বিশ্ব দর্শন দিবস: মানবিক বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় দর্শন



বেল্লাল আহমেদ ভূঞা (অনিক)
বিশ্ব দর্শন দিবস, ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব দর্শন দিবস, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অজানাকে জানা ও দুর্জ্ঞেয় রহস্য উদঘাটন করা মানব মনের অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য। কৌতুহলী মনের জ্ঞান অন্বেষণ, সত্য ও সঠিক জ্ঞান লাভ এবং মৌলিক, ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা থেকেই ফিলোসফি’র উৎপত্তি। ‘ফিলোসফি’ (Philosophy) শব্দের উদ্ভব হয়েছে দুটো গ্রিক শব্দ-Philos (মানে ভালোবাসা) এবং Sophia (মানে জ্ঞান) হতে। সুতরাং ফিলোসফি (Philosophy) শব্দের অর্থ হলো Love of wisdom অর্থাৎ জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা। ‘ফিলোসফি’(Philosophy)র বাংলা প্রতিশব্দ হলো দর্শন, যদিও এর আরও সুন্দর প্রতিশব্দ জ্ঞানানুরাগ, জ্ঞানপ্রীতি, প্রজ্ঞাপ্রীতি প্রভৃতি রয়েছে।

তবে প্রাচীনকাল থেকে একাডেমিকভাবে ‘ফিলোসফি’বিষয়টি বাংলায় দর্শন বা দর্শনশাস্ত্র নামেই পরিচিত লাভ করেছে। মূলত জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা থেকে গড়ে ওঠা জ্ঞানচর্চার ধারাবাহিকতায় প্রাচীন যুগে খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে সূচনা হয় দর্শন শাস্ত্রের এবং গড়ে ওঠে দর্শনের ইতিহাস।

পিথাগোরাসের মতে, জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ, তথা সত্যানুসন্ধানের প্রতি অবিচল নিষ্ঠাই ফিলোসফির মূল লক্ষ্য। দর্শন সত্য, ন্যায় ও সুন্দরের চর্চার মাধ্যমে; মুক্তবুদ্ধি ও নৈতিক চেতনাকে জাগ্রত করে বিশ্বকে পথ দেখায়, অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যায়। R.J. Hirst এর মতে- “Philosophy is a rational investigation into certain fundamental problem about the nature of man and the world he lives in”। ফিলোসফি জ্ঞান ও সত্যের অনুসন্ধানের মাধ্যমে জগত ও জীবনের মৌলিক এবং ব্যবহারিক সমস্যাবলির যৌক্তিক সমাধান করে।

ফিলোসফার বা দার্শনিক মাত্রই জ্ঞানানুরাগী, আপোসহীন চিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির অধিকারী। জ্ঞান, সত্য ও আলোর দিশারী হবেন দার্শনিক। বৃহৎ অর্থে ফিলোসফার বা দার্শনিক বলতে আমরা শুধু একটি বিশেষ বিদ্যায় সনাতন গতানুগতিক জ্ঞানে অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে বোঝাই না। বর্তমানকালে অভিজ্ঞ সমাজবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, প্রকৌশলী, আইনবিদ, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ, পরিবেশবিদ, জীব বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী এবং ধর্ম বিশেষজ্ঞসহ সকল প্রকার বিজ্ঞ ও পন্ডিতব্যক্তিদের দার্শনিক হিসেবে গণ্য ও আখ্যায়িত করা হয়। কারণ, তাদের সম্মিলিত মেধা, মনন, বুদ্ধি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ব্যতিত জীবন, সমাজ ও প্রকৃতিকে সামগ্রিকভাবে জানা সম্ভব হয় না।

