৬৪ তম জেলা ভ্রমণ: আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ



ফরিদ ফারাবী
তিন গম্বুজ মসজিদ, ছবি: বার্তা২৪

তিন গম্বুজ মসজিদ, ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

ডিসেম্বরের কনকনে শীতে বগুড়া থেকে নওগাঁ হয়ে যখন রাজশাহী পৌঁছলাম তখন রাত প্রায় নয়টা বেজে গেছে। যদিও এযাত্রায় গন্তব্য পশ্চিমের সর্বশেষ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ তবু মাঝখানে রাজশাহী শহরটাই বা বাদ যাবে কেনো! সাথের ট্যুরমেটের শিক্ষাজীবনের লম্বা সময় কেটেছে এখানে সেই সূত্রে এশহর তার খুব বেশি আপন। আমার ঘুরে দেখার আগ্রহের চাইতে তার ঘুরিয়ে দেখানোর আগ্রহ কোনটাই কম না।

বাস থেকে নেমেই যথারীতি একটা ছোটখাটো চক্কর দিয়ে ফেললাম। এতো পরিচ্ছন্ন এবং বিশুদ্ধ বাতাসের শহর আমি বাংলাদেশে আর পাইনি। এর আগে রাজশাহী এসেছিলাম প্রায় পাঁচ বছর আগে তখন অবশ্য শহরটাকে এভাবে দেখা হয়নি। এই ক'বছরেই বেশ বদলে গেছে শহরের হালচাল। হাঁটছিলাম উদ্দেশ্যহীন শহরের এক প্রান্ত ধরে। হাঁটার সময় খুব একটা টের পাওয়া না গেলেও রিক্সায় উঠে হিমেল বাতাসে ঠান্ডা বেশ টের পাচ্ছিলাম। লক্ষীপুর মোড়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা গল্পে কাপের পর কাপ চা শেষ করে রাত্রিযাপনের জন্য রামেক-এর হলে ফিরলাম বেশ দেরি করেই।

ভেতরে ততক্ষণে এক অদ্ভুত উত্তেজনা কাজ করছে। জেলা গণনার হিসেব নিকেশ যদিও সেভাবে কখনো করিনি তবু সামনে যখন চলেই এলো, একটা মাইলফলক তো বটেই। আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে যাচ্ছে আমার সুদীর্ঘ এক্সপ্লোরেশনের ৬৪ তম জেলা। বিজয় দিবসের দিনে এমন মাইলফলকে পৌঁছানোর চাইতে স্মরণীয় আর কী-বা হতে পারে!

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/18/1547816546118.jpg

ভোরের আলো ফোটার আগেই ফোনের এলার্মের শব্দে ঘুম ভাংলো। ভ্রমণের পুরোটা দিনকে কাজে লাগাতে একটু তাড়াতাড়ি বের হওয়ার কোন বিকল্প নেই। অল্প সময়ের মধ্যেই ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। ভোরের স্নিগ্ধ পরিবেশে হাটঁতে হাটঁতেই বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌছলাম। পাশের চায়ের দোকানের ধোঁয়াতোলা কেটলি আর চায়ের কাঁচা পাতির সুবাস পেয়ে আর বসে থাকা গেলোনা। চা শেষ করতেই বাস এসে পৌছালো। প্রায় ঘণ্টাখানেক লাগলো চাঁপাই পৌঁছাতে। বাসস্ট্যান্ডে নেমে হাটঁতে হাটঁতে জেলা পরিষদ হয়ে স্টেডিয়াম পৌঁছলাম। ১৬ই ডিসেম্বর হওয়াতে পুরো এলাকাতে একটা সাজ সাজ রব। স্টেডিয়ামে চলছে কুওচকাওয়াজ। বাইরে থেকেই বোঝা যাচ্ছিলো ভেতরের এলাকা কানায় পরিপূর্ণ। টের পেলাম বেশ ক্ষুধা পেয়েছে। খোঁজাখুঁজির পর সামনের রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডিম খিচুড়ির নাস্তা সেরে নিলাম। সারাদিন ঘোরার প্রস্তুতিতে সকাল সকাল একটু ভারি নাস্তায় বাকি দিন নির্ভার থাকা যায় লম্বা সময়ের জন্য।

