মেশিনের ছোঁয়ায় কোণঠাসা কদমা-তিল্লির কারিগররা
বাঙালির বাংলাবর্ষ পঞ্জিকা অনুযায়ী বুধবার (১৫ জানুয়ারি) পৌষ সংক্রান্তি। পিঠা-পুলির উৎসবের পাশাপাশি দিনটিকে ঘিরে চলবে নানা আচার অনুষ্ঠান। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে গ্রাম-গঞ্জে জমে উঠবে ছোট-বড় বিভিন্ন মেলা। এছাড়া এ পৌষ সংক্রান্তিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পূজা পার্বণের আয়োজন করে থাকে। এ সময় দেব-দেবীর নৈবেদ্য হিসেবে বিভিন্ন মিষ্টি ও ফলমূল উৎসর্গ করে থাকেন।
এ উপলক্ষে জেলা শহরের হাট বাজারগুলোর মিষ্টি ও পসরার দোকানগুলোতে বসেছে কদমা ও তিল্লি বিক্রির ধুম। কিন্তুআধুনিক মেশিনে তৈরি কদমা ও তিল্লি দামে সস্তা হওয়ায় খুচরা বাজারে বিপাকে পড়েছেন হাতে তৈরি কদমা ও তিল্লির কারিগররা।
জানা যায়, বৃটিশ আমল থেকে খোয়াই নদীর তীরবর্তী পুরান বাজার এলাকায় বসবাসরত প্রায় ২০০ পরিবার মুড়ি, নাড়ু ও চানাচুর তৈরি করে আসছে। আর শীতের সময়ে ব্যস্ত সময় পার করতেন কদমা ও তিল্লি তৈরিতে। এসব পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে চিনি, ছানার জল ও ময়দা। প্রথমে উত্তপ্ত উনুনে কড়াইয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনি মিশ্রিত জলে জ্বাল দেয়া হয়। ঘণ্টা দুয়েক পর চিনির সিরাতে ছানার জল মিশিয়ে তা বিভিন্ন লোহার ছাঁচে ঢালা হয়।
পরবর্তীতে অর্ধগলিত পদার্থটি ঠান্ডা করে লোহার রডে রেখে তা দড়ির ন্যায় টানা হয়। আঠালো ও নরম পদার্থটি একপর্যায়ে চকচকে সাদা রঙ ধারণ করে। সেখান থেকে মাঝারি সাইজের (বাইন) টুকুরো করে ময়দায় লাগেয় সুতো দিয়ে কারিগররা হাতে খণ্ড খণ্ড করা হয়। এরপর কারিগররা শৈল্পিক ছোঁয়ায় দক্ষতার সঙ্গে তৈরি করেন নানা ডিজাইনের হাঁস, পাখি, পুতুলসহ বিভিন্ন আকৃতি। বড় আকৃতিগুলো কদমা নামে পরিচিত আর ছোট আকৃতিগুলো তিল্লি নামে পরিচিত।
প্রতি কেজি চিনিতে এক কেজি তিল্লি বা কদমা তৈরি করা যায়। সেক্ষেত্রে পানি, ময়দা ও দুধ-ছানার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দৈহিক শ্রমও। তবে খুচরা বাজারে আধুনিক মেশিনে তৈরি কদমা ও তিল্লি দামে সস্তা হওয়ায় ক্রেতারা বেশি দামে নিতে চায় না হাতে তৈরি তিল্লি ও কদমা। বর্তমানে প্রতি কেজি তিল্লি ও কদমা বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকা দরে।
এদিকে অনেকে মনে করছেন লাভের মাত্রা অনেক কম থাকায় অচিরেই কারিগরদের হাতে তৈরি সুস্বাদু খাদ্য পণ্য হারিয়েও যেতে পারে।
কারিগর রথীন্দ্র কুড়ি বলেন, ‘বর্তমান সময়ের শ্রমঅনুযায়ী পারিশ্রমিক পাচ্ছি না। এ কাজটিতে পরিবারের সকল সদস্যদের সম্পৃক্ততায় কোনোমতে বেঁচে আছি।’
আরেক কারিগর সুব্রত কুড়ি বলেন, ‘আধুনিক মেশিনের চেয়ে হাতে তৈরি কদমা-তিল্লির স্বাদ অন্যরকম। কিন্তু মেশিনের তৈরি পণ্যে বাজার ভরে যাওয়ায় আমরা কারিগররা একদম কোণঠাসা হয়ে পড়েছি।’
এদিকে পৌষ সংক্রান্তির অজুহাতে ফলের দোকানগুলোতে বিভিন্ন ফলমূলের দাম বেশে হাকাচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
শহরের চৌধুরী বাজার নারিকেল হাটা, ফলেরর হাটা, চৌরাস্তা মোড়ে ঘুরে দেখা যায়, পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে বিভিন্ন দোকানগুলোতে চড়া দামে ফল বিক্রি করছে বিক্রেতারা। কিছুদিন পূর্বেও মাঝারি সাইজের নারিকেল হালিতে ৫০-৬০ টাকা দামে বিক্রি করতে দেখা গেলেও বর্তমান সময়ে প্রায় একই সাইজের নারিকেলের দাম হাকানো হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। পূর্বে আপেল কেজিতে ৮০-৯০ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন আপেল ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাসপাতি কেজিতে ১৬০ টাকার স্থানে ২০০ টাকায়, কমলা কেজিতে ১০০ টাকার স্থানে ১২০ টাকা দরে, কেনু (কমলা জাতীয়) কেজিতে ৬০-৭০ টাকার স্থানে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিক্রেতারা বলছে, পৌষ সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে নয় শীতের শেষ মৌসুম বিধায় ফলের আমদানি কম তাই দাম বেশি। কিছুদিন পর দাম আরও বাড়তে পারে।