সুখের এপাশ ওপাশ



ড. শাখাওয়াৎ নয়ন

  • Font increase
  • Font Decrease

ভুটানের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নাম ‘মিনিস্ট্রি অফ হ্যাপিনেস’। নামটা সুন্দর না? আমার কাছে কিন্তু অনেক সুন্দর মনে হয়েছে। ভুটানের রাজা তো রীতিমত একজন অসাধারন মোটিভেশনাল স্পিকার। দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশের সরকার প্রধান এত সুন্দর করে বক্তব্য দিতে পারে কি না,আমার সন্দেহ আছে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে একটা আন্তর্জাতিক সেমিনারে আমার দেখা হয়েছিল।

আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘সুখ বলতে তোমরা কি বোঝো?’ তিনি আমাকে যা বলেছিলেন, অল্প কথায় তার মানে হচ্ছে- ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’। অস্বীকার করি কিভাবে? করিওনি। তবে বিষয়টি নিয়ে জানার এবং কিছু লেখার আগ্রহ পুষে রেখেছিলাম। তবে আজ কেন সুখ বিষয়ক এই লেখায় প্রয়াসী হলাম? কারণ আজ আমার জন্মদিন (২০ মে)। আপাতঃ বিবেচনায় সুখের দিন।

চলুন, সুখের আলোচনায় ফিরে যাই। সুখ কি? কেমন? সুখের বয়স কত? সুখের হায়াত-মউত? সুখের রঙ? পরিমান? সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে, তাই না? সমাজবিজ্ঞানীরা, মনোবিজ্ঞানীরা মানুষের সুখে থাকা বিষয়ক কতগুলি প্রশ্ন করেন, আর সেই প্রশ্নের উত্তরগুলিকে সম্পদের পরিমান, রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার মতো কিছু আর্থসামাজিক উপাদানের সাথে মিলিয়ে দেখেন। বায়োলজিস্টরা একই প্রশ্নের সেট ব্যবহার করেন, কিন্তু মানুষের উত্তরগুলিকে বায়োকেমিক্যাল ও জেনেটিক উপাদানগুলির সাথে সম্পর্কিত করেন। এগুলির মাধ্যমে খুবই ভিন্ন ধরনের ফলাফল পান। চলুন দেখা যাক, কী ধরনের ফলাফল তারা পেয়েছেন?

বায়োলজিস্টরা (জীববিজ্ঞানী, স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী) মনে করেন, লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বিবর্তনের মাধ্যমে বায়োলজিক্যাল মেকানিজম আমাদের মানসিক ও আবেগের জগতকে পরিচালনা করে আসছে। অন্যান্য মানসিক অবস্থার মতোই, আমাদের মানসিক সুখও বাহ্যিক প্যারামিটার দ্বারা (যেমন, বেতন, সামাজিক মর্যাদা, ক্ষমতা এবং সম্পর্ক বা রাজনৈতিক অধিকার) খুব একটা নির্ধারিত হয় না। বরং স্নায়ু, নিউরণ, সিনাপসের এক জটিল প্রক্রিয়ায় এবং সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং অক্সিটোসিনের মতো বিভিন্ন বায়োকেমিক্যালের দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। তার মানে কি দাড়ালো? মানুষের সুখ কিংবা অসুখ সব কিছুই ঘটে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে? তাহলে কি কোনো বিশেষ ঘটনা, ইভেন্ট কিংবা উপলক্ষ্যই সুখের নিয়ামক নয়?

একজন রাজনীতিবিদ যদি নির্বাচনে জয়লাভ করেন, তাহলে কি তিনি খুশি হন না? কিংবা লটারী বিজয়, বাড়ি কেনা/নির্মাণ, চাকুরিতে প্রোমোশন অথবা এমনকি সত্যিকারের ভালোবাসা খুঁজে পেয়ে কেউ কি কখনো সুখী হয় না? বায়োলজিস্টরা এসব কী বলছেন?

বায়োলজিস্টরা তথ্য প্রমাণ দিয়ে জোরালোভাবেই বলছেন, একজন ব্যক্তি লটারী জিতে অথবা একটি নতুন প্রেমের খোঁজ পেয়ে আনন্দে লাফাচ্ছেন, তার লাফানোর অর্থ আসলে টাকা-পয়সা কিংবা প্রেমিক/প্রেমিকার জন্য নয়। ওসব আসলে তার রক্তে প্রবাহিত বিভিন্ন হরমোনের প্রতিক্রিয়া। লাফা-ঝাপার মাধ্যমে সে মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশে ইলেক্ট্রিক সিগন্যালের ঝড় ও ঝলকানির প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন মাত্র। কী অদ্ভুত কথা! তাহলে এতো দিন যা জানলাম, বুঝলাম-সবই ভূল?

বায়োলিজিস্টদের মতে, বিবর্তন প্রক্রিয়ায় সুখের কোনো ধরনের প্রাকৃতিক নির্বাচন কাজ করে না, সুখে থাকার ক্ষমতা কিংবা বৈশিষ্টগুলি পরবর্তী প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয় না। বিবর্তন আমাদের খুব বেশি সুখী বা অসুখী কোনোটাই রাখতে চায় না। প্রাকৃতিক বিবর্তন আমাদের এমনভাবেই তৈরি করেছে যে, আমরা ক্ষনস্থায়ীভাবে তীব্র আনন্দের উপভোগ করতে পারবো, কিন্তু তা কখনোই চিরস্থায়ী হবে না। আগে হোক বা পরে হোক তা এক সময় কমে যাবে। এটি আমাদের একটি ক্ষনস্থায়ী আনন্দের ঢেউ উপভোগ করতে সক্ষম করে তোলে। কিন্তু তা চিরতরের জন্য টিকে থাকে না। আগে বা পরে এই ঢেউ স্তিমিত হয়ে আসে এবং অপ্রীতিকর কোনো অনুভুতি সেখানে প্রতিস্থাপিত হয়, যাকে আমরা ‘দুঃখ’ বলি।

এক্ষেত্রে আমরা যদি যৌণ সঙ্গমের কথাই চিন্তা করি, যা সবচেয়ে আনন্দদায়ক অনুভূতি। জীবজগৎ রক্ষা করার জন্য প্রকৃতি চায় সকল প্রানী যৌণ সঙ্গম করুক। প্রশ্ন হচ্ছে, সকল প্রানী যৌণ সঙ্গম কেন করবে? বিশেষ করে মানুষের যৌণ সঙ্গমে ঝক্কি-ঝামেলাও কম না। প্রকৃতি উক্ত ঝক্কি-ঝামেলা পোহানোর জন্য পুরষ্কারের ব্যবস্থা করে। পুরষ্কারটা কি? প্রকৃতি বলে, ‘তুমি যদি যৌণ সঙ্গম করো, আমি তোমাকে আনন্দ দিব। এমন আনন্দ দিব যা তুমি আর কোনো কিছুতেই পাবে না’। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, যৌণতার ঐ চরম সুখের অনুভূতিও দ্রুত শেষ হয়ে যায়। তার মানে কোনো সুখেরই স্থায়ীত্বকাল খুব বেশি না। যে কারনে আমরা দুঃখকেই বেশি করে দেখি। একই সাথে সুখ যত দ্রুত চলে যায় কিংবা শেষ হয়ে যায়; দুঃখ তত তাড়াতাড়ি চলেও যায় না কিংবা শেষও হয় না। কেন? তাহলে কি আমাদের দুঃখগুলো কাছিমের মতো? ধীর গতি সম্পন্ন এবং দীর্ঘজীবী?

কোনো কোনো গবেষক, মানুষের বায়োকেমিস্ট্রিকে এয়ার-কন্ডিশনিং সিস্টেমের সাথে তুলনা করে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন। প্রকৃতিতে যেমন একেক সময় একেক রকম তাপমাত্রা থাকে, কিন্তু প্রকৃতির তাপমাত্রা যা-ই থাকুক এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম যেমন ঘরের তাপমাত্রাকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখে। তেমনি মানব দেহের সুখের সিস্টেমও ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হয়। কারণ প্রত্যেক মানুষের দেহে একটি ইউনিক সিস্টেম আছে, যা তার জন্য সুখের কিংবা দুঃখের মাত্রা নির্ধারণ করে। আমরা যদি মানুষের সুখের মাত্রাকে এক থেকে দশ পর্যন্ত একটি গুনগত স্কেলে পরিমাপ করি তাহলে দেখা যায় যে, কিছু মানুষ একটি আনন্দদায়ক বায়োকেমিক্যাল সিস্টেম নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। যাদের মেজাজ/মর্জি ছয় থেকে দশ পর্যন্ত উঠানাম করে। যা একটা সময় আট মাত্রায় স্থিতিশীল হয়। এই ধরনের একজন ব্যক্তি বেশ সুখী, এমনকি তিনি যদি কারাগারে থাকেন কিংবা তার সকল টাকা পয়সা ষ্টক এক্সচেঞ্জে হারিয়েও ফেলেন, কিংবা তিনি যদি ডায়াবেটিকসের রোগীও হন, তারপরেও তিনি সুখী মানুষই থাকবেন।

আবার এক ধরনের মানুষ পাওয়া যায়, যাদের স্কোর তিন থেকে সাতের মধ্যে উঠানামা করে এবং একটা সময় পাঁচ মাত্রায় এসে স্থিতিশীল হয়। এই ধরনের মানুষের যদি সব কিছুও থাকে, তারপরেও তারা সাধারনত অসুখী হয়। তাদের যত অর্জন কিংবা প্রাপ্তিই হোক, কোনোভাবেই বিষন্নতা থেকে বের হতে পারে না। এই ধরনের একজন মানুষ একদিন সকালে যদি কোটি টাকার লটারী জিতে যায়, দুপুরে যদি শোনে এইডস এবং ক্যান্সারের টীকা আবিস্কার হয়েছে, বিকেলে যদি টেলিভিশনে দেখে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চিরস্থায়ী শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সন্ধ্যায় যদি দেখে পাঁচ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া তার সন্তান বাড়ি ফিরে এসেছে, এত কিছুর পরেও সে সাত মাত্রার বেশি সুখী হতে পারে না। কারণ ঘটনা যা-ই ঘটুক না কেন, সে কেবলমাত্র সর্বোচ্চ সাত মাত্রায় সুখী হবার ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে কিংবা গড়ে উঠেছে।

এবার আপনার পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের কথা এক মুহুর্তের জন্য চিন্তা করুন। আপনি এমন কিছু মানুষকে অবশ্যই খুঁজে পাবেন, যারা সব সময়ই অপেক্ষাকৃত আনন্দে থাকে, তাদের জীবনে যা কিছুই ঘটুক না কেন। আবার এমন কিছু মানুষও খুঁজে পাবেন, যারা অধিকাংশ সময় বিষন্ন/হতাশ থাকে। তাদের জীবনে যত প্রাপ্তিই ঘটুক না কেন, তা তাদের জৈব-রসায়ন পরিবর্তন করে না। মস্তিষ্কের ভিতরে নিউরনে কেবলমাত্র ক্ষনিকের ঝলকানি/ঢেউ তৈরি করে, তারপর আবার তার সেট পয়েন্টে ফিরে যায়।

উপরে আলোচিত মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক ফলাফলের সঙ্গে এটি কিভাবে পরিমাপ করবেন? যেমন ধরুন, বিবাহিত দম্পতিরা কি অবিবাহিতদের চেয়ে গড়ে বেশি সুখী? প্রথমত, এই ফলাফলগুলি পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে কার্যকারণ সম্পর্কের দিকটি হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে গবেষকদের ধারনার বিপরীত হতে পারে। একথা সত্য যে অবিবাহিত ও তালাকপ্রাপ্তদের তুলনায় বিবাহিতরা বেশি সুখী। তবে এর মানে এই নয় যে, বিয়ে মানুষের জীবনে সুখ নিয়ে আসে। এমনও হতে পারে, সুখের অনুভূতিই মানুষকে বিয়ে করতে উদ্বুদ্ধ করে। অথবা আরো সঠিকভাবে যদি বলা হয়, সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং অক্সিটোসিন এর মতো উপাদানগুলি মানুষকে বিয়ে করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং বজায় রাখে। যারা আনন্দদায়ক বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে, তারা সাধারনত সুখী ও সন্তুষ্ট হয়ে থাকে। এই ধরনের মানুষের মধ্যে আকর্ষনীয় স্বামী কিংবা স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা বেশি থাকে। তাদের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটার সম্ভাবনা কম থাকে। কারণ একজন বিষণ্ণ ও অসন্তুষ্ট মানুষের চেয়ে একজন সুখী মানুষের সাথে সংসার করা সহজ।

বায়োলজিস্টরা যুক্তি দেন যে, সুখ বায়োকেমেস্ট্রি দ্বারা নির্ধারিত। কিন্তু তারা মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক কারণগুলিকেও অস্বীকার করেন না। মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক কারণগুলিও সুখকে প্রভাবিত করে। কারণ আমাদের মানসিক সিস্টেমের পুর্ব নির্ধারিত সীমানার (রেঞ্জের) মধ্যে কিছুটা মুভ করার স্বাধীনতা আছে, কিন্তু নির্ধারিত সীমানার চেয়ে উপরে অথবা নিচের মাত্রা অতিক্রম করার স্বাধীনতা নেই। এতে কি লাভ হয়? এটি বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ এই দুই সীমানার মধ্যবর্তী স্থানে প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন, যার সুখের মাত্রা পাঁচ স্কোরে স্থিতিশীল, সে হয়তো খুশিতে বেপরোয়াভাবে রাস্তায় নেমে জামা-কাপড় খুলে নাচবে না। কিন্তু কোনো না কোনো আনন্দের ঘটনায়, তাকে মাঝে-মধ্যে সাত স্কোর পর্যন্ত সুখ ভোগ করতে সক্ষম করে তুলতে পারে। তার সুখ শেষ হয়ে গেলে আবার পাঁচ মাত্রায় স্থিতিশীল হয়ে যাবে। আবার কোনো বিরাট খারাপ ঘটনায়ও তার সুখ কখনই তিন মাত্রার নিচে নামবে না।

