আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে।
সোমবার (২৩) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভার আগে অনুমোদিত এই প্রকল্প বাতিলের প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
জানা গেছে, মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত বন লাঠিটিলা বনের ৫ হাজার ৬৩১ একর জমিতে ‘বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গত বছরের নভেম্বরে একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়।
জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটি বাতিলের সুপারিশ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। আপত্তি থাকা সত্ত্বেও ওই প্রকল্প অনুমোদন দেয় শেখ হাসিনা সরকার। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে অনুমোদিত প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় পরিকল্পনা কমিশন। তার পরিপ্রেক্ষিতে একনেক সভায় দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক স্থাপন প্রকল্পটি বাতিলের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
সাভারে বাসের ধাক্কায় সিআরপি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়ী বাস চালককে দ্রুত গ্রেফতারসহ ক্ষতিপূরণ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলমান অবরোধ প্রায় ৩ ঘণ্টা পর তুলে নিয়েছে নিহতের সহপাঠীরা।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে নার্সিং ছাত্র সমাজের ব্যানারে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভে নামে সিআরপি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুরে মিছিল নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের শিমুলতলায় অবরোধ করলে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। প্রায় ৩ ঘণ্টা পর বেলা ৩টার দিকে প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দ্রুততম সময়ে ঘাতক চালক ও সহযোগীকে গ্রেফতার, নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি তুলে আজ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। পাশাপাশি নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে সড়ক পরিবহন আইনের কঠোর প্রয়োগে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অবরোধের সংবাদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানান। পরে আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের আশ্বাসে সড়ক অবরোধ তুলে নেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
এর আগে, গত শনিবার বন্ধুদের সাথে বাইসাইকেলে করে সাভার সিআরপিতে ফেরার পথে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পাকিজা পয়েন্টে একটি যাত্রীবাহী বাস চাপায় নিহত হন প্রত্যয় সরকার। ওই বাসটি জব্দ করলেও পালিয়ে যায় চালক ও হেলপার।
নিহত প্রত্যয় সরকার মেহেরপুর জেলার গাংনি থানার জনাতন সরকারের ছেলে এবং সিআরপি নার্সিং কলেজের ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স এন্ড মিডওয়াইফারি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সম্পদ জব্দ ও বিনিয়োগে বাধাগ্রস্ত করায় মোহাম্মদ সাইফুল আলম ওরফে এস আলম সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এস আলমের দাবি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার তার সম্পদ জব্দ এবং বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে; এই ক্ষতি আদায়ের জন্য তিনি আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
এস আলমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সাইফুল আলম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর তার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে, তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এবং তারা তাদের কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। এছাড়া কোনো অফিশিয়াল বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই অর্থপাচারের অভিযোগে তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন।
দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের কাছে একটি 'বিরোধ নিষ্পত্তির নোটিশ' পাঠিয়েছে এস আলম।
নোটিশে সতর্ক করে বলা হয়, ছয় মাসের মধ্যে বিষয়টির সমাধান না করা হলে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে ২০০৪ সালের দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির অধীনে আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।
২০০৪ সালে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় এস আলমের আইনজীবীরা এই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছেন।
১৮ ডিসেম্বর পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, এস আলম পরিবার ২০১১ সালে সিঙ্গাপুরের পার্মানেন্ট রেসিডেন্স (স্থায়ী বসবাস) এবং ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশটির নাগরিকত্ব পেয়েছেন। এস আলমের পরিবারের সদস্যরা ২০২০ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয় এতে।
আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল অ্যান্ড সুলিভানের আইনজীবীদের পাঠানো ওই নোটিশের চিঠি দেখেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি)।
ওই নোটিশে অভিযোগ করা হয়েছে, এস আলম পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে, তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এবং তারা নিজেদের কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। এছাড়া কোনো অফিশিয়াল নোটিশ ছাড়াই তাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অর্থ পাচারের তদন্ত করছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো।
আরও বলা হয়েছে, এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বদলে ফেলা হয়েছে ব্যাংকগুলোর ম্যানেজমেন্ট টিম। তাদের চুক্তিগুলো ‘যথেচ্ছভাবে এবং যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই’ বাতিল করে দিয়েছে সরকার।
কুইন ইমানুয়েলের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ও তার বিভিন্ন সংস্থার কর্মকাণ্ড ও অবহেলার মাধ্যমে ‘বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা সম্পদমূল্য পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এই অব্যাহত কর্মকাণ্ড ও অবহেলা বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় পাওয়া অধিকার এবং বাংলাদেশের আইন লঙ্ঘন করেছে এবং চলমান বিরোধের ভিত গড়ে দিয়েছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস অনুরোধ করলেও বাংলাদেশ সরকার এই নোটিশের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
জামালপুরে বেসরকারি এম এ রশিদ হাসপাতাল আগ্নেয়াস্ত্রসহ হামলা-ভাঙচুর ও বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা ও ফাঁকা গুলিবর্ষণের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পুলিশ সুপার জানান, গত ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে শহরের সরদারপাড়া এলাকায় বেসরকারি এম এ রশিদ হাসপাতালের সামনে রাস্তা পারাপার নিয়ে ওই হাসপাতালের কর্মকর্তা সিব্বির ও শাহীনের সাথে শহরের স্টেশন রোড এলাকার এম শুভ পাঠানের সাথে তর্কবিতর্ক হয়। এর জেরে এক পর্যায়ে ওই রাতেই এম শুভ পাঠান ও তার সহযোগীরা এম এ রশিদ হাসপাতালে আগ্নেয়াস্ত্রসহ প্রবেশ করে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মারধর করে। এরপর স্টেশন রোডে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা, অস্ত্র প্রদর্শন ও ফাঁকা গুলি করে।
এছাড়াও শহরের চালাপাড়া এলাকায় শাহীনের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে। এই ঘটনায় সিব্বির ও শাহীন জামালপুর সদর থানায় পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তীতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ গতকাল রবিবার গভীর রাতে রাজধানী ঢাকার গুলশান এলাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে স্টেশন রোড এলাকার মৃত ওবায়দুল হাসান টিপুর ছেলে এম শুভ পাঠান (৩৪), বসাকপাড়া এলাকার আবুল হাসেমের ছেলে মো: রিপন হোসেন হৃদয় (২৫), চালাপাড়া এলাকার মো: মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মাসুম মিয়া (৩৩) ও মো: রাজু (২৫) এবং সন্দেহভাজন ছনকান্দা এলাকার মো: নাসিরের ছেলে ঝুটন মিয়া (৩৩)।
পুলিশ সুপার আরও জানান, তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে ঘটনার দিন তারা খেলনা পিস্তল প্রদর্শণ করেছে, তবে এটি আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। অস্ত্রের সন্ধানে তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আজ তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে এবং দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে।