বেনজীর-মতিউরের সম্পদ অনুসন্ধান প্রভাবিত করতে চাপ নেই: দুদক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বেনজীর আহমেদ ও মতিউর রহমান

বেনজীর আহমেদ ও মতিউর রহমান

  • Font increase
  • Font Decrease

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সম্পদ অনুসন্ধানকে প্রভাবিত করতে বাইরে থেকে কোনো চাপ নেই বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন।

সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

সরকারে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অনুসন্ধানে বাইরের চাপ ও প্রভাবের বিষয়ে দুদক সচিব বলেন, আপনারা জানেন দুর্নীতি দমন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা, এসব বিষয়ে কোনো দিক থেকে কোনো চাপ আসছে না। যে দুটো আইন ও বিধির কথা উল্লেখ করছি, এই সংশ্লিষ্ট আরও কিছু আইন আছে, সেগুলোর আলোকে আমাদের আইনি প্রক্রিয়া চলছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে যেসব কার্যক্রম চলে, এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম বা ব্যত্যয় হবে না।

দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও দুই কন্যার ব্যক্তিগত শুনানির তারিখ ছিল আজ (সোমবার)। তবে তারা আজ উপস্থিত হননি। তারিখ বাড়ানোর জন্য কোনো আবেদনও করেননি। তবে একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। যেখানে অভিযোগের বিষয়ে তাদের অবস্থান বর্ণনা করেছেন। এই আবেদনটি বেনজীর আহমেদের আবেদনের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার এসেছিল।

বেনজীরের স্ত্রী জিসান মির্জা ও তার দুই কন্যা যে আবেদন করেছেন, তা যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা দুদক আইন ও দুদক বিধি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান দুদক সচিব।

তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তারা প্রতিবেদন দেওয়ার পর কমিশন–পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবে। প্রতিবেদনে কর্মকর্তাদের সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে ও অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম চলবে।

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর রহমানের বিষয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, মতিউরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। মতিউরের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতে অনুসন্ধান কর্মকর্তা আদালতে আবেদন করেছেন। আদালত থেকে মতিউরের বিদেশযাত্রার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মতিউর, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও তাদের পুত্রসন্তান আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদেরও মতো মতিউর রহমানও প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশ ছেড়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার ঘনিষ্ঠ একাধিক কাস্টমস কর্মকর্তা জানান, রোববার (২৩ জুন) বিকেলের দিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মতিউর পালিয়ে গেছেন।

দুই বন্ধু শুয়ে আছেন পাশাপাশি, লাশঘরে…



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
দুই বন্ধু শুয়ে আছেন পাশাপাশি, লাশঘরে…। ছবি: বার্তা২৪.কম

দুই বন্ধু শুয়ে আছেন পাশাপাশি, লাশঘরে…। ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশেই লাশঘর। সেখানে পাশাপাশি দুটি আসনে শুয়ে আছেন দুই বন্ধু-মোহাম্মদ শাহেদ ও মোহাম্মদ ইকবাল। আড্ডা ছাড়া দুই বন্ধুর সময়ই কাটত না। কাছাকাছি থেকেও সেই দুই বন্ধুর মুখেই কিনা আজ নেই কোনো কথা, সুখ-দুঃখের গল্প। হবেই বা কি করে-আগুনের ধোঁয়ার কুন্ডুলীতে যে দুই বন্ধুর শরীর নিস্তব্ধ হয়ে গেছে চিরতরে।

শাহেদ ও ইকবাল-দুই বন্ধুই প্রায় কাছাকাছি বয়সের। শাহেদ ১৮ বছরের আর ইকবালের বয়স ১৭। সাতকানিয়ার মির্জাখীল এলাকার বাসিন্দা এই দুই তরুণ ছোটকাল থেকেই বেড়ে ওঠেছেন একসঙ্গে। পরে চট্টগ্রাম শহরে এসে দুটি দোকানে চাকরি নেন দুই বন্ধু। পুরো সপ্তাহে নিজ নিজ কর্মস্থলে দুজন ব্যস্ত থাকলেও এক বন্ধুর মন পড়ে থাকত আরেক বন্ধুর কাছে। তাই তো বৃহস্পতিবার রাত এলেই শাহেদের বাসায় ছুঁটে আসতেন ইকবাল। গল্প-আড্ডা-মুঠোফোনে গেমস খেলতে খেলতেই কবে যে দুই বন্ধুর রাত শেষ হয়ে যেত নিজেরাই জানতেন না। বন্ধু শাহেদের সঙ্গে সময় কাটানোর পর শুক্রবার বিদায় নিয়ে ইকবাল ফিরতেন নিজের বাসায়। এবার আর এক বন্ধু আরেক বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিতে পারেননি। তারই আগে যে জীবন থেকেই বিদায় নিয়েছেন দুজন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) মধ্যরাতে রিয়াজউদ্দিন বাজারে লাগা আগুনে দুই বন্ধুই হারিয়েছেন প্রাণ। তাঁদের পাশাপাশি মারা গেছেন মোহাম্মদ রিদোয়ান নামের ৪৫ বছরের এক যুবকও।

