সিকদার গ্রুপের এমডির 'রেঞ্জ রোভার' জব্দ করেছে ডিবি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার (বাঁয়ে) ও দিপু হক সিকদার,ছবি: সংগৃহীত

সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার (বাঁয়ে) ও দিপু হক সিকদার,ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সিকদার গ্রুপের এমডির 'রেঞ্জ রোভার' গাড়ি জব্দ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি।

এর আগে সিকদার গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদারের বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা করে এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে গতকাল মঙ্গলবার (২ জুন) তাদের বাসায় অভিযান চালিয়ে সাদা রঙের একটি রেঞ্জ রোভার মডেলের জিপ গাড়ি জব্দ করা হয়। গাড়িটি রন হক সিকদারের বলে জানা গেছে।

যার রেজিস্টেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ- ১৮-৩৯৪৫। গাড়িটি এরই মধ্যে ডিবির মালখানায় জমা আছে।

বুধবার (৩ জুন) সাকালে ঢাকা উত্তর গোয়েন্দা বিভাগ থেকে বার্তা২৪.কম বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।

এর আগে গত ২৫ মে সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দু’জন যাত্রী নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যাংককের উদ্দেশে ছেড়ে যায় বলে জানা যায়।

গত ১৯ মে মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, গত ৭ মে রন ও দিপু এক্সিম ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও অতিরিক্ত এমডি মুহাম্মদ ফিরোজ হোসনেকে একটি অ্যাপার্টমেন্টে বন্দি করে রাখেন। তাদের গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়।

এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নির্যাতন করে পরে সাদা কাগজে সই নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

সিকদার গ্রুপ ব্যাংকটির কাছে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ প্রস্তাব দিলে এর বিপরীতে গ্রুপের বন্ধকি সম্পত্তি পরিদর্শনে যান ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা। সেসময় এ ঘটনা ঘটে।

   

মুজিবনগরে ট্রলি উল্টে চালক নিহত, আহত ৫



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মেহেরপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলায় ট্রলি উল্টে লিটন আলী (৩৮) নামের এক চালক নিহত হয়েছেন। এসময় পাওয়ার ট্রিলারে থাকা আরও ৫ যাত্রী আহত হয়েছেন।

শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার কোমরপুর পুলিশ ক্যাম্পের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত লিটন আলী মুজিবনগরের বাবরপাড়া গ্রামের নাসির উদ্দীনের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মেহেরপুর-মোহনপুর সড়ক দিয়ে নির্মাণ শ্রমিক নিয়ে কাজ যাচ্ছিল একটি ট্রলি। ঘটনাস্থলে গিয়ে সামনে থেকে আসা একটি মাটি বহনকারী ট্রলির সঙ্গে মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই পাওয়ার ট্রিলার চালক লিটন আলীর মৃত্যু হয়।

আহত হয় ট্রলির যাত্রী নির্মাণ শ্রমিক সুমন (২০), ইদ্রিস (৪৫), দেলোয়ার (২৬), নজরুল (৬৫) ও আহসান (২০)। স্থানীয়রা তাদেরকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

মুজিনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি উজ্জল কুমার দত্ত ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবার থেকে অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

;

সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ক্ষতি ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি: বিআরটিএ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশব্যাপি সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার।

শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে বিআরটিএর আয়োজনে ‘সড়ক নিরাপত্তামূলক আলোচনা সভায়’ এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিআরটিএ'র নেয়া নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন তিনি।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়। এটাকে যদি শতকরায় হিসাব করি তাহলে মোট জিডিপির প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ ক্ষতি হয়। এটা তো শুধু আর্থিক হিসাবের কথা বললাম। এছাড়াও দুর্ঘটনায় কোন পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তি মারা গেলে তো ঐ পরিবারই শেষ।

ই ড্রাইভিং লাইসেন্সই মূল ড্রাইভিং লাইসেন্স। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে হার্ডকপি ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, “ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে হার্ড কপির জন্য কেউ মরিয়া যেন না হয়। এটা ওয়েল সার্কুলেটেড। ই ড্রাইভিং লাইসেন্সই মূল ড্রাইভিং লাইসেন্স। এটা মোবাইলে প্রদর্শন করে গাড়ি চালনা করা যাবে। কেউ যদি মনে করেন পুলিশ এটা মানছে না, ই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখানোর পরও পুলিশ আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তাহলে নির্দিষ্ট করে সেই পুলিশের নাম ফোন নাম্বার লিখে আমাদেরকে জানালে আমরা কিন্তু পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

