স্বাধীনতা দিবসে মলিন স্মৃতিসৌধ

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস
  • মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট , বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

স্বাধীনতা দিবসে মলিন স্মৃতিসৌধ

স্বাধীনতা দিবসে মলিন স্মৃতিসৌধ

আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। প্রতি বছরে এই দিনের প্রথম প্রহরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সূর্য সন্তানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীসহ লাখো সাধারণ জনতা। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা শেষে সাধারণ জনতার জন্য উন্মুক্ত করা হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটক। নামে জনতার ঢল। ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হয় শহীদ বেদী।

তবে করোনাভাইরাসের দ্বারা উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে এবার ফাঁকা স্মৃতিসৌধ। শ্রদ্ধার ফুল নেই শহীদ বেদীতে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বন্ধ ঘোষণা করা হয় স্মৃতিসৌধের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা। নিষিদ্ধ করা হয়েছে জনসাধারণের প্রবেশ।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাসের প্রভাবে এবারই প্রথম শ্রদ্ধা পেল না স্বাধীনতার নায়করা। প্রতিবারই স্বাধীনতা দিবসের কমপক্ষে ১৫ দিন আগে থেকে স্মৃতিসৌধ ধোয়া-মোছার জন্য জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। শুরু হয় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কর্মযজ্ঞ। তবে সব ধরনের ধোয়া-মোছা শেষ হলেও শেষ মুহূর্তের কাজ সম্পন্ন করার আগেই গত ২১ মার্চ স্মৃতিসৌধের সব আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এক করোনাভাইরাস শ্রদ্ধা জানানো থেকে বঞ্চিত করল স্বাধীনতা প্রিয় মানুষদের। শ্রদ্ধা থেকে বঞ্চিত হলো বাংলার দামাল ছেলেরা।

করোনার প্রভাবে স্থবির, মলিন জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ

আজকের দিনে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে  শহীদ বেদী। পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকায় থাকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়। আর আজ স্থবির, মলিন জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। কোন মানুষের আনাগোনা নেই, নেই কোন কর্মযজ্ঞের চিহ্ন।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে  স্মৃতিসৌধের পরিচ্ছন্নকর্মী সাগর আক্ষেপ করে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এবার দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছে তাদের জন্য স্মৃতিসৌধ সাজানোর কাজ শেষ করতে পারলাম না। তাদের জন্য কষ্ট করে স্মৃতিসৌধ সাজানোর কাজ শেষ করতে পারলে নিজেকে স্বার্থক মনে হয়। প্রতি বছরে দুই দিন এই সেবা করার সুযোগ পাই আমরা। এবার এটা থেকেও বঞ্চিত হলাম। খুব খারাপ লাগছে। কাজ শেষে যখন ২৬ মার্চ সকালে লাখো মানুষ ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসে তখন গর্বে বুকটা ভরে যায়। আর এবার স্মৃতিসৌধের সামনে এসে খুব খারাপ লাগছে।

অপর পরিচ্ছন্নকর্মী বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের এবার কাজ করতে দিলো না। স্মৃতিসৌধকে মনের মতো করে সাজাতে দিলো না এই ভাইরাস। এবার কিছুই করতে পারলাম না শহীদদের জন্য। এবার কাজ করতে না পারায় খুব খারাপ লাগছে। ২৬ মার্চ এই স্মৃতিসৌধের সাজসজ্জা শেষ হলে মনে হয় স্বাধীনতা কত মধুর, কত আনন্দের। আজ যখন জনতার ভিড়ে পা রাখার জায়গা থাকে না স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে তখন মনে হয় শহীদের এ স্থান ধোয়া-মোছা করে আমরা ধন্য।

স্মৃতি সৌধ প্রাঙ্গণে ফুটে থাকা ফুলগুলো আজ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে স্বাধীনতার বীর সন্তাদের

স্মৃতিসৌধের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শনার্থী সাথীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আজকের এই দিনে স্মৃতিসৌধের সাজসজ্জা হয় চোখ ধাঁধানো। ২৬ মার্চ স্মৃতিসৌধ আসলেই স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া যায়। এবার করোনাভাইরাস স্বাধীনতার স্বাদ থেকে বঞ্চিত করল দেশবাসীকে। সাথে শ্রদ্ধা থেকে বঞ্চিত করল সূর্য সন্তানদের।

এ ব্যাপারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের সহকারি প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা বরাবরের মতোই স্মৃতিসৌধ ধোয়া-মোছা ও সাজানোর কাজে হাত দিয়েছিলাম। শেষ মুহূর্তের কাজ ছাড়া সব ধরনের কাজ সম্পন্নও করেছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে গত ২১ মার্চ স্মৃতিসৌধের আনুষ্ঠানিকতা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।