স্বপ্ন জয়ের দুই বছরে পদ্মা সেতু
দুই দেশের বানিজ্য ও ভ্রমণ খাতে আমূল পরিবর্তন
![ছবি: বেনাপোল বন্দর](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2024/Jun/28/1719569863845.jpg)
ছবি: বেনাপোল বন্দর
বাঙালীর স্বপ্ন জয় করে পদ্মা সেতু আজ দুই বছরে পা রেখেছে। চলমান বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও সেতুর কল্যানে সময় ও অর্থ সাশ্রয়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে বেড়েছে বানিজ্য ও পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত। তবে চলমান বৈশ্বিক মন্দা কাটলে এ সুফল আরো বাড়বে বলছেন বানিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা। বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক মন্দা কাটলে বানিজ্য আরো গতিশীল হবে।
জানা যায়, বর্তমান সরকারের সময়ে দেশে যেসব উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হয়েছে তার মধ্যে পদ্মা সেতু অন্যতম। নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে ২০২২ সালের ২৫ জুন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এ সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলা যুক্ত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে যশোর জেলার মানুষ। যশোরের বেনাপোলে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। আর ব্যবসা, ভ্রমন, উচ্চ শিক্ষা ও চিকিৎসার কাজে প্রতিবছর ২০ লাগের অধিক যাত্রী যাতায়াত করে। আগে যেখানে ঢাকা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক বা যাত্রীবাহী বাস বেনাপোল বন্দরে পৌছাতে ১২ ঘন্টা থেকে অনেক সময় দিন পার হতো। এখন সেখানে ৪ ঘন্টায় পৌছাচ্ছে বন্দরে। এতে পাল্টে গেছে বানিজ্য ও ভ্রমনের চিত্র।
বন্দরের পরিসংখ্যন মতে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৮ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। ২০২৩ -২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৯ লাখ ৮ হাজার ৯৫৬ মেট্রিক টন। আমদানি বেড়েছে ১০ হাজার ৫৫৬ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করেছে ১৯ লাখ ৮৫ হ্জার ৪০৭ জন। যা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে ছিল ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪৭ জন। এক্ষেত্রে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে ১৩ হাজার ৪০ জন। তব। পদ্মা সেতুর আগে এরুটে যাত্রীর পরিমাণ বছরে ১৫ লাখ পাসপোর্টধারী ও আমদানি বানিজ্য ১৮ লাখ মেট্রিক টনের ঘরে ছিল।
বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টস এন্ড এক্সপোর্টস এ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জিয়াউর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, আগে ঢাকা খেকে বেনাপোল বন্দরে পণ্যবাহী ট্রাক পৌঁছাতে ১০ ঘন্টা থেকে পুরা দিন লেগে যেত। এখন পদ্মা সেতু দিয়ে ৪ ঘন্টায় বন্দরে পণ্য পৌঁছায়। বানিজ্য সম্প্রসারনে বড় ভুমিকা পদ্মা সেতুর।
ভারতগামী পাসপোর্টধারী জমির বিশ্বাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, সেতুর কারনে ভোর ৪টার আগে বন্দরে পৌঁছাতে পারছি।যা আগে দ্বিগুন সময় লাগতো। তবে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে জনবল বৃদ্ধি আর ভোর ৫ টায় বেনাপোর বন্দর খোলা হলে যাত্রি আরো বাড়বে এরুটে।
বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টস এন্ড এক্সপোর্টস সিনিয়র সহসভাপতি আবুল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন,পদ্মা সেতুর সুফলে বানিজ্য ত্বরান্বিত হয়েছে ভারত-বাংলাদেশে মধ্যে। বাড়ছে রাজস্ব আয়ও।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বার্তা২৪.কমকে বলেন, পদ্মা সেতুর কল্যানে বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন আমদানিকারকেরা। দ্রুত পণ্য গন্তব্যে পৌছানোয় সবাই উপকৃত হচ্ছেন।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের নেতা আমিনুল হক আনু জানান, পদ্মা সেতু দক্ষীন বঙ্গের মানুষের জন্য আর্শীবাদ। ভাঙা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নত হলে এপথে বানিজ্য ও রাজস্ব আয় দ্বিগুন বাড়বে।
বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বার্তা২৪.কমকে জানান, পদ্মা সেতু ভারত-বাংলাদেশ বানিজ্য সম্প্রসারনের ক্ষেত্রে আর্শীবাদ। ইতিমধ্যে দুই বছরে সে সুফল এপথে যাতায়াতকারী ব্যবসায়ী ও পাসপোর্টধারীরা পাচ্ছেন। বন্দরে আরো সুবিধা বাড়াতে তারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম শুরু করেছেন। আধুনিক বন্দর রুপান্তরের কাজ শেষ পর্যায়ে। ভারত অংশেও তাদের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সুত্র জানায়, দুই বছরে সেতুতে ১ কোটি ২৭ লাখ ১৩ হাজার ২৭৫ যান পারাপার করেছে। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ হাজার ৬৪৮ কোটি ৭৬ লাখ ১৮ হাজার ৩০০ টাকা। দুই বছরের প্রতিদিন গড়ে যান চলাচল করেছে ১৯ হাজার ১৬৮টি। প্রতিদিনের গড় টোল আদায় ২ কোটি ৩২ লাখ ১৪ হাজার ২২২ টাকা। প্রথম বছর ৫৭ লাখ ১৭ হাজার ৪৬টি যান পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ৮০১ কোটি ৪৪ লাখ ২৭ হাজার ২০০ টাকা। আর দ্বিতীয় বছর আয় আরও বেড়েছে। ৬৯ লাখ ৯৬ হাজার ২২৯টি যান পারাপারে টোল আদায় হয় ৮৪৭ কোটি ৩১ লাখ ৯১ হাজার ১০০ টাকা।