নাস্তা পর্ব সেরে একটা রিক্সা নিয়ে পুরো শহর ঘুরে সরাসরি মহানন্দার পাড়ে পৌঁছলাম। কিছুপথ হেটে ব্রীজ পার হয়ে কানসাট পর্যন্ত অটোরিক্সায় উঠলাম। অটো চলছিলো রাস্তার দুপাশের আমবাগান ছাড়িয়ে। ছোট ছোট এই গাছগুলোই গ্রীষ্মকালে আমের ভারে মাটিতে নুয়ে থাকে। এখানে কেউ কারো আমে হাত দেয়না। এমনকি ট্যুরিস্ট হলেও গাছ থেকে আম ছিড়ে নেয়াটা খুবই গর্হিত কাজ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/18/1547816586375.JPG

কানসাট থেকেই সোনা মসজিদের অটোরিক্সা পেলাম। দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। সোজা রাস্তা চলে গেছে স্থলবন্দর পর্যন্ত। কাছাকাছি আসতেই বাংলাবান্ধা, বেনাপোলের মত স্থলবন্দরের একটা পরিচিত চেহারা ভেসে উঠলো। ছোট সোনা মসজিদের সামনেই নেমে গেলাম। ছুটির দিন হওয়াতে বেশ ভীড় দেখা গেল মসজিদ প্রাঙ্গনে। এতোটা ভীড় আশা করিনি। তবু কী আর করা! মসজিদের পাশেই চোখে পড়লো বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ও মেজর নাজমুল দুই মুক্তিযোদ্ধার সমাধি।

ছোট সোনা মসজিদে~

ছোট সোনা মসজিদ দেশের অন্যতম পুরনো স্থাপনা। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড় নগরীর উপকণ্ঠে নির্মিত এই মসজিদটিকে বলা হয়ে থাকে সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন। মুলত নুসরত শাহ নির্মিত গৌড়ের সোনা মসজিদের মতই সোনালী গম্বুজ হওয়াতে এই মসজিদটিকে বলা হতো ছোট সোনা মসজিদ। জানা যায় সুলতান আলাউদ্দীন হুসেন শাহ-এর শাসনামলে (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রিস্টাব্দ) জনৈক মনসুর ওয়ালি মোহাম্মদ বিন আলী মসজিদটি নির্মান করেন। সে হিসেবে এই মসজিদের বয়স এখন প্রায় ৫০০ বছরের বেশি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/18/1547816608011.jpg

মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ২৫ মিটার লম্বা ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১৭ মিটার চওড়া। চারকোনায় রয়েছে চারটি তুঘলক পদ্ধতির বুরুজ। এছাড়া মসজিদের সামনের অংশে দরজার সংখ্যা মোট পাঁচটি। ভেতরের ৮টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের উপর তৈরি হয়েছে ১৫টি গম্বুজ। মাঝের মেহরাব ও পূর্ব দেয়ালের মাঝের দরজার মধ্যবর্তী অংশে ছাদের ওপর যে গম্বুজগুলো রয়েছে সেগুলো চৌচালা গম্বুজ। পুরো মসজিদের অলংকরণে মুলত ব্যাবহৃত হয়েছে পাথর, ইট ও টেরাকোটা। যাতে খোদাই করা আছে নানান নকশা। তবে এই টাইপের নকশা আমি অন্যান্য পুরনো কোন মসজিদের গায়ে দেখিনি। সারা বাংলাদেশে ৬৪ জেলার যত প্রাচীন মসজিদ দেখেছি তার মধ্যে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের পর এই মসজিদটি-ই আমার নজর কেড়েছে।
মসজিদ থেকে বের হওয়ার আগে দুই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধীতে শ্রদ্ধা জানিয়ে আগেই ঠিক করে রাখা ভ্যানে করে রওয়ানা হলাম তাহখানার উদ্দেশ্যে।

