শীতে ভাসমান ছিন্নমূল মানুষদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ
আজেরা বেগম। বয়স ষাট পেরিয়েছে। কোনো রকমে লাঠিতে ভর করে দিনভর অন্যের দুয়ারে ঘুরে বেড়ান। দুই হাত বাড়িয়ে যা জোটে তাই নিয়ে বিকেল হলে ফেরেন স্টেশনের প্লাটফর্মে। ঘর-বাড়িহীন এই বৃদ্ধার রাত্রিযাপনের ঠিকানা প্লাটফর্মের যাত্রী ছাউনি।
আজেরার মতো অনেকেই সন্ধ্যা হলে রংপুর রেলওয়ে স্টেশন প্লাটফর্মে ছুটে আসেন। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে রাতে ঘুমের জন্য প্লাটফর্মটাই তাদের ভরসা। কিন্তু এই ভাসমান ছিন্নমূল মানুষদের কাছে শীতের রাত যেন ডেকে এনেছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ।
ওদের নেই কোনো লেপ-কাঁথা-কম্বল। নেই শীতের তীব্রতা নিবারণে ভালো মোটা কাপড়। আছে টুকরো টুকরো প্লাস্টিক আর মাথা গোঁজাতে জটলা করা কাপড়ের টোপলা। পরনের পাতলা কাপড় আঁকড়ে ধরে রাতে শুয়ে পড়লেও ঘন কুয়াশা আর হিম বাতাস আজেরাদের চোখ থেকে কেড়ে নেয় ঘুম।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাত সোয়া এগারোটায় রংপুর রেলওয়ে স্টেশন প্লাটফর্মের যাত্রী ছাউনিতে ঠিকানাবিহীন ভাসমান ছিন্নমূল শীতার্ত মানুষের রাত্রিযাপনে এমন দুর্ভোগ দেখা গেছে।
হিমালয়ের কোলঘেঁষা উত্তর জনপদের ওপর দিয়ে বয়ে চলা মৃদু শৈত্য প্রবাহে কাহিল হয়ে পড়েছে জনজীবন। কোনোমতে দিন পার করলেও ছিন্নমূল আর ভাসমান মানুষরা রাতের আধারে হয়ে পড়েছে অসহায়।
যাদের নেই লেপ-কাঁথার উষ্ণতা। শীতের একেকটি রাত যেন তাদের হয়ে ওঠে দুঃখ কষ্টের পাহাড়। আর তাই এই শীতে সরকারি, বেসরকারি সহায়তার পাশাপাশি বৃত্তবানদের একটু সহানুভূতি পাবার প্রহর গুনছে প্লাটফর্মের যাত্রী ছাউনিতে থাকা শীতার্তরা।
এদিকে গত পাঁচ দিন ধরে উত্তরের আকাশে মেঘের কোলে রোদের হাসি দেখা যায়নি। সূর্যের লুকোচুরি বাড়িয়েছে শীতানুভব। রংপুরে থার্মোমিটারে তাপমাত্রা ১১ থেকে ১২ ডিগ্রিতে উঠা নামা করছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিস সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় রংপুর অঞ্চলে শীতের তীব্রতা একটু বেশি অনুভব হচ্ছে। এখন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আজ রংপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে রংপুর জেলার জন্য বরাদ্দ পাওয়া ৬৪ হাজার কম্বল থেকে জেলা প্রশাসন শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। আরো কম্বল চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান।
অন্যদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাতে নগরীর ৬, ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডে সহস্রাধিক শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করেছেন।