অনিয়মই নিয়ম বেফাকে, মানা হয় না গঠনতন্ত্র!



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম. ঢাকা
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের লোগো, ছবি: সংগৃহীত

বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের লোগো, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অনিয়মই যেনো বেফাকের নিয়মে পরিণত হয়েছে। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ বেফাকের কার্যক্রম পরিচালনায় মানা হয় না গঠনতন্ত্র। তবে ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে পার পাওয়ার নজির রয়েছে ভুরি ভুরি। গঠনতন্ত্রে বেফাকের মজলিসে আমেলার (নির্বাহী কমিটি) সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ১২১ জন পর্যন্ত হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে কমিটির ব্যপ্তি ১৫৫ জনের। অভিযোগ রয়েছে, নেতৃস্থানীয়রা তাদের প্রভাববলয় বিস্তারের জন্য কমিটিতে চেনা-জানাদের জায়গা করে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে কমিটি গঠনে এলাকাপ্রীতি, স্বজনতোষণ এবং রাজনৈতিক নেতাদের জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি বেফাক প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছর পর্যন্ত বেফাকের কর্মনীতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আসা এবং বেফাকে নিজ নিজ মাদরাসা অন্তর্ভুক্তি না করানো প্রিন্সিপালরা বেফাকে যোগ দিয়েই পেয়েছেন সহ-সভাপতি, সহকারী মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। বেফাকের সংবিধান উপেক্ষা করে মজলিসে শুরা ও আমেলার মতামত না নিয়ে গঠন করা হয় মজলিসে খাস। এটা নিয়ে আলেমসমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া হওয়ায় গঠনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বেফাকে মাওলানা আনাসের প্রভাব
বেফাক সূত্রে জানা গেছে, আল্লামা আহমদ শফী দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত কারণে স্বাভাবিক চলাফেরা ও প্রশাসনিক কাজ তদারকি করতে পারছেন না। ফলে দাফতরিক কাজের জন্য তার ছোট ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীর ওপর নির্ভর করতে হয়। এই সুযোগে বেফাকে নিজের প্রভাব বলয় বাড়াতে শুরু করেন তিনি। বিভিন্ন মিটিংয়ে আল্লামা শফীর পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে ওই চিঠির আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করেন তিনি। এসব চিঠির সত্যতা নিয়ে খোদ বেফাকের কর্মকর্তাও সন্দিহান। তার পরও কেউ এসবের প্রতিবাদ করেন না। অনেক আমেলার সদস্য মিটিংয়ে যান না শুধু এ কারণে যে, মিটিংয়ে যেয়ে কী হবে, সিদ্ধান্ত তো হবে চিঠির আলোকে।

আরও পড়ুন: কওমি অঙ্গনে ক্ষোভ দানা বাঁধছে ধীরে ধীরে

গঠনতন্ত্রে বলা আছে, ‘বেফাকের অন্তর্ভূক্ত সকল কওমী মাদরাসার মুহতামিম পদাধিকার বলে অত্র সংস্থার সাধারণ সদস্য বলে গণ্য হবেন।’ কিন্তু বেফাকের সভাপতি আল্লামা শফীর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী সহ-সভাপতির পদে আছেন। বয়োজেষ্ঠ না হয়েও মাওলানা আনাস মাদানী শুধু আল্লামা শফীর ছেলে হওয়ায় এই পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি হাটহাজারী মাদরাসার সহকারী শিক্ষা পরিচালক। একই মাদরাসার শিক্ষক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীও বেফাকের সহ-সভাপতি। এক মাদরাসা থেকে এভাবে তিনজনের অন্তর্ভুক্তি স্পষ্ট গঠনতন্ত্রের সঙ্গে অসামঞ্জসাপূর্ণ। তবে, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে সর্বশেষ কাউন্সিলে সহ-সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে এক নম্বর নির্বাহী সদস্য করা হয়। আর সহ-সভাপতি হন মাওলানা আনাস। পরে অবশ্য নানামুখী চাপের কারণে আল্লামা বাবুনগরীেক সহ-সভাপতি করা হয়।