মোহাম্মদ শাহেদ রিয়াজউদ্দিন বাজারের রেজওয়ান কমপ্লেক্সের আজওয়ার টেলিকম নামের একটি মুঠোফোনের যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকানে চাকরি করতেন। ইকবাল অন্য একটি দোকানে চাকরি করতেন।

আজওয়ার টেলিকমের মালিক সাজ্জাদ মিয়া তাঁর কর্মী শাহেদকে হারিয়ে শোকাস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন শাহেদকে উদ্ধারের জন্য। কিন্তু কোনোভাবেই পারেননি।

সাজ্জাদ মিয়া বলেন, 'শাহেদ ও ইকবাল ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এক বন্ধুর জন্য আরেক বন্ধুর টান কতটা সেটা আমি অনুভব করতাম। ব্যবসার ফাঁকে সুযোগ পেলেই ইকবালের সঙ্গে ফোনে কথাট বলত শাহেদ। আমি বৃহস্পতিবার বাড়িতে গেলে বাসা ফাঁকা থাকত। তাই ইকবালকে নিয়ে আসত শাহেদ। আগুন লাগার সময় দুই বন্ধু বাসাতেই ছিল। মৃত্যুও হলো একসঙ্গেই।'

রেজওয়ান কমপ্লেক্সের গা ঘেঁষেই মোহাম্মদী প্লাজা। এই প্লাজার দোতলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের রেজওয়ান কমপ্লেক্সে। আর তাতে প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন।

মোহাম্মদী কমপ্লেক্সের অ্যাওয়ে টেলিকমের মোহাম্মদ রিদোয়ানের সঙ্গে পরিচয় ছিল মোহাম্মদ শাহেদের। তিনি বলেন, শাহেদ ও ইকবাল দুজনকেই চিনতাম। তারা খুব কাছের বন্ধু ছিলেন। বৃহস্পতিবার এলেই ইকবাল ছুটে আসতেন বন্ধু শাহেদের বাসায়। শুনেছি আগুন ধরলে তাদের কেও কেও ডাকাডাকি করেন, তবে তারা কানে হেডফোন গুঁজে গেমস খেলায় সেটি শোনেননি। পরে আগুন বেড়ে গেলে তারা বুঝতে পারেন। কিন্তু ততক্ষণে কালো ধোঁয়া তাদের ঘিরে ফেলে। সেই ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান তাঁরা।'

শাহেদ ও ইকবালের প্রাণ হারানোর খবরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন স্বজনেরা

আগুনে শাহেদ ও ইকবালের প্রাণ হারানোর খবরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন স্বজনেরা। জরুরি বিভাগের পাশের একটি কক্ষে বসিয়ে তাদের কাছ থেকে নানা তথ্য নেন পুলিশের সদস্যরা।

সাতকানিয়ার বাংলাবাজার মির্জাখীলের কুতুব পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন শাহেদ ও ইকবাল। ছেলেকে হারিয়ে কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই শাহেদের শোকাস্তবদ্ধ বাবা বেঠা মিয়া। তিনি মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলেন পুরোটা সময়।

ভাগ্নের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মামা মোহাম্মদ সোলায়মান। বলেন, ছোটকালে কোলেপিঠে করে ওকে বড় করেছি। তাকে আবার পিঠে নিয়ে কবরস্থানে নিতে হবে ভাবিনি কোনোদিন।

সোলায়মানের মন পুড়ছে ভাগ্নের বন্ধু ইকবালের জন্যও। বলেন, 'শাহেদ আর ইকবাল ছোটবেলা থেকেই বন্ধু। এক বিছানায় ঘুমানো, এক প্লেটে খাওয়ার মতো বন্ধু ছিল দুজন। ইকবাল আমার ভাগ্নের বাসায় এসেছিল বেড়াতে। বেড়াতে এসে তাকেও মর্মান্তিকভাবে মারা যেতে হলো। কাকে আর দোষ দেব।'

ভাগ্নে শাহেদের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মামা মোহাম্মদ সোলায়মান

শাহেদরা দুই ভাই। বড় ভাই সৌদি আরব প্রবাসী। শাহেদের চাচা জসিম উদ্দিন বলেন, রিয়াজউদ্দিন বাজারে আগুন ধরেছে আমরা সেটি রাতেই খবর পাই। কিন্তু সেখানে যে আমার ভাতিজা আটকা পড়েছে সেটি জানতাম না।

সকালে খবর পাই শাহেদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে চমেক হাসপাতালে এসে তাঁর মরদেহ খুঁজে পাই। পেয়েছি তার বন্ধু ইকবালের মরদেহও। দুই বন্ধুই ১৭-১৮ বছরের। একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারত না। এখন মারাও গেল একসঙ্গে।

আগুনে বেশকিছু দোকান পুড়ে ছাই হলেও অক্ষত আছে শাহেদ যে দোকানে চাকরি করতেন সেটি। আজওয়ার টেলিকম নামের সেই দোকানের মালিক সাজ্জাদ মিয়ার তবু মন খারাপ। এই মন খারাপের পুরোটাই শাহেদের জন্য। বলেন, গতকাল একসঙ্গে দোকানে বসে দুজন ক্রেতা সামলালাম। রাতে ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি গেলাম। শেষ রাতে এসে দেখি ও নাই হয়ে গেল। কীভাবে মানব? আরো খারাপ লাগছে ওর সঙ্গে সময় কাটাতে এসে মারা যাওয়া বন্ধু ইকবালের জন্য।'

শাহেদ ও ইকবাল-সারাজীবন একই সুঁতোয় বাঁধা ছিল দুই বন্ধুর জীবন। মৃত্যুর পথেও পাড়ি দিলেন একইসঙ্গে। কিছু সময়ের ব্যবধানে দূরে কোথায়, অন্য কোনোখানে হয়তো আবারও দেখা হয়ে যাবে দুই অভিন্ন আত্মার!

;

দেশজুড়ে টানা ৩ দিন বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
দেশজুড়ে টানা ৩ দিন বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা

দেশজুড়ে টানা ৩ দিন বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা

  • Font increase
  • Font Decrease

রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ স্থানে; ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতি আগামী তিনদিন থাকবে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এছাড়াও ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার পার্বত্য এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। 

শুক্রবার (২৮ জুন) আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

এছাড়াও সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষ বিহার, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৫১, নেত্রকোনায় ৫০ ও সিলেটে ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি অঞ্চলে কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে।

;

এক চেয়ারের দখল নিয়ে মুখোমুখি দুই বন্ধু



মশাহিদ আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: রফিক মিয়া ও ফজর আলী

ছবি: রফিক মিয়া ও ফজর আলী

  • Font increase
  • Font Decrease

রফিক মিয়া ও ফজর আলী। দীর্ঘদিন ধরে তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়। ফাটলটা ধরে পৌর মেয়রকে কেন্দ্র করে। এবার সেই ফাটলটি গভীর হচ্ছে। এক চেয়ারে বসা নিয়ে মুখোমুখি দুই হচ্ছেন দুই বন্ধু। এমনই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসভায়। বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে মুহিবুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্তের পর প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজের সুবিধার্থে দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে তাদের মধ্যে চলছে তুমুল লড়াই।

তারা দুজন হলেন-৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিক মিয়া ওরফে রফিক হাসান ও ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজর আলী।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিশ্বনাথ পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো.আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে মেয়রকে পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করেন। আদেশের একটি কলামে বলা হয় পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ কে প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজের সুবিধার্থে পৌরসভার মেয়রের আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ করা হলো।

আর এই আদেশ জারি হতে না হতেই মেয়রের দায়িত্ব পালন করা নিয়ে প্যানেল মেয়র-১ দাবি করে তুমুল লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কাউন্সিলর রফিক মিয়া ও কাউন্সিলর ফজর আলী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্যানেল মেয়র-১ হিসেবে মেয়রের দায়িত্ব চালাবেন বলে পৌর শহরে আনন্দ মিছিল করেন রফিক মিয়াসহ ৭ জন কাউন্সিলরদের সমর্থকরা।

