব থাকেন। এ নিয়ে কানাঘুষা সৃষ্টি হলে প্রতিমন্ত্রী ও মেয়র দ্রুত একসাথে সভা করে বুঝিয়ে দেন তাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।

এরআগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাথে মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত এবং সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের মধ্যে দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়। বিশেষ করে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ পক্ষের লোকেরা প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এ সময় স্লোগান ওঠে জাহিদ-খোকন দুই ভাই, বরিশালে আর সমস্যা নাই। এর অল্পদিন পরেই উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে মেয়র-প্রতিমন্ত্রী দূরত্ব তৈরি হয়। যা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় সুশীল সমাজেও।

উপজেলা চেয়ারম্যানকে ঘিরে মেয়র ও প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে দাবি করছেন বরিশালের একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেন, আনারস প্রতীকের প্রার্থী মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন ছিলেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের একান্ত ঘনিষ্ঠ লোক। হঠাৎ করে মাহমুদুল হক খান মামুনকে আর প্রতিমন্ত্রীর পাশে দেখা যায় না, বরং সেখানে এখন স্থান পেয়েছে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী এসএম জাকির। আর এলাকার সবাই জানেন এসএম জাকির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। যে কারণে মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত তাকে অপছন্দ করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। হয়তো আরও কিছু জটিলতাও আছে, যা আমরা সাধারণ চোখে বুঝতে পারছি না। যা নিয়ে মেয়র ও প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান তারা। বিশেষ করে ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপন সময়ে মহানগর সহসভাপতি আইনজীবী আফজালুল করিমের বক্তব্যে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে বলে দাবি সুশীল সমাজের।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নগর চিন্তাবিদদের একজন কাজী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আমি যেটা বুঝি, এই ৬৬ বছরের জীবনে আমি বরিশালে প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণ ছাড়া এমন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব পেলাম না, যার পিছনে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন রয়েছে। এখানে এখন যা দেখি তা টাকা আর ক্ষমতার প্রদর্শনী শুধু। বরিশালের জন্য বা দল ও দেশের জন্য ভালোবাসা আছে, এমন নেতার খুবই অভাব বরিশালে।

এদিকে নগর চিন্তাবিদদের একজন বরিশাল সাহিত্য সংসদ এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কেএসএ মহিউদ্দিন মানিক বীরপ্রতীক বলেন, আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তী বা ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করতে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে লস্কর নুরুল হক, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আইনজীবী আফজালুল করিমসহ কয়েকজনকে দেখা গেছে পৃথক অবস্থানে। মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের পাশে এসময় মাহমুদুল হক খান মামুনসহ কয়েকজন ছিলেন। ২৩ জুন মেয়রের উদ্যোগে প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপন র‍্যালি বা সমাবেশে প্রতিমন্ত্রী কিংবা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কাউকে দেখা যায়নি। আবার মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তার লোকজন নিয়ে পৃথকভাবে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও সমাবেশ র‍্যালি করেছেন। চাচা-ভাতিজার লোক সমাগমের একটা প্রতিযোগিতা দেখা গেছে এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে। যেখানে প্রতিমন্ত্রী পক্ষের কাউকে দেখা যায়নি বলে জানান তিনি।


বরিশালে বিএনপির বর্তমান অবস্থা

গত ১৩ জুন বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে হঠাৎ করে মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলা ও মহানগর বিএনপিতে চলছে চরম অস্বস্তি। নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার সম্ভাবনায় জোর লবিং ও তদবিরে ব্যস্ত নেতাদের অনেকে। তালিকায় আছেন সাবেক ও বর্তমান নেতাদের অনেকেই। তবে আলোচনায় এবায়দুল হক চান, মনিরুজ্জামান ফারুক ও জিয়াউদ্দীন সিকদারের নাম প্রথম সারিতে। কেউ কেউ আবার বলছেন, এবার চমক দেখাবেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার।

গত প্রায় আড়াই বছর ধরেই বরিশাল মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক কমিটি নির্ভর। পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বারবার পিছিয়ে যাওয়ার কারণে বরিশালে দলটির নেতৃত্বশূন্যতা তৈরি হচ্ছে বলে জানালেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী। তিনি বরিশালে বিএনপির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।

২০২২ সালের ২২ জানুয়ারি গঠিত মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব ও বিতর্কের মধ্যেই একই সালের ১১ মার্চ সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ৩০টি কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা সবাই সাবেক এমপি ও মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারী ছিলেন। ফলে মহানগরের রাজনীতিতে মজিবর রহমান সরোয়ার ও তার অনুসারী নেতা-কর্মীরা একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এ নিয়ে বিভিন্ন সমাবেশে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতও দেখা গেছে। এমন অবস্থার মধ্যেই গত ১৩ জুন গভীর রাতে বরিশাল মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ১৪ জুন শুক্রবার সকালে কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়।

গুঞ্জন ওঠে, তাহলে কি বরিশাল মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে আবারও মজিবর রহমান সরোয়ারের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা হচ্ছে? কেউ কেউ আবার বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানকে ও এজন্য দায়ী করেন এ জন্য। তবে এখানে তাদের কোনো হাত নেই বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন বিএনপির এই দুই নেতা। বিলুপ্ত হওয়া আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, কমিটি বিলুপ্ত করা হবে, তা আগে থেকে কোনো নেতাই জানতেন না।

বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সদস্য ও দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জাহিদুর রহমান বলেন, ‘হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। কবে নাগাদ পুনরায় কমিটি করা হবে, সে ব্যাপারেও আমরা সবাই অন্ধকারে আছি।’

কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পরদিন থেকেই অনেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে। তবে তারাও নতুন কমিটি নিয়ে কোনো তথ্য পাচ্ছেন না। এ নিয়ে বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘কমিটি বিলুপ্ত করার বিষয়টি আমরা আগে থেকে জানতাম না। তবে তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি আড়াই বছরের বেশি সময় পার করেছে। তাই বিলুপ্ত করা হয়েছে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলেই মনে হচ্ছে।’

অন্যদিকে বিলুপ্ত হওয়া কমিটির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, হঠাৎ করে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এটা আরও আগেই হওয়া উচিত ছিলো। একটানা আড়াই বছর আহ্বায়ক কমিটি চলেছে। এখন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত যা হবে আমরা তা-ই মেনে নেব। আশাকরি শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাবে বরিশাল বিএনপি। একই কথা বলেছেন বিএনপির সাবেক জেলা সভাপতি এবায়দুল হক চান ও একই কথা বলেন সাবেক কাউন্সিলর ও বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার। তিনি বলেন, দলকে ভালোবাসি দলের একজন কর্মী হিসাবে আমরণ থাকতে চাই। তবে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত যা-ই হোক সেটাই মেনে নিতে প্রস্তুত আছি বলে জানান তিনি।

;