দার্শনিকদের পরিচয় সম্পর্কে প্লেটো তাঁর রিপাবলিক গ্রন্থে বলেছেন: ““He who has a taste for every sort of knowledge and is curious to learn and is never satisfied may be justly termed as Philosopher।” দার্শনিক সমাজের কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের পরিবর্তে স্বাধীন চিন্তা ও যুক্তির আলোকে জগত ও জীবনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। রাষ্ট্র বা সমাজের এমন কোনো দিক নেই যেখানে দার্শনিকদের অবদান নেই। দার্শনিকরা ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চায় আপোষহীন। দার্শনিকরা যুগে যুগে কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত না করে, সকল বাঁধা অতিক্রম করে জ্ঞান চর্চা করেছেন, সত্য-সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করে অগ্রসর হয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাবার পরও গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস তার নীতি, সত্যবস্তু থেকে বিন্দুমাত্র সরে দাঁড়াননি। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে মৃত্যুঞ্জয়ী বীরের মতো সক্রেটিস বলেছিলেন: ““I to die and you to live. Which is better God only knows”।

মানুষ মাত্রই একটি দর্শন নিয়ে তার জীবন পরিচালিত করে। সে দর্শন তার জীবনের আশা-আকাঙ্খা এবং জীবনধারার একটি রূপরেখা তার নিজের অজান্তেই তৈরি করে। দর্শনবিহীন জীবন কল্পনা করা যায় না কেননা মানবীকরণে, মানবিক মূল্যবোধ অর্জনে, বিকাশ ও সংরক্ষণে দর্শন চিরদিন দিয়ে এসেছে যুগযুগান্তকারী দিকনির্দেশনা। সঠিক ও ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে বিবেচনা করলে দেখা যায় বিচার ও বিশ্লেষণমূলক, যুক্তিধর্মী ও বুদ্ধিবাদী এবং ব্যবহারিক ও জীবনভিত্তিক পর্যালোচনাই দর্শন।

ফিলোসফি বা দর্শনের আলোচ্য বিষয় বহু এবং এর পরিধি ব্যাপক। মূলত মানুষের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার কোনো দিক এবং তত্ত্বালোচনার কোনো অংশই দর্শনের আলোচনার বর্হিভূত নয়। দর্শনের পরিধি ব্যাপক- জগত, জীবন, মানুষ এবং মৌলিক সমস্যা সবই দর্শনের আলোচ্য বিষয়। এক সময়ে বিস্ময় ও কৌতূহল থেকে দার্শনিক চিন্তাভাবনা শুরু হলেও তা ক্রমশ জীবন ভিত্তিক ব্যবহারিক বিষয়াবলীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে থাকে। তাই ফিলোসফি ইতিহাস, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র, সমাজ বিজ্ঞান, রাষ্ট্রনীতি, সমরনীতি এমনকি পরিবেশ ও ব্যবসার মতো বাস্তব ও জীবনমুখী বিদ্যা ও শাস্ত্রসমূহের প্রতি মনোনিবেশ করছে জীবনকে সুন্দর ও অর্থবহ করে তোলা জন্য।

তবে আলোচ্য বিষয় যাই হোক না কেন, সে আলোচনা অবশ্যই যৌক্তিক, বুদ্ধিগ্রাহ্য, বস্তুনিষ্ঠ ও সুসংবদ্ধ হতে হবে।

দর্শনকে জীবন-বিচ্ছিন্ন ও অপ্রয়োজনীয় বলে অনেকে অবমূল্যায়ন করেন। বস্তুত ফিলোসফির এমন অবমূল্যায়নের মূলে একটা বড় কারণ হলো এ বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভাবে মানুষের চিন্তা-চেতনা ও মূল্যবোধের লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেছে। আমাদের মানসিকতা বর্তমানে অনেকাংশে ব্যবসায়িক এবং নগদ ব্যবহারিক মূল্য ও সাফল্য দ্বারা প্রভাবিত। ফলে সাহিত্য, দর্শন, নীতিবিদ্যা, ধর্ম ও অধিবিদ্যা কম আকর্ষণীয়। স্যাটেলাইট, স্মার্টফোন ও ফেইসবুক বিশ্বায়নের এ যুগে কতকিছু আছে তবুও যেন শান্তি নেই কোথাও। কারণ অর্থনৈতিক প্রগতিই মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশের একমাত্র পথ নয়। হিংসা-বিদ্ধেষ, ক্রোধ, প্রতিযোগিতা, সংঘাত, সন্ত্রাস মানুষকে জীবনবিমুখ করে ফেলেছে। সামাজিক মানবিক মূল্যবোধগুলো হারিয়ে সমাজিক অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে চরম হারে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের পরিচর্চা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের জীবনের মূলভিত্তি হলেও তা আমাদের জীবনকে কখনো পূর্ণতা দিতে পারবে না। এ পূর্ণতার জন্য একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পথপ্রদর্শক হবে ফিলোসফি বা দর্শন।

বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘সফল মানুষ হওয়ার চেয়ে সৎ ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হওয়া অধিকতর জরুরি।’ দর্শন তার যুক্তি, বুদ্ধি, বিবেক, ন্যায়বোধ, নীতি- নৈতিকতা দিয়ে সমাজ থেকে অন্যায়, অবিচার, শোষণ প্রতিহত করে উদারতা, ভ্রাতৃত্ব, বন্ধন ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করবে। জ্ঞান, সত্য ও আলোর দিশারী হবেন দার্শনিক। দর্শন হবে অগ্রগতি ও মঙ্গলের নিয়ামক।

দর্শনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মানবকল্যাণ, আর এই মানব কল্যাণের জন্য প্রয়োজন যথার্থ দার্শনিক চিন্তাধারা। বর্তমান বিশ্ব দারুনভাবে নৈতিক সংকটে জর্জরিত। বিশ্বে তাই শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, উদারতা, স্বাধীনতা, পরিবেশ, ব্যবসা, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি সবকিছুর সাথে দর্শন ও নৈতিকতাকে যুক্ত করতে হবে। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে বিশ্বের সামগ্রিক কল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ফিলোসফি হতে পারে কান্ডারিস্বরূপ। দর্শনের যৌক্তিক চিন্তা, ন্যায়পরতা ও সুনীতির বাণী পেীঁছে দিতে হবে সমাজের প্রতিটি স্তরে।

২০০২ সালে ইউনেস্কো সর্বপ্রথম দর্শন দিবসের ঘোষণা দেয় এবং ২০০৫ সালে ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে প্রতি বছর নভেম্বর মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব দর্শন দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নভেম্বর মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১৫ নভেম্বর ‘ বিশ্ব দর্শন দিবস ২০১৮’ পালিত হতে যাচ্ছে। ইউনেস্কোর-র জেনারেল কনফারেন্সের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে- “Philosophy is a discipline that encourages critical and independent thought and is capable of working towards a better understanding of the world and promoting tolerance and peace”। মানবজাতির সামগ্রিক শুভ কামনায় ও দর্শন চর্চার সুফলকে মানবজাতির কল্যাণে প্রয়োগ করার লক্ষ্যে ইউনেস্কোর অনেক কল্যাণকামী পদক্ষেপের একটি হলো বিশ্ব দর্শন দিবস ঘোষণা।

অস্থিতিশীল বিশ্বে বিরাজমান সংকট নিরসনে, দর্শনের প্রায়োগিক ও মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত ও সুপ্রতিষ্ঠিত করা এই দিবস পালনের প্রধান উদ্দেশ্য। বিশ্ব দর্শন দিবস পালনের মধ্য দিয়ে আমাদের শপথ নিতে হবে- বিচারমূলক যৌক্তিক চিন্তা, দূরদৃষ্টি, নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে একটি সত্য-সুন্দর-মঙ্গলময় মানবিক বিশ্ব গড়বো। জয় হোক দর্শনের, জয় হোক মানবতার।

বেল্লাল আহমেদ ভূঞা (অনিক): লেকচারার, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;