মতবিরোধ সত্ত্বেও খারাপ ব্যবহার নয়

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে, ছবি: সংগৃহীত

মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে, ছবি: সংগৃহীত

মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে চলতে ভালোবাসে। তার পরও নানা কারণে মানুষে মানুষে মতবিরোধ হয়। এখন প্রশ্ন হলো, যদি কারও সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে মতের অমিল হয় কিংবা কোনো বিষয়ে মতপার্থক্য থাকে, তাহলে তার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হবে? মতবিরোধ বলে কী তাকে এড়িয়ে চলতে হবে, না তাকে আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করা যাবে?

এ বিষয়ে ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- মতের অমিল কিংবা মতপার্থক্যের ধরণের ওপর এর হুকুম নির্ভরশীল। যদি মতপার্থক্য হয় ধর্মীয় বিষয় নিয়ে, আর বিষয়টি যদি হক বাতিলের প্রসঙ্গ হয়; তাহলে বাতিলকে উম্মাহের কাছে পরিস্কারভাবে বাতিল হিসেবে জানিয়ে দেওয়া উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব। সে হিসেবে ইসলামি শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে কঠোরতার সঙ্গে তা মোকাবিলা করা প্রত্যেক দায়িত্বশীল আলেমদের দায়িত্ব। সেই সঙ্গে সচেতন প্রতিটি মুসলিমেরও এ বিষয়ে সতর্কতা জরুরি।

বিজ্ঞাপন

বাতিলকে কঠোরভাবে বিরোধীতা না করলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারে। তাই কঠোরতার সঙ্গে এর বিরোধীতা করতে হবে। বাতিলের দোষত্রুটিসমূহ জাতির সামনে পেশ করতে হবে।

এর নাম গিবত নয়। উম্মতকে ভ্রান্ত্রি থেকে রক্ষার নিমিত্তে ভ্রান্ত ব্যক্তির আকিদা, ভুল বিশ্বাস, ভুল বক্তব্য, ভুল মনোভাব তুলে ধরা গিবত নয়; গোনাহের কাজও নয়। বরং এটি সওয়াবের কাজ। আর এ কাজ করা আলেমদের দায়িত্ব।

বিজ্ঞাপন

আর সাধারণ মুসলমানদের উচিত গ্রহণযোগ্য মুত্তাকি আলেমদের বক্তব্য অনুপাতে আমল করা।

তবে বিরোধীতা করতে যেয়ে কোনো অবস্থাতেই গালাগাল করা বৈধ নয়। প্রয়োজনে কঠোর শব্দ ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু গালাগাল করা যাবে না।

কিন্তু ধর্মীয় বিষয় ছাড়া দুনিয়াবী কোনো বিষয়ে মতভেদ হলে বেশি কঠোরতা কাম্য নয়। বরং ধৈর্যধারণ করা, আল্লাহতায়ালার কাছে এর বিনিময়ে উত্তম প্রতিদানের জন্য আবেদন করা উচিত। সেই সঙ্গে হেকমতের সঙ্গে ভুলগুলো তুলে ধরে তাকে সতর্ক করা। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো, তখন তারা বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই মতো! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বোঝে না।’ -সূরা বাকারা: ১৩

বর্ণিত আয়াতে মক্কার মুশরিকরা সাহাবাদেরকে বোকা বলে ভর্ৎসনা করেছে, এর বদলে আল্লাহতায়ালাও কঠোরভাষায় তাদের বোকা বলে সম্বোধন করেছেন। যা প্রমাণ করে, ধর্মীয় বিষয়ে ভুল বিশ্বাসে থাকা মানুষদের কঠোর সমালোচনা করা জায়েজ আছে। যা এ আয়াত থেকে পরিস্কারভাবে প্রমাণিত।

বস্তুত আচার-ব্যবহার মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য উপাদান। জগতের সব মানুষ পারস্পরিক সর্বোত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিকার রাখে। ইসলামে সুন্দর ব্যবহারকে অত্যাবশ্যকীয় ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়।

কেননা, আচার-ব্যবহারের মধ্য দিয়েই মনুষ্যত্বের প্রকৃত পরিচয় ফুটে ওঠে। মানুষ ভালো কথাবার্তা ও আচার-ব্যবহার গঠনের মাধ্যমে নিজেকে শোভন, সুন্দর আর পরিশীলিত করে অন্যের প্রীতিভাজন হয়ে উঠতে পারে। সবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকটতম প্রতিবেশী, দূরবর্তী প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে।’ -সূরা আল নিসা: ৩৬

মানুষের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার ও ইসলামি শরিয়াহ পরিপালন পরস্পর সহধর্মী। মানবসমাজে সবাইকে ভদ্রোচিতভাবে অন্যের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে কথায় ও কাজে আত্মসংযমী হতে হয়। মানুষকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, কাউকে কথা দিয়ে প্রতিশ্রুতি না রাখা, অবান্তর প্রশ্ন করা এবং অহেতুক রাগ-অনুরাগ বা হিংসা-বিদ্বেষ করা উচিত নয়।