চীনা কোম্পানির করোনা ভ্যাকসিন পরীক্ষা বাংলাদেশে, কেন ও কিভাবে?

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস
  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে মহামারির ভ্যাকসিনতো নয়ই, অন্য কোন রোগের চিকিৎসায় আবিষ্কৃত ওষুধের পরীক্ষা হয়নি। কিংবা তার অনুমনোদনও দেয়নি বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা কাউন্সিল-বিএমআরসি।

তারপরেও এবার করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন গবেষণায় চীনা প্রতিষ্ঠান বায়োটেক সিনোভ্যাককে এই ধরনের গবেষণার নৈতিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার উদ্যোগ নিয়েছে আইসিডিডিআর,বি।

বিজ্ঞাপন

বিষয়টি নিয়ে কথা উঠেছে। কেন দেওয়া হচ্ছে এই অনুমোদন?


সে প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন বিএমআরসি’র পরিচালক ড. মাহমদু উজ জামান। তিনি বলছিলেন, পরিস্থিতি এমন নয়, যে চীনের প্রতিষ্ঠানটি এখনই বাংলাদেশে এই ভ্যাকসিনের জন্য পরীক্ষা শুরু করতে পারবে। কেবল নৈতিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আইসিডিডিআর,বি-কে কাজটি এগিয়ে নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হবে। একই সঙ্গে অনুমোদন লাগবে ওষুধ প্রশাসনেরও। কারণ পরীক্ষার জন্য যে ড্রাগ দেশে বয়ে আনতে হবে তা কতটুকু নিরাপদ হবে তার নিশ্চয়তা পেলেই ড্রাগ অ্যাডমিনস্ট্রেশন অনুমোদন দেবে। আর এমন একটি ড্রাগ নিয়ে গবেষণা হতে হলে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত তা অবহিত করতে হবে।

নৈতিক অনুমোদনের আগেই তা দরকার ছিলো কি না? এমন প্রশ্নে বিএমআরসি পরিচালক জানালেন, তাদের কাছে আইসিডিডিআর,বি একটি প্রটোকল দাখিল করেছে। তারা সেটি এথিকস কমিটির মাধ্যমে পর্যালোচনা করে নৈতিক অনুমোদন দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

দাখিল করা নথিপত্রেরও ভিত্তিতে এ ধরনের অনুমোদন একটি রোটিন নিয়ম বলেও উল্লেখ করেন মাহমুদ উজ- জামান।


সিনোভ্যাক বায়োটেক’র এ বিষয়ে প্রস্তুতি কতটুকু তা জানতে পেরেছেন কি? সে প্রশ্নে তিনি বলেন, তাদের দাখিল করা পেপারস বলছে, ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা তারা প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় শেষ করে তৃতীয় ধাপে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরীক্ষা করে দেখতে চায়। বাংলাদেশ ছাড়াও ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া ইউক্রেনে পরীক্ষা করা হবে। সেই বিবেচনা থেকে প্রয়োজনীয় শর্তগুলো মেনে গবেষণা করা যেতে পারে এমন নৈতিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।


উল্লেখিত অন্য দেশগুলোতে কী অনুমতি পেয়েছে চীনা কোম্পানিটি? সে বিষয়টি জানা নেই বলেই জানান এই বিএমআরসি পরিচালক।

তবে তিনি বলেন, আইসিডিডিআর,বিকে এই পরীক্ষা চালাতে যে সাতটি হাসপাতালের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোর অনুমোদন, ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন ও স্বাস্থ্য পরিচালকের অনুমোদন দরকার হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, চীনা কোম্পানিটির সঙ্গে আইসিডিডিআর,বি’র চুক্তি এখনো হয়নি। চুক্তির প্রি-রিকুইজিট হিসেবেই বিএমআরসি’র নৈতিক অনুমোদন সংগ্রহ করেছে তারা।     

এই গবেষণা নিয়ে কি বিএমআরসি আশাবাদী? এমন প্রশ্নে পরিচালক মাহমুদ উজ জামান বলেন, এ ধরনের ভ্যাকসিন পরীক্ষার মাধ্যমে সফলতা এলে তা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে। কিন্তু এ ধরনের গবেষণায় সফলতার হার সারা বিশ্বেই নামমাত্র। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন এখনো প্রচেষ্টায় সীমাবদ্ধ। সুতরাং এখানে আশাবাদী শব্দটি ব্যবহারের সুযোগ নেই।


ভ্যাকসিন পরীক্ষার একটি ঝুঁকি তাতে থেকেই যায়- বাংলাদেশ সে ঝুঁকি নিতে কতটা প্রস্তুত? সে প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি পুরোপুরি প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিষয়। প্রশাসন চাইলে যে কোনো উদ্যোগ যে কোনো পর্যায়ে থামিয়ে দিতে পারে।


আইসিডিডিআর,বি’র পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ সরাসরি নেওয়ার সুযোগ কতটুকু রয়েছে? সে প্রশ্নে বিএমআরসি পরিচালক বলেন, অতীতে কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষায় আইসিডিডিআর,বি তাদের অনুমোদন খুব কমই নিয়েছে, তবে এ ব্যাপারে তারা প্রটোকল জমা দিয়েই নৈতিক অনুমোদন নিয়েছে।

এ বিষয়ে কথা হয় আইসিডিডিআর,বির মিডিয়া উইংয়ে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো কথা বলার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ‘ইট ইজ টু আর্লি টু টক অ্যাবাউট ইট,’ বলেন তিনি।

আইসিডিডিআরবি’র ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ড. মুস্তাফিজকে এ বিষয়ে কথা বলতে টেলিফোনে চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।