তিনি বলেন, যদি কোন পুলিশ সদস্য এটা না জানে সেটা আইনের লোক হিসেবে তার ব্যর্থতা। সেটার জন্য ওই পুলিশ সদস্য দায়ী থাকবে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাদের সমস্যা আছে তারিখ দেওয়া বন্ধ করে ওয়ান স্টপ সার্ভিস এর মতো করে সার্ভিস দেয়ার জন্য বিআরটিএ কর্মকর্তাদের আহ্বান করছি।

ডোপ টেস্ট সহজ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, গাড়ি চালকদের লাইসেন্স পেতে ডোপ টেস্ট প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হচ্ছে। আপনাদের প্রস্তাবে ডোপ টেস্ট ডিজিটাল করার প্রস্তাব এসেছে। ডোপ টেস্ট নিয়ে প্রথমে আমরা কিছু সমস্যার মুখোমুখী হয়েছিলাম। এখন সেই সমস্যা নেই বললেই চলে। আমরা কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে একাধিক মিটিং করে একটা অ্যাপস প্রস্তুত করেছি। এটা এখনো চালু হয়নি। চালু হলে বারবার অফিসে যেতে হবে না।

অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, চালকরা স্বেচ্ছায় একটা পিঁপড়েও মারতে চায় না। কিন্তু, নানা পারিপার্শ্বিক কারণে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। সড়কে যান চলাচল ব্যতীত পাট কাঠি শুকানো, বা অন্য যে কোন কাজে ব্যবহার করা বেআইনি। এজন্য সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। জেলা উপজেলায় সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোকে আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের বিভিন্ন অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম চালু আছে। লিফলেট বিতরণ বিজ্ঞাপন প্রকাশসহ নানাভাবে আমরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া নানা ধরনের ট্রেনিং চালু আছে, সেটা আমরা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। গতকাল শুক্রবারও সারা দেশের ৬৪টি জেলায় আমরা ওভারস্পিড নিয়ন্ত্রণে ৪০৫টি মামলায় ১০ লাখের বেশি টাকা জরিমানা করেছি। এই অভিযান প্রতিদিনই চলমান থাকবে।

ফিটনেসবিহীন গাড়ি পেলেই ডাম্পিং করার হুঁশিয়ারি দিয়ে নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, গাড়ির রোড পারমিট অবশ্যই আপ টু ডেট থাকতে হবে। সেটার জন্য আমাদের যা যা করা দরকার আমরা বসে করব। কোনভাবেই সড়কে রুট পারমিট বিহীন ফিটনেস বিহীন গাড়ি নিয়ে নামা যাবে না। এক্ষেত্রে চালকদের যত ধরনের সহযোগিতা দরকার আপনারা আপনাদের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে আমাদের কাছে পেশ করবেন, আমরা সংবেদনশীল ভাবে সর্বোচ্চ সহযোগিতা আপনাদেরকে করব। কিন্তু কেউ যদি ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে সড়কে নামেন, তাহলে আমরা ধরতে পারলেই সোজা ডাম্পিং স্টেশনে পাঠিয়ে দেব।

এর আগে চালক ও মালিকপক্ষের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যার কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ঢাকা জেলা বাস মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান আলী, মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা বাস মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাদিকুর রহমান হিরু। মহাখালী বাস টার্মিনালের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক।

অন্যান্যদের মধ্যে ট্রাফিক গুলশান বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার আবুল মোমেন, বিআরটিএর রোড সেইফটি বিভাগের পরিচালক, বিআরটিএর রোড সেইফটি বিভাগের পরিচালক শেখ মো. মাহবুব-ই-রব্বানী বক্তব্য রাখেন।

;

সন্তানের বিকাশজনিত সমস্যার করণীয় নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
সন্তানের বিকাশজনিত সমস্যার করণীয় নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত

সন্তানের বিকাশজনিত সমস্যার করণীয় নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘আপনার সন্তানের বিকাশজনিত সমস্যা লক্ষ্য করলে করণীয় কী’ শীর্ষক একটি ফ্রি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) আর্লি ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (ইডিআই) বাংলাদেশ এ সেমিনারের আয়োজন করে।