তাহখানা ও তিন গম্বুজ মসজিদে~

ছোট সোনা মসজিদ থেকে ৫০০ মিটার উত্তর পশ্চিমে জাহেদুল বালা দীঘির পশ্চিম পাড়ে তাহখানা অবস্থিত। সুবেদার শাহ সুজার শাসনামলে নির্মিত এ স্থাপত্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। ভাবতেই পারিনি এখানে এমন চমৎকার স্থাপনার দেখা পাবো। আয়তাকার আকৃতির এই দুইতলা বিশিষ্ট ইমারত ঢাকার লালবাগ কেল্লার কথা মনে করিয়ে দেয়। এখানে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় দুইটি অষ্টকোণাকৃতির কক্ষসহ উপর তলায় মোট সতেরোটি কক্ষ রয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/18/1547816696228.jpg

তাহখানার নির্মানের কারণ সম্পর্কে দুইটি মতামত পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় সুবেদার শাহ সুজা অবকাশ যাপন এবং তার আত্মাতিক গুরু শাহ নিয়ামত উল্লাহ (র) – এর সাথে স্বাক্ষাতের জন্য এখানে আসতেন। সে জন্যই ১৬৩৯ থেকে ১৬৬০ সালের মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে এই ইমারত নির্মান করেন। এছাড়াও মনে করা হয় শাহ নিয়ামত উল্লাহ (রঃ)- এর বসবাসের জন্যও তিনি এই ইমারত নির্মান করে থাকতে পারেন।

তাহখানার মূল প্রাসাদ থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে সামান্য দূরে রয়েছে শাহ্ নিয়ামত উল্লাহ এর সমাধি ও মসজিদ। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের ভেতরে বাহিরে তেমন উল্লেখযোগ্য কারুকাজ না থাকলেও এর স্থাপত্য এক কথায় অসাধারণ। মসজিদের ৩টি প্রবেশ পথ এবং ভেতরে ৩টি মেহরাব রয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ এই মসজিদে নিয়মিতভাবে নামাজ আদায় করে থাকেন। মসজিদের পাশেই শাহ নিয়ামত উল্লাহ –এর সমাধি। বর্গাকার নকশা পরিকল্পনায় নির্মিত সমাধি কমপ্লেক্স ঘিরে ভক্ত দর্শণার্থীদের ভীড় এড়িয়ে বের হয়ে এলাম।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/18/1547816737643.jpg

দারসবাড়ি মসজিদ ও মাদ্রাসা~

ভ্যানওয়ালকে জিজ্ঞেস করলাম এর পরে কোথায় যাচ্ছি? গন্থব্য জানালেন দারসবাড়ি মসজিদ এবং মাদ্রাসা এলাকায়। ছোট সোনামসজিদ ও কোতোয়ালী দরজার মধ্যবর্তী স্থানে ওমরপুরের কাছেই দারসবাড়ি অবস্থিত। মুলত আরবী দারস অর্থাৎ 'পাঠ' শব্দ থেকে দারসবাড়ি শব্দের উৎপত্তি। অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছলাম মসজিদের সামনে। ছাদ ধ্বসে পরে অনেকটাই ধ্বংসস্তুপের মত অবস্থা তবে পূর্বেকার স্থাপত্যের জৌলুশ ঠিকই ধরে রেখেছে দেয়ালের টেরাকোটা ও ডিজাইনগুলো। ভেঙ্গে পড়ার আগে কতটা অসাধারণ ছিলো এই স্থাপনা তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। ঐতিহাসিক অনুসন্ধানে জানা যায় সুলতান শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহ-এর রাজত্বকালীন সময়ে ১৪৭৯ খ্রিস্টাব্দে তারই আদেশে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। অক্ষত অবস্থায় কোন অংশেই সোনা মসজিদের চেয়ে কম সুন্দর ছিলোনা এই মসজিদ। ইট নির্মিত এই মসজিদের অভ্যন্তরের আয়তক্ষেত্র দুই অংশে বিভক্ত। উপরে ৯টি গম্বুজের চিহ্নাবশেষ রয়েছে এবং উত্তর দক্ষিণে ৩টি করে জানালা ছিল। উত্তর পশ্চিম কোণে মহিলাদের নামাজের জন্য প্রস্তর স্তম্ভের উপরে একটি ছাদ ছিল। এর পরিচয় স্বরূপ এখনও একটি মেহরাব রয়েছে। এ মসজিদটি বাংলার প্রথম যুগের মুসলিম স্থাপত্যের কীর্তির একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। এখানে প্রাপ্ত তোগরা অক্ষরে উৎকীর্ণ ইউসুফি শাহী লিপিটি এখন কোলকাতা যাদুঘরে রক্ষিত আছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/18/1547816818747.jpg

