‘মাস্ক নেই’ লেখা ঝুলছে ফার্মেসিতে, ফুটপাতে ভিড়

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস
  • হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জিরোপয়েন্টের অ্যাপোলো ড্রাগসে ঝুলছে ‘মাস্ক নেই’ লেখা

জিরোপয়েন্টের অ্যাপোলো ড্রাগসে ঝুলছে ‘মাস্ক নেই’ লেখা

দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর থেকে রাজশাহীতেও ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। সোমবার (৯ মার্চ) নগরীতে বেড়েছে মাস্ক ব্যবহারকারীর সংখ্যা। সঙ্গে সচেতনতার অংশ হিসেবে হাত ধোয়া এবং সর্দি-কাশিতে ন্যাপকিন টিস্যু ব্যবহারেও উদ্যোগী হতে দেখা গেছে। আর সেই সুযোগে ফার্মেসিগুলোতে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মাস্কের দাম।

কসমেটিকস থেকে শুরু করে অধিকাংশ মুদি দোকানেও মিলছে না হ্যান্ডওয়াশ ও স্যানিটাইজার। অসংখ্য অভিযোগ মিলেছে ন্যাপকিন টিস্যুর মূল্য বেশি নেয়ার। তবে ক্রেতাদের অতিরিক্ত চাপের কারণে নগরীর অধিকাংশ ফার্মেসি মালিকরা তাদের দোকানে ‘মাস্ক নেই’ ফেস্টুন ঝুলিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, মজুত থাকলেও মাস্ক বিক্রি করছেন না কেউ কেউ। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। ফার্মেসিগুলোতে প্রায়ই ক্রেতা-বিক্রেতার বাকবিতণ্ডার দৃশ্য চোখে পড়ছে। ক্রেতারা বলছেন- আরও বেশি মূল্যে বিক্রি করতে ‘মাস্ক নেই’ বলে প্রচার চালাচ্ছেন ফার্মেসি মালিকরা। দোকানে মজুত থাকলেও তারা বিক্রি করছেন না।

বেড়েছে মাস্কের ব্যবহার

তবে ফার্মেসি মালিক ও কর্মচারীদের দাবি- রোববার (৮ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে থেকে সোমবার (৯ মার্চ) দুপুরের মধ্যে তাদের মাস্ক সব বিক্রি হয়ে গেছে। নতুন করে সরবরাহ না থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না। কিন্তু ক্রেতারা সেটা কোনোভাবে বিশ্বাস করছেন না।

বিজ্ঞাপন

সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এবং লক্ষ্মীপুরের ফার্মেসিগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানে ‘মাস্ক নেই’ লেখা ফেস্টুন ঝুলছে। তবুও দোকানগুলোতে গিয়ে মাস্ক চাইছেন ক্রেতারা। কেউ কেউ অনুনয়ের সুরে অনুরোধও করছেন- ‘থাকলে দুই/একটা দেন ভাই।’

জিরোপয়েন্টে স্টার মেডিকেল হল ফার্মেসির বিক্রেতা আবু সাঈদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরা ঢাকা থেকে মাস্ক নিয়ে থাকি। গত তিনদিনে আমাদেরকে কোনো মাস্ক সরবরাহ করা হয়নি। যা ছিল তা সোমবার দুপুরের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। আমরা ১৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। বিকেলে মাস্ক ক্রেতাদের ব্যাপক চাপ ছিল। বাধ্য হয়ে মাস্ক নেই ফেস্টুন টানিয়েছি।’

হাফিজ ভ্যারাইটি স্টোরে মজুত থাকলেও হ্যান্ডওয়াশ বিক্রি বন্ধ

অ্যাপোলো ড্রাগসের কর্মচারী শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সত্যি বলছি ভাই, আমাদের কাছে আর মাস্ক নাই। মাস্ক ক্রেতাদের ভিড়ে দোকানে ওষুধ বিক্রি করতে পারছি না। মাস্ক আছে, কী নেই এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে হয়রান হয়ে মাস্ক নেই লিখে টানিয়ে দিয়েছি।’

