ঘূর্ণিঝড়ে দুর্বল শতাধিক শামুকখোল পাখি জবাই করে খেল গ্রামবাসী!

  ঘূর্ণিঝড় আম্পান
  • নাইমুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নাটোর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গাছ থেকে নিচে নেমে এসেছিল শামুকখোল পাখি

নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গাছ থেকে নিচে নেমে এসেছিল শামুকখোল পাখি

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের বটতলা বাজারের তিনটি শিমুল গাছে বাসা বেঁধেছিলে শতাধিক শামুকখোল পাখি।

বুধবার রাতে সুপার সাইক্লোন আম্পান যখন তাণ্ডব চালাচ্ছিল পাখিগুলো তখন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গাছ থেকে নেমে এসেছিল।

বিজ্ঞাপন

সারা রাত দমকা হাওয়ায় দুর্বল হয়ে পড়া শামুকখোল পাখিগুলো ডানা মেলে ওড়ার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। সকালে দুর্বল ওই পাখিগুলোকে খাবার দিয়ে বাঁচানোর পরিবর্তে গ্রামবাসীরা নিজেরাই খেয়ে ফেলেছেন!

গ্রামবাসীর এমন নিষ্ঠুর আচরণে সমালোচনার ঝড় বইছে নাটোরজুড়ে। শুধু এটাই নয়, মাসখানেক আগে নতুন ধান বাঁচাতে উপজেলার রাজাপুরে শতাধিক বুলবুলি পাখিকে ভাতের সাথে বিষ মিশিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছিল।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২১ মে) সকালে পাখিগুলো ধরে যে যার মতো বাড়ি নিয়ে যান বাজিতপুর গ্রামের অধিবাসীরা। পাখিগুলোকে জবাই করে রান্না করা হয়।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী আব্দুল কাদের সজল জানান, তিন মাস ধরে গ্রামের বটতলা বাজারের পাশে আলী আশরাফের বাড়ির তিনটি শিমুল গাছে আস্তানা গেড়েছিলো এসব পাখি। দিনের বেলায় ওরা পার্শ্ববর্তী বিল ও ঝিলে খাবার খুঁজতো আর রাত হলে শিমুল গাছে আশ্রয় নিত।

আব্দুল কাদের সজল জানান, এসব পাখির প্রতি শিকারিদের নজর পড়েছিল আগেই। গ্রামটিকে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে তৈরির চেষ্টা করছিলেন তিনি। তাই শিকারীরা সুবিধা করতে পারছিল না। সকালে শোনা যায় মানুষ পাখি ধরে ধরে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে।

খরব পেয়ে শিমুল তলায় গিয়ে আব্দুল কাদের সজল দেখতে পান উপরের বাসাগুলো ভেঙে ছিন্নভিন্ন হয়ে চারিদিকে পড়ে আছে অথচ কোনো পাখিই আর অবশিষ্ট নেই। আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়িতে তখন পাখিগুলো জবাই হচ্ছিল বলে জানান তিনি।

আক্ষেপ করে সজল বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়লেও পাখিগুলো ঠিকই আত্মরক্ষা করতে পেরেছিল। কিন্তু দুর্বল হয়ে পড়ায় মানুষের হাতে তাদের প্রাণহানি হলো। বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না!

আবুল কালাম নামে এক স্থানীয় বলেন, পাখিগুলোর ওজন ভালো ছিল। আগে অনেক শিকারি আসতো। শিকারিদের কারণে দিনের বেলায় গাছে আসতো না পাখিরা।

পাখি নিয়ে কাজ করা চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আকতারুজ্জামান বলেন, এ ঘটনাকে সরাসরি পাখি হত্যা বলব। প্রশাসন যদি ওই গাছগুলোকে পাখির নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে ঘোষণা করত, তবে অন্তত স্থানীয়রা এসব পাখি বাঁচাতে এগিয়ে আসত। পাখিগুলো রান্না করে খেয়ে কাণ্ডজ্ঞানহীনতা ও নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছে গ্রামবাসী।

এ ব্যাপারে বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা উজ্জল কুমার কুণ্ডু বলেন, বাজিতপুর গ্রামের শিমুল গাছগুলোতে শামুকখোল পাখি যে বাস করত, তা আমার জানা ছিল না। পাখির প্রতি এমন নিষ্ঠুরতা মেনে নেওয়া যায় না। সবাইকে বলব পাখির প্রতি যত্নশীল হতে। পরবর্তীতে এমন ঘটনা রোধে আমরা তৎপর থাকব।