এবার ঈদ হবে না উপকূলে!

  ঘূর্ণিঝড় আম্পান
  • মানজারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণে কাজ করছে উপকূলবাসী

আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণে কাজ করছে উপকূলবাসী

দুদিন পরই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ উল ফিতর উদযাপিত হবে। খুলনার শহরাঞ্চলের মার্কেট পাড়ায় ঈদ উৎসবের আমেজ দেখা গেলেও এবার ঈদ হবে না উপকূলে। আম্পানের আঘাতে ঈদ ম্লান হয়েছে খুলনার উপকূলজূড়ে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে খুলনা উপকূ‌লীয় অঞ্চলের প্রায় লক্ষা‌ধিক মান‌ুষ দূর্গত অবস্থায় ঈদ উদযাপন করবে। 

বিজ্ঞাপন

সরকারি তথ‌্যমতে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে খুলনায় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলীয় উপজেলা কয়রা। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি, উত্তর বেদকাশি, মহেশ্বরীপুর, কয়রা সদর ও মহারাজপুর ইউনিয়নের প্রায় দেড়লাখ মানুষ দুর্গত হয়েছেন। কয়রার ২৪টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভাঙনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে দুর্গত অবস্থায় দিনযাপন করছে। এছাড়া পাইকগাছার ১০ ও বটিয়াঘাটার ৭টি ইউনিয়নের ৪০ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনার নয়টি উপজেলায় ৮০ সহস্রাধিক প‌রিবার আম্পানে কারণে ক্ষ‌তিগ্রস্ত হয়েছে।

খুলনার নয়টি উপজেলায় ৮০ সহস্রাধিক প‌রিবার আম্পানে কারণে ক্ষ‌তিগ্রস্ত হয়েছে

উপকূলবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদ উদযাপন তো দূরের কথা মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই অধিকাংশ উপকূলীয় মানুষের। ঈদের দিনে সবাইকে থাকতে পারে খোলা আকাশের নিচে। ঈদকে ঘিরে উপকূলীয় পরিবারে নেই কোনো আমেজ। ঈদের দিনটিতে আনন্দ তো দূরের কথা ভালো-মন্দ খাবারও জুটবেনা অনেকের। ঘরবা‌ড়ি  ভেঙে যাওয়ায় উপকূলের অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ভালো থাকা বাঁধের ওপর। ঝড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে অসংখ্য বাড়িঘর, গাছপালা। তলিয়ে গেছে অনেক চিংড়ির ঘের। মৌসুমী সব‌জির ক্ষেত ভেসে গেছে। এছাড়াও উপকূলের অনেক স্থানেই লোকালয়ে পা‌নি ঢুকে পরায় পা‌নিব‌ন্দি আছে গ্রামবাসী। কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া না গেলেও গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আগে ছিলো করোনার থাবা, এবার যোগ হলো আম্পানের আঘাত।

বিজ্ঞাপন
ঈদ উদযাপন তো দূরের কথা মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই অধিকাংশ উপকূলীয় মানুষের

ঝড়ে ঘর হারানো আলেয়া বেগম বলেন, সে‌দিন বাতাস শুরু হলি স্কুলে যাইয়ে উঠলাম। সারা রাইত ঝড়ে ভয় পাইয়ে বইসে ছিলাম। সহালে বাতাস কুম‌লি বা‌ড়ি ফিরে দে‌হি আমার ঘরহান ভাইঙে গেসে। এহন আমাগে না আছে থাহার যায়গা, না আছে খাওনের যায়গা।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, ঈদ উদযাপন তো দূরে থাক কয়রার মানুষ এখন বাঁচার আশা করছে। প্রতিবার জোয়ার আসলেই নতুন করে কয়রার বি‌ভিন্ন এলাকা পা‌নিতে ত‌লিয়ে যাচ্ছে। কয়রার উত্তর বেদকাশী, সদরসহ ‌বি‌ভিন্ন এলাকা এখনো পা‌নিতে ভাসছে। ঝড় শেষ হবার ২ দিন পরেও কয়রায় আসে‌নি কোনো সাহায‌্য সহযো‌গিতা।

খুলনা অঞ্চলে ভেসে গেছে চিংড়ির ঘের

কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীর বা‌সিন্দা আবু সাঈদ খান বার্তা২৪. কম কে বলেন, ঝড়ে সবার বা‌ড়িঘর ভাঙায় যে বা‌ড়িগুলো একটু ভালো আছে সেখানে দলবেধে সবাই আশ্রয় নিচ্ছে। আমার বা‌ড়িতেও ৬০/৭০ জন আশ্রয় নিয়েছে। জোয়ারের সময় গ্রামবাসীকে নিয়ে বাঁধ পাহারা দিচ্ছি। শুন‌ছি শ‌নিবার থেকে সেনাবা‌হিনীর সদস‌্যরা বাঁধ সংস্কারের কাজ করবে তবে এখনো কেউ আসে‌নি। তাছাড়া করোনা মহামারির এ সময়ে সবাইকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়ে‌ছিলো, কিন্তু যাদের ঘরই নেই তারা থাকবে কোথায় ? খাবার কিছু নেই, থাকার ঘরে নেই - তাই আমাদের ঈদও নেই।

খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আমার কয়রায় সবথেকে বেশী ক্ষ‌তি হয়েছে। দ্রুত অনেক স্থানেই বাঁধ সংস্কার করে‌ছি। তবে প্রতিবার জোয়ারের পানির চাপ‌ে  বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আমরা যতদুর সম্ভব চেষ্টা করছি সকল বেঁড়িবাধ অতি দ্রুত সম্ভব সংস্কার করার। শ‌নিবার থেকে সেনাবা‌হিনীর তত্ত্বাবধানে বাঁধের কাজ শুরু হবে। এছাড়া শীঘ্রই উপকূলীয় অঞ্চলে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছাবে বলে জানান তি‌নি।

উপকূলবাসী ত্রাণ নয় প‌রিত্রাণ চায়। প্রতিবার ঝড় হলেই নাজুক বাঁধ ভেঙে প্লা‌বিত হয় উপকূল। বারবার সামান‌্য ঝড়েই উপকূলীয়রা পানিবন্দী হয়ে পড়েন। তবুও স্থায়ী বাঁধের স্বপ্ন তাদের অধরাই থেকে যায়। কোনো ভাবেই টনক নড়েনা কর্তৃপক্ষের। শা‌ন্তিতে কোন ঈদ কি উদযাপন করতে পারবো আমরা? প্রশ্ন উপকূলবাসীর।