নগরীর ফার্মেসিপাড়া হিসেবে পরিচিত লক্ষ্মীপুরেও অধিকাংশ দোকানে মাস্ক নেই লেখা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘সার্জিক্যাল অ্যান্ড ড্রাগস’ ফার্মেসির বিক্রেতা সবুজ বলেন, ‘রোববারই আমাদের মাস্ক শেষ। দিব কোথা থেকে? কিন্তু সবাই এসে বলে লুকিয়ে রেখেছি! ঝামেলা করতে চাই না, তাই লেখা টানিয়েছি।’

দোকানে দোকানে এমন বিজ্ঞপ্তি সাঁটানো হয়

এদিকে, ফার্মেসিগুলোতে মাস্ক শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন ফুটপাতের সাধারণ মাস্ক ব্যবসায়ীদের বেচাবিক্রি রমরমা। তারা গেঞ্জি কাপড় দিয়ে তৈরি ৫ টাকা মূল্যের মাস্ক বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। নগরীর আরডিএ মার্কেটের সামনের ফুটপাতে সন্ধ্যায় ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

আরডিএ মার্কেটের সামনের ওভারব্রিজের নিচে শুধু ৫০/৬০টি মাস্ক নিয়ে দোকান বসিয়েছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি সেগুলো কিনছেন কাপড়পট্টির ভেতরে দর্জিদের কাছ থেকে। দর্জিরা ‘ছাট কাপড়’ সেলাই করে মাস্ক বানিয়ে তাদের সরবরাহ করছেন।

আমিনুল বলেন, ‘আমি ২০ টাকা করে কিনেছি। পাওয়া যাচ্ছে না, তাই একটু বেশি দামে বিক্রি করছি। যে জিনিসের চাহিদা বেশি, তার দাম বেশি তো হবেই।’

অপরদিকে, নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়ন্টে থেকে মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজার পর্যন্ত মুদি দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানে হ্যান্ডওয়াশ নেই। হ্যান্ডওয়াশ, স্যানিটাইজার ও ন্যাপকিন টিস্যু কিনতে মিনিটে মিনিটে ক্রেতারা দোকানে আসছেন। সুযোগ বুঝে ন্যাপকিনের দাম বেশি রাখছেন।

রাজশাহী নগরীর ফুটপাতে রমারমা মাস্ক বিক্রির ব্যবসা

বসুন্ধরা বা ফ্রেশ ন্যাপকিন টিস্যুর যে প্যাকেটের দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, তা বিক্রি করছেন ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। আর হ্যান্ডওয়াশ দোকানে থাকলেও অনেক বিক্রেতা তা বিক্রি করছেন না।

‘হাফিজ ভ্যারাইটি স্টোর’ নামে একটি দোকানে দাঁড়িয়ে দেখা গেল- ক্রেতা আসলেই হ্যান্ডওয়াশ শেষ বলে বিদায় করছেন। কিছুক্ষণ পর দোকানের ভেতরে ঢুকে দেখা যায়- কার্টুন ও বস্তাভর্তি বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের ‘পলিব্যাগ’ হ্যান্ডওয়াশের মজুত।

জানতে চাইলে দোকানের মালিক হাফিজুর রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে বলতে শুরু করেন, ‘আমার জিনিস আমি এখন বিক্রি করব না। কবে করব সেটাও আমার ব্যক্তিগত বিষয়। সেটা নিয়ে আপনার মাথা না ঘামালেও চলবে।’
পণ্য থাকলেও বিক্রি না করা আইন ও নৈতিকতাবিরোধী জানা আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যবসা করি, পয়সা দরকার। আইন-কানুন বুঝি না। সময়-সুযোগে দু’পয়সা লাভ করব, এটা কিসের আইনবিরোধী।’

করোনা আতঙ্কে রাজশাহীর সার্বিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম সোমবার রাতে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরাও কিছু অভিযোগ শুনেছি। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে পরামর্শ করে মঙ্গলবার (১০ মার্চ) অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সুস্থ মানুষদের মাস্ক ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই। যাদের করোনা আক্রান্ত হওয়ায় প্রাথমিক লক্ষণগুলো (সর্দি-কাশি, জ্বর) দেখা দিবে, তারা মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। তবে হাত-মুখ পরিষ্কার রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গে সর্দিতে নাকে হাত ব্যবহার না করে ন্যাপকিন টিস্যু ব্যবহার করা ভালো।’