‘স্যার আমি এখন চলে গেলে ইমারজেন্সি ডিউটি করবে কে’
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসজরুরি চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হলেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তরুণ এক চিকিৎসক। শরীরে তার বাসা বেঁধেছে মহামারি করোনা ভাইরাস।
সোমবার (১৩ এপ্রিল) রাত ১০টা। থমথমে গোটা হাসপাতাল। পজিটিভ রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর সহকর্মীদের অশ্রুসজল চোখ। কিন্তু সবাইকে বিস্মিত করে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে ওই চিকিৎসক বলছিলেন, ‘স্যার আমি এখন চলে গেলে ইমারজেন্সি ডিউটি কে করবে, কি হবে রোগী যদি আসে?’
‘বিশ্বাস করুন, আক্রান্ত ওই চিকিৎসকের মুখে এ কথা শোনার পর আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। প্রথম সারির একজন করোনা যোদ্ধা হিসেবে এ কথা শুনে কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, ভেতর থেকে তীব্র চিৎকারে কান্নাগুলো বের হয়ে আসছে। যন্ত্রণায় ছটফট করছিল হৃদয়। ইচ্ছে করছিল, আওয়াজ করে ছোট শিশুদের মত কাদি। কিন্তু অন্যরা যাতে ভেঙে না পড়েন, সে জন্য কাঁদতে পারিনি। দ্রুত নিজের আবেগকে সামলে নিয়ে ছিলাম।’
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নিজের প্রিয় সহকর্মীকে ‘পজিটিভ রিপোর্ট’ জানানোর অভিজ্ঞতার কথা এভাবেই বার্তা২৪.কমের কাছে বর্ণনা করছিলেন, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা।
সোমবার রাত ১১টার দিকে তাকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই চিকিৎসককে। এর আগে রাত ১০টার দিকে তার নমুনার পজেটিভ ফলাফল জানা যায়।
এ ব্যাপারে সাভার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, গত কয়েক দিন ধরেই ওই চিকিৎসকের মধ্যে করোনার উপসর্গ লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। শেষমেষ পরীক্ষার জন্য তার নমুনা রাজধানীর মহাখালীর ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথে (আইপিএইচ) পাঠানো হলে রিপোর্ট আসে পজিটিভ।
অথচ ওই চিকিৎসক সারা দিনই রোগী দেখেছেন। পরিবার নিয়ে তিনি বসবাস করতেন রাজধানীর শ্যামলীতে। ঠিক কোন সূত্র থেকে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা জানান, আক্রান্ত চিকিৎসকের মনোবল আমাকে সত্যিই বিস্মিত করেছে। কোথায় আমরা তাকে সান্তনা দেব তা নয়, উল্টো ওই চিকিৎসক আমাকে বলছিলেন, ‘স্যার আপনি আইসোলেশনে চলে যান, কারণ আজ সারাক্ষণ আমরা এক সাথে ছিলাম। এক সাথে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম।’
‘বর্তমানে নিষ্ঠুর বাস্তবতায় আমারসহ ৪০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আইসোলেশনে থাকা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে,’ যোগ করেন ডা.মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা।