‘সাহায্য নয়, আপনার প্রতি আমাদের দায়িত্ব’
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসপ্রাণঘাতী করোনার প্রাদুর্ভাব স্থবির করে দিয়েছে জনজীবন। দিন দিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সাথে দীর্ঘ হচ্ছে মৃতের তালিকা। বেড়েছে সাধারণ ছুটি। দিন যত গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে কর্মহীন মানুষের খাবারের জন্য আহাজারি।
কঠিন এ পরিস্থিতিতে অন্যান্য জেলার মতো রংপুরেও খাদ্যের যোগানে ঘর ছেড়ে বাইরে বের হচ্ছেন দিনমজুর আর নিম্ন আয়ের মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এগিয়ে এসেছে।
একইভাবে কাজ করছেন রংপুর নগরীর জুম্মাপাড়ার স্থানীয় কয়েকজন সচেতন যুবক। তারা গঠন করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্টেপ আপ’। নিজেদের হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে অসহায় দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা।
দিনের বেলায় খাদ্যসামগ্রী প্যাকেট করে রাতের বেলায় অসহায় দুস্থদের ঘরের দরজায় পৌঁছে দিচ্ছেন ওই যুবকরা। ইতোমধ্যে দুই দফায় এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের মাঝে ৭-১০ দিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন তারা।
শুধু খাদ্য সহায়তা প্রদানই নয়, এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টিতেও কাজ করছেন এই যুবকরা। জাতীয় এই দুর্যোগে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এলাকার অগিগলিতে জীবাণুনাশক ছিটানো ও ফেস মাস্ক বিতরণ করেছেন স্টেপ আপ সংগঠনের সদস্যরা। করোনার সংক্রমণ রোধে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া স্থানীয়দের ঘরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করেছেন তারা।
করোনার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া এলাকার অসহায় দুস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোকে নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে দেখছেন স্বেচ্ছাসেবী এই যুবকরা। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই মহামারিতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রত্যেক এলাকার যুবকদের এভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সচেতন ও উদ্যোমী এই যুবক দলের একজন ইসমাইল হুসাইন প্রিন্স। এলাকার অন্য যুবকদের সঙ্গে নিয়ে অসহায়দের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন রাত-দিন। ‘সাহায্য নয়, আপনার প্রতি এ আমাদের দায়িত্ব’ স্লোগানে তারা লড়ছেন করোনা মোকাবিলার মানবিক বার্তা নিয়ে।
এ ব্যাপারে বার্তা২৪.কম-কে ইসমাইল হুসাইন প্রিন্স বলেন, আমরা আমাদের এলাকার অসহায় মানুষদের সাহস জোগাতে কাজ করছি। আপনি কিংবা আপনারাও আপনার বাড়ির পাশের অন্তত একটি অসহায় পরিবারকে বলুন না, ‘ভয় নেই’ আপনি আছেন তার পাশে। এমন বৈশ্বিক মহাবিপদে কাউকে সাহায্য নয়, অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, স্থানীয় কয়েকজন যুবক পকেট খরচের টাকা দিয়ে দুই দফায় চাল, ডাল, আলু, তেল, চিড়া, সাবান ও মাস্কসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে ওই এলাকার ৫০০টি অসহায় পরিবারের মাঝে বিতরণ করেছে। তৃতীয় দফায় আরো ৩০০ জনকে খাদ্য সহায়তা দিতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এজন্য দিনের বেলা খাদ্যপণ্য প্যাকেটিং করা হচ্ছে। সবকিছু প্যাকেটিং হলে রোববার রাতে এগুলো ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে।
জাতীয় এ দুর্যোগময় সময়ে সামর্থ্য অনুযায়ী সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ‘স্টেপ আপ’র সমন্বয়ক ইসমাইল হুসাইন প্রিন্স। এলাকার নিম্ন আয়ের প্রত্যেকটি মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতে পারলে করোনা মোকাবিলা সহজ হবে বলে মনে করেন এই যুবক।