আর রাত ৯ টায় প্যানেল মেয়র-১ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজর আলী। মূলত তারা ছিলেন একে অপরের ঘনিষ্ট বন্ধু। কিন্তু সম্প্রতি ৬ জন কাউন্সিলরকে সাথে নিয়ে বরখাস্ত হওয়া মেয়রের সাথে কাউন্সিলর রফিক আলীর দূরত্বের সৃষ্টি হলেও ফজর আলী রয়েছেন মুহিবুর রহমানের পক্ষে।

খোঁজ নিয়ে যায়, বিশ্বনাথ পৌরসভা নির্বাচন ২০২২ সালের ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর পৌরসভার প্যানেল মেয়র নির্বাচনের লক্ষে এক বিশেষ সাধারণ সভা পৌরসভা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মেয়র মুহিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সর্বসস্মতিক্রমে ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিক মিয়াকে প্রথম প্যানেল মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তার সাথে পৌরসভার ১নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর সাবিনা ইয়াসমিনকে দ্বিতীয় প্যানেল মেয়র এবং ৩নং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ সুমনকে তৃতীয় প্যানেল মেয়র নির্বাচিত করা হয়।

তবে সংবাদ সম্মেলনে ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজর আলী মেয়রকে বরখাস্তের নিন্দা জানিয়ে বলেন, প্রায় ৩ মাস পূর্বে পৌরসভায় একটি মিটিংয়ের মাধ্যমে কাউন্সিলর রফিক আলীকে বাদ দিয়ে আমাকে প্যানেল মেয়র-১ করা হয়েছে। তাই যদি প্রশাসনিক বা আইনের জটিলতা না থাকে তাহলে রোববার থেকে পৌরসভার অফিসে বসে আমি মেয়রের দায়িত্ব পালন করবো। কিন্তু কাউন্সিলর রফিক আলী মামলার আসামি হয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। রফিক আলী মামলার আসামি হয়ে বিভিন্ন দফতরে অনায়াশে চলাফেরা করলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে না। আর আমি এবং মেয়র মামলার আসামি হয়ে আইনকে শ্রদ্ধা করে আদালত থেকে জামিনে আছি। তিনি কাউন্সিলর রফিক আলীকে গ্রেফতারের জন্য জোর দাবি করেন।

এব্যাপারে বিশ্বনাথ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিক মিয়া বলেন, নতুন পরিষদ গঠনের পরপর পৌরসভার প্রথম সভায় আমাকে প্যানেল মেয়র নির্বাচিত করা হয়। মেয়র যখন দুই বিদেশ যান তখন আমি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বও পালন করেছি। যখন আমরা মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছি তখন মেয়রসহ ওই কাউন্সিলর তাদের মতো করে রেজুলেশন করে কাগজ সৃষ্টি করেছে। যেখানে আমাদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অনাস্থা প্রস্থাবে মেয়রের বিরুদ্ধে আমাদের উপস্থিত স্বাক্ষর নিয়ে বিভিন্নতা লেখালেখি করেছেন ও রেজুলেশন কপি না দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। যা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। কোনো কিছু না বুঝে, না জেনে কাউন্সিলর ফজর আলী ফিতনা সৃষ্টি করার জন্য এসব করছেন।

এদিকে, প্যানেল মেয়র-১ দাবিদার হয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালন নিয়ে আগামী রোববার উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, সংঘর্ষের কোনো আশঙ্কা নেই। কেউ যদি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার ও প্যানেল মেয়র-১ মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা আক্তার বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে দুটি বিষয়ের দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন পেয়েছি।

উল্লেখ্য, গত ১৬ এপ্রিল বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন ৭ কাউন্সিলর।

অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ রফিক মিয়া, প্যানেল মেয়র-২ সাবিনা বেগম, ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজুক মিয়া রাজ্জাক, ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুর আলী, ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম আহমদ, ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাসনা বেগম ও ৩নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লাকী বেগম।

