আগ্রাবাদের আহাদ স্যার

  • ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শফিকুল আহাদ

শফিকুল আহাদ

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক হৃৎপিণ্ড আগ্রাবাদ এলাকার শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সমাজ উন্নয়নের কাজে সমগ্র কর্মজীবন ব্যয় করছেন তিনি। আগ্রাবাদের আহাদ স্যার নামে চট্টগ্রামের সর্বমহলে পরিচিত মানুষটি সদ্য অবসরেও চির তরুণ এবং প্রাণবন্ত।

একজন চিরায়ত শিক্ষকের আর্দশ উপমা হিসাবে তাকে গণ্য করা হয়। শফিকুল আহাদ নামের বরেণ্য শিক্ষক চার দশকের আনুষ্ঠানিক পেশার সমাপ্তি টানলেন নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে। কিন্তু তিনি মনে করেন, 'প্রকৃত মানুষের জীবনে অবসর বলে কিছু থাকতে পারে না। কাজই হলো মানুষের জীবন্ত সত্ত্বার পরিচায়ক।  '

বিজ্ঞাপন

সহাস্যমুখে বললেন, 'আমি তৃপ্ত। কারণ আমি বিদ্যাকে ব্যবসায় রূপান্তর করি নি। একদিনের জন্যেও প্রাইভেট পড়াই নি। প্রয়োজনে বিশেষ ক্লাস নিয়েছি। আমার শিক্ষার্থীরা জীবনে সফল হয়েছে, এটাই আমার সাফল্য।

তার আদি বাড়ি ফেনী জেলায়। শৈশব কেটেছে পিতার কর্মস্থল চাঁপাই নবাবগঞ্জে। তারপরের পুরো জীবন চট্টগ্রামে। কর্মজীবনও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ে।

বিজ্ঞাপন

স্কুল আর শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ছিল তার ধ্যান ও জ্ঞান।  স্কুলের নানামুখী অগ্রগতির নেপথ্যে লিপিবদ্ধ রয়েছে তার নাম। শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননের বিকাশে ছিলেন নিবেদিত। বিতর্ক, বইপড়া, স্কাউটিং, অঙ্কন,  সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মেতে ছিলেন জীবনভর। স্কুলের টিম নিয়ে ছুটে গেছেন রেডিও, টিভি এবং দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।

নিজেও নানা অনুষ্ঠানে মগ্ন ছিলেন। শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের একজন নিয়মিত বক্তা তিনি। স্কুলের বাইরে সমাজ কল্যাণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে এখনো কাজ করে চলেছেন নিরলসভাবে।

কয়েক বছর আগে তার সঙ্গে আমার পরিচয় ভূপৃষ্ঠ থেকে আটাশ হাজার ফুট উচ্চতায় উড্ডয়নরত একটি উড়োজাহাজে। সেই ভ্রমণে এবং পরে অন্যান্য সময়ে তার সঙ্গে কথা বলে ও মিশে দেখেছি একজন পরিশ্রমী, স্বচ্ছ ও আদর্শিক শিক্ষককে। মানুষের কল্যাণচিন্তার একটি সহজাত প্রবণতা রয়েছে তার মধ্যে। জীবনে বৈষয়িক সাফল্য পান নি বলে কোনও ক্ষোভ নেই তার। তার শিক্ষার্থীরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়াতেই তিনি আনন্দিত।

অবসরের জীবনটুকুকেও পড়াশোনা করে এবং সমাজ ও মানুষের কল্যাণে কাটাতে চান তিনি। বিভিন্ন কুসংস্কার ও পশ্চাৎপদতার বিরুদ্ধে সচেতন করতে চান তরুণদের। আলোকিত মানুষ গড়ার জীবনব্যাপী প্রচেষ্টাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে চান চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের আহাদ স্যার।