চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্থিতিশীল রয়েছে। নতুন মৌসুমে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় অধিকাংশ পণ্যের দাম আগের অবস্থানে রয়েছে। তবে পেঁয়াজের দাম সামান্য কমে পেলেও রসুন ও আদার বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সবজি কেজি প্রতি ৫০ টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলু বাজারে এসেছে, যা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে অধিকাংশ সবজির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে ফুলকপির দাম। নগরে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে সবজিটি। অন্যান্য সবজির মধ্যে টমেটো ১০০, বরবটি ৬০, শিম ৮০, শসা ৫০-৬০, বেগুন ৫০, মিষ্টি কুমড়া ৩০-৪০, দেশি আলু ৮০, পেঁয়াজ পাতা ৬০, মূলা ৩০, বাঁধাকপি ৩৫, কাঁচা মরিচ ৬০, গাজর ৮০, লেটুস পাতা ২৫০ এবং পেঁপে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর আতুরার ডিপো কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী মো. ফারুক বার্তা২৪.কমকে বলেন, শীতকালীন সবজির সরবরাহ ভালো থাকায় দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এছাড়া ক্রেতাদের চাহিদাও স্বাভাবিক রয়েছে, যা বাজারকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে সাহায্য করছে।
খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৭০-১০০ টাকার মধ্যে রয়েছে। গেল সপ্তাহে এই দাম কিছুটা বেশি ছিল, তবে সাম্প্রতিক আমদানি বৃদ্ধির কারণে পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে এবং দাম কিছুটা কমেছে।
অপরদিকে, রসুনের বাজারে তেমন পরিবর্তন নেই। রসুন এখনও ২১০-২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে ভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে আদা।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তদার সেলিম উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমদানির ওপর নির্ভর করে পেঁয়াজের বাজারে স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে। তবে রসুনের ক্ষেত্রে চাহিদা বেশি থাকায় দাম এখনো একই রকম রয়েছে।
এদিকের মাছের বাজারেও তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি। পোয়া মাছ ২৮০ টাকা, লইট্টা ২০০ টাকা, রূপচাঁদা ৫৫০-৬৫০ টাকা এবং তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। হাড়সহ গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি দরে।
অন্যদিকে, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়ে বর্তমানে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি ২৮০-৩০০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৯০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শীতকালীন মৌসুমে সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকাংশ পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। পাশাপাশি পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার এবং ভারত ও পাকিস্তান থেকে পণ্যটির ব্যাপক আমদানির কারণে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার-সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, বাজারে এখন পেঁয়াজ ও অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ ভালো। এ কারণে দাম কমতির দিকে। তবে সবজির ক্ষেত্রে মৌসুমী পণ্যের প্রভাব থাকে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে পেঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহার করার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান থেকে প্রায় ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এতে খুচরা বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় মসলার আমদানিতেও ছাড় দেওয়া হলে বাজার আরও স্থিতিশীল হতে পারে।
নগরীর বহদ্দাহাট বাজারে সবজি কিনতে আসা সাগর নামে এক চাকরিজীবী বলেন, সবজির দাম এখন আমাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে। তবে পেঁয়াজের দাম আরও কমলে ভালো লাগত।
আরেকজন বলেন, বাজারে দাম স্থিতিশীল থাকায় নিয়মিত সবজি কিনতে পারছি। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে।
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন জানান, সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের বাজারে পেঁয়াজ ও অন্যান্য পণ্যের দাম ক্রেতাদের সন্তুষ্টি বজায় রাখতে পেরেছে। তবে রসুন ও ব্রয়লার মুরগির মতো কিছু পণ্যের দাম এখনও চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানি ও সরবরাহ পরিস্থিতি আরও উন্নত করার ওপর ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব দেওয়া দরকার। পাশাপাশি পাইকারি বাজারে প্রশাসন নিয়মিত মনিটরিং চালানোর মাধ্যমে দাম আরও কমানোর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।