ইডিআই বাংলাদেশ আধুনিক বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিকাশজনিত সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের ভাষা ও আচরণগত উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করে থাকে। সেমিনারটি প্রারম্ভিক শৈশবে শিশুর বিভিন্ন বিকাশের ধাপ এবং কীভাবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের চিহ্নিত করা যায় সে সম্পর্কে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।

ডিটা চ্যাপম্যান, ইডিআই বাংলাদেশের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর এবং একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট ও আর্লি ইন্টারভেনশনিস্ট, সেমিনারের মূল বক্তা ছিলেন।

তিনি, একজন বোর্ড সার্টিফাইড বিহেভিয়ার এনালিস্ট, ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সেক্টরের সাথে জড়িত আছেন এবং মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং নেপালে একই ধরনের উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।

সেমিনারে ডিটা শিশুদের ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন নিয়ে কথা বলেন। পিতামাতা, থেরাপিস্ট, শিশু বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষাবিদদের কোন বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন যা ডেভেলপমেন্ট 'রেড ফ্ল্যাগ' হিসেবে কাজ করে এবং কেন প্রারম্ভিক শৈশব সময়েই পদক্ষেপ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি শিশুর বিকাশে 'রেড ফ্ল্যাগ' লক্ষ্য করলে পিতামাতা এবং থেরাপিস্টরা কি ধরনের কৌশল ব্যবহার করতে পারেন এবং প্রাথমিকভাবে কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত সে সম্পর্কেও আলোচনা করেন।

এ ধরনের সেমিনার অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং অভিভাবক, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা।

;

চলমান তাপ প্রবাহের সামাজিক প্রভাব ও করণীয়



ড. মতিউর রহমান
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যভাগ থেকেই দেশজুড়ে চলছে তীব্র দাবদাহ। এমন তীব্র দাবদাহে হাঁপিয়ে উঠছে জনজীবন। এই তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফর।। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে যে, অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প অস্বস্তি আরো বাড়াতে পারে।

পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা চুয়াডাঙ্গায় পর পর কয়েকদিন ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। এ সময় দিন ও রাতের তাপমাত্রার তেমন কোনো পার্থক্য না থাকায় এ অঞ্চলের জনজীবন খুবই দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই প্রচণ্ড গরমে শিশু-বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সতর্ক না হলে যে কেউ সাধারণ পানিশূন্যতা, বদহজম থেকে হিটস্ট্রোকে ভুগতে পারে।

বাংলাদেশ এখন নিয়মিত তীব্র তাপ প্রবাহের সম্মুখীন হচ্ছে, যা দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তীব্র গরমের কারণে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে ডিহাইড্রেশন, হিট স্ট্রোক, কিডনি বিকলতা, হৃদরোগ, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

শিশু, বৃদ্ধ, গর্ভবতী নারী, এবং দরিদ্র মানুষ তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে বেশি থাকে। তাদের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কম হয় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা পেতেও তাদের সমস্যা হয়। তীব্র গরমের কারণে মানুষের মেজাজ খারাপ হতে পারে, বিরক্তি, উদ্বেগ, এবং ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাপ প্রবাহের সময় হাসপাতালগুলিতে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর চাপ বেড়ে যায়।

তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজের সময় পরিবর্তন করা হয়, যার ফলে কর্মীদের জীবনে বিঘ্ন ঘটে। এই সময় ফসলের উৎপাদন কমে যায়, যার ফলে কৃষকদের আয় কমে যায় এবং খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি দেখা দেয়। তাছাড়া, নির্মাণ, পরিবহন, এবং পর্যটন শিল্পও তাপ প্রবাহের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কমে যায় এবং তাদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়। তীব্র দাবদাহের সময় অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ফলাফল খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তীব্র গরমের কারণে অনেক স্কুল বন্ধ রাখা হয়, যার ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি দেখা দেয়।

তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে পানি ও খাদ্যের জন্য প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে সামাজিক দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। তীব্র গরমের সময় অপরাধের হার বৃদ্ধি পায় বলে দেখা গেছে। তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে অনেক মানুষ তাদের বাসস্থান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়, যার ফলে জনগোষ্ঠীর স্থানান্তরের সমস্যা দেখা দেয়।

তীব্র গরমের কারণে মানুষের মনে বিষণ্ণতা ও উদ্বেগের মতো মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই কারণে মানুষ ঘরবন্দি হয়ে থাকে, যার ফলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতার সমস্যা দেখা দেয়। তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে পরিবারে অশান্তি দেখা দিতে পারে।

তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে পরিবেশগত ক্ষতি হয়, যার ফলে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব দেখা দেয়। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তীব্র তাপ প্রবাহ মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত উল্লেখ করে বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবদেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তা মানবদেহের সহনশীলতার সীমার মধ্যে থাকে। কিন্তু বাতাসে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা এর চেয়ে বেশি হলে মানবদেহ তা সহ্য করতে পারে না। ফলে অস্বস্তি এবং সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। ফলে তাপ বাড়লে তাপ ব্যবস্থাপনাই হবে মূল কাজ, অর্থাৎ কীভাবে তাপ কমানো যায় তা দেখতে হবে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তীব্র তাপ প্রবাহে শরীরের পানিশূন্যতা রোধ করতে এ সময় প্রচুর পানি ও পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে। পানি, স্যালাইন, ফলের রস এবং পানীয় শরীরে আর্দ্রতা বাড়ায়। ডিহাইড্রেশনের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ পানিশূন্যতার কারণে স্ট্রোক হতে পারে।

পানি ও পানি জাতীয় খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি যুক্ত শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। তরমুজ, আনারস, জাম্বুরা, আপেলের মতো ফল শরীরের তাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া প্রচুর শাকসবজি খেলে হজমে সাহায্য করে। এটি শরীরের অস্বস্তি কমায়।

দিনের তাপমাত্রা যখন বেশি থাকে তখন সরাসরি সূর্যালোক বা অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলতে হবে। বাংলাদেশে সাধারণত সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে সূর্যের আলো সবচেয়ে বেশি থাকে। রোদে যেতে চাইলে ছাতা, টুপি, জুতা-স্যান্ডেল ব্যবহার করতে হবে। চোখ রক্ষা করতে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে। কোথাও যাওয়ার আগে সঙ্গে পানির বোতল নিতে হবে।

তীব্র গরমে ভাজা সুস্বাদু খাবার বা জাঙ্ক ফুড শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বার্গার, পটেটো চিপস বা পিজ্জার মতো খাবারে ক্যালোরি, সোডিয়াম এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে। ফলে একদিকে যেমন গরম বেশি থাকে, তেমনি বদহজম ও বিরক্তির আশঙ্কা তৈরি হয়। গরমে ভাজা খাবার কম খেতে হবে বা এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়াও, বিশেষজ্ঞরা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়ানোর পরামর্শ দেন।

গরমে হালকা, ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের সুতির পোশাক পরার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এই ধরনের কাপড় দ্রুত তাপ শোষণ করে ফলে কম গরম হয়। ঘর ঠাণ্ডা ও বাতাসযুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। দিনের বেলায় ঘরে আলো কম থাকলে ঘর ঠান্ডা থাকে। বাড়িতে গাছপালা থাকলে তাপ শোষণ করে। মেঝে পাকা হলে, ঘর বারবার পরিষ্কার করলে ঘর ঠান্ডা থাকবে।

প্রচন্ড গরমে মানুষের শরীর সাধারণত অতিরিক্ত ঘামের কারণে পানিশূন্য হয়ে পড়ে। পানিশূন্যতার কারণে মানুষের শরীর দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া এ সময় বদহজম ও পেট খারাপ এবং পানিবাহিত রোগ হতে পারে। রোটাভাইরাসসহ বিভিন্ন ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাব, কেউ কেউ এমনকি বমিও করতে পারে। এই ধরনের অসুখ সাধারণত একটু সাবধান হলেই এড়ানো যায়। কিন্তু অতিরিক্ত গরমে কারো শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা, মাথা ব্যথা বা মাথা ঘোরা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

বাংলাদেশে চলমান তাপপ্রবাহের সামাজিক প্রভাব ব্যাপক ও দীর্ঘমেয়াদী। এই সমস্যা মোকাবিলায় সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং সাধারণ মানুষকে একসাথে কাজ করতে হবে। তাপপ্রবাহের ঝুঁকি কমানোর জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান, এবং পরিবেশ রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী

;