কানাডায় নাগরিকত্বের হাতছানি!

  • ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

উন্নত ও অগ্রসর পশ্চিম ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া যখন অভিবাসন কঠিন করেছে, তখন নাগরিকত্বের হাতছানি দিচ্ছে অপরূপ কানাডা। কানাডার ইমিগ্রেশন মিনিস্টার আহমেদ হুসেন নিজেও সোমালিয়া থেকে একজন শরণার্থী হিসাবে এসেছিলেন। তারপর নতুন দেশ, নতুন পরিবেশে নিজের মেধা ও যোগ্যতায় হয়েছেন মন্ত্রী। তিনি কানাডার পার্লামেন্টে আগামী তিন বছরে তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার অভিবাসী নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

কানাডায় অভিবাসনের বিরাট সুযোগের খবর শুধু বাংলাদেশই নয়, পুরো বিশ্ব আলোড়িত হয়েছে। কানাডায় নাগরিকত্বের অবারিত সুযোগ নেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ। 

বিজ্ঞাপন

কানাডায় মানুষ কেন আসতে চাইবে না? যে দেশ বিশ্বে জীবনযাত্রার মানে অন্যতম শীর্ষস্থানের অধিকারী, সেখানে কে যেতে চাইবে না! পরিবেশ, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সুরক্ষার দিক থেকে কানাডার শহরগুলো বিশ্বের সেরা। বসবাসের জন্য কানাডাকে সবচেয়ে পছন্দের দেশ হিসাবে মনে করে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/20/1547956172272.gif

বিজ্ঞাপন

কানাডায় জন্মহার কমে গেছে এবং বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তারা কর্মক্ষম মানুষ তাদের দেশে নিতে চাচ্ছে। তবে কানাডা আসতে চাইলে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক, লম্বা সিলেকশন প্রসেসের মাধ্যমে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে আসা সম্ভব হবে। 

ফলে সে দেশে অভিবাসনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভালো করে জানতে হবে। অন্ধের মতো দালাল বা বিভিন্ন কেম্পানির হাতে জিম্মি না হয়ে জেনে-বুঝে নিজে চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে জটিল প্রক্রিয়াও সহজ মনে হবে। এমনকি আপনার কপালে জুটেও যেতে পারে মহার্ঘ কানাডিয়ান নাগরিকত্ব।

কানাডায় নাগরিকত্ব লাভ বা অভিবাসনের জন্য বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম আছে। এর কোনো একটির মাধ্যমে আপনাকে নাগরিকত্ব লাভের পথে এগুতে হবে। প্রথমেই অভিবাসন প্রোগ্রামগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া দরকার। তারপর ঠিক করুন, আপনি কোন প্রোগ্রামে ফিট করেন। তখন সে প্রোগ্রাম অনুযায়ী শুরু করুন প্রসেস বা প্রক্রিয়া।

প্রথমেই আসে 'এক্সপ্রেস এন্ট্রি'র কথা। এর মাধ্যমে সরকারিভাবে প্রতি পনেরো দিনে ৩৫০০-৪০০০ স্কিলড বা দক্ষ জনশক্তি ইমিগ্র্যান্ট হিসাবে আসার আমন্ত্রণ পাচ্ছেন। এ সুযোগ পাচ্ছেন তারা, যারা অত্যন্ত অল্প বয়সেই সিএলবি ৯ এর মধ্যে ৮ দশমিক ৫ পাচ্ছেন।

তাছাড়া যাদের জব কানাডার অকুপেশন-ইন-ডিমান্ড লিস্ট বা অগ্রাধিকামূলক কাজের তালিকায় আছে, যাদের ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজে স্কিল আছে, যাদের আপন ভাই-বোন কানাডায় আছে, যাদের কানাডিয়ান এডুকেশনাল ডিগ্রি বা চাকরির অভিজ্ঞতা আছে, তারা এ সুযোগ পেতে পারেন। ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজে টেস্ট না দিয়ে, কানাডা থেকে এডুকেশনাল ক্রেডেনশিয়াল এসেসমেন্ট না করিয়ে এ প্রক্রিয়া  শুরু করা যায় না।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/20/1547956230518.gif

পরবর্তী প্রোগ্রাম হলো 'ফ্যামিলি রেউনিফিকেশন', যা কানাডিয়ান ইমিগ্র্যাশনের একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক।  এই প্রক্রিয়ায় ২০১৯ সালে ২০ হাজার প্যারেন্টস এন্ড গ্র্যান্ডপারেন্টস আসতে পারবেন।  এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে লটারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাত্র ৫০০০ কোটা দিয়ে।

আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে আবেদন পত্র জমা নেওয়া শুরু হবে। কেবলমাত্র যোগ্য কানাডিয়ান সিটিজেন বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্টরাই স্পন্সরশিপের আবেদন করতে পারবেন। কমপক্ষে তিন বছর সিআরএর নোটিশ অফ এসেসমেন্ট অনুযায়ী 'লো ইনকাম কাট অফ' বা লাইকো +৩৫% মিনিমাম ইনকাম থাকলেই আবেদন করা যাবে।

আরেকটি অভিবাসন সুযোগ হলো 'প্রোভিন্সিয়াল নোমিনেশন'। 'আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রাম'-এর মাধ্যমে কানাডার আটলান্টিক তীরের চারটি প্রোভিন্স ও অন্যান্য কম পরিচিত প্রোভিন্সগুলোতে বিদেশিরা অভিবাসন নিয়ে আসতে পারবেন। যারা 'এক্সপ্রেস এন্ট্রি' পুলে টিকে আছেন, প্রেভিন্সগুলোতে যাদের আত্মীয়-স্বজন আছে, যাদের পেশা 'অকুপেশন-ইন-ডিমান্ড' লিস্টে আছে, তারা সুযোগটি নিতে পারবেন।

কানাডায় রিফিউজি ও প্রোটেক্টেড পারসনের জন্যে অভিবাসনের বিশেষ কিছু সুযোগ আছে। সেদেশে 'মেডিকেল ইনডমইসিবিলিটির আইন' আগের চেয়ে অনেক শিথিল করা হয়েছে। কানাডা দূতাবাস ও সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।

কানাডায় আসার ক্ষেত্রে কিছু প্রতারণার ব্যাপার ঘটে 'জব অফার'-এর নামে।

জব অফারের নামে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইএল্টস ছাড়া, কোনো শিক্ষাগত বা কাজের দক্ষতা ছাড়াই শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে কানাডায় পাঠানোর নাম করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কানাডায় বসবাসরত বহু স্কিলড ইমিগ্র্যান্ট তাদের পেশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জব না পেয়ে বিভিন্ন সারভাইভাল জব করছে।

এসব 'অড জব' কানাডিয়ান সিটিজেন, পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট বা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরা করছে। কানাডায় যখন কোনো প্রফেশনের যোগ্য লোক কম থাকে বা পাওয়া যায় না, তখনই বাইরে থেকে লোক নেওয়া হয় । অতএব কানাডায় কী ধরনের কাজের বা চাকরির চাহিদা রয়েছে, সেটা নিজে যাচাই করে অগ্রসর হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/20/1547956199471.gif

'টেক অনলি' ক্যাটেগরিতে ইনফরমেশন টেকনোলজি ফিল্ডে জব অফার নিয়ে মাত্র ১০ দিনেই লোকজন কানাডা আসতে পারছেন। যারা আইটি প্রফেশনাল হিসাবে অত্যন্ত মেধাবী ও আন্তর্জাতিক মানের, যাদের ভাষাগত দক্ষতাও অনেক বেশি, তারা সমগ্র বিশ্বের আইটি প্রফেশনালদের সঙ্গে কম্পিটিশন করে টিকতে পারলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই নাগরিক হয়ে কানাডা ঢুকতে পারছেন।

চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে নয়, দক্ষতা, যোগ্যতা, ও মেধা দিয়ে কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। ভাষা ও কাজের দক্ষতাই এক্ষেত্রে মূলকথা। বিভিন্ন এজেন্সি, যদি কানাডিয়ান সরকারের বৈধ অনুমতিপত্র প্রাপ্ত হয়, তবে তারা শুধু গাইড করে পথ দেখাতে পারে। নামসর্বস্ব কোনো কোম্পানির সাধ্য নেই কানাডার নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার।

আসলে কানাডিয়ান নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার কোনো বিষয় নয়, ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অর্জন করার বিষয়। অতএব আগ্রহীরা ধৈর্য্য ও একাগ্রতা নিয়ে নিজে থেকে চেষ্টা আরম্ভ করতে পারেন কানাডা সরকারের ওয়েবসাইটের নির্দেশনার আলোকে।