মহাত্মা গান্ধীর শেষ দিনগুলো

  • ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মহাত্মা গান্ধী, ছবি: সংগৃহীত

মহাত্মা গান্ধী, ছবি: সংগৃহীত

২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মদিনে শান্তি, মানবতা ও সত্যের সন্ধানে তাঁর শেষ দিনগুলোর আখ্যান-

১৯৪৭ সাল অবিভক্ত ভারতের শেষ বছর। কে জানতো, বছরটি ভারতের জাতীয় নেতা মহাত্মা গান্ধীর জীবনেরও শেষ অধ্যায়। ১৯৪৭ সালের আগের বছরটিও ছিল রাজনৈতিক উত্তেজনা ও উত্তাপে ভরপুর। ১৬ অগস্ট ১৯৪৬ কলকাতায় যে ভয়াবহ দাঙ্গা শুরু হয়েছিল, তার রেশ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। দাঙ্গা নিবারণে গান্ধী দেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে নোয়াখালিতে পৌঁছেছিলেন ওই বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে।

নোয়াখালীতে তিনি টানা চার মাস ঘাঁটি গেড়ে গ্রামের পর গ্রাম হেঁটে ঘুরেছিলেন শান্তির বাণী নিয়ে। ১৯৪৭ সালে তিনি চলে আসেন কলকাতায়, আগস্টের গোড়ায়। উত্তর কলকাতার উপান্তে সোদপুর আশ্রমে কয়েক দিন থেকে ১৩ আগস্ট বেলেঘাটার হায়দরি মঞ্জিলে ওঠেন। ১ সেপ্টেম্বর অনশন শুরু করেন, অনশন ভঙ্গ করেন ৪ তারিখ।

বিজ্ঞাপন

৭ সেপ্টেম্বর তিনি দিল্লি ফিরে যান। এই ছিল তাঁর শেষ বাংলা তথা কলকাতা সফর।

হায়দরি মঞ্জিলের চমৎকার ইতিহাস আছে। ১৯০০ সালের গোড়ায় ঢাকার নবাব আবদুল গনি বেলেঘাটা অঞ্চলে এই বাগানবাড়িটি কিনেছিলেন। ১৪ কাঠা জমির ৮ কাঠার উপর চার হাজার বর্গফুট জুড়ে বড় ছোট ৭টি ঘর নিয়েই এই ভবন। ১৯৮৪ সালে রাজ্য সরকার হেরিটেজ তালিকাভুক্ত করে অধিগ্রহণের পর বাড়িটির আমূল সংস্কার করা হয়। ১৯৮৫ সালে রাজ্যপাল উমাশঙ্কর দীক্ষিত ও পূর্তমন্ত্রী যতীন চক্রবর্তী বাড়িটির নতুন নামকরণ করেন ‘গান্ধী ভবন’। সিঁড়ি দিয়ে উঠলেই একটি হলঘর, তার দেওয়ালে আঁকা আছে গান্ধীকে নিয়ে ফ্রেস্কো। এর ঠিক পিছনে আরও একটি হলঘর, দেওয়ালে অনশনরত গাঁধীজির বিশাল ফ্রেমবন্দি ছবি। ডান দিকের কোণের শেষ ঘরটিতেই ‘বাপু’ অনশনে রত ছিলেন। বর্তমানে সম্পূর্ণ কাচ দিয়ে ঢাকা ওই স্থানটিতে তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র রক্ষিত আছে। ২০০৭-এ এই বাড়িতেই একটি সংগ্রহালয়ও তৈরি হয়েছে। হয়েছে রাস্তার ওপর একটি স্থায়ী তোরণ।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Oct/02/1538464064329.jpg

কলকাতার পাশাপাশি বাংলার আরেক প্রান্তের নোয়াখালীতে গান্ধীর স্মৃতিও কম ঘটনাবহুল নয়। ১৮ ডিসেম্বর ১৯৪৬, দাঙ্গাবিধ্বস্ত নোয়াখালির শ্রীরামপুর। গুহবাড়ির ধ্বংসস্তূপ দেখে তিনি বিচলিত হলেন, প্রার্থনাসভায় স্বীকার করলেন দাঙ্গার বীভৎসতায় তিনি ক্রুদ্ধ, রাতে ঘুম হচ্ছে না, স্থিতপ্রজ্ঞের সাধনায় ব্যাঘাত ঘটছে। তিনি বিশ্বাস করতেন, সবার সম অধিকার থাকা উচিত, তবুও মানুষের নিঃসীম শঙ্কা কেন? প্রতিশোধী বীভৎস দাঙ্গার খবর ও ভারত ভাগ হতে চলেছে জেনে তিনি ক্ষুব্ধ। তখন তিনি একটি কথাই বার বার বলছিলেন তিনি, ‘কেয়া করুঁ?’

তারপরের ঘটনা সবারই জানা। ততদিনে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে ভারতের রাজনৈতিক জীবনে। গান্ধী জীবনের শেষদৃশ্য তখন চলছে রাজধানী দিল্লিতে। ৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮। সকালে উঠেই গাঁধী সব জরুরি চিঠির উত্তর দেওয়া তাড়াতাড়ি শেষ করলেন, কেন যেন মনে হচ্ছে যে আগামী কাল আর দেখতে পাবেন না। বিকেল পাঁচটায় তিনি প্রার্থনাসভায় যোগ দেওয়ার সময় তিনটে বুলেটে বিদ্ধ হলেন, শেষ স্বর শোনা গেল ‘হা রাম’। ইষ্ট নাম, সত্য নাম। তিনি জানতেন যে সত্যকে বোঝা ও বোঝানোর দায় তাঁর, মননচর্চা ও কর্মে নিজস্ব সত্যবোধকে অনুবাদ করার মূল্য তাঁকে দিতেই হবে। তিনি যেন প্রস্তুত ছিলেন সত্যবোধের জন্য জীবনকে উৎসর্গ করার জন্য। গান্ধী জীবনের শেষ দিনগুলো ছিল মানবতা, শান্তি ও সত্যের অন্বেষণে দীপ্ত।