ভারতে গণপিটুনিতে নিহত তিন বাংলাদেশির দুজনের পরিচয় মিলেছে

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মৌলভীবাজার
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জুয়েল আহমদ ও নুনু মিয়া

জুয়েল আহমদ ও নুনু মিয়া

ভারতের আসাম রাজ্যে গণপিটুনিতে নিহত তিন বাংলাদেশির মধ্যে দুইজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। সোমবার (২০ জুলাই) বিকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর মাধ্যমে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) পাঠানো ছবি দেখে তাদের স্বজনরা দুইজনের মরদেহ শনাক্ত করেছেন ।

এরা হলেন- মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে জুয়েল আহমদ (২৭) ও আকদ্দছ মিয়ার ছেলে নুনু মিয়া (২৮)। তারা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা এবং পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৮ জুলাই) রাতে ভারতের করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি সীমান্তবর্তী বুবরীঘাট চা বাগানের বাসিন্দারা গরুচোর সন্দেহে তাদেরকে পিটিয়ে হত্যা করে।

জানা গেছে, ভারতের পাথারকান্দি বুবরীঘাট চা বাগানে শনিবার রাতে গরুচোর সন্দেহে বাগান শ্রমিকরা কয়েক ব্যক্তিকে আটক করে। পরে অমানবিক গণপিটুনিতে তিনজনের মৃত্যু ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বিএসএফ ১৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়কসহ করিমগঞ্জ সীমান্ত শাখার অতিরিক্ত পুলিশ অধিক্ষক প্রশান্ত দত্ত।

বিজ্ঞাপন

প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে নিহতদের পকেটে থাকা বিড়ি, দিয়াশলাই, বিস্কুট, মশার কয়েল, ফেন্সিং কাটার যন্ত্রসহ কিছু নথিপত্র দেখে নিহতদের বাংলাদেশি নাগরিক বলে তারা নিশ্চিত হন।

নিহত জুয়েল আহমদের ভাই সোয়েল আহমদ জানান, তার ভাই ও চাচা সিএনজি চালান। গত কয়েক দিন থেকে বাড়ি ফিরছেন না। ভারতে ৩ বাংলাদেশি মারা যাওয়ার খবর শুনে জুড়ী থানায় প্রথমে যোগাযোগ করেন। তিনজনের মরদেহের ছবির মধ্যে চাচাকে শনাক্ত করি। বাকিগুলো অস্পষ্ট হওয়ায় ওসি অন্য অ্যাঙ্গেলের ছবি দেখালে ভাইকেও শনাক্ত করি। তবে তারা কখন কীভাবে ভারতে যান তা বলতে পারছেন না তিনি।

বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস সোমবার (২০ জুলাই) বিকেলে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত তিনজনের মধ্যে দুইজনের বাড়ি তালিমপুর ইউপির কাঞ্চনপুর এলাকায়। আমি তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি তারা দুইজন গত শুক্রবার জুড়ীতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর থেকে তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সোমবার সকালে জুড়ী থানা পুলিশ আমাকে জানায় যে তারা ভারতে খুন হয়েছেন। পরে নিহতদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হই; তাদের বাড়ি তালিমপুর ইউনিয়নে।

জুড়ী থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, রোববার বিজিবি থেকে ছবি পেয়ে জামকান্দি এলাকায় তন্ন তন্ন করেও তিনজনের মরদেহের কারও পরিচয় জানতে পারেননি।পরে বড়লেখা থানার ওসির কাছে ছবি পাঠিয়ে দেই।

বড়লেখা থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হক জানান, ছবি পেয়েই তিনি বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিতে শুরু করেন। বিকালে কাঞ্চনপুর গ্রামের সোয়েল আহমদ নামক ব্যক্তি দুইজনের ছবি শনাক্ত করেছেন।

বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গাজী শহীদুল্লাহ জানান, ভারতের করিমগঞ্জে গণপিটুনিতে নিহত তিন বাংলাদেশির দুইজনের পরিচয় মিলেছে। তাদের বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায়। তারা হলেন- উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের মৃত আছদ্দর আলীর ছেলে নুনু মিয়া এবং একই গ্রামের আব্দুল মানিকের ছেলে জুয়েল আহমদ। তারা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা।

ভারতে নিহত অপর বাংলাদেশির পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। অপর দিকে শনাক্ত দুই বাংলাদেশির মরদেহ দেশে আনার জন্য বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে বলেও জানান তিনি।

ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি, নিহত বাংলাদেশিরা শনিবার রাতে সীমান্ত পেরিয়ে করিমগঞ্জের পাথরকান্দি অঞ্চলে বগরিজান চা-বাগানে এলাকায় যান। এ সময় স্থানীয় লোকজন গরুচোর সন্দেহে তাদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে শুরু হয় মারধর; এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ভারতীয় পুলিশ।