সরগরম দুদক, আগামী সপ্তাহে বাড়বে উত্তাপ
চলতি বছরে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ব্যস্ততা কিছুটা আঁচ করা যাচ্ছিল। কাকতালীয়ভাবে গত সেপ্টেম্বরের ১৮ তারিখে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান। চলমান এই অভিযান দুদকের ব্যস্ততা যেন ত্বরান্বিত করেছে অনেকটা।
ক্যাসিনো কাণ্ডে জড়িত, বিতর্কিত ঠিকাদার, দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন ও অন্যান্য রাজনৈতিক রাঘব-বোয়ালদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে নেমেছে দুদক। অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান, মামলা দায়ের, তারপর প্রাথমিক তদন্ত, জিজ্ঞাসাবাদ এবং আটকের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত দিন যাচ্ছে এখন দুদকের সেগুনবাগিচার প্রধান কার্যালয়ে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দুদকে বিভিন্ন মামলায় ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাসিনো-কাণ্ডে জড়িত বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে টানা চারদিন ও বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীমকে পাঁচদিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে জিজ্ঞাসাবাদ। শামীম ও খালেদের সাতদিনের জিজ্ঞাসাবাদ চার ও পাঁচ দিনেই শেষ করে নিম্ন আদালতে সোপর্দ করা হয়।
অন্যদিকে রূপপুর বালিশ-কাণ্ডে জড়িত ৩৩ কর্মকর্তাকে চলতি মাসের ৬ তারিখ থেকে আগামী ১৩ তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে মোট সাত প্রকৌশলী-কর্মকর্তাকে আলাদা আলাদা সময়ে ডাকা হয় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।
বৃহস্পতিবার বালিশ-কাণ্ডে জড়িতদের যারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন তারা হলেন- সুমন কুমার নন্দী, শফিকুল ইসলাম (উপ-সহকারী প্রকৌশলী) ও আহমেদ সাজ্জাদ খান (উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী) এবং মো. শাহিন উদ্দিন, মো. আমিনুল ইসলাম, মো. জাহিদুল কবির (উপ-সহকারী প্রকৌশলী) এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একেএম জিল্লুর রহমান।
এদিকে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা এক মামলায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয় কক্সবাজার-২ আসনের সাবেক বিএনপির সংসদ সদস্য আলমগীর মো. মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ ও তার স্ত্রী নূর আক্তার জাহানকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমলগীর হাজির হলেও অনুপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী।
অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজউকের কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণ, বেশি মূল্যে বিক্রি করে কম মূল্যে রেজিস্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকিসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ডম-ইনো বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থপতি আব্দুস সালামকে দুদকে তলব করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। তলবে সারা দিয়ে দুদক কার্যালয়ে এসেছিলেন স্থপতি আব্দুস সালাম।
দুদকের গণসংযোগ বিভাগে কথা বলে জানা যায়, দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি সক্রিয়। দুদকের আওতায় কোনো সেক্টরে দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না। নানা মামলা ও অভিযোগের সত্যতা পেতে জিজ্ঞাসাবাদ, গ্রেফতার ও তলবের মাধ্যমে আগামী সোমবার থেকে আরো সরগরম থাকবে দুর্নীতি দমন কমিশন। বৃহস্পতিবার কোনো মামলা না হলেও আগামী সোমবার ক্যাসিনো হোতা ও যুবলীগ নেতা সম্রাটের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন।