শিশু বয়সেই থমকে যাচ্ছে বাংলাচর্চা!



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

শুরু হওয়ার কথা শিশুকালে, যখন শিক্ষার ভিত্তি হয় মজবুত। কিন্তু তেমনটি এখন আর হচ্ছে না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শিশুকালেই থমকে যাচ্ছে বাংলাচর্চা।

একদা ধ্রুপদী বা ক্লাসিক বইপত্র পড়ে বাংলাদেশের শিশুরা বড় হতো। বাংলা ভাষার প্রধান লেখকদের কালজয়ী মৌলিক গ্রন্থাবলির সাহায্যে যে শিশু ভাষা শিখেছে, সে কলেজে ভর্তি হওয়ার আগেই অনেকগুলো অসাধারণ বই পড়ে ফেলতে পেরেছে। তার ভাষার ভিত্তিটি এভাবে মজবুত হয়েছে। জ্ঞানের দিগন্তও হয়েছে প্রসারিত। সেদিন এখন আর নেই।

এখন সেই শিক্ষাধারা চরমভাবে বিনষ্ট হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী দূরে থাকুক, অভিভাবক ও শিক্ষকরাও মৌলিক মূল বইয়ের ধারে-কাছে দিয়ে যাচ্ছেন না। বাংলাদেশের এমন স্কুল-কলেজও আছে, যেখানে বাংলা বই বিমাতামূলভ আচরণের শিকার। যেন বা বাংলা বই না পড়লেও চলে!

স্বয়ং আমাকেই একবার এক মারাত্মক কথা শুনতে হয়েছিল। ‘স্কুলে কেন বেঙ্গলিটা শেখায় না ইংলিশে?’ অবাক হয়ে গিয়েছিলাম কথাটা কানে আসতেই। বাচ্চা একটি মেয়ে বলছিল কথাটি। উত্তর ঢাকার অভিজাত এলাকার এক বাসায় পারিবারিক অনুষ্ঠানের ফাঁকে আলাপে আলাপে গৃহকর্তার কন্যাটির পড়াশোনার খোঁজ নিচ্ছিলাম। তখনই কথায় কথায় মেয়েটি জানায়, ‘স্কুলে কেন বেঙ্গলিটা শেখায় না ইংলিশে?’

রাইম সে ভালোই জানে। ইংরেজি অনেক ছড়া শোনালো। ইংলিশ ভোকাবলারিও বেশ। এই বয়সেই অনেক শব্দ শিখেছে। বাংলা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে হোঁচট খেলাম। স্কুলে নাকি বাংলায় কথা বলাও বারণ! বাংলা বই পড়া দূরস্ত!!

বাচ্চাটি পড়ে বেশ নামী-দামী একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। ভর্তি হওয়াই যেখানে সহজ নয়। ভর্তি হলেও বেতন, ফিস ইত্যাদির বড় রকমের চাপ আছে। অভিভাবক এমন স্কুলে সন্তানদের পাঠিয়ে শুধু নিশ্চিন্তই নন, বেশ আনন্দিতও থাকেন। তার সন্তান ‘অমুক’ স্কুলে পড়ে, এটা নাকি আজকাল স্ট্যাটাস সিম্বল, আত্মতৃপ্তি ও শ্লাঘার বিষয়। সরকারি স্কুল না পড়ানোটাই এখন নাকি আভিজাত্যের দস্তুর। পড়াশোনা, নৈতিকতা, ভাষাজ্ঞান কতটুক হয়, সে খবরও উন্নাসিক অভিভাবক নেন না।

আসলেই সেসব ভারি সাইনবোর্ড ও নামডাকওয়ালা বাক্যবাগিশ স্কুলগুলোতে আদৌ পড়াশোনা বলতে কি হচ্ছে, সে খোঁজ-খবর অভিভাবকদের অনেকেই রাখেন না। অভিভাবক টাকার জোরে কয়েকজন প্রাইভেট টিউটর রেখে দেন। সন্তান যে ভালো করে বাংলা বলতে বা পড়তে পারছে না, সে ব্যাপারে তারা নির্বিকার। বরং ছেলেমেয়ে পট পট করে ইংরেজি বলতে পারছে শুনেই তারা খুশিতে আটখানা!

আসলে শিক্ষার মূল ভিত্তিটাই যে প্রাথমিক স্তরে গড়ে ওঠে, সে ধারণা অনেকেরই নেই। শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা একটি সমস্যা সম্পর্কে ভালোই জানেন। তা হলো, বাংলা মাধ্যমের ছাত্ররা ইংরেজিতে ভয়ানক দুর্বল। আর ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরা বাংলায় কাঁচা। বাংলাদেশের দুই ধারার স্কুলিং-এ রয়েছে বিস্তর অসম্পূর্ণতা। এই ধরনের অসম্পূর্ণ শিক্ষায় যেসব ছেলেমেয়ে বছরের পর বছর পাস করছে, দেখা যাচ্ছে তারা ভাষাগত দুর্বলতা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। একদিকে শিখতে তো অন্য দিকে দুর্বল হচ্ছে।

প্রাথমিক স্তরের দুর্বলতার কারণে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পযায়ের গড় ছাত্র-ছাত্রীদের ভাষাগত সমস্যা প্রকটভাবে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে। যে কারণে কোনও কোনও পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষেই ভাষার কোর্স দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের তৈরি করার জন্য। কারণ, অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই ভাষা জ্ঞান ক্রুটিযুক্ত। বানান, বাক্য গঠন ইত্যাদি মৌলিক বিষয়েই তাদের সীমাবদ্ধতা প্রকট আকারে দেখা যায়। অথচ প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে একটু যত্ন নেওয়া হলে উচ্চশিক্ষা স্তরে ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা করে ভাষার কোর্স পড়ানোর দরকার হতো না।

অতএব ভাষাটা বাচ্চাদের শিখাতে হবে প্রাথমিক স্তর থেকেই। অন্যান্য ভাষা বা বিষয়ের মতো বাংলাতেও যেন ছেলেমেয়েরা ভালো করে, সে দিকে নজর দিতে হবে। এই তদারকির কাজটি ইংলিশ মিডিয়ামে বেশি করে করা দরকার। সব কিছু ইংরেজিতে শেখাতে গিয়ে মাতৃভাষা বাংলার ক্ষেত্রে অবহেলা করাটা মোটেও সমীচিন নয়। বাংলা মুখের ভাষা বলে এমনি এমনি শিখে যাবে মনে করাটাও ভ্রান্ত চিন্তা। কেননা, মান সম্মত ও প্রমিত ভাষা শিক্ষা ছাড়া আপনিতেই আহরণ করা যায় না।

যেসব শিক্ষার্থী ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে, তাদেরকে মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্তত নিজ সংস্কৃতির শিকড়টুকু চিনিয়ে দেওয়ার জন্য স্কুলে বাংলার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া খুবই দরকার। স্কুলে নানা রকমের পরিবেশ, নানা সংস্কৃতি এবং নানা অঞ্চল থেকে ছাত্র-ছাত্রী আসে। সেইসব ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা বা সংস্কৃতিগত প্রভাব তাদের মধ্যে থাকাটাই স্বাভাবিক। স্কুলের কাজ হলো সর্বজনীন ও আর্দশ স্থানীয় একটি ভাষা কাঠামোর মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা, যাতে বাংলা বা ইংরেজি, যে ভাষাতেই হোক, সে যেন মনের ভাব বা বিষয়গত জ্ঞান প্রকাশ করতে পারে নির্দ্বিধায় ও সাবলীলভাবে। একপেশে, মানহীন বা একভাষিক শিক্ষার্থী তৈরি করা কখনও স্কুলের কাজ হতে পারে না।

অতএব, স্কুলটি বাংলা মাধ্যমের না ইংলিশ মিডিয়ামের, সেটি বড় কথা নয়। বড় কথা হলো অন্যান্য কৃতিত্বের সঙ্গে সঙ্গে স্কুলটি তার শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় যথেষ্ট পারদর্শি ও পারঙ্গম করতে পারছে কিনা, সেটাই। শিশুকালেই যদি মাতৃভাষা শিক্ষার কাজটি পরিবার এবং স্কুল না করতে পারে, তাহলে সারা জীবনের জন্য শিক্ষার্থীটিকে বিপদের মধ্যে ফেলে দেওয়ার নামান্তর হবে। এ কারণে শিশুকাল থেকেই পরিবারে ও বিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার চর্চা গতিশীল রাখতে হবে। শিশু বয়সেই মাতৃভাষা বাংলার সঙ্গে গড়ে দিতে হবে নিবিড় সম্পর্ক।

 

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;