মসজিদের দেড়শ মিটার দূরেই দারসবাড়ি মাদ্রাসা। মাদ্রসার মূলত এখন কোন অস্তিত্ব নেই। অনেকটা পাহাড়পুরের প্রত্নতাত্বিক নিদর্শণের মত দেখতে এই এলাকায় মাটির নিচে চাপা পড়া শুধু কক্ষগুলোর চিহ্ন রয়েছে। এখানে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে উদঘাটিত তথ্য অনুসারে মাদ্রাসাটি আলাউদ্দীন হুসেন শাহ-এর আমলে ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়। ধারণা করা হয়ে থাকে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন মাদ্রাসার নিদর্শণ।

চামচিকা মসজিদে~

মাদ্রাসা এলাকা ছাড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গণকবর পেরিয়ে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের কিছু আগে ডান দিকে চামচিকা মসজিদে চলে এলাম। এখানে আমবাগানের পাশে কয়েকটা পিকনিক গ্রুপের বাস দেখতে পেলাম। পাশেই সাউন্ডবক্স বাজিয়ে হৈ হুল্লোড় চলছে। পাশ কাটিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণে পৌছলাম।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/18/1547816852609.jpg

খুব একটা বড় না হলেও বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে স্থাপণা। চামচিকা মসজিদের নামকরণের ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হয় ভারতের বড় চামচিকা মসজিদের আদলেই এটি তৈরী। দারসবাড়ী মসজিদের মতই পোড়ামাটি ইট ও কারুকার্য খচিত এই মসজিদটি। এর দেয়ালের পরিধি এত মোটা যে চৈত্র মাসের প্রচন্ড গরমে এর ভিতরে শীতল পরিবেশ বিদ্যমান থাকে। মসজিদের পূর্বে ৬০ বিঘা আয়তনের খঞ্জন দিঘী নামে একটি বড় দিঘী রয়েছে। মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে চলে এলাম বর্ডারে অবস্থিত কোতয়ালি দরজার কাছাকাছি। খুব বেশি সময় অবস্থান না করে দূর থেকেই দেখে বিদায় নিয়ে পাশের বাস কাউন্টারে এলাম।

বিদায় চাঁপাই~

বিকেল হয়ে এসেছে সারাদিন ঘুরতে ঘুরতে। এর মধ্যে পেটে দানাপানি কিছু পড়েনি আমাদের। পরিকল্পনা ছিলো বিকেলে রাজশাহী ফিরে পুঠিয়া রাজবাড়িটাও ঘুরে যাবো। তবে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে টের পেলাম সেটা দুঃসাধ্যই হবে বটে। তবু ফেরার পালা আমাদের। ভাবতেই ভালো লাগছে রাজশাহীতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে কালাই রুটি এবং হাঁসের মাংস। আর হ্যাঁ যারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঘুরতে যাবেন শিবগঞ্জের মিষ্টির কথা একদম ভুলবেন না। একটা কথা নিসন্দেহে বলা যায়, যদি আপনি প্রত্নতত্ত্ব ও প্রাচীন স্থাপত্যের প্রতি আগ্রহী হোন তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আপনাকে মোটেও হতাশ করবেনা।

 ৬৪ তো শেষ হলো এবার না হয় সীমানা পেরিয়ে ১০০ হোক! অন্তত স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই।

 

   

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;