করোনা আতঙ্কে দেশ, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কতদূর!
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসবিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। করোনার সংক্রমণ রোধে ইতোমধ্যে সারাদেশে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে শুরু করে সরকারের নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) সরবরাহ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি মোকাবিলায় সার্বিক সহযোগিতা করছে প্রশাসন।
করোনা মোকাবিলায় সার্বিক এ কার্যক্রমে ব্যস্ত প্রশাসনের আড়াল হচ্ছে না তো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি!
গেল বছর ডেঙ্গু রোধে সময়মতো কীটনাশক ছিটানো, কিট সংকট থেকে শুরু করে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার চিত্র দেখা যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ৫৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। চলতি বছরের একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৯ জন।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২১২ জন। ২০১৯ সালে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছিল ৭৩ জন। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার তা প্রায় তিনগুণ বেশি। তাই এ পরিসংখ্যান আগাম বার্তা দিচ্ছে, নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি লাগামহীন হতে পারে!
গত মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার তার গবেষণায় ঢাকায় মশার ঘনত্বের রেকর্ড ছাড়াবে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ড্রেন, ডোবা ও নর্দমার পানি চলন্ত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং লার্ভা মারার কীটনাশক স্প্রে করা জরুরি। ভারী বৃষ্টিপাত হলে স্বাভাবিকভাবে মশা কমে যাবে। সারাদেশে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে যেটি মশা জন্মানোর জন্য উপযুক্ত। গত কয়েক দিনে অগণিত ডিম দিয়েছে মশা। যেই ডিমগুলো আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মশায় রূপান্তরিত হবে। অতি জরুরি ভিত্তিতে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়ে মশা জন্মানোর স্থানগুলোতে লার্ভিসাইড ছিটানো না হলে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে মশা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের আলাদা দুটি জরিপে উঠে এসেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বিভিন্ন ওয়ার্ডে আশঙ্কাজনক হারে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২ শতাংশ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০ শতাংশ ওয়ার্ডে এডিস মশার অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ছয়টি ওয়ার্ড এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করতে কাজ করছি। যেহেতু এখন করোনা মোকাবিলায় ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। সেক্ষেত্রে করোনার পাশাপশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণেও কাজ করছি। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে ওয়ার্ডগুলোতে স্প্রে করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের হিসেব অনুযায়ী এ বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ২০৭ জন রোগী পাওয়া গেছে। সম্প্রতি রোগীর সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। সেক্ষেত্রে গত বছরের ন্যায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে না বলে আশা করছি।
এরই মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোর ডেঙ্গু ইউনিটগুলো করোনা আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশন সেন্টারে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এতে করে দেশে যদি করোনা আক্রান্তের পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়, তাহলে হাসপাতালগুলো কীভাবে সংকট মোকাবিলা করবে সেটি দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, এখন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক কম। পাশাপাশি করোনার বিরুদ্ধে লড়ছে দেশ। এমন অবস্থায় ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করলে আমরা কোনদিকে এগোবো তা নিয়েই ভাবছি। তেমন পর্যায়ে গেলে কীভাবে মোকাবিলা করব সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। যেহেতু এখন পর্যাপ্ত ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট মজুদ আছে, সেক্ষেত্রে গত বছরের ন্যায় কিট সংকটে পড়তে হবে না। আর ডেঙ্গু ইউনিটগুলো এখন করোনা রোগীদের জন্য রাখা হয়েছে, সেক্ষেত্রে সেখানে আর ডেঙ্গু রোগী থাকবে না। আমাদের অন্য ইউনিটে ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হবে।