আরেকটা উদাহরণ দেয়া যাক, একজন মধ্যযুগীয় কৃষকের সাথে বর্তমান যুগের প্যারিস নিবাসী একজন চিফ এক্সিকিউটিভ ব্যাংকারের সাথে তুলনা করুন। মধ্যযুগীয় কৃষক মাটির ঘরে বসবাস করতো, আর ব্যাংকার সর্বাধুনিক বাড়িতে বসবাস করে। এদের মধ্যে কে বেশি সুখী? যার মস্তিষ্ক সেরোটোনিনের পরিমান বেশি নিঃসরণ করে/করেছে সে-ই বেশি সুখী। সুতরাং সুখের সাথে সময়কাল, লাইফস্টাইল, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ-সম্পত্তির কোনো সম্পর্ক নেই। সেরোটোনিন-ই মূলকথা।

আমরা যদি সুখের শুধু জৈবিক দিকটি বিবেচনা করি তাহলে সুখের ঐতিহাসিক দিকটির গুরুত্ব কমে যায়। কেননা আমরা জানি, মানব জীবনে ঐতিহাসিক ঘটনা প্রভাব ফেলে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, বেশিরভাগ ঐতিহাসিক ঘটনা আমাদের বায়োকেমেস্ট্রিতে কোনো প্রভাব ফেলে না। ইতিহাস বাহ্যিক উদ্দীপনাকে পরিবর্তন করতে পারে মাত্র, তবে এটি দেহের অভ্যন্তরে সেরোটোনিনের মাত্রা পরিবর্তন করতে পারে না; আর তাই ইতিহাস কিংবা ঐতিহাসিক ঘটনাবলী মানুষকে সুখী করতে পারে না। এটি কেবল ব্যক্তিগত জীবনেই না, সামাজিক এবং রাজনৈতিক জীবনেও একইভাবে কাজ করে। ফরাসী বিপ্লবের কথা চিন্তা করুন। বিপ্লবীরা রাজাকে হত্যা করলো, কৃষকদের ভূমি দিল, মানুষকে সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা দিল। সমগ্র ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করে দিল। তারপরেও ফরাসীদের বায়োকেমেস্ট্রিতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেনি। যাদের শরীরে আনন্দদায়ক বায়োকেমেস্ট্রি ভালো ছিল, তারা বিপ্লবের আগে যেমন সুখী ছিল, বিপ্লবের পরেও সুখী ছিল। যারা বিষণ্ণ, হতাশ ধরনের মানুষ ছিল, তার বিপ্লবের আগে পরে একই ছিল। যারা রাজার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতো, তারা পরবর্তীতেও নতুন ব্যবস্থার/শাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।

যেহেতু বায়োকেমেস্ট্রি ছাড়া আর কোনো কিছুই (ধন-সম্পদ, স্বাধীনতা, বিপ্লব) মানুষকে স্থায়ীভাবে সুখী করতে পারে না, তাহলে কি মানুষের ব্রেন কেমেস্ট্রি আরো ভালোভাবে বুঝতে পারলে এবং যথাযথ চিকিৎসা আবিস্কার করতে পারলে অসুখী মানুষকে সুখী করা যাবে? সম্ভবতঃ করা যাবে। আমরা জানি, নতুন যুগের জনপ্রিয় স্লোগান হচ্ছে-‘হ্যাপিনেস বিগেইন্স উইদিন’। আপনাদের নিশ্চয়ই ১৯৩২ সালে বিশ্ব মহামন্দার সময় প্রকাশিত এডলাস হাক্সলির সেই বিখ্যাত উপন্যাস ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ এর কথা মনে আছে। উক্ত উপন্যাসে তিনি একটি সুখী রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি এঁকেছেন, যেখানে পুলিশ ও ব্যালটের বদলে রাজনীতির ভিত্তি হিসেবে মনস্তাত্ত্বিক ড্রাগ জায়গা করে নিয়েছে। প্রত্যেক মানুষ প্রতিদিন সিন্থেটিক ড্রাগ ‘সোমা’র একটি ডোজ নেয়, (আজকের দিনের ভয়ংকর ড্রাগ কোকেইন, হেরোইন কিংবা ইয়াবার মতো নয়) যা উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতাকে কোনো প্রকার ক্ষতিগ্রস্ত না করেই মানুষকে সুখী করে। উক্ত রাষ্ট্রে যা-ই ঘটুক না কেন, সবাই তাদের বর্তমান অবস্থায় সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট, তাই সেখানে কখনো যুদ্ধ, বিপ্লব, স্ট্রাইক অথবা বিক্ষোভ হয় না। সকলই সুখী জীবন-যাপন করে। আমিও এমন একটি স্বর্গীয় পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি, যেখানে পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হবে।


লেখক: কথাসাহিত্যিক, একাডেমিক, ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া।

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;