'বাপ দাদার পেশা তাই ধরে আছি'

  • সিদ্দিকুর রহমান,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল, বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

নানা প্রতিকূলতা ও কালের ব্যবধানে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে জনপ্রিয় শিল্পকর্ম মৃৎশিল্প। বদলে যাচ্ছে ওই সকল মৃৎশিল্পীদের পেশা। এক সময় মাটির তৈরি জিনিস পত্রাদি ছিল বাঙালিয়ানদের একমাত্র ঐতিহ্য। বিজ্ঞানের প্রসার ও আধুনিক কলকারখানা মৃৎশিল্পীদের জীবনযাপনের প্রক্রিয়াকে যেন স্থবির করে দিয়েছে। অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈরি আকর্ষণীয় জিনিস পত্রের কারণে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা প্রায় ৯৮ ভাগই কমে গেছে। 

তাছাড়া দেশে গ্রামীণ জীবন যাত্রায় মাটির তৈরি জিনিস পত্রাদি দেখা গেলেও শহরে সমাজে তেমনটা দেখা যায় না। খাদ্য আর জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ যখন ব্যস্ত হয়ে উঠে তখন তার ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হয় না।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/02/1546418076763.jpg

তবে ঠিক উল্টো চিত্র দক্ষিণাঞ্চলের মৃৎশিল্পীদের ক্ষেত্রে। পূর্ব পুরুষদের কর্মের চিহ্ন ধরে রাখতে আজও সদা ব্যস্ত তারা। বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের মহেশপুর রামনগর, ডালমায়া গ্রামগুলো ঘুরে এই চিত্রই ফুটে উঠেছে। তার পরেও বেঁচে থাকার সংগ্রামের এই সব মৃৎশিল্পীরা বর্তমানে পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ কেউ কষ্ট করে কিছু অর্থ জমিয়ে বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/02/1546418129916.jpg

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পূর্বে ৩৬০টি পরিবার এই মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত থাকলেও বর্তমানে তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ২শ পরিবারে। আবার যে পরিবারগুলো বর্তমানে এই পূর্বপুরুষদের কর্মটি ধরে রেখেছে তাদেরও দিন আনতে পান্তা ফুরায়। সংসারে ৫ বছর বয়সী সন্তান থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধ দাদি পর্যন্ত সারাদিন এ কাজে নিয়োজিত থাকেন। কারণ তাদের একমাত্র আয়ের উৎস এই মৃৎশিল্পী।

রামনগর গ্রামের বয়স্ক পাল সখানত পাল (৭৫) বার্তা ২৪কে জানান, দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে এই পেশার সাথে জড়িত আছি। আগে বাপ- দাদারা করতো। কিন্তু বর্তমানে অর্থ সংকট আর কাঁচামালের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/02/1546418260840.jpg

মহেশপুর গ্রামের উষা রানী পাল (৮৯) বার্তা ২৪কে জানান জানান, কতদিন আর টেনে টুনে চলা যায়। ছোট কাল থেকে এই কাজ করে আসছি। প্রথমে ছিলাম বাবার ঘরে, পরবর্তীতে স্বামীর ঘরে এসে এই কাজ করতে হচ্ছে। আর এটাই তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনের পথ। যার ফলে ছেলে-বৌ, নাতি-নাতনিরাও এই কাজে সহায়তা করছে।

এদিকে, বাকেরগঞ্জ উপজেলায় নিয়ামতি ইউনিয়নের মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত স্বশিক্ষিত যুবক দীপক চন্দ্র পাল বার্তা ২৪কে জানান, প্লাস্টিক ও এ্যালুনিয়ামের জিনিসপত্র বাজারে আসায় মাটির তৈরি আসবাবপত্র তেমন একটা চলে না। মাটি সংগ্রহ, জ্বালানী দ্রব্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ও বিক্রয়ের সাথে মিল না থাকায় প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে ঋণের বোঝা।

তিনি আরও জানান, অনেক মৃৎশিল্পী মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নেওয়ার ফলে মাটির জিনিসপত্র কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। শুধু এই মহেশপুর, রামনগর, ডালমায়াই নয় বাকেরগঞ্জের কলসকাঠি গ্রামে এ পালদের বিস্তৃত রয়েছে। কিন্তু তাদেরও একই অবস্থা বিদ্যমান। তাই ২০০ বছরের পুরনো এই অঞ্চলের মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য উপর মহলের কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানান।

তবে বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে সহায়তা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

জানা গেছে, প্রতি হাজার মাটির তৈরি মালশা বিক্রি করছে সাড়ে ৮ হাজার টাকা, কয়েল বক্স পিচ প্রতি ১৬-১৮ টাকা, সড়া প্রতিপিচ সোয়া ৩ টাকা দরে এবং ফুলে টব ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও মাটির ব্যাংক, জলবিড়া, ঝুড়ি সড়া, টালি, পটারী, ছোট কলসি, ঘট,পাজল তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়াও বর্তমানে আয় বৃদ্ধির জন্য তৈরি করা হচ্ছে মাটির টাইলস। যা ঘরের দেয়ালে ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছেন মৃৎশিল্পের কারিগররা।

এদিকে এই গ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাটির তৈরি জিনিসপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। যার মধ্যে পিরোজপুর, ঢাকা, চাঁদপুর ও কুমিল্লা উল্লেখযোগ্য।