ইভিএম নিয়ে মাহবুব তালুকদারের নোট অব ডিসেন্টে যা আছে

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নির্বাচন কমিশন ভবন। ছবি: সুমন শেখ

নির্বাচন কমিশন ভবন। ছবি: সুমন শেখ

ঢাকা: পাঁচ সদস্যের কমিশনে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

বৃহস্পতিবার ( ৩০আগস্ট) কমিশন সভায় ‘আরপিও সংশোধন বিষয়ে’ এ লিখিত আপত্তি উপস্থাপন করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সভা শুরুর ১০ মিনিট পর বের হয়ে আসেন মাহবুব তালুকদার। পরে ব্যক্তিগত সচিব মুহাম্মদ এনাম উদ্দিন এক কর্মচারীর মাধ্যমে 'নোট অব ডিসেন্ট' ডেসপাস শাখায় পাঠান।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার লেখেন,  “আমি মনে করি, স্থানীয় নির্বাচনে ধীরে ধীরে ইভিএমের ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ সমর্থন করি না। ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তে ভিন্নমত পোষণ করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রদান করছি।”

গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পর‌্যন্ত অন্তত তিনটি বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিলেন এ নির্বাচন কমিশনার। 

বর্তমান ইসির অধীনে ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।

সর্বশেষ কমিশন সভার (২৬ অগাস্ট) প্রসঙ্গ টেনে ‘নোট অব ডিসেন্টে’ প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে লিখেছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) সংশোধনে ইসি তিন ধরনের প্রস্তাব উপস্থাপন করে। এরমধ্যে প্রথমটি হচ্ছে বাংলা ভাষায় রূপান্তর-যা একজন পরামর্শক তৈরি করে দিয়েছেন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ইংরেজি আরপিওতে সুনির্দিষ্ট কিছু সংশোধন, সংযোজন বা পরিমার্জনে এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনে সময়স্বল্পতার কারণে ইভিএম ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধন।

ইভিএম ব্যবহারের বিরোধীতা জানিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মাহবুব তালুকদার।

তিনি জানান, স্থানীয় নির্বাচনে ইতিমধ্যে ব্যবহার হচ্ছে। এতে রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। সিইসি প্রথম থেকেই বলে এসেছেন রাজনৈতিক দলগুলো সম্মত হলেই কেবল জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।

বিদ্যমান পরিস্থিতি আলোচনার পরামর্শ দিয়ে  এ নির্বাচন কমিশনার জানান, ইসির সঙ্গে দলগুলোর সংলাপে সরকারি ও বিরোধী দলের অবস্থান ছিল পরস্পর বিরোধী।  চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও বেশি আলোচনার প্রয়োজন ছিল।

স্থানীয়ভাবে পরীক্ষামূলক ইভিএম ব্যবহারের শুরুতে বলা হয়েছিল উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, “ এজন্যে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ইভিএম কেনায় আমি ভিন্নমত পোষণ করেছিলাম। সম্প্রতি যে ৩৮২১ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মুখে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার যেখানে অনিশ্চিত, সেখানে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে ইভিএম কেনা কতটা যৌক্তিক, সে প্রশ্ন মনে জাগে।”

পরিকল্পনা কমিশন অদ্যাবধি প্রকল্পটির সম্ভাব্য যাচাই করে নি বলে তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

তিনি জানান, আরপিও তে শুধু ইভিএম ব্যবহারের যে সংশোধনীটি প্রস্তাব করা হয়েছে তা ইতোমধ্যে কমিশন সভায় নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। আমি ধারণা করি, জনমত বা সর্বসম্মত রাজনৈতিক মতের বিরুদ্ধে ইভিএম ব্যবহৃত হলে তা নিয়ে আদালতে অসংখ্য মামলার সূত্রপাত হবে। অন্য কারণ ছাড়া কেবল ইভিএম ব্যবহারের কারণেই সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।  বর্তমান ইসির পক্ষে এ ঝুঁকি নেওয়া সঙ্গত হবে না।

গত বছর ইসি গঠনের সময় যার নাম বিএনপি থেকে প্রস্তাব এসেছিল বলে তখন জানানো হয়েছিল। এরই মধ্যে সর্বশেষ সিটি নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধন নিয়ে অন্যদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার।

এর আগে ইসি কর্মকর্তাদের বদলি নিয়েও আন-অফিসিয়াল (ইউও নোট) দেন তিনি। সেনা মোতায়েন ও গাজীপুরের ভোটে অনিয়ম নিয়েও নিজের মতামত দিয়ে আলোচনায় ছিলেন এ নির্বাচন কমিশনার।

বড় নির্বাচনে অনিয়ম রোধে সিইসির এক বক্তব্য নিয়েও সর্বশেষ আলোচিত হন মাহবুব তালুকদার।