ধন্যবাদ তামিম ইকবাল, দ্য রিয়েল এন্টারটেইনার!
ক্রিকেট শুধু মাঠের ২২ গজের খেলা নয়। মাঠের বৃত্তের বাইরেও ক্রিকেট জিততে পারে, জেতাতে পারে-ক্রিকেটীয় সেই জয়গান তামিম ইকবাল গাইলেন; এবং গাইলেন একেবারে গলা ছেড়ে! অভূতপূর্ব সেই ক্রিকেট আনন্দের কোরাসে সুর মেলালেন আরো অনেকে। নামগুলো শুনি, দক্ষিণ আফ্রিকার ফাফ ডু প্লেসি, ভারতের রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম, নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন। আর আমাদের মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মমিনুল হক, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, তাইজুল ইসলাম এমনকি হালে প্রায় আড়ালে চলে যাওয়া নাসির হোসেন পর্যন্ত ২২ গজের চিরচেনা ক্রিকেটের বাইরে এসে অনলাইন আড্ডায় যে ‘ম্যাচ’ খেললেন সেই আনন্দ শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে জয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়!
আইসিসি ট্রফি জয়ের সুখ-আনন্দের নষ্টালজিয়া সরবে আরেকবার জানিয়ে গেল-নকশি কাঁথার মতো ক্রিকেটও আমাদের চিরকালীন গর্ব ও ঐতিহ্যের অংশ।
করোনাকালের এই সময়টায় মাঠে কোনো ক্রিকেট নেই। খেলাধুলা নেই। ব্যক্তিগত টিকটকে আর কাঁহাতক ভালো লাগে। স্থগিত এবং স্থবির ক্রিকেটের এই সময়টায় তামিম ইকবাল ১২ দিন ফেসবুক লাইভে এসে তার প্রিয় ক্রিকেটারদের নিয়ে বাংলাদেশসহ পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে যে ক্রিকেট আনন্দ দিলেন সেই ইনিংসের অন্য নাম-দ্য রিয়েল এন্টারটেইনার!
তামিম ও সঙ্গী-সতীর্থদের এই ক্রিকেট আড্ডা আমাদের উপহার দিল নির্ভেজাল আনন্দ। করোনাকালের এই সময়টায় টিভি খুললেই রোজ শুধু মৃতদেহের সংখ্যা গোনার খবর। চারপাশে দুঃখগাঁথা। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ধাক্কা খাওয়ার এই সময়টায় মানুষকে কিভাবে সামান্য আনন্দ দেওয়া যায়- সেই পরিকল্পনা করতে বসে তামিম ইকবাল তার চিন্তার দিগন্ত প্রসারিত করলেন বৃত্তের বাইরে। ক্রিকেটকে নিয়ে গেলেন তিনি মাঠের বাইরে, মোবাইলের স্ক্রিনে! ফেসবুক লাইভে তার এই পুরোটা সময় জুড়ে আলোচনা-আড্ডায় ক্রিকেট থাকল, কিন্তু ভিন্ন ফরমেটে।
ক্রিকেট আলোচনাও যে এত জমাট উপভোগ্য হতে পারে- তামিমের ইউটিউব চ্যানেল আমাদের তাই জানাল। তামিম শো’র প্রতিটি আড্ডা, খুনসুটি, আনন্দযোগে খোঁচাখুঁচি, ড্রেসিংরুমের বহু না বলা কথা, নির্ভেজাল বন্ধুত্ব, অনেকের অনেক গোপন গল্পের রহস্য ফাঁস, ক্রমশ একটি বড় পরিবার হয়ে উঠা ক্রিকেট দলের এই গল্পে বাংলাদেশ ক্রিকেটের চিরকালীন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার প্রাণোচ্ছল উপস্থিতি, তাকে ঘিরে থাকা অদ্ভুত এক মায়ায় আচ্ছন্ন ক্রিকেট দল-আমাদের আরেকবার জানাল, বাংলাদেশ মাঠের ক্রিকেটে হয়তো অনেক বেশি ম্যাচ জিতেনি কিন্তু মাশরাফির এই সময়ের ক্রিকেট দলটি আনন্দময় জীবন জেতার রসদ ঠিকই পেয়ে গেছে। এই দলের ক্রিকেটাররা জানেন এবং মানেন-একাকী নয়, সবাইকে নিয়েই বাঁচতে হয়। আনন্দ তখনই পূর্ণতা পায় যখন সেই সুখ সার্বজনীনতার পাখা মেলে।
আর তাই মুশফিক-সাকিব তার প্রিয় ব্যাট নিলামে তুলছেন অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। ১৮ বছর ধরে কব্জিতে লেপ্টে থাকা প্রিয় ব্রেসলেটের মায়া ভুলছেন মাশরাফি নিরন্ন মানুষের সুখ ফিরিয়ে দিতে। নাগিন ডান্সের ক্রিকেটার নাজমুল ইসলাম অপু রোজ নিজ হাতে খাবার প্যাকেট বিতরণ করছেন সঞ্চয় ভেঙ্গে। নিরবে দুঃখী মানুষের পাশে এসে কাঁধে হাত রাখছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিক রহিম, রুবেল হোসেন। পাঁচ কেজি চালের প্যাকেট হাতে পাওয়ার পর অসহায় মানুষের চোখে স্বস্তির আনন্দাশ্রু দেখে নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও চোখের কোণ মুছেন; মাঠের বাইরের ক্রিকেটও তাহলে ঠিকই জেতায়- মনকে, মানুষকে, মনুষ্যত্বকে!
করোনাকালের কঠিন এই সময়টায় বৃত্তের বাইরের ক্রিকেট আনন্দের সেই অমূল্য অংশ তামিম ইকবাল আমাদের সবার মাঝেই ছড়িয়ে দিলেন।
ধন্যবাদ ওয়ানডে অধিনায়ক!