অনাস্থ প্রস্তাব প্রেরণের পরপরই দুইভাগে বিভক্ত হন কাউন্সিলররা।প্যানেল মেয়র রফিক মিয়াসহ ৭ কাউন্সিলর এক পক্ষে ও মেয়র মুহিবের পক্ষ নেন ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজর আলী, ৬নং ওয়ার্ডের বারাম উদ্দিন, ও ৪নং ওয়ার্ডের মুহিবুর রহমান বাচ্চু।

;

আমেরিকার ফরেন পলিসি তৈরিতে বাংলাদেশ পরামর্শ দিবে: মোমেন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন

ছবি: সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন

  • Font increase
  • Font Decrease

ভবিষ্যতে আমেরিকার ফরেন পলিসি কি হওয়া উচিত সে বিষয়ে বাংলাদেশের পরামর্শ দেওয়ার সময় এসেছে জানিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমেরিকার ফরেন পলিসি কি ধরনের হওয়া উচিত সে গুলোতে আমরা উপদেশ দিব। আমাদের এখন উপদেশ নেয়ার সময় নয়, আমাদের এখন উপদেশ দেয়ার সময়। আমেরিকা যদি তাদের ফরেন পলিসি পরিবর্তন করে এবং দুনিয়ার মানুষের কথা চিন্তা করে। তাহলে তারা বিশ্বের নেতা হবে। আর যদি তাদের নীচু মন মানসিকতা প্রকাশ পেতে থাকে তাহলে কিন্তু তারা বিশ্বের মধ্যে কুলাঙ্গার হবে।

শুক্রবার (২৮ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খা হলে 'আওয়ামীলীগের সফল ও গৌরবময় পথচলার ৭৫ বছর' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভাটির আয়োজন করে এডুকেশন রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (ইআরডিএফবি)।

মোমেন বলেন, আগামী পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কি হবে এটা নিয়ে ভাবার সময় এখন এসেছে। কারণ ইতিমধ্যে জঞ্জাল লেগে গেছে। পৃথিবী ঘিরে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব বিরাজ করছে। তাই আমাদের এডুকেশন রিসার্চের গবেষণা করা উচিত যে বিশ্বের ভবিষ্যৎ কি ধরনের হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, দুনিয়া নিয়ে ভাবার সময় আমাদের এখন এসেছে। আমরা তাদের আঙ্গুল দিয়ে দেখায় দিতে চাই। এজন্যই আমাদের প্রয়োজন আছে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের।

সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশগুলোর প্রতি আমাদের দাবি এই অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ করে মানুষের মনমানসিকতা ও সংস্কৃতির বিকাশে সেই টাকা গুলো খরচ করেন। ২৩শ বিলিয়ন ডলার তারা শুধু অস্ত্র কেনা বা ডিফেন্সের নামে তা সবই মেকিং। আমরা যদি মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যবোধ তৈরি করতে পারি তাহলে ওইগুলোর প্রয়োজন হবে না। আজকে যারা গবেষণা করে তাদেরকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কিভাবে ডাইভারসিফিকেশনের মাধ্যমে এই অর্থ মানুষের বিকাশের জন্য কাজে লেগে পৃথিবীতে সুন্দর একটা রূপ দেয়া যায়।

পশ্চিমা বিশ্বের ফ্রি থিংকিং এর পরিধি সীমিত হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, সম্প্রীতি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি আমাকে দাওয়াত দেয়, জিও পলিটিক্স এর বিষয়ে আলোচনা করতে। তারপর তারা আমাকে শর্তও দিয়ে দেয় যে, আপনি গাঁজা এবং ফিলিস্তিনের ইস্যুতে কোন কথা বলবেন না। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির মতন বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে উন্মুক্তভাবে সকল কিছু আলোচনা করা যায়। তারা এখন কতটা ন্যারো মাইন্ডেড হয়ে গেছে এর মাধ্যমে বুঝা যায়।

মোমেন বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে ল্যান্ড অফ ফ্রিডম স্পিচ এন্ড ফ্রি মডিয়া। গত ৭০ বছরে আওয়ামী লীগ দেখিয়েছে তারা একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র তৈরি করেছে। শুধু দেশ তৈরি নয়, সেই দেশটাকে শক্ত ভীমের উপর প্রস্তুত করার জন্য যা যা দরকার তাই করেছে। এজন্য ধন্য শেখ হাসিনা ধন্য তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আলম খান, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার।

আলোচনা সভায় মূল আলোচেক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা।

আলোচনা সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খাঁন।

;