সচেতনতাই লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা রোধের হাতিয়ার

  • নিউজ ডেস্ক
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

‘নারী পুরুষ সমতা, রুখতে পারে সহিংসতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান

‘নারী পুরুষ সমতা, রুখতে পারে সহিংসতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান

সমাজ থেকে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা দূর করতে সচেতনতাই সবচেয়ে ভালো হাতিয়ার। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা কেবলমাত্র বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বজুড়েই একটি বড় সমস্যা। সচেতনতা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারলে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে। নিশ্চিত করা যাবে নারীদের জন্য এক নিরাপদ পৃথিবী।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে রবীন্দ্র সরোবরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধপক্ষ ২০১৯ পালনের অংশ হিসেবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), ইউএনএফপিএ, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এবং কেয়ার বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানটির প্রতিপাদ্য ‘নারী পুরুষ সমতা, রুখতে পারে সহিংসতা’।

অনুষ্ঠানের শুরুতেইও স্বাগত বক্তব্যে অ্যাকশন এইডের উপ-পরিচালক শাহরিয়ার কবির চৌধুরী। এ সময় নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে অ্যাকশন এইডের গবেষণা তুলে ধরেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

শাহরিয়ার কবির বলেন, বাংলাদেশে এক বছরে ১২শ’র বেশি নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। যার মধ্যে ৬শ’র বেশি হচ্ছে শিশু। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি চিন্তা করলেও আমরা শিউরে উঠি। অ্যাকশন এইড নারীদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন কর্মশালা করে থাকে। নারীদের যেমন আত্মরক্ষার কৌশল শেখা জরুরি, তেমনি পুরুষের জন্যও জরুরি। পুরুষ যদি আত্মরক্ষার কৌশল শিখতে পারে তাহলে সে আরেকজন নারীকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে পারবে। নারীদের অবশ্যই জানা উচিত কিভাবে নিজেদের রক্ষা করতে হয়।

নারী পুরুষ সমতা, রুখতে পারে সহিংসতা

এ সময় আত্মরক্ষার বিভিন্ন কৌশল প্রদর্শন করে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ির বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা।

মহিলা অধিদফতরের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) সুলতানা রাজিয়া বলেন, আমরা একই উদ্দেশ্যে কাজ করছি। আমরা সবাই চাই নারী নির্যাতন বন্ধ হোক। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশে কোনো প্রকার নির্যাতন থাকবে না।

এরপর টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে রুপা খাতুনকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার একটি ধারাবাহিক চিত্র এনিমেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। এনিমেশন উপস্থাপন করেন কথাসাহিত্যিক দিপু মাহমুদ এবং নুসরাত রাইসা।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ১০ হাজারের বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কখনো কখনো ধর্ষণের শিকার ভিকটিম ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, সুবিধাবঞ্চিতরা বিচারহীনতার শিকার হন। আমরা যখন বিজয়ের সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলাম, তখনকি এমন দেশ চেয়েছিলাম?

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, ইউএনএফপিএ’র প্রতিনিধি ড. আসা টরকেলসন, বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারয়েইজ, কানাডার রাষ্ট্রদূত বেনয়েট প্রেফনটেইন, কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর জিয়া চৌধুরী।

জিয়া চৌধুরী বলেন, এখন প্রয়োজন ধর্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা। তাহলেই সহিংসতা কমে আসবে। বাংলাদেশে এখনো অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা আলোচনা করা হয় না। প্রতিবন্ধকতা হিসেবে রয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক সংস্কৃতি এবং কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা। আমাদের কথা বলতে হবে, এটা লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়।

আসা টরকেলসন বলেন, আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। প্রতিটা মানুষ যদি উপলব্ধি করতে পারে ধর্ষণ কী? তাহলে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হয়ে যাবে।

বেনয়েট প্রেফনটেইন বলেন, বাংলাদেশ এ বিষয়ে অনেক কাজ করছে। আরও অনেক কাজ করার আছে। কানাডিয়ান হিসেবে যদি বলি, আমি মর্মাহত। কারণ আমার দেশেও এখনো নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হয়নি। কেবল নারী নয়, ছেলে ও নারী শিশুরাও ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হয়। যখন কেউ ধর্ষণের শিকার তখন আরও অনেকে সেই একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায়। ভুক্তভোগীর স্বজন, বন্ধুরা ভয়ে থাকে। তাদের মনে হয়, কোনো জায়গা নিরাপদ না। কোনো মানুষকে বিশ্বাস করা যায় না।

হ্যারি ভারয়েইজ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা দূর করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং এক্ষেত্রে তার দেশ সবসময় সাহায্য করবে।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ শায়ান ও এফ মাইনর ব্যান্ডের সদস্যরা। এছাড়া ফ্ল্যাশ মব পরিবেশন করেন স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পী ওয়ারদা রিহাব এবং নাটক পরিবেশন করেন ঢাকা থিয়েটার গ্রুপ।