মাছ বিক্রিতে ১৫ ধাপে চাঁদাবাজি, দিশেহারা ব্যবসায়ীরা!
বাংলাদেশের দ্বিতীয় মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন বরগুনার পাথরঘাটার বিএফডিসিতে ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের বিরুদ্ধে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ১৫ টি ধাপে চাঁদা দিতে দিতে অনেকেই হয়েছেন দেউলিয়া। আর যারা চাঁদা দিতে রাজি হননি তারা নির্যাতনের শ্বিকার হয়ে ছেড়েছেন বিএফডিসি। এমপিদের ছত্রছায়ায় এ চাঁদাবাজি করছে শ্রমিক ইউনিয়ন। এ কারণে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনে মাছ বিক্রি করছে না জেলেরা, ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের নুর আলম নামে এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে জানান, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছের পাইকারি ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ব্যবসার শুরুতেই ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ৮ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ইউনিয়নের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় বিএফডিসিতে তার ব্যবসা বন্ধ করে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। নুর আলম ঢাকায় মাছের পাইকারি ব্যবসা শুরু করলে ক্ষিপ্ত হয় সোহেল। নুর আলমের ভাগ্নি জেএসসি পরিক্ষা দিতে যাওয়ার সময় তাকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে যায় সোহেল ও তার সহযোগীরা। পরে তাকে সোহেল ও তার সহযোগীরা দুই দিন আটকে রেখে গণধর্ষণ করে।
শুধু নুর আলম নয়, চাঁদা না দেওয়ায় নির্যাতিত হয়েছে মৎস্য ব্যবসায়ী সেলিম, বাদশা, আলম ফিটার, ছগির মাঝিসহ আরও অনেকে। তাদের দাবি, তারা বিএফডিসিতে ব্যবসা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাসানুর রিমনের ছত্র ছায়ায় থাকা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল তাদের কাছে ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তারা চাঁদার টাকা না দেওয়ায় তাদেরকে মারধর করেছে একাধিকবার। শেষ পর্যন্ত তারা দিশেহারা হয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।
তারা আরও অভিযোগ করে জানান, ব্যবসায়ী সেলিমকে মারধরের পর তার স্ত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সোহেল বাহিনী। সংসদ সদস্যের কারণে এমন অত্যাচারের প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারেনি কেউ।
মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্রলার ঘাটে ভিড়লে ১০০ টাকা ও দুটি করে ইলিশ যার প্রত্যেকটি ইলিশের মূল্য ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। এছাড়া এক মণ ইলিশ বিক্রি করলে ৪০০ টাকা, অন্যান্য সকল প্রকার মাছে মণ প্রতি ২৫০ টাকা করে, মসজিদ, মন্দির ও ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের উন্নয়নের নামে ১৫ টি ধাপে চাঁদা দিতে হয় প্রত্যেকটি ট্রলারের। এ কারণে এখন অনেকেই ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরছে না।
মৎস্য ব্যবসায়ী মো. শাফায়েত হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিনই চাঁদা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ট্রলার ভর্তি মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরলে চাঁদা দিতে হয় এবং খালি ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরলেও চাঁদা দিতে হয় আমাদের। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপের জন্য অনেক ঘুরেছি। তবুও প্রতিকার মেলেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সোহেলের নামে হত্যা, ধর্ষণ, গণ ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ প্রায় ২৫টি মামলা রয়েছে। এর আগে তার দুই সহযোগী পাথরঘাটা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি দানিয়েল ও সাধারণ সম্পাদক ছাদ্দাম হোসেন ছোট্ট অজ্ঞাত কিশোরীকে গণ ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হলে দীর্ঘদিন সোহেল পলাতক ছিল। তার বাসায় একাধিকবার পুলিশ তল্লাশি করেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।’
এমন খোলাখুলি অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল ও সংসদ সদস্য শওকত হাসানুর রিমন।
তবে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক লে. এম নুরুল আমিন বলেন, ‘চাঁদা নেওয়ার ব্যাপারটা তার জানা নাই। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মৎস্যজীবিরা মনে করেন, পাথরঘাটার এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রতি ১০০ টাকার মাছে ১.২৫ টাকা হারে রাজস্ব পায় সরকার। তবে চাঁদাবাজি বন্ধ না করলে এ অবতরণ কেন্দ্রে ভিড়বে না ট্রলার, আর রাজস্ব হারাবে সরকার।