হলুদ বরণ সরিষা ফুলে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

  • এসএম শহীদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সরিষা ফুল, ছবি: সংগৃহীত

সরিষা ফুল, ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার মাঠে মাঠে হলুদ বরণ সরিষা ফুলে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। আদিগন্ত মাঠ জুড়ে চির সবুজের বুকে কাচা হলুদের প্রলেপ। এ যেন প্রকৃতির ক্যানভাসে অপরূপ রূপে আঁকা হলুদের আলপনায় চোখ জুড়ানো দৃশ্য। ফুলে ফুলে ভরে গেছে ক্ষেত। ফুলের সৌরভে মেতেছে অলি। হাসি ফুটেছে চাষির মুখে।

ভাল ফলনের আশায় দিন কাটছে তার। সরিষা ফুলের মধু আহরণে নেমেছেন অনেকেই। অনেকেই সরিষা ক্ষেতে স্থাপন করেছেন মৌবাক্স। এতে পরাগায়ন ভাল হয়, ফলনও বৃদ্ধি পায়। বাড়তি মধু পাওয়া যায়। বাজারে সরিষা ফুলের মধুর চাহিদাও রয়েছে। তাই কৃষক কোমর বেঁধে নেমেছেন সরিষা চাষে।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Dec/14/1544760527940.jpg

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এমন তথ্য দিয়ে জানায়, সাতক্ষীরায় চলতি মৌসুমে সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গত মৌসুম থেকে বেড়েছে ১ হাজার ২৯৩ টন। এবার জেলায় এ তেলবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৭৯৩ টন, যা গত মৌসুমে ছিল ১০ হাজার ৫০০ টন।

বিজ্ঞাপন

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৮৯৮ দশমিক ২৯ টন, কলারোয়ায় ৪ হাজার ৬০৫ দশমিক ৩, তালায় ৯১৫ দশমিক ৯, দেবহাটায় ১ হাজার ৫৪২, কালীগঞ্জে ৪৬৪ দশমিক ৪, আশাশুনিতে ২৯৬ দশমিক ৭ ও শ্যামনগরে ৭৭ দশমিক ৪ টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এদিকে সাত উপজেলায় আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ১৪২ হেক্টরে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৩ হাজার ২২, কলারোয়ায় ৩ হাজার ৫৭০, তালায় ৭১০, দেবহাটায় ১ হাজার ২০০, কালীগঞ্জে ৩৬০, আশাশুনিতে ২৩০ ও শ্যামনগরে ৬০ হেক্টরে এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, সাতক্ষীরায় মোট এক লাখ ৮০ হাজার ৫৪০ কৃষক সরিষা আবাদ করছেন। আবাদকৃত জাতের মধ্যে রয়েছে বারি-৯, ১৪, ১৫ ও ৪, টরি-৭ ও স্থানীয় জাত। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে বারি-১৪ ও ১৫ জাতের সরিষা।

সদর উপজেলার ফিংড়ী এলাকার কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি ১০ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছেন। স্থানীয় জাতের চেয়ে এ জাতের সরিষার উৎপাদন বেশি হয়। স্থানীয় জাতের সরিষায় বিঘাপ্রতি ফলন হয় সাড়ে চার থেকে পাঁচ মণ। সেখানে বারি-১৪ ও ১৫ জাতে ফলন পাওয়া যায় সাত থেকে আট মণ।

গত মৌসুমে এ কৃষক ৫ বিঘা জমি থেকে প্রায় ৪০ মণ সরিষা পেয়েছিলেন তাই এবার আরও ৫ বিঘা জমিতে আবাদ বৃদ্ধি করেছেন। প্রতি বিঘায় সরিষা উৎপাদনে তার খরচ হয় ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা।

জেলার কলারোয়া উপজেলার মৌচাষি আলফাজ উদ্দিন জানান, সরিষা ক্ষেতে কৃত্রিমভাবে মৌমাছির সমাগম ঘটিয়ে তিনি মধু আহরণ করেন। এতে সরিষা ক্ষেতে ফুলের পরাগায়ন বেশি হওয়ায় ফলনও বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি মধুও পাওয়া যায়। সরিষা ফুলের মধুর চাহিদাও বেশি। দামও বেশি। এক কেজি সরিষা ফুলের মধুর বাজার দর প্রায় ৮০০ টাকা। প্রতি মৌসুমে তিনি ৫/৬ মণ মধু আহরণ করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন বলে জানান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অরবিন্দ বিশ্বাস জানান, সাতক্ষীরার সব উপজেলায় সরিষা আবাদ হয়। এ ফসলের আবাদ বেশ লাভজনক। তাই দিন দিন এ অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে সরিষা আবাদে আগ্রহ বাড়ছে।

তিনি আরও জানান, সরিষার সঙ্গে মৌমাছির চাষ করে মধু সংগ্রহ করেও বাড়তি আয় করছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।