মা-মেয়েকে একঘরে করায় ফতোয়াবাজদের বিরুদ্ধে মামলা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নাটোর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ম্যাপ

ম্যাপ

শুশুড়ি ও জামাতার মধ্যে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ এনে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় এক গৃহবধূকে স্বামীর সংসার ছাড়ার ফতোয়া দিয়ে একঘরে করে রাখেন গ্রামের মাতবররা।

দুই দিন একঘরে থাকা অবস্থায় পরিবারটির তিন সদস্যকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ফতোয়াবাজ মাতবরদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। মামলার পর থেকেই আসামিরা পলাতক রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৫ জুন) দুপুরে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ। মামলায় গ্রাম্য মাতব্বর ওসমান আলী, রমজান আলী, মকছেদ আলী ও ইউপি সদস্য মোসাব্বের আলীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাহারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, গত ৮ জুন রাতে ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী তার শাশুড়িকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরছিলেন। পথে রানীনগর মোল্লাপাড়া পৌঁছালে একদল যুবক তাদের পথরোধ করে পরিচয় জানতে চান। জামাতা-শাশুড়ির পরিচয় জানতে পেরে তারা দুজনের বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেয়ায় জামাতা ও শাশুড়িকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ওই যুবকরা নির্যাতন করেন এবং এলাকার লোকজনকে ডেকে জড়ো করেন।

ঘটনার চারদিন পর গত ১৩ জুন উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের দেবোত্তর গরিলা গ্রামের মাতবর ওসমান আলী, রমজান আলী, মকছেদ আলী ও ইউপি সদস্য মোসাব্বের আলী রানীনগর মোল্লাপাড়া মসজিদ চত্বরে শ্বাশুড়ি-জামাতার সালিশ বসান। বিচারে শাশুড়ি-জামাতাকে উপস্থিত রেখে তাদের বিরুদ্ধে শরিয়ত পরিপন্থী অপরাধের অভিযোগ এনে জোরপূর্বক তওবা পড়ানো হয়।

এ সময় মাতবররা সিদ্ধান্ত দেন যেহেতু স্বামী তওবা পড়েছেন, সেহেতু তিনি ওই গৃহবধূর স্বামী হিসেবে আর থাকতে পারবেন না। গৃহবধূকে স্বামীর ঘর ছেড়ে সন্তানসহ মায়ের বাড়িতে অবস্থান নিতে হবে। ওই রাত থেকেই মা-মেয়েকে একঘরে করে রাখা হয়।

সোমবার (১৫ জুন) ঘটনাটি জানতে পেরে গুরুদাসপুর থানা পুলিশ ভুক্তভোগী মা, মেয়ে ও সন্তানদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ ও তার স্বামী জানান, ফতোয়া দিয়ে তাদের সংসার বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সামাজিকভাবে তারা হেয় হয়েছেন। মাতবররা আইনের আশ্রয় না নিতে হুমকিও দিয়েছেন।

নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান শওকত রানা বলেন, সামাজিক বিচারের নামে ফতোয়া দেয়ার বিষয়টি জানার পর প্রশাসনের সহযোগিতায় একঘরে পরিবারটিকে উদ্ধার করা হয়েছে।

গুরুদাসপুর থানার ওসি মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ফতোয়াবাজ মাতবরদের আটক করতে অভিযান চলছে। ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।