মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শ্যালো ইঞ্জিনের গাড়ি
কুষ্টিয়ার সড়ক-মহাসড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত গাড়ি। সারাদেশের মধ্যে কুষ্টিয়াতেই এসব গাড়ি তৈরি হয়ে থাকে। শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে বিশেষ উপায়ে তৈরি এসব গাড়ি মূলত মালামাল বা পণ্য আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহার করার কথা থাকলেও প্রতিনিয়তই মানুষের ব্যবহার উপযোগী হওয়ায় বাড়ছে দুর্ঘটনা।
শ্যালো ইঞ্জিন চালিত এসব অবৈধ যানের নাম কখনো নসিমন, করিমন, আগলামন ও আলমসাধু আবার ভটভটি বলেও অভিহিত হয়ে থাকে।
এসব অবৈধ যানবাহনগুলোর বেপরোয়া চলাচলের কারণে কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনাও অনেক বেশি। এসব অবৈধ যান চালকদের নেই কোনও প্রশিক্ষণ, নেই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা। হরহামেশা ঘটা এসব দুর্ঘটনার পেছনে এ বিষয়গুলো দায়ী বলেই মনে করা হচ্ছে।
গ্রামাঞ্চলের সড়কে যানগুলোর চলাচলের কথা থাকলেও এসব চলে আসছে সড়ক-মহাসড়কে।
যদিও বা মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। এরপরও নসিমন, করিমন, আলমসাধুসহ অবৈধ যানবাহনের চালকরা তা মানছেন না।
গতবছর দুর্ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই এসব অবৈধ যানবাহনের দুর্ঘটনার নিহত হন।
সোহানুর রহমান নামের শিক্ষক বলেন, কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে বাস-ট্রাকের সাথে পাল্লা দিয়ে এসব অবৈধ যান চলাচল করছে। দ্রুতগতিতে যাওয়া এসব যানবাহন মাঝে মাঝেই সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ভাদালিয়া ও স্বস্তিপুর এলাকায় নসিমন ও করিমন তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। ভাদালিয়া বাজার এলাকায় নসিমন ও করিমন তৈরির কারখানার সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। এসব কারখানা থেকে প্রতিদিন প্রায় শ’খানেক যানবাহন বিক্রি হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান। দেশের প্রায় ৬০টি জেলা থেকে লোকজন এসে এসব যান কেনেন। স্থানীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী মহাসড়কসহ ছয়টি উপজেলার পাকা ও কাঁচা রাস্তায় ১৫ হাজারেরও বেশি নসিমন ও করিমন চলাচল করছে।
মহাসড়কে এসব যানের মালিক ও চালকদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে পুলিশ ও বিভিন্ন সংগঠনের বিরুদ্ধে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে কুষ্টিয়ার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) ইমরান হোসেন বার্তা২৪কে বলেন, এসব শ্যালো ইঞ্জিন চালিত যানবাহন শহরের মধ্যে প্রবেশ করলেই তাদের আটক করে পুলিশ। পরে তাদের ব্যাংক চালানের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর বাইরে আমরা কোনও অতিরিক্ত টাকা নেই না।
স্থানীয় গ্রামবাংলা কৃষি অটোভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বার্তা২৪কে বলেন, নসিমন চালকরা কোনও টাকা-পয়সা দেয় কিনা আমার জানা নেই। তবে আমরা কোনও টাকা-পয়সা কাউকে দেই না।
বিআরটিএ কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিদর্শক ওমর ফারুক বার্তা২৪কে বলেন, শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নসিমন, করিমন, আগলামন ও ভটভটি তো অবৈধ যানবাহন। এসব যানের চালকের কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, রেজিস্ট্রেশন নম্বর না থাকায় দুর্ঘটনার পর তাদের আর পাওয়া যায় না।
এসব বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাত বার্তা২৪কে বলেন, আমরা হাইওয়ে থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধ যানবাহন আটক করছি। সড়কে যেন আর এই অবৈধ নসিমন, করিমন, আগলামন চলাচল করতে না পারে তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালের দিকে প্রথমে কুষ্টিয়ায় শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি এসব যান রাস্তায় নামে। কুষ্টিয়ার ভাদালিয়া বাজারে একটি নসিমন তৈরির কারখানা গড়ে তোলেন আব্দুর রশিদ নামে একজন বাইসাইকেল নির্মাতা। এরপর ভালো বাজার পেয়ে যায় তার তৈরি এই যন্ত্রযান। দিনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গাড়ির চাহিদাও বাড়তে থাকে। বর্তমানে শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের আদলে নতুন এক ধরনের যান তৈরি হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় গ্যারেজে তৈরি হচ্ছে ইঞ্জিনচালিত ট্রাক। বাজার থেকে লোহালক্কড় কিনে তৈরি করা হচ্ছে চেসিস। তার ওপর শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে বডি তৈরি করে রাস্তায় নামানো হচ্ছে।