ঢাকা: ডেনমার্ক, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী মানুষের কাছে এনার্জি ড্রিংক বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশে গ্রামের টং দোকান থেকে শুরু করে শহরের চেইনশপগুলোতে হরহমেশায় বিক্রি করা হয় এসব পণ্য। হর্স, রেড বুল, টাইগার, শার্ক, স্পিডসহ নানা ব্রান্ডের এনার্জি ডিংকে সয়লাব বাজার। ইতোমধ্যে এসব ড্রিংকের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। অতীতে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এসব ড্রিংকের মান প্রণয়নের উদ্যোগ নিলেও অজানা কারণে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ফলে সহসাই এনার্জি ড্রিংকের জাতীয় মান প্রণয়ন হচ্ছে না।
সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতেই এনার্জি ড্রিংকের মান প্রণয়নের বিষয়ে মতামত আহ্বান করে বিএসটিআই। কারণে আগে মান প্রণয়ন করা না হলে ত্রুটিযুক্ত এনার্জি ড্রিংকের উৎপাদন বন্ধ করা সম্ভব না। সংস্থাটির ‘সফট ড্রিংকস অ্যান্ড বেভারেজ’ সম্পর্কিত এক বৈঠকে এ বিষয়ে সব স্টেক হোল্ডারদের মতামত নেওয়া হয়। জুন ও জুলাই মাসে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে একাধিক বৈঠকও করে বিএসটিআই। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে মান প্রণয়নের বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এমনকি ভবিষ্যতেও যাতে এনার্জি ড্রিংকের মান প্রণয়ন করা না হয় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বিএসটিআই'র পরিচালক (সার্টিফিকেশন মার্কস) এস. এম ইশহাক আলী বার্তা২৪.কম'কে বলেন, 'বাজারে যেসব এনার্জি ড্রিংক পাওয়া যায় তাতে অন্য দেশের তুলনায় কম ক্যাফেইন থাকে। তাই এখন যদি মান প্রণয়ন করা হয় তাহলে পরবর্তীতে জটিলতা তৈরি হবে। করণ পরবর্তিতে উৎপাদনকারীরা ক্যাফেইনের পরিমাণ বাড়াতে চাইতেই পারে। তাই এ বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্টদের সাথে আরো বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক ড. নাজমা শাহীন বার্তা২৪.কম'কে বলেন, 'এনার্জি ড্রিংক উৎপাদনে সরকারি নীতিমালা না থাকায় নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। আমরা তিন বছর আগে এনার্জি ড্রিংকের মান প্রণয়নের বিষয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছিলাম। এর দায়িত্ব ছিল বিএসটিআই'র ওপর। কিন্তু তা অার বাস্তবায়ন হয়নি।'
তিনি বলেন, 'এনার্জি ড্রিংক মানুষের কিডনিসহ নানা রোগের ঝুঁকি যেমন বাড়াচ্ছে তেমনি মাদক সেবনের প্রতি তরুণ সমাজকে আগ্রহী করে তুলছে। এমনকি চালকরা গাড়ি চালানোর সময় অবাধে এগুলো পান করছেন। ফলে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। তাই জনকল্যাণের জন্য এনার্জি ড্রিংকের মান প্রণয়ন করা উচিত।'
তিনি আরও বলেন, 'মান প্রণয়ন না করার ক্ষেত্রে উৎপাদকরা ক্যাফেইনের পরিমাণ বাড়ানোর অনুমতি চাইলে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে- এটা কোনো কারণ হতে পারে না।'
হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের তথ্য অনুযায়ী, যারা নিয়মিত এনার্জি ড্রিংক পান করেণ তাদের কিডনিজনিত রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়। বেশিরভাগ এনার্জি ড্রিংকের প্রতি ২৫০ মিলিলিটারের ক্যানে ৮০-৩০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে।
ক্যাফেইনের সঠিক মাত্রাটি এখনও জানা যায় নি। ধারণা করা হয়, প্রতি ২ দশমিক ২ পাউন্ড ওজনের জন্য দেড়শ থেকে ২শ মিলিগ্রাম মাত্রার ক্যাফেইন স্বল্প সময়ে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। অবশ্য এই পরিমাণ ক্যাফেইনের জন্য প্রয়োজন ৭৫ থেকে ১০০ কাপ কফি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান অনুষদের তথ্য মতে, বর্তমানে তরুণ সমাজের ৩০-৪০ শতাংশ নিয়মিত এনার্জি ড্রিংক পান করছে। অার এ অভ্যাস থেকেই পরবর্তীতে তারা মাদকে আসক্ত হয়ে পরছে।