তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের দৃপ্ত শপথ
তামাক থেকে দূরে থাকি/ সুস্থ-সবল প্রজন্ম গড়ি- এমন দৃপ্ত শপথে ইউল্যাবে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তামাকবিরোধী যুব সম্মেলন ২০২৪। এতে অংশ নেওয়া দুই শতাধিক তরুণ শিক্ষার্থীরা তামাকের বিরুদ্ধে কাজ করার প্রত্যয় জানায়।
পাশাপাশি তামাকমুক্ত আগামী প্রজন্ম গড়তে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার আহ্বানও ছিল তাদের মুখে।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্ট বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এর প্রাঙ্গণে শনিবার (৯ মার্চ ) বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা নারী মৈত্রী আয়োজিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে ‘ইয়ুথ কনফারেন্স’-এ প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ।
এ সময় চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তরুণ প্রজন্মকে ধূমপান ও তামাক থেকে দূরে থাকার বিকল্প নাই।’
ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘আজকের তরুণরাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার হাতিয়ার। তাই ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ তামাকমুক্ত দেশ গড়তে তরুণদের ভুমিকা অপরিসীম। তাই আজকের তরুণদের অবশ্যই স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে।’
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে জোর দেয়ার তাগিদ দিয়ে এই চিত্রনায়ক বলেন, ‘তরুণদের অংশগ্রহণে তামাক ও ধূমপান বিরোধী প্রচারণাকে আরও বেগবান করতে হবে এবং নিজেদের দক্ষ এবং যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ-এর উপাচার্য ইমরান রহমান বলেন, ‘মূলত তরুণ এবং শিশুদের টার্গেট করে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস উৎপাদন ও বাজারজাত করছে তামাক কোম্পানিগুলো। যেখানে রয়েছে উদ্ভাবনী কৌশল, সুগন্ধি ব্যবহার ও আকর্ষণীয় ডিজাইন। এতে কিশোর এবং তরুণদের মধ্যে বিশেষত বিদ্যালয়গামী শিশুদের মধ্যে এসব তামাকপণ্যের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা তরুণ প্রজন্মের জন্য উদ্বেকজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘হতাশা নিয়েই বলতে হয় দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দুর্বল হওয়ায় ই-সিগারেট বিক্রি নিয়ন্ত্রিত তো হচ্ছেই না বরং ক্ষতিকারক এসব পণ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের হাতে এটি নিয়ন্ত্রণের কোনও নিয়ন্ত্রক যন্ত্র না থাকায় তরুণ-তরুণীরা ভ্যাপ করে নিকোটিনে জড়িয়ে পড়ছে। তাই এসব ক্ষতিকর ই-সিগারেট, আইন করে বন্ধ না করলে এর ভয়াবহতা গ্রাস করে ফেলবে আগামী প্রজন্মকে।’
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস-এর প্রোগ্রামস ম্যানেজার মো. আবদুস সালাম মিয়াহ বলেন, ‘ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং সিগারেট ছাড়ার কোনও উপায় হতে পারে না। বরং এটি নতুন আরেকটি নেশায় আসক্ত হওয়ার প্রাথমিক ধাপ। ই-সিগারেট স্পষ্টভাবেই একটি ড্রাগ যা দেশে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তাই ই-সিগারেট আমদানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অমান্য করে তামাক কোম্পানিগুলো ইউটিউব, ফেসবুক, ওয়েবসাইট ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে ই-সিগারেটের চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে তরুণদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে তামাক কোম্পানিগুলো। এছাড়াও যারা ধূমপান ছাড়তে চায়, তাদেরকে প্রচলিত সিগারেটের বদলে ই-সিগারেট ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। ই-সিগারেটের প্রসার বন্ধে এখনই কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি।’
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিতে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির সম্মানিত উপ-উপাচার্য, সম্মানিত রেজিস্ট্রার স্যার ও লালমাটিয়া গার্লস কলেজের গার্লস গাইডের শিক্ষার্থীসহ নারী মৈত্রীর তৃণমূল পর্যায়ের তরুণ সদস্য, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং গণমাধ্যমকর্মীরা।