যশোরে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ফসল হারিয়ে দিশেহারা কৃষক
ঘূর্ণিঝড় আম্পানযশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বারাকপুর গ্রামের কৃষক আবদুল আজিজ (৫০)। প্রায় ৩০ বছর ধরে কৃষি কাজে সম্পৃক্ত। কৃষিতেই তার জীবন জীবিকা। ঘুর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়েছে তার জীবিকা। ভেঙে পড়েছে অর্থনীতি। তার ক্ষেতের দুই বিঘা পেঁপে, এক বিঘা করলা (উচ্ছে), ২৫ কাঠা জমির তিল ও দুই বিঘা জমির পাট ক্ষতিগ্রস্ত।
কৃষি বিভাগের প্রাথমিক প্রতিবেদন বলছে, কৃষক আবদুল আজিজের মতো যশোর জেলার অন্তত ৪৪ হাজার ৫৪৬জন কৃষকের পাঁচ হাজার ৩৬৬ হেক্টর জমির ১৩৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ফসলের ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। যদিও ঝড়ের ১২দিন পার হলেও কৃষকরা সহায়তা পাননি। অথচ ফসল হারিয়ে দিশেহারা কৃষকরা।
কৃষক আবদুল আজিজ বলেন, এবার ভয়ঙ্কর ঝড় হয়েছে। আমার সব শেষ করে দিয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবো কি করে ভাবতে পারছি না। এমন ভয়ঙ্কও ঝড় ১৯৮৮ সালের ঝড়কেও হার মানিয়েছে। ৩০ বছর ধরে চাষবাদ করছি। এমন মার কখনো খায়নি।
অপর কৃষক যশোর সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের হারুন অর রশিদ বলেন, সাড়ে তিন বিঘা জমির লিচুর সব ধুলিসাৎ করে দিয়েছে ঝড়ে। সঙ্গে লাউ, উচ্ছের মাচাও উলোটপালট করেছে। লিচুতেই আট লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। লাউ ও উচ্ছের মাচা নষ্ট হয়ে গেছে। মাচা আবার মেরামত করছি। লিচুর ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা কঠিন হবে।
চৌগাছার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হারুন কবীর রুবেল বলেন, দুই বন্ধু মিলে টেঙ্গুরগ্রামে ১২ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কলা পেঁপে ও পেয়ারা চাষ করেছিলাম। ঘূর্ণিঝড়ে কলা ও পেঁপের ক্ষেত সব নষ্ট হয়েছে। এতে প্রায় ৭ লাখ টাকার ক্ষতি হলো। উঠতি ফসলে বড় ধরণের মার খেয়ে গেলাম আমরা।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত ২০ মে ঘুর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে যশোর জেলায় ৪৪ হাজার ৫৪৬জন কৃষকের পাঁচ হাজার ৩৬৬ হেক্টর জমির ১৩৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে আট হাজার ৫৪০জন কৃষকের এক হাজার ৭০৮ হেক্টর জমির পাট, ১৯ হাজার ১৪০জন কৃষকের এক হাজার ৯১৪ হেক্টও জমির শাক সবজি, ৮৪০জন কৃষকের ১৬৮ হেক্টর জমির পেঁপে, এক হাজার ৫৭৫জন কৃষকের ৩১৫ হেক্টর জমির কলা, এক হাজার ২শ’ কৃষকের ১৩২ হেক্টর জমির মরিচ, আটশ’ কৃষকের ১০৭ হেক্টর জমির মুগডাল, দুই হাজার ৪শ’ কৃষকের ৩০৫ হেক্টর জমির তিল, ৫০জন কৃষকের ৮ হেক্টর জমির ভুট্টা, ৫হাজার ৪০৯জন কৃষকের ৩৮৪ হেক্টর জমির আম, এক হাজার ৮০জন কৃষকের ২১৬ হেক্টর জমির লিচু, দুই হাজার ৬৬৭জন কৃষকের ৭৮ হেক্টর জমির পান ও ৩৫০জন কৃষকের ৩১ হেক্টর জমির ফুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি ও গদখালি ফুল চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, লকডাউনে ফুলচাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফুল গরু ছাগলের খাওয়ানো হয়েছে। কিন্তু ঘুর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে দেড়শ’ বিঘা জমির শেড নষ্ট হয়েছে। প্রতিটি শেড তৈরি করতে ১২ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়। ফুলচাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারিভাবে ফুলচাষিদের কোন সহায়তা এখনও করা হয়নি।
সদরের চাঁচড়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘুর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আম লিচু ঝরে গেছে। পেঁপে, কলা গাছ নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও লাউ, করলার মাচা উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে। পাট গাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছিল। ধীরে ধীরে আবার ঠিক হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা তৈরি চলছে।
এ প্রসঙ্গে কৃষি অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাথমিক প্রতিবেদনে ১৩৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। কাজ শেষে ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। তালিকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। সরকারি সহায়তা পেলে তালিকায় অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে কৃষকদের মাঝে বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।