কী ফন্দি আঁটছে বিএনপি!

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া (মাঝে)

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া (মাঝে)

দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এখন কারান্তরীণ। দেড় বছরের অধিক সময় ধরে তিনি কারাবাস করছেন। দলীয় চেয়ারপার্সনকে মুক্ত করতে বিএনপি নেতাদের সব প্রচেষ্টাই একের পর এক ভেস্তে যাচ্ছে।

না রাজপথ, না আইনি প্রক্রিয়া- কোনোটাতেই সুবিধা করতে পারছেন না বিএনপি নেতারা। এমনকি বিদেশি রাষ্ট্রের কাছেও সরকারের বিরুদ্ধে ‘নালিশ’ করেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য একের পর এক ‘তদবির’ করেছেন; কিন্তু সবখানেই ব্যর্থ তারা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে দলীয় চেয়ারপার্সনের মুক্তির জন্য বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকলেও তাতে সাড়া নেই দলের হাইকমান্ডের। বরং টুকটাক সভা-সমাবেশে নরম-গরম, ধ্বংসাত্মক বক্তৃতা, কাকডাকা ভোরে ঝটিকা মিছিল, গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তি ও বিবৃতিতেই আটকে আছে তাদের কার্যক্রম। গেল ১০ বছরে দলের শীর্ষ নেতারা রাজপথে আন্দোলনের ডাক দিলেও তাদের দেখা মেলেনি রাজপথে।

কারাগার থেকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় খালেদা জিয়া, ছবি: সংগৃহীত

এমনকি খালেদা জিয়ার কারাবরণের পরও বিএনপি নেতারা রাজপথে উত্তাপ ছড়াতে পারেননি। তাই চেয়ারপার্সনকে মুক্ত করার আন্তরিক ইচ্ছা আদৌ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আছে কি না- সে প্রশ্নই এখন রাজনৈতিক মহলে। অনেকের মনেই কৌতূহল- খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে আসলে কী ফন্দি আঁটছে বিএনপি! নাকি আবার সেই ধ্বংসাত্মক রাজনীতির পথেই পা বাড়াবে দলটি!

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে আদালত পাড়ায় হট্টগোল, উত্তেজনা ও নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানি আবেদন আবার পিছিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিকিৎসা প্রতিবেদন আদালতে জমা না হওয়ায় আগামী ১২ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।

খালেদা জিয়ার জামিন না হওয়ার পেছনে যথারীতি সরকারকে দায়ী করেছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে মেডিকেল রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়নি। যা আদালত অবমাননার শামিল।

২০১৪-সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা

এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের জামিন না হওয়ার পেছনে বিএনপির আইনজীবীদের ব্যর্থতাকে বড় করে দেখছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, বিএনপির আইনজীবীরা আইনজীবী হিসেবে আন্দোলন করতে পারেননি। ব্যর্থতার জন্য ওদের বিষ খাওয়া উচিত, চকলেট না। বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করা উচিত!

বড় নেতাদের পাল্টাপাল্টি কথায় কান না দিলেও দলীয় চেয়ারপার্সনের জামিন না হওয়ায় হতাশ বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা চান, রাজপথে কঠোর আন্দোলন। আর সে জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করে নিতেও প্রস্তুত কেউ কেউ। কিন্তু বিএনপির তেমন আন্দোলনের সক্ষমতা কেথায়?

বরং নিজেদের আন্দোলনের ধরন প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমানে বিএনপির আন্দোলন দুই ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। একটি প্রেসক্লাব কেন্দ্রিক আন্দোলন, সংবাদ সম্মেলন এবং আরেকটি বিএনপি কার্যালয় কেন্দ্রিক আন্দোলন।

তার মতে, আন্দোলনে জয়ী হতে আক্রমণাত্মক হওয়ার বিকল্প নেই। সেই আক্রমণাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতির ইঙ্গিত পাওয়া যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাসের কণ্ঠে।

গত সোমবার (২ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মী গ্রেফতার হওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন, তাদের বাবা-মা-ভাই-বোনরাও আছেন। সুতরাং আওয়ামী লীগের সতর্ক হওয়া উচিত। বাংলাদেশের কোটি কোটি বিএনপির সমর্থক এবং জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছে।

রাজধানীর শাহবাগের শিশুপার্ক এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন, ২৮-নভেম্বর-২০১৩

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার জামিন ও পুনরায় নির্বাচনের ইস্যুকে কেন্দ্র করে সারাদেশে একযোগে আন্দোলনের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। তবে সে আন্দোলনের ধরন কী হবে তা নিয়ে বিএনপির নিজেদের মধ্যেই মতবিরোধ আছে। আর সে জন্যই কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি এখনো তারা ঠিক দিতে পারেননি। বরং সময়ের চাহিদা অনুযায়ী কর্মসূচি ঠিক করা হবে বলে জানান তারা।

তবে বিএনপির এক শ্রেণির নেতা আছেন, যারা হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে রাজপথ গরম করতে চান। বিশেষ করে ২৯ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের এক বছর মেয়াদ পূর্তি হতে যাচ্ছে। তাই ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহকে টার্গেট করেই মাঠে নামার পরিকল্পনা নিচ্ছেন তারা।

এ কারণে হামলা, মামলা ও ভঙ্গুর নেতৃত্বে ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যে সহিংস পথে যেতে পারে এমন শঙ্কা বিভিন্ন মহলে। এমন কি লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া সহিংস আন্দোলনকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছেন!

সূত্র জানায়, পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণে দলের শীর্ষ নেতারা বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গেও শলাপরামর্শ করেছেন। তৃণমূল পর্যায়ে, পাড়ায়-মহল্লাতেও গ্রুপে গ্রুপে বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকগুলোতে হুট করে আন্দোলনে নেমে পড়ার মানসিক প্রস্তুতিও নিতে বলা হয়েছে। বিএনপির আন্দোলনের আড়ালে আবার নাশকতা, জ্বালাও-পোড়াও, পেট্রোল বোমা-অগ্নিসন্ত্রাস ফিরে আসার শঙ্কা রয়েছে।

আদালতে বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে পেট্রোল বোমা হামলা, অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে যেভাবে নাশকতা ছড়ানো হয়েছিল, তেমন অপচেষ্টা আবার হতে পারে। ২০১৪ সালের মতো আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টাও হতে পারে।

গত মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিএনপির কর্মীরা হাইকোর্ট মোড়ে অবস্থান নিয়ে এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন। তাই যে কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই অংশ হিসেবে গত কয়েকদিনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।

শেষ পর্যন্ত বিএনপি কী ফন্দি আঁটছে-সেটি দেখতে হলে কিছুটা অপেক্ষা করতেই হবে।

প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়ার নামে থাকা ৩৭টি মামলার মধ্যে ৩৫টি মামলায় তার জামিন হয়ে গেছে। এখন শুধু জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তার জামিন বাকি। এ দু’টি মামলায় জামিন পেলে তার মুক্তি পেতে আর কোনো বাধা থাকবে না। এ দুই মামলায় দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ১৭ বছরের দণ্ড পেয়েছেন তিনি।