অন্যদিকে ফরিবাদবাদ মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা নুরুল আমিন বেফাকের সহকারী মহাসচিব পদে অধিষ্ঠিত। ওই মাদরাসার প্রিন্সিপাল আবদুল কুদ্দস বেফাকের মহাসচিব। মাওলানা নুরুল আমিন বেফাক মহাসচিবের ভগ্নিপতি। এভাবে লালবাগ মাদরাসার প্রিন্সিপাল না হয়ে শুধু চট্টগ্রামে বাড়ি ও আল্লামা শফীর ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাধে মুফতি ফয়জুল্লাহ বেফাকের সহ-সভাপতি পদে আসীন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আলেম বলছেন, ‘দ্বীনি শিক্ষায় স্বজনপ্রীতির বিরোধিতা করা হলেও এ ধরনের চর্চা দেশের সবচেয়ে বড় কওমি প্রতিষ্ঠানটিকে সঠিকভাবে পরিচালিত হতে বাধাগ্রস্ত করছে। এর অবসান দরকার।’

দেশের বৃহৎ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)-এর দশম কাউন্সিলে তারা কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। আগের কমিটির তুলনায় কলেবরে বাড়ানো হয় নতুন কমিটির। এখানে গঠনতন্ত্র মানা হয়নি। এগুলো নিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আলেমরা প্রতিবাদ জানালেও কোনো প্রতিকার হয়নি। শুধু কয়েকজনকে পদায়ন করে ক্ষোভ উপশম করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দাবি অনুযায়ী বেফাকে কোনো সংস্কার হয়নি। এটা নিয়ে আলেমরা অসন্তুষ্ট।

বেফাকের কমিটি
২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে বেফাকের পুনরায় সভাপতি হন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। গত ১৫ বছর ধরে এই পদে আছেন তিনি। ১৯৭৮ সালে বেফাক প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বেফাকের সভাপতি ছিলেন- মাওলানা মুহাম্মদ ইউনুস রহ.। এরপর মাওলানা মুহাম্মদ হারুন ইসলামাবাদী (১৯৯২-৯৬), মাওলানা নুরুদ্দীন আহমাদ গহরপুরী (১৯৯৬-২০০৫) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সাল থেকে আল্লামা শাহ আহমাদ শফী বেফাকের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, তখনও হাটহাজারী মাদরাসা বেফাকের আওতাভুক্ত হয়নি। এমনকি এখনও বেফাকের কেন্দ্রীয় সব পরীক্ষায় হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা অংশ নেন না। এটা নিয়েও ক্ষোভে রয়েছে। এর বিরোধীতা করায় বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফ মাওলানা আনাস মাদানীকে বলে খাস কমিটি বিপুলপ্তির জন্য প্রলুব্ধ করছেন। ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপে বিষয়টি প্রমাণিত।

দশম কাউন্সিলের পর ঘোষিত নির্বাহী কমিটিতে সহ-সভাপতি রয়েছেন প্রায় ত্রিশ জন। মহাসচিবের দায়িত্ব পান জামিয়া ইমদাদিয়া ফরিবাদাদ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল কুদ্দুস। ২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর বেফাকের পুরনো কমিটির মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বার জাহানাবাদীর মৃত্যুর পর থেকেই বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। এর আগে সংস্থাটির মহাসচিব ছিলেন- শায়খুল হাদিস আল্লামা আজীজুল হক রহ. (১৯৭৮-৮২), মাওলানা আতাউর রহমান খাঁন রহ. (১৯৮৩-৯১) ও মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জব্বার রহ. (১৯৯২-২০১৬)। মাঝে ২০০৫ সালে মুফতি রুহুল আমীন ছয় মাস মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। সহকারী মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন আটজন। সহকারী মহাসচিব নিয়োগেও নিয়ম মানা হয়নি। একই মাদরাসা থেকে সদস্য করা ছাড়াও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আল্লামা শফীর অনুসারীদের। এটা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে আলেমদের মাঝে।

আলেমদের আশা-আকাঙ্খার বেফাক
১৯৭৮ সালের এক উলামা সম্মেলনে গঠিত হয় বাংলাদেশ কওমি শিক্ষা বোর্ড বেফাক। ২৬ বছর পর ২০০৬ সালে নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ভূমি ক্রয় করে বোর্ড। কিন্তু এখনও নিজস্ব জায়গায় পরিকল্পিত কোনো ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। দেশের অন্যতম বৃহৎ দ্বীনি শিক্ষাবোর্ডের কার্যক্রম চলছে জীর্ণ আধাপাকা ভবনে।

প্রতিষ্ঠার পর ঢাকার এমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদরাসায় স্থাপন করা হয় বেফাকের অস্থায়ী কার্যালয়। এরপর তা স্থানান্তরিত হয় ঢাকার নয়া পল্টনে একটি ভাড়া বাড়িতে।এ দুই জায়গায় আড়াই দশক পার করে যাত্রাবাড়ীর কাজলায় নিজস্ব ভূমিতে পা রাখে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

বহু চেষ্টার পর বেফাকের নিজের হয় মূল্যবান ২৭ শতাংশ জমি। বেফাকের সাবেক সভাপতি আল্লামা নূরুদ্দীন গহরপুরী রহ. নিজে এ জমি বায়না করেন এবং কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে পরিশোধ করা হয় তার মূল্য। নিজস্ব ভূমিতে স্থায়ী ও পরিকল্পিত বহুতল ভবনের জন্য রাজউকের অনুমোদন মিলেছে ২০১৮ সালের শেষভাগে। বেফাকের ইচ্ছা, ২৭ শতাংশ জমির ওপর দুটি বহুতল ভবন করার। দুটি ভবনই হবে ১০তলা বিশিষ্ট। এসব ভবনে থাকবে- মসজিদ, বিষয়ভিত্তিক টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার, পাঠাগার, গবেষণাগার, অডিটোরিয়াম, বিশ্রামাগার, প্রত্যেক বিভাগের ভিন্ন ভিন্ন অফিস, বেফাকের স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রকশনা প্রতিষ্ঠান এবং বই বিক্রয় কেন্দ্র।

আগামী পর্বে: আগের অভিযোগের সুরাহাও হয়নি

   

ভারতে গিয়ে নিখোঁজ সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম ভারতে গিয়ে চার দিন ধরে নিখোঁজ বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

পরিবারের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) জানানো হয়েছে, চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১৬ মে) থেকে সংসদ সদস্যের সঙ্গে স্বজনদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এ নিয়ে স্বজনেরা উদ্বিগ্ন।

আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস রবিবার বিকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে যান। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন–অর–রশীদের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানান।

মুমতারিন ফেরদৌস ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তার বাবা ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। বিষয়টি জানাতে তিনি ডিবি কার্যালয়ে এসেছেন।

ডিবি মোহাম্মদ হারুন–অর–রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম ভারতে একটি বাংলাদেশি মুঠোফোন ও একটি ভারতীয় মুঠোফোন ব্যবহার করেন। নম্বর দুটি কখনো বন্ধ আবার কখনো খোলা পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ভারতের পুলিশ বাহিনীর সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। আনোয়ারুল আজিমের কী হয়েছে, সেটা জানার চেষ্টা চলছে।’

আনোয়ারুল আজিমের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফ সাংবাদিকদের বলেন, গত ১২ মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম চিকিৎসার জন্য দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। ১৪ মে পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। তবে ১৬ মে সংসদ সদস্যের মুঠোফোন থেকে আবদুর রউফের কাছে ফোন আসে। তিনি ফোন ধরতে পারেননি। পরে আবার তিনি ফোন করলে মুঠোফোনটি বন্ধ পান। এর পর থেকে সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম কালীগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০১৪ সাল থেকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য তিনি।

;

র‍্যাব হেফাজতে মৃত্যু, নান্দাইল থানার এসআই প্রত্যাহার



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ময়মনসিংহ
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

র‍্যাব হেফাজতে সুরাইয়া খাতুন (৫২) মৃত্যুর ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

শনিবার (১৮ মে) রাতে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাকে নান্দাইল থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

রবিবার (১৯ মে) রাতে নান্দাইল মডেল থানার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল মজিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, নান্দাইলে গৃহবধূ রেখা আক্তার (২০) মৃত্যু মামলার আসামি তার শ্বশুর আজিজুল ইসলাম ও শ্বাশুড়ি স্ত্রী সুরাইয়া খাতুন। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এসআই নাজমুল হাসান। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুই আসামিকে নান্দাইল মডেল থানায় ডেকে নেন এসআই নাজমুল। সেখানে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে কিছুক্ষণ পরে তাদের ছেড়ে দেন। থানার সামনে আসতেই র‍্যাবের একটি দল আজিজুল ইসলামকে ছেড়ে দিয়ে সুরাইয়াকে আটক করে ভৈরব ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এর পর শুক্রবার সকালে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সুরাইয়া খাতুনকে মৃত ঘোষণা করে।

এ মৃত্যুর ঘটনায় সুরাইয়া খাতুনের স্বামী আজিজুল ইসলাম র‍্যাবের হেফাজতে স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। পরে মরদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে নিহতের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই দিন শনিবার দুপুরে সুরাইয়া খাতুনের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয় উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দা গ্রামে।

নান্দাইল মডেল থানার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল মজিদ জানান, উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসআই নাজমুল হাসানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেছেন। এর চাইতে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

ময়মনসিংহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মো. শামীম হোসেন বলেন, বিভিন্ন কারণে তাকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করেন, কাজের প্রতি তার আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। তাই, তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

;

নওগাঁয় ঐতিহ্যবাহী হুর মাজার মেলা অনুষ্ঠিত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম নওগাঁ
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের চেরাগপুর গ্রামে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ হুর মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এখানে ‘হুর’ মানে কোন রমনি কে বুঝানো হয়না। গ্রামের একটি বিশেষ বট গাছের নিচে দিনব্যাপী হুড় হুড় (তাড়াহুড়ো) করে এ মেলা শুরু ও শেষ হয় বলে একে হুর মেলা বলে।

এবারের মেলায় প্রায় দুই শতাধিক বিভিন্ন দোকান পসরা সাজিয়ে বসেছে। দিনব্যাপী মেলায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার বেচাকেনার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

এ মাজারে মনের বিশ্বাসে মানত করেন নানান ধর্মের মানুষ। তবে উদ্যেশ্য যাই হোক কেন, মনোবাসনা পূরণই যেন সকলের প্রত্যাশা। গ্রামীণ এ মেলার মধ্য দিয়ে সম্প্রতির বন্ধন অটুট হবে এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

চেরাগপুর গ্রামের পুকুর পাড়ে একটি বিশেষ বট গাছের নিচে মাটির একটি ঘরের মধ্যে মন্ডপ ও মাজার। আর এ মাজারে ধর্ম-বর্ণ বিনিশেষে সকল শ্রেনীর মানুষরা মানত করে থাকেন।

প্রতি বছরের পহেলা বৈশাখের দ্বিতীয় রবিবার এ বটগাছের নিচে মেলা হয়ে থাকে। তবে এ বছর থেকে জৈষ্ঠ্য মাসের রবিবার মেলা হয়। কৃষিপ্রধান এলাকা হওয়ায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পর বটগাছের আশপাশেসহ ফাঁকা মাঠে এই মেলা হয়। এটি ঐতিহ্যবাহী ‘হুর মাজার মেলা’ নামে পরিচিত।

এবারের মেলায় বিভিন্ন পদের মিষ্টান্ন ও খাবারের দোকান, খেলনা সামগ্রী, কসমেটিক, মৌসুমি ফল এবং কৃষি যন্ত্রপাতিসহ আসবাবপত্রের দোকান দিয়ে সাজানো হয়েছে। এমনকি রুই, কাতলা ও পাঙ্গাস মাছ এবং গরু ও মহিষের মাংসও বিক্রি হয়। দিনব্যাপী এ মেলা হলেও কসমেটিক ও কাঠের আসবাবপত্রের দোকান থাকে আরো কয়েকদিন।

মানত করে যাদের মনোবাসনা পুরণ হয় তারা এ মাজারে এসে রান্না করে সবার মাঝে খাবার বিতরণ করেন। আবার অনেকে এখানে পরিবারের সবাই দল বেঁধে এসে রান্না করে খান। আশপাশের অন্তত ১৮-২০ টি গ্রামের মানুষের পদচারণায় মেলা প্রাঙ্গন এক মিলন মেলায় পরিনত হয়।

স্থানীয়রা জানান, হুর মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে এ মেলায় মানুষ আসে। এ ছাড়া মেয়ে ও জামাইকে দাওয়াত করে নিয়ে আসা হয়। একদিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের আগমনে যেন আনন্দ উৎসব বিরাজ করে।

মাজারের খাদেম শুকচান বলেন, ‘বিভিন্ন ধর্মের মানুষরা মানত করে থাকে। তাদের আশা পুরন হলে পরে এ মাজারে এসে রান্না করে সবাইকে খাওয়ায়। দেশ স্বাধীনের পর থেকে বটগাছের নিচে এ মাজারে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।’

মিষ্টির দোকানী উজ্জল কুমার বলেন, ‘দিনব্যাপী মেলা হলেও একদিন আগে এসে বিকাল থেকে দোকান সাজিয়ে বেচাকেনা শুরু করেছি। দিনব্যাপী মেলায় লক্ষাধিক টাকার বিভিন্ন মিষ্টান্ন বিক্রি হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বেচাকেনা কিছুটা কম। কারন হতে পারে মানুষের এখনো ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়নি। হয়ত টাকা-পয়সা নেই। এ কারণে মেলায় মানুষের আগমন কিছুটা কম।’

মেলা কমিটির সভাপতি ও ইউপি মেম্বার জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রাচীনতম এ হুর মেলায় ধর্মবর্ণ বির্নিশেষে বিভিন্ন এলাকা থেকে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের আগমন ঘটে। তবে কবে থেকে এ মেলা হয়ে আসছে তা জানেন না স্থানীয়রা। তবে দেশ স্বাধীনদের পর থেকে এ মেলা হয়ে আসছে। একদিনের জন্য এ গ্রাম মিলন মেলায় পরিনত হয়। মেলায় প্রায় দুই শতাধিক বিভিন্ন দোকান অংশ নিয়েছে।’

;

নিজস্ব উদ্ভাবন, ফেঞ্চুগঞ্জে নিরবিছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুশিয়ারা নদীর পানি দিয়ে চলে ফেঞ্চুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র। নদীটির তীরে অবস্থিত পাম্প হাউজ মনিটরিং নিয়ে বিড়ম্বনার অন্ত ছিল না। কখনও নাব্যতা কমে যাওয়া, কখনও মোটরের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পানি সরবরাহ নিয়ে নাকাল ছিল বিদুৎকেন্দ্রটি।

পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে মূল বিদ্যুৎকেন্দ্রও বন্ধ হয়ে যেতো। গত বছরও ৩১বার বিভ্রাটের কবলে পড়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। এরপর নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়াহিদুল আলম, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তাফিজ আহমেদ ও সহকারী প্রকৌশলী নয়বিৎ মন্ডল নিজেরাই তাক লাগানো সমাধান এনে দিয়েছেন। তাদের উদ্ভাবন স্বস্তি এনে দিয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে।

যে কাজে বিদেশি কনসালটেন্ট ভাড়া করতে হলে অর্ধকোটি টাকার উপরে খরচ হতে পারতো, ওয়াহিদুল ইসলামরা সেই কাজ করেছেন মাত্র ৩০ হাজার টাকা খরচে। এখন আরও তাদের দেড় কিলোমিটার দূরে গিয়ে পাম্প হাউজ দেখে আসতে হয় না। যেকোনো জায়গায় বসেই পাম্প অপরেট করা যাচ্ছে। পানির স্তরও জেনে যাচ্ছেন এক ক্লিকেই।

প্রকৌশলী ওয়াহিদ আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আগে প্রতি মাসেই পাম্প পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটতো। এতে করে ফেঞ্চুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের ২টি স্টিম টারবাইন, ৪টি গ্যাস টারবাইন, ৪টি এইচআরএসজি কুলিংয়ের পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতো। এ কারণে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিভ্রাট দেখা দিতো। গত ৪ মাস থেকে প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার সফটওয়ারের মাধ্যমে প্রোগ্রাম তৈরি করায় এখন সব সংকট দূর হয়ে গেছে। এখন অফিসে বসেই সব সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে। কোনো রকম যান্ত্রিক ত্রুটি হলে সঙ্গে সঙ্গে ধরতে পারছি। আগে দেড় কিলোমিটার দূর পাম্প হাউজে গিয়ে তারপর সমস্যা চিহ্নিত করতে হতো। এতে করে বছরের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।’

ওয়াহিদুল ইসলাম ও তারে টিমের সদস্যদের ভাবনার জায়গাটিও আশান্বিত হওয়ার মতো। ফেঞ্চুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র চিত্ত-বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। অবসর সময় কাটাতে তারা উদ্ভাবনীতে মনোনিবেশ করেন। আর শুরুতেই প্রাধান্য পায় দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা পাম্প হাউজ।

আগে সরেজমিন গিয়ে দেখে আসতে হতো পাম্প হাউজ ও নদীর নাব্যতা। লোকবল সংকটের কারণে মনিটরিং করা কঠিন হয়ে পড়তো। এতে করে নানা রকম সংকট দেখা দিতো। আর সংকটের শেষ ধাপে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বিকল হয়ে বসে যেতো। এ কারণে সংকট ছিল প্রতি মাসের চিত্র। সেই সংকট দূর করে হিরোতে পরিণত হয়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়াহিদুল ইসলাম ও তার টিম।

টিমটি তাদের উদ্ভাবন নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বিদ্যুৎ বিভাগ আয়োজিত ‘ইনোভেশন শোকেসিং-২০২৪ এ।’ এতে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের উদ্ভাবন নিয়ে হাজির হয়। ওয়াহিদুল ইসলাম দাবি করেছেন ফেঞ্চুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওই পদ্ধতি বৃহত্তর পরিসরে পাইলটিং করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্র, ওয়াসা, মেরিন ভেসেলে হুবহু পদ্ধতি ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।

উদ্ভাবন শোকেসিং আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প ও সহজলভ্য উৎস আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের সমস্যা আমাদেরকেই আমাদের মতো করে সমাধান করতে হবে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্ট (এআই) এখনই অনেক সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছে। এআই-এর ব্যবহার বাড়িয়ে গ্রাহক সন্তুষ্টিতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার যতো বাড়বে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় ততো হবে। একই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যও নিশ্চিত হবে।’

উল্লেখ্য, ইনোভেশন শোকেসিং ২০২৪-এ আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল) থ্রি-ডি প্রিন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন স্পেয়ার পার্টস তৈরিকরণ-এ প্রথম স্থান, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স বেজড ‘স্মার্ট কাস্টমার এসিস্ট্যান্ট- চ্যাটবট’ ২য় স্থান